Shihab Khan

Drama Inspirational Others

3  

Shihab Khan

Drama Inspirational Others

আমজাদের কওট-প্যন্

আমজাদের কওট-প্যন্

4 mins
8


বড় সাহেব বেল বাজালেন। শব্দ শুনেই আমজাদ হোসেন দৌড় দিলেন।


স্যার, কি লাগব আপনের?

বাইরের টং থেকে এক কাপ রং চা নিয়ে আসেন তো।

জ্বি, স্যার।আর কিছু?

না। এই নিন টাকা।


সাহেব পকেট থেকে একশো টাকার একটা নোট বের করে দিলেন। আমজাদ হোসেন নোট টা নিয়েই রওনা হলেন টংয়ের দিকে। 


এই মন্টু , সাহেবের জন্য এক কাপ রং চা আর একটা পান দে তো।পান টা কিন্তু আমার।

আইচ্ছা চাচা। 


আমজাদ সাহেব বড় সাহেবের দেওয়া একশো টাকার

নোট টার কথা ভাবছিলেন। পাঁচ টাকার চায়ের জন্য একশো টাকার নোট। একেই বুঝি বলে বড়লোকী কারবার।এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই চা হয়ে গেল।


চাচা, এই নেন চা আর এই নেন পান ।

এই নে, চায়ের টাকাটা রাখ আর আমার পানের টা খাতায় লেইখা রাখ।

চাচা খুচরা নাই?


চা নিয়ে আমজাদ চলে আসলো বড় সাহেবের কাছে।


স্যার এই যে আপনের চা। আর এই যে টাকা।

কি ব্যাপার? একশো টাকার নোট?

স্যার দোকানির কাছে খুচরা ছিল না।

এই নেন খুচরা দিয়ে আসেন।

স্যার আমি দিয়া দিছি। লাগব না স্যার, অসুবিধা নাই।

আমজাদ চাচা, কি বলে যে ধন্যবাদ দেব। এই নেন একশো টাকা টা রাখেন।


এই বলেই বড় সাহেব তার পকেটে নোট টা গুঁজে দিলেন। আমজাদ হোসেন মুখে না নিতে চাইলেও মনে মনে খুশি হলেন। এই টাকা টা পেয়ে সে চলে আসে টং টায়।বড় সাহেবের চায়ের বিলসহ নিজের বাকি টাকাগুলো দিয়ে দিলেন। তার কাছে রইল ষাট টাকা। জুতা জোড়া সেলাই করলেন।দশ টাকা কমে রইল পঞ্চাশ টাকা। নিজের মাটির ব্যাংকে টাকাটা রাখলেন।


আমজাদ হোসেন একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে

পিওনের কাজ করেন। বয়স ষাটের কাছাকাছি। লেখাপড়া করতে চাইলেও অর্থের অভাবে করতে পারেননি। কোনমতে সই করাটা শিখেছেন। চোখের সমস্যা তাই পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করতে হয়। বিয়ে করেননি। এক রুমের একটা বাসায় ভাড়া থাকেন। যা বেতন পান টেনে হিচড়ে চলে যায়। ছোটকাল থেকেই তার একটা স্বপ্ন আছে। তিনি জীবনে একবার হলেও সাহেবদের মতো কোট-প্যান্ট পড়তে চান। তবে ভাড়ায় নিয়ে নয়। নিজের টাকায় কিনে। তার এই স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি মাটির ব্যাংকে নিয়মিত টাকা জমান। 

তার এ স্বপ্ন পূরণের জন্য ছোট বেলা থেকে তিনি কত কষ্টই না করেছেন। ছোট থেকে এখনো পর্যন্ত চতুর্থবারের মতো টাকা জমিয়ে যাচ্ছেন। তবে নানা কারণে প্রত্যেকবারই তার স্বপ্ন বৃথা গেছে। 

প্রথমবারের কথা বলা যাক,

ছোটবেলায় একবার আমজাদদের সংসারে অনেক অভাব দেখা দেয়। ধার-দেনাও হয় অনেক। ধার পরিশোধ করতে টাকার দরকার ছিল। বাবার চোখ পড়ে‌ আমজাদ হোসেনের ব্যাংকের উপর।ব্যাস, ফেললেন ভেঙে। আমজাদের বয়স তখন বারো-তেরো

হবে হয়তো। মানুষের বাড়িতে টুকটাক কাজ করে আর স্বজনদের থেকে টাকা পেয়ে জমিয়েছিলেন। নিজের চোখের সামনে ভেঙে গেল তার স্বপ্ন। চোখে পানি এসে গেলেও কাউকে বুঝতে দেননি। 


 দ্বিতীয় বারের ঘটনা,

বাবা‌ মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন আমজাদ।জন্মের আগেই দাদা মারা গেছেন। যখন দাদি মারা যায় তখন তার বয়স ষোল হবে। দাদির অনেক আদরের ছিলেন। একমাত্র নাতি বলে কথা। সেদিন কেঁদেছিলেন অনেক। এর দু বছর পরই নদীতে মাছ ধরার সময় সাপের কামড়ে বাবা মারা যায়। আচমকা এ মৃত্যুর শোক সহজে কাটে না। বাবা মরার পর মায়ের দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। আঠারো বছর বয়সেই শুরু করেন কাজ করা। এসবের মাঝেও নিজের স্বপ্নের কথা ভুলে যাননি। মাটির ব্যাংকে জমাতে থাকেন টাকা। তবে তার বাবার রেখে যাওয়া ধার মেটাতে এবারও জলাঞ্জলি দিতে হয় তার স্বপ্নের। না পারলেন কাউকে বলতে না পারলেন সইতে।


তৃতীয় বারের কাহিনী,

দেখতে দেখতে বয়স পেরিয়ে গেল চল্লিশ। মায়ের বয়সও অনেক হয়েছে। অসুস্থ হয়েছেন তার মা। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য শহরে নিয়ে গেলেন।কিন্তু ডাক্তার দেখাবার মতো টাকা নেই। নিজের কোন সম্পত্তি নেই। মাটির ব্যাংকের টাকাও যথেষ্ট নয়। শেষমেষ বাবার রেখে যাওয়া ভিটা-বাড়ি বিক্রি করলেন মায়ের চিকিৎসার জন্য। সব টাকা শেষ হয়ে গেল। তবে শেষ রক্ষা হলো না। মাকেও বাঁচানো গেলো না। আর গ্ৰামে ফিরে যাননি। এই অফিসের আগের বড় সাহেবের হাতে পায়ে ধরে চাকরিটা জোগাড় করেন। বড় সাহেব লোকটা খারাপ ছিলেন না। আমজাদের কষ্টের কথা শুনে সে চাকরিটা দিয়ে দেন। তারপরেই তিনি এ বাসায় উঠেন।


এইবারের মাটির ব্যাংকটাই চতুর্থবারেরটা। এইবারেরটায় যত টাকা রেখেছেন তার হিসাব রেখেছেন। হিসাব করে দেখলেন এখনও পর্যন্ত ৭৫০৬ টাকা জমা হয়েছে। কয়েকদিন আগে একটা ফিক্সড প্রাইজের মার্কেটে গিয়ে একটা কোট-প্যান্টের সেট পছন্দ করে এসেছেন। যার দাম ছিল ৭৫০০ টাকা।

 এবার তাকে ঠেকায় কে। তার মুখে রাজ্যের হাসি।নিজেকে নিয়ে গর্ব করতে লাগলেন। হাসতে হাসতে কেঁদে দিলেন। কাঁদলেন সুখের কান্না।‌ ঠিক করলেন কালকেই যাবেন তার স্বপ্ন কিনতে। রাতে ঘুম আসলো না। সারারাত ছটফট করলেন। স্বপ্ন বোধহয় এটাই যা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মানুষকে ঘুমাতে দেয়না। ভাবলেন কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে স্বপ্ন পূরণের জন্য। তিনি চাইলে টাকা ধার করে কিনতে পারতেন। কিন্তু তাতে তার আত্মার শান্তি হতো না। 


সকালে অফিসে গেলেন। কিন্তু কোনো কাজেই মন বসে না। জীবনে কোনদিন অফিস থেকে ছুটি নেননি। তবে এবার নিতে হলো বড় সাহেবেও তার মনের অস্থিরতা বুঝলেন। দিয়ে দিলেন ছুটি। যাওয়ার সময় মন্টুর দোকান থেকে চা খেলেন। মন্টুকে বিদায় জানালেন। আমজাদ হোসেনের জীবনে তিনি এত খুশি হয়েছেন বলে মনে হয় না। 


মার্কেটে যাওয়ার জন্য বাসে উঠলেন। মনে মনে ভাবলেন, আজ থেকে তিনিও বড়লোক হবেন। সবাই তাকে দেখে অবাক হবে। হয়তো লোকে তাকে সাহেব ডাকবে। তার অফিসের বড় সাহেব হয়তো তাকে দেখে অবাক হবেন। হয়তো এটা,হবে হয়তো ওটা হবে আরো কত কি। কিন্তু স্বপ্ন নামের বস্তু সবার জীবনে ধরা দেয় না। হঠাৎ করেই আমজাদ হোসেনের সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল। বাসটা ভারসাম্য হারিয়ে উল্টে গেল। আমজাদ হোসেনের শেষ রক্ষা হলো না। বাসের নিচে পরে প্রাণ হারালেন। শেষ পর্যন্ত তাকেও হার মানতে হলো। আর তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল........


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama