অবশেষে🌻🌻
অবশেষে🌻🌻
সকালবেলা রোদ এসে চোখে পড়ে অময়ের। মনে পড়ে কাল রাতে জানলার পর্দা টানতে ভুলে গেছিলো ও। দেয়ালে ঝোলা ক্যালেন্ডারে চোখ আটকে যায় ওর। আজ 5ই মার্চ....পাঁচ বছর আগের আজকের দিনেই তো....পুরোনো কথাগুলো মনে পড়তেই অময়ের বুকে হালকা ব্যথাটা শুরু হয়ে যায় আবার। গত কয়েকদিন ধরেই এই বুকের ব্যথাটা দেখা দিয়েছে। অবন্তীও হোস্টেলে ফিরে গেছে নেক্সট সেমিস্টারের জন্যে। রতন দা-ও দেশের বাড়ি গেছে। এই বিশাল বাড়ীতে অময় একা। কিন্তু এই একাকিত্বটা ও খুব এনজয় করে। একা থাকার একটা আলাদাই স্বাধীনতা আছে। এইসব ভাবতে ভাবতে বিছানায় আরো কিছুক্ষন সময় কাটালো ও। ঘড়িতে চোখ পড়তেই দেখলো সবে সকাল ৭টা। বারান্দায় পেপার ফেলে যাওয়ার আওয়াজ পেলো ও। কাল অনেক রাত অব্দি জেগে একটা লেখা শেষ করেছে। হাতে এখনো প্রচুর কাজ। কয়েকদিন পরেই পুজো। পাবলিশার-রা এখন থেকেই আসা যাওয়া শুরু করে দিয়েছে। এই হয়েছে এক জ্বালা! সকাল-বিকেল যখন তখন ফোন করে -"মশাই,কতদূর এগোলো?'' আরে গতবার আপনার লেখা পড়ে কত চিঠি এসেছিল অফিসে। এইবারও ঐরকম কিছু আইটেম ছাড়ুন না!"
অময়ের লেখক সত্ত্বা আহত হয় যখন ওর লেখাকে কেউ আইটেমের সাথে তুলনা করে। কিন্তু কী আর করা যাবে! মুঠো ফোনটা আবার ভাইব্রেট করে উঠলো। ফোনটা ধরে ''হ্যালো'' বলতেই ওপার থেকে অবন্তীর গলা ভেসে এলো।
"দাদাভাই,উঠেছিস? আমি পৌঁছে গেছি। আর আজ কি খাবি ? রতন দা-ও নেই। ইসস! আর কয়েকদিন থেকে এলেই হতো! তোর অসুবিধা হবে।এই দাদাভাই, কিছু বল!"
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে অবন্তী হয়তো তার দাদাকে কিছু বলার সুযোগ দিতে চাইলো।
"তুই আমার বলতে দিলে তো আমি বলবো নাকি ? আমি এই উঠলাম। আর রতন দা নেই তো কি হয়েছে zomato আছে তো! আমার চিন্তা করিস না! সাবধানে থাকিস। আর আউটডোরের নাম করে কোপাই-য়ের ধারে বসে বেশি প্রেম করতে যেও না! কেমন?"--হাসতে হাসতে বললো অময়।
"দাদাভাই,আরেকটা খবর দেওয়ার ছিল। আর্শিকা দি ....."ইতস্ততঃ করলো অবন্তী।
"বল"....ঠান্ডা গলায় বলল অময়।
"আরশি দি কলকাতায় ফিরেছে। এবার না হয় ওর সাথে....."
"বন্তী, আমার কিছু কাজ আছে। আমি রাখলাম এখন"....ফোনের ওপর থেকে অবন্তী কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিলো অময়।বুকের ব্যথাটা বেড়েছে আবার। বোনের কাছে বুকের ব্যথা হওয়ার কথাটা এড়িয়ে গেল ও।শুধু শুধু টেনশন করবে মেয়েটা।
ফোনটা চার্জে বসাতে গিয়ে অবন্তীর আঁকা ওর পোর্ট্রেট-এর দিকে চোখ গেল ওর। কী নিখুঁত হাত হয়েছে মেয়েটার! বিশ্বভারতীতে তো সেইজন্যেই চান্স পেয়েছে ও। ফোনটা চার্জে বসিয়ে চা বানিয়ে পেপারটা হাতে নিয়ে বারান্দায় এলো অময়। চায়ের মাগটা টেবিলে রেখে চোখের সামনে পেপারটা মেলে ধরলো ও। "দিনদুপুরে ছিনতাই", "ভোটকেন্দ্রে চললো গুলি"...ভালো খবর পেপারে বেরোয় না আজকাল...বিরক্ত হয়ে পেপারটা মুড়ে রেখে দিল টেবিলে। চোখ বুজতেই সামনে ভেসে উঠলো ফেলে আসা পাঁচ বছর....কফি হাউসের সন্ধ্যে,পার্ক স্ট্রিট সেমেট্রির নির্জন দুপুর, ময়দানে দেখা ঢলে যাওয়া সূর্য,টেরিটি বাজারের চীনা খাবার...পিঙ্ক ফ্লয়েড,নির্ভানা, জীবনানন্দ আরো কত কিছু। ঠোঁটে নোনা স্বাদ পেয়ে অময়ের সম্বিৎ ভাঙলো। অজান্তে কখন দু-চোখের কোনে জল জমেছে।অবন্তীর ফোন রেখে দেওয়া ইস্তক খালি নামটা ঘিরে ধরছে অময়কে।চোখ বুজলে এখনো সেই প্রাণোচ্ছল হাসি, বড় বড় দুটো চোখ, কপালের তিল...আধো বাংলা উচ্চারণ সব শুনতে পায় অময়। ওর মনে পড়ে যেতে থাকে পুরোনো সব স্মৃতিগুলো। এইরকমই একটা গরম মার্চের দিনে সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে ও। অবন্তী স্কুলের জন্যে তৈরি হচ্ছে, ঘরে বাজছে কোল্ডপ্লে-র "দ্য সায়েন্টিস্ট"...এই গানটা ওদের ভাইবোনের খুব পছন্দের। রতন দা রোজের মতোই চা রেখে গেছে ঘরে। চা-মুখে দিয়ে সবে পেপার খুলেছে অময়,ঠিক সেইসময় কলিং বেলটা বিচ্ছিরি সুরে বেজে উঠলো। "আমি দেখছি",বলে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে দরজার দিকে দৌড় দিলো অবন্তী...
"ও আচ্ছা! তুমি অশোক কাকুর মেয়ে ? হ্যাঁ, ভেতরে এস না। ইসস! আমি দাদাভাইকে বলতে ভুলেই গেছি একদম।এস না ভিতরে এস।"--অবন্তী এত জোরে কথা বলছিল যে দরজায় যে দাঁড়িয়ে আছে তার কথাই শোনা যাচ্ছিল না। "দাদাভাই,এদিকে আয় না।"-চিৎকার করে ডাকলো অবন্তী। অময় চায়ের মাগটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতে দিতে
দরজার কাছে এসে অবন্তীর পিছনে দাঁড়ালো...এক চুমুক চা নিয়ে গিলতে গিয়েও গিলতে পারলো না ও। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে এক ঢোকে চা শেষ করলো অময়....মুখ দিয়ে ফস করে বেরিয়ে গেল--"মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য"।
"এই দাদাভাই কি বিড়বিড় করছিস তখন থেকে ?"-অবন্তীর খোঁচায় অপ্রস্তুত হয়ে অময় বললো-"কিছু না.."
"আরশি দি, ভিতরে এস না প্লিজ"...অবন্তী আবার বললো।
"তুই সরলে তো ঢুকতে পারবে নাকি?"...
"ও হ্যাঁ!"-অপ্রস্তুত হাসি হেসে অবন্তী দরজা দিয়ে সরে দাঁড়ালো।
আর্শিকা এসে সোফার উপর বসলে রতন দা জল নিয়ে এলো। অময় দূরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করতে লাগলো মেয়েটিকে। আঠারো বছরের বলে মনে হয় দেখে....বড় বড় দুটো চোখ, কপালে একটা বাদামি তিল,কোমর ছোঁয়া চুল, সুমসৃণ ত্বক,যত্নে আঁকা ঠোঁট....মেয়েটি যখন মুখ খোলে কথা বলতে ওর গজ দাঁতটা চোখে পড়ে।
"এই দাদাভাই," অবন্তীর ডাকে হুঁশ ফেরে অময়ের।
"আরশি দি কলকাতায় থাকবে এখন থেকে। অশোক কাকু বলে দিয়েছিলেন আমাদের সাথেও একবার দেখা করতে। রবীন্দ্রভারতীতে চান্স পেয়েছে আরশি দি।"
হেসে মাথা নাড়ালো আরশি।
"কোন সাবজেক্ট নিয়ে?"-বলতে বলতে অময় এসে সোফায় বসলো।
"ক্লাসিকাল ডান্স"...আর তুমি ?
অময় উত্তর দেওয়ার আগেই বন্তী বলে উঠলো --"দাদাভাই যাদবপুরে পড়ে। কম্পরাটিভ লিটারেচার।....এই দাদাভাই আমি বেরোলাম।দেরি হয়ে গেছে। আরশি দি, আবার এস একদিন। "--ঝড়ের বেগে কথাগুলো বলতে বলতে বেরিয়ে গেল বন্তী।
"তুমি চা খাবে না কফি ?"--অময় জিগ্যেস করলো।
"এই তো শরবত দিলো অবন্তী"--কথাগুলো কেটে কেটে উচ্চারণ করলো আরশি।
"Actually I'm not good in bengali..."
"আরে ঠিক আছে। সেটাই স্বাভাবিক। তুমি এতদিন ধরে কলকাতার বাইরে থেকেছ। So it's fine...."
"রতন দা, কফি দিয়ো দুকাপ"--অময় চিৎকার করে বললো।
আর্শিকা উঠে দাঁড়িয়ে ঘরময় হেঁটে বেড়াতে লাগলো। অময় আরশির হাঁটা দেখতে লাগলো মন দিয়ে। আরশির হাঁটার মধ্যে একটা ছন্দ আছে।
"তুমি নির্ভানা শোনো?"--আরশি ঘাড় ঘুরিয়ে জিগ্যেস করলো।
"হ্যাঁ...। তবে একটা genre-এ বাধা নয় আমি। সব ধরণের গানই শুনি..."--উত্তর দিলো অময়।
রতন দা পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে তখন। কফি মাগ দুটো টেবিলে নামিয়ে রতন দা বললো-"দাদাবাবু, তুমি তোমার ঘরে নিয়ে যাবে দিদিমনিকে? আসলে ঘর মুছতে আসবে এক্ষুনি।"
অময় ইতস্ততঃ করলেও আরশি হেসে বললো-"আমার কোনো প্রবলেম নেই। চলো না।"
চোখটা খুলতেই ঘড়ির দিকে চোখ গেল অময়ের। ১০টা বেজে গেছে তখন। বুকের ব্যথাও পালিয়েছে। চা-টা মুখে দিয়ে অময় দেখলো চা-টা ঠান্ডা হয়ে গেছে কখন। মুখটাও তেঁতো হয়ে গেছে।
চা-টা গরম করে নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো অময়। খাটের উপর পড়ে থাকা জীবনানন্দ খুলে খুঁজে বের করলো "নির্জন সাক্ষর".....
"তুমি এত বই পড়ো ?" অবাক চোখে তাকালো আরশি।
"তুমি কবিতা পড়ো ? " জিগ্যেস করলো অময়।
"বাংলা পড়তে পারি না তো তেমন। তবে English poems
পড়ি।"
"বাহ! কার কার কবিতা পড়ো ?"
"সেরকম বাধা-ধরা কেউ নেই....তবে Christopher Marlowe -র "come live with me and be my love" বেশ লাগে।"
"বেশ! Would you mind if I?"--সিগ্রেট হাতে নিয়ে ইতস্ততঃ করছিল অময়।
"না না! It's okay! "-হেসে বলল আরশি।
"কোন কুইসিন পছন্দের ?" ধোঁয়া ছেড়ে জিগ্যেস করলো অময়।
"চাইনিজ"--বলতে বলতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো আরশির মুখটা।
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে অময়ের সদ্য ফোটা সূর্যমুখীর কথা মনে পড়লো।
"টেরিটি বাজারের নাম শুনেছিস? .....সরি! আই মিন শুনেছ ?" -অময় হেসে বললো।
জীবনানন্দের ভারী বইটা হাত থেকে নামিয়ে রেখে আরশি দু দিকে মাথা নাড়ালো।
"ওখানে খুব ভালো চাইনিজ খাবার পাওয়া যায়...যাস একদিন! ধুর! আবার...."--অময় এবার সত্যি অপ্রস্তুত হল।
"আসলে তুই is fine....And আমি তো টেরিটি বাজার চিনি না।"--অময়ের দিকে তাকালো আরশি।
"একদিন যাওয়াই যায় তাহলে..."
ফোনটা বেজে উঠতেই ঘোর কাটলো অময়ের। স্ক্রিনে ভাসছে বিভাস ভট্টাচার্য-র নাম। আবার লেখার তাগাদা দেবে! ফোনটা রেখে দিল অময়।বেজে বেজে ফোনটা আবার নিস্তেজ হয়ে গেল।
বাইরে দিয়ে রোদের গরম ভাপ আসছে দেখে জানলাটা বন্ধ করতে গিয়ে গিটারটার দিকে চোখ গেল ওর। রতন দা-র যত্নে জিনিসটা এখনো ঠিক আছে। কিন্তু গত দু বছর ওতে একটাও সুর বাজে নি। জানলা আর বন্ধ করা হলো না ওর। গিটারটা নিয়ে খাটে এসে বসলো। দু বছরের অনভ্যাস! তবুও সেই গলার আবদার এখনো কানে ভাসে।
"ওই গানটা গা না রে ! "--গলা জড়িয়ে বলে আরশি।
"কোনটা?"
"মনে পড়লে অকারণ..."
"তোর এই গানটা এত ভালো লাগে কেন বলতো ?"
ব্যস্ত হাতে এঁটো কফি মাগগুলো সরাতে সরাতে আরশি বলে ওঠে "এই গানটা আমাদেরকে খুব ভালোভাবে ডিফাইন করে তাই....গা না...."
"আচ্ছা বাবা!"....
ঝন করে একটা শব্দ হওয়ায় অময় লক্ষ্য করে যে গিটারের তার ছিঁড়ে গেছে। আঙ্গুলটাও কেটেছে অল্প। তারটা খুলে রেখে গিটারটা জায়গায় রেখে দেয় অময়। খাটে গিয়ে চুপ করে শুয়ে থাকে। আরশি থাকলেই এখন চিৎকার করতো। ওষুধ লাগতো কেটে যাওয়া আঙ্গুল জুড়ে! এসব ভাবতেই বুকের ব্যথা ফিরে এলো আবার। মুঠো ফোনটা আবার তীব্র ঝাকুনি দিয়ে নড়ে উঠতেই রেগে গিয়ে ফোনটা ছুড়তে যায় অময়। কিন্তু নিজে থেকেই হাতটা নেমে যায় আবার....
"রাগ হলে রাগটা আমার উপরই দেখাবি। ফোনের উপর নয়!"মাটি থেকে ফোনটা কুড়িয়ে নিয়ে শান্ত গলায় বলে আরশি।
"Oh ! তা ঠিক কখন রাগ দেখাবো তোকে ? যখন তোর ওই বন্ধুটা তোকে আমি কিরকম সেটা বোঝাবে ? নাকি যখন তোর জন্যে ৪০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পর তুই আমায় কল করে বলবি আজ দেখা করতে পারবি না ! বল ! "---হাঁফাতে থাকে অময়....
"অময় গাঙ্গুলি, তোকে বোঝার জন্য আমার কারুর প্রেডিকসনের দরকার পড়বে ? হ্যাঁ! পাগল একটা! আর দাঁড় করিয়ে রাখার জন্যে কতবার সরি বলেছি বল! ---আরশি এগিয়ে এসে অময়কে জড়িয়ে ধরে। অময় নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে আরশি কেঁদে ফেলে।
"ব্যাস! হয়েছে! চুপ!" -অময় আরশির মুখ তুলে কপালে চুমু খায়....
ফোনটা বিপ করলে অময় অন করে দেখে----এর মধ্যে বন্তীর চারটে কল আর পাঁচটা মেসেজ ঢুকেছে।
অময় রিং ব্যাক করতেই ওপার থেকে বন্তী চিন্তিত সুরে বললো-"দাদাভাই কতবার কল করেছি! কোথায় তুই! ঠিক আছিস? "
"হ্যাঁ! ঠিক আছি আমি! কি হবে আমার পাগল? " জোর করে হাসার চেষ্টা করে অময়।
"খেয়েছিস কিছু ? তিনটে বাজতে চললো! "
"এই খাবো। খাবার আনিয়েছি।"
"ঠিক আছে ।খেয়ে নিস"-অবন্তী ফোন রাখে।
বোনকে মিথ্যে বলতে খারাপ লাগে অময়ের। কিন্তু সত্যি এখন খেতে ইচ্ছে করছে না ওর। কবিতা পড়ার চেষ্টা করেও মন বসাতে পারলো না ও। কানে ভাসতে লাগলো সেই কান্নাজড়ানো শব্দগুলো....
"I can't live without you.... Don't leave me....Please! "
আরশি জড়িয়ে ধরতে গেলে ওকে সরিয়ে দিয়ে ঠান্ডা গলায় অময় বলে--"অনেক ভেবচিন্তেই এই ডিসিশন নিয়েছি আমি।আমার মতন একটা ভ্যাগবন্ড তোকে ডিসার্ভ করে না! তোর এত bright prospect! আর আমি ? কলজেতে কলকের ধোঁয়া না গেলে লেখা অব্দি বেরোয় না আমার হাত দিয়ে ....আর তুই আমার সাথে নিজের ভবিষ্যৎ ভাবিস ...আমাদের সম্পর্কটা এখন ওই বাধা-নিষেধের ঘেরাটোপেই আটকে গেছে আরশি! It's better to part our ways here! Else Sooner or later it will get more bitter! Let's depart now..."
অময়ের বুকে মনে হয় যেন কেউ পাথর রেখে দিল। মন হালকা করতে উঠে মিউজিক সিস্টেমে গান চালালো ও। কানে ভেসে এলো..."take me back to the start!".....
হঠাৎই কলিং বেলের স্বয়ংক্রিয় পাখিটা ডেকে উঠলো। গত দু বছর ধরে কলিং বেলের আওয়াজটা একই আছে ...আরশির পছন্দের।বেলের শব্দ শুনে একটু বিরক্তই হলো অময়। খাটেই শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো যদি সব কিছু আবার রিভার্সে ফিরিয়ে আনা যেত! আবার বেলের শব্দ শুনে বিছানা ছাড়তেই হলো ওকে। দরজা খুলে দু পা পিছিয়ে এলো অময়....কথা বলতে গিয়ে তুতলে গেল ও...."আরশি..I mean Arshika....তুই এখানে ?"...
"ভিতরে আসতে বলবি না ?" -শান্ত স্বরে উত্তর দিলো আরশি।
"হ্যাঁ,প্লিজ আয়"-অময় অপ্রস্তুত হয়ে বলল।
''দরজা থেকে সরলে তো আসবো"--খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে আরশি। দুবছর পরও কোনো শব্দ যে এতটা কাছের থাকতে পারে সেটা অময় আজ বুঝতে পারলো।
ঘরে ঢুকেই আরশি পা চালিয়ে অময়ের রুমে গিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো.....
"একি অবস্থা! এতগুলো এঁটো কফি মাগ! সিগ্রেট-এর ছাই ছড়িয়ে আছে এমন করে! "
"আমি পরিষ্কার করে নেব....তুই রাখ না। "---অময় এগিয়ে আসে।
আরশি বলে ওঠে --"হয়েছে! সর.."
"আরশি তুই কেন হঠাৎ...মানে এইভাবে!''
"Listen Amoy Ganguli,....I've been respecting your decision for a very long time and now I've decided that I'll take the decisions from now on and you will respect them.. do you get that ?"--পায়ে পায়ে অময়ের দিকে এগিয়ে আসে আরশি। অময় লক্ষ্য করে আরশির চোখদুটো....রেগে গেলে বরাবর ওগুলো বড় বড় হয়ে যায়...নাকটাও লাল হয়ে যায় ওর। ও এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে আরশিকে।
"অময়, আমরা শেষ থেকে শুরু করতে পারি না আবার ?"
অময়ের চোখের কোল ভিজে যায়। ওর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল আরশির চুলে এসে পড়ে। আরশি মুখ তুলে অময়ের মুখের দিকে তাকায়। ওর চোখদুটোও ভিজে গেছে অজান্তেই।
"অময়!"-আরশি ঘন স্বরে বলে।
"উমম?!"--আরশিকে আরো জাপটে ধরে অময়।
"এইবার ছাড়! আমি ফ্রেশ হবো তো।"--আরশি হেসে বলে।
"Five mins more please. Let me get used to of this scent again"--অময় আরশির চুলে মুখ ডোবায়।
"অময় ,ওই গানটা গা না! "-আরশি অময়ের বুকে মাথা রেখে বলে। অময় আরশির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে--"কোনটা?"
"And I love you so..." -আরশি গেয়ে ওঠে।
"আরশি, you smell nice tonight. Should I take it as a hint of something?"--অময় আরশির দিকে ঘুরে শুয়ে বলে।
You still are so idiot Amoy Ganguly!"--আরশি জোরে হেসে ওঠে।
"Am I?"-অময় হঠাৎই আরশির হাতদুটো ধরে উঠে বসে। তারপর ওর কপালে,গালে, ঠোঁটে চুমু খায়।
"অময়!"-আরশি হাসতে থাকে।
"I don't wanna waste tonight. I love you Arshika!"--অময় আর্শিকার নাভিতে চুমু আঁকে।
ভোররাতে অময়ের যখন ঘুম ভাঙে দেখে আর্শিকা ওর ঢলঢলে টি শার্টটা পরে ঘুমোচ্ছে। এই দৃশ্যটা কি মিস করেছে অময়। কি নিষ্পাপ লাগছে আরশির মুখ। ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর কপালে একটা চুমু খায় অময়। তারপর আবার নিজের জায়গায় গিয়ে শুয়ে আর্শিকাকে জড়িয়ে ধরে। আর্শিকা চোখ বুঁজেই বলে --"এখন গানটা গা।
অময় গেয়ে ওঠে--"and i love you so"......