বেরঙীন
বেরঙীন
প্রিয় পলাশ ,
সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি ওরা হাজির । সবাই মিলে বেদীটা পরিস্কার করে ধুয়ে মুছে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আলপনা আঁকায় ॥
বুকটা ধ্বক্ করে উঠলো । তাহলে কি কাল আবার একটা দোল !
কাল সারাদিন , আমার দেহটাই এখানে পড়ে থাকবে , ছিটানো আবীর এসে পড়বে আমার গায় , কিন্তু মনটা চলে যাবে সেই তোরই কাছে ॥
প্রতিবারের মতো তুই অভিমান করবি , কথাই বলতে চাইবি না আমার সঙ্গে । বড্ডো অবুঝ তুই , আমার না আসতে পারার অক্ষমতাটাকে একটুও বুঝতেই চাস না !
পাশাপাশি বড়ো হয়ে ওঠা দুজনের । যদিও তুই আমার থেকে পাক্কা তিন বছর , দু মাস সতেরো দিন বড়ো , তোর কাছ থেকেই হিসেবটা পাওয়া ।
দুজনের কত্তো গল্প , খুনসুটি করে কথায় কথায় ঢলে পড়তিস আমার গায়ে । আমার কিন্তু লজ্জা করতো খুউব । আর দোল এলে তোর যেন রঙের নেশা লেগে যেত । আমার সারা গায়ে এঁকে দিতিস্ ফুলের আলপনা । আর স্কুলের বাচ্ছাগুলো ফুলগুলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে মালা গেঁথে মেতে উঠতো দোল-ফাগুয়ার রঙে । জানিস্ আমারও খুব ইচ্ছা করতো , তোর ফুল দিয়ে তোকেই মালা গেঁথে পড়িয়ে দিই ॥
হঠাৎ করেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এলো সেই দিনটা । বড়ো করে একটা বেদী বানাবার জন্য জায়গা লাগবে , স্কুলের অনুষ্ঠানগুলো এবার থেকে এখানেই হবে ॥
মনে আছে তোর , সেদিন সারা রাত দুজন দুজনকে জড়িয়ে কেঁদেছি ॥
পরের দিন ছিলো দোল । দুপুরের দিকে দোল আর পলাশ রাঙা রক্ত এক হয়ে গিয়েছিল , আমারই চোখের সামনে ॥
সেই থেকে একা দাঁড়িয়ে আছি বেদীটার এক পাশে । শুধু দোলের দিনটা আর থাকতে পারি না , আশ্রয় নিই তোর মনের নিভৃতে ॥
সেই থেকে দোল বড়ো বিবর্ণ , বড়ো বেরঙীন - বে তাজ ॥
ইতি
তোর " মহুল "