গোধূলি
গোধূলি
এখন আমি পড়ন্ত বিকেল ,
নেই কোন তাপ,নেই কোন তেজ
ঔজ্জ্বল্যও বুঝি কমে এসেছে কিছুটা।
কিন্তু গোধূলি বেলার এই আলোর ছটা-
অপরূপ, মনোরম - সকলের মনলোভা।
যখন ভোরের আলোর মতো
প্রস্ফুটিত হচ্ছিলাম-
তখন ছিলাম নরম মোলায়েম,
আধো আধো বুলি,টলমল চলা,
মায়ের সাথে লুকোচুরি খেলা।
উচ্ছল যৌবনের জৌলুসে ধীরে ধীরে
হলাম উজ্জ্বল,ঝলমলে,দীপ্তমান,
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে প্রবেশ,
ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্ন আঁকা চোখে-
সদ্য যুবকের ছিল প্রেমের আবেশ।
মধ্যগগনের আমি অপরাহ্নের রবির
লেলিহান শিখার মতোই প্রখর,
সব দায়-দায়িত্ব সম্পন্ন মাঝবয়সী
কিছুটা গম্ভীর-কিছুটা পরিণত,
মাথায় সংসারের সব দায়-দায়িত্ব।
বৃদ্ধ বাবা-মা’র পরিচর্যা থেকে-
সন্তান কে উচ্চশিক্ষার
সোপান চড়ানো,
নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই থেকে
ভবিষ্যতের রূপরেখা বানানো।ছোট রেঁস্তোরার বন্ধ কেবিনে বসে
মোগলাই খাওয়া,
ছোট ছোট খুশিতে
সব আনন্দ খুঁজে নেওয়া।
অর্ধাঙ্গিনীর ছোটখাটো
শখ-আহ্লাদ পূরণের সাথে
কিছু কাছে পিঠে ঘুরে বেড়ানো,
অতীতের সে সব দিন
মধুর স্মৃতি জড়ানো।
আজ মাথার কেশে ধরেছে
রূপালী আভা,
চোখের কোণে পড়েছে বালিরেখা।
হাত-পা আগের থেকে বুঝি
একটু শিথিল হয়ে পড়েছে,
কিছু ওষুধও নিত্যদিনের সঙ্গী হয়েছে।
কিন্তু আমার সাদা চুল আজ অভিজ্ঞতার পরিচায়ক,
আজ আমি ধীর স্থির,
কিন্তু আমি পরিণত।
আমার চশমা পরা চোখের দৃষ্টি
ক্ষীণ হলেও সেই চোখ দিয়েই
সবার মন পারি পড়তে,
বুঝতে পারি কে কি চায় বলতে!
বিচার করতে পারি ভালো-মন্দ।
আজ আমি দায়িত্বমুক্ত-
সন্তানেরা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত।
আজ আমি স্বাধীন,
আজ আমি নিজের ইচ্ছে মতো
কাটাতে পারি সারাদিন।
যত অপূর্ণ সাধ-শখ-আহ্লাদ
সব একে একে করছি পূরণ,
বাড়ি- গাড়ী কেনা থেকে-
প্লেনে চড়ে করছি বিদেশ ভ্রমণ।
নেই অফিসে যাবার তাড়া
নেই ছুটির চিন্তা ,
বন্ধুদের সাথে প্রাণ খুলে
পার্কে বসে দেই চুটিয়ে আড্ডা।
আজ জীবন সাথীর ছায়াসঙ্গী
হয়ে থাকি সর্বক্ষণ।
চোখে এখনো রঙিন স্বপ্ন,
সত্তরের চনমনে তরুণ-
মনে অনুভবি নব যৌবন।
হৃদয় ভরা রোমান্স আর
প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা।
আজ আমি সবার প্রিয়-
কবির বর্ণনার সেই গোধূলি বেলা।