bid sonu

Drama Horror Romance

3  

bid sonu

Drama Horror Romance

টোপের মাছ (part-1)

টোপের মাছ (part-1)

11 mins
241


Hallo.. নমস্কার। আমি মরিস। আপনি কেমন আছেন। ঘরের সবাই ভাল তো। সবকিছু ঠিকঠাক। কোন অসুবিধা নেই তো। চিন্তা নেই, থাকলেও আমি সাহায্য করবো না। কিন্তু আপনি যদি মরে যান। তারপর সম্ভব হলে সাহায্য করবো। তো, জীবন্ত অবস্থায় কেমন আছেন। আপনার পরিবারের সবাই ভালো আছে তো। সবাই ঠিকঠাক। তাদের কোন অসুবিধা নেই তো। জীবনে দুঃখ ভরে ভরে আছে তো। ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি কিরকম চলছে কতগুলো খেলে কতগুলো দিলে। গালাগালি রোজ দিচ্ছো তো, ফেসবুকে, টুইটারে। যদি না দিয়ে থাকো তাও ভালো কোন অসুবিধা নেই তাতে। তাহলে একটা কথা বলছি তোমাকে নিজের মনে করে বলছি কিন্তু। তুমি এখনকার স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে পড়ছো না। ডাক্তার দেখাও তাড়াতাড়ি। চাইলে একটা দুটো ডাক্তারের নাম সাজেস্ট করতে পারি।

ডাক্তারের নাম মরিস দাস। আরে অবাক হবেন না। আমি একজন ভালো psychiatrist ( সাইকিয়াট্রিস্ট )। আর আমার একটা বড় মাপের লাইব্রেরী আছে। একরকম মালিক কি বলতে পারেন। এইসব কাজ করেই, দিন কেটে যায়। তারপর শুরু হয় রাত। আমি একটা গল্পের বই নিয়ে বসে পড়ি। তাতে থাকে মরে যাওয়া মানুষদের। প্রেমের গল্প, ভয়ের গল্প, পাপের গল্প। আর তাদের জীবন কাহিনী। এই যে যারা মরে যায় তারপরে আবার নতুন করে জন্ম নেয়। তারা তো সবই ভুলে যায়। বা যারা জন্ম নিতে পারে না। তাদেরও জীবনের সব ঘটনা লিখে রাখতে হয়। এসব ঘটনা ভুলে গেলে চলবে না। উপর থেকে odder দিয়েছে। এইসব গল্পকে স্টোর করে রাখতে হবে। আমার কাজ হলো ওই সব গল্প ঠিক ভাবে store হচ্ছে কিনা। সব কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা। সেগুলো দেখাশোনা করা। আমি ওই সব গল্পের মধ্যে থেকে কিছু গল্প বেঁচে নিয়ে। তুলে রাখি আমার বিশেষ খাতায় তারই মধ্যে। আজ তার থেকে একটা গল্প বলবো তোমাকে। এই গল্পটা আমায় এক মহিলা শুনিয়েছিল। তিনি আর দ্বিতীয়বারের জন্ম নেয়নি।


গল্পটা হল সমরের। এটা ঠিক যে এটা ওর আসল নাম নয়। আসল নামটা আমি বলবো না। যদি তোমরা কেউ চীনে যাও। সমর বাংলাদেশের এক পাড়াগাঁয়ে থাকে। যেখানে বিদ্যুৎ কি জিনিস তা কেউ জানে না। ওরা লন্ঠনের আলোয় প্রদীপের আলোয় সময় কাটায়। ওরা সাতটার সময় ঘুমিয়ে পড়ে। আর ভোররাতে উঠে পড়ে। এর মানে এই যে, তোমরা যখন ঘুমাতে যাও। ওরা তখন ঘুম থেকে ওঠে। এরকমভাবে সবাই চলে। ছোট-বড় বাচ্চা ছেলে মেয়ে সবাই। সমরের বয়স তখন 8 কি 9 বছর। সমরও অন্যান্য ছেলে মেয়েদের মতন তার বেশিরভাগ সময় কাটে। মাঠে ঘাটে ঘুরে বেরিয়ে। খেলাধুলা করে, কখনো আবার মাছ ধরে। এরকম নানান রকম কাজ করে। তখন স্কুল পড়াশোনা তাদের ছিলো না। সমর খুব ভালো মাছ হতে পারতো। তাই যখনই সুযোগ পেত। ও আর ওর দুই বন্ধু মিলে চলে যেত মাছ ধরতে। সেই জায়গাটা দূরে হোক বা কাছে, ভালো হোক বা খারাপ। কিছুই তোয়াক্কা করত না। ওর বাবা দাদু সবাই চাষী। ওকে মাছ ধরা শিখিয়েছিল, ওর এক মামার ছেলে। সমরের ঘরে তারই ধরা মাছ রান্না হত। সমরের পছন্দের জায়গাটা হল ভিমরুলের ঝিল। এখানে বেশি কেউ মাছ ধরতে যায় না। তাই ভালো আর বেশি মাছ ওঠে। জায়গাটা গ্রাম থেকে বেশ দূরে। ভিমরুলের ঝিলটা এমন জায়গায় যে লোকে ওই ঝিলের পাশ দিয়ে যাওয়া-আসা করতেই হয়। যাওয়া আসা করা সত্ত্বেও সবাই ভয় পায় বলে এই ঝিলে নাকি ভূত আছে। ঝিলের সামনে দিয়ে অনেকেই যাওয়া আসা করে কিন্তু কেউ ব্যবহার করার সাহস পায় না ঝিলটা দুটি গ্রামের মাঝে পরে। কেউ ব্যবহার করে না। এই সুযোগে ঝিলের ওপর বড় বড় মাছ জন্মায়। এই জন্য এই জায়গাটা ও প্রায় দিন মাছ ধরতে আসে। এই ঝিলটা কে সবাই একটু এড়িয়েই চলে। সবার মনে একটা বিশেষ ভয়। আছে একটু শ্রদ্ধাও। আশেপাশে যত গ্রাম আছে সবাই বিশ্বাস করে। এই ঝিলে নাকি অপদেবতা বাস করে। ঝিলের জল নাকি কখনো শুকায় না। এই ঝিলটি কে নিয়ে ভয় বাড়ে কারণ। অনেককাল আগে চাটুজ্জে বাড়ির বউ জলে ডুবে আত্মহত্যা করে। তারপর থেকে সবার মুখে একটাই কথা। চ্যাটার্জি বাড়ির বউ নাকি ওই সাতজন কে মেরেছে। চাটুজ্জে বাড়ির বউ মারা যাবার এক বছরের মধ্যে। সাতজন পুরুষ মারা যায়। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, এরা সবাই একে অপরের চেনা পরিচিত। এর ফলে একটা খবর ছড়ায় যে। এই ঝিল নাকি মানুষের ইচ্ছে পূরণ করতে পারে। যে সাতজন মারা গেছে তারা নাকি। চাটুজ্জে বাড়ির বউ, বিধবা হবার চারদিনের মাথায়। ওই লোক গুলো মিলে নাকি শ্লীলতাহানি করে। ওই বিধবার পরিবারে আগে-পিছে পিছে কেউ নেই। বিধবা একা। তাই একসাথে তার জীবনের এত বড় দুটো ধাক্কা নিতে পারেনি। তাই ভিমরুলের ঝিলের জলে আত্মহত্যা করে। এই ঝিল নাকি ওই বিধবার প্রতিশোধ নিয়েছে।


অনেকেই প্রতিশোধ কে, কিছু লোক ইচ্ছেপূরণ ভেবে নিয়ে। সবার মনের লোভ প্রচুর। তাই সবাই গিয়ে ঝিলের জলে ডুব দেয়, ইচ্ছে পূরণের আশায়। তারই মধ্যে একটি ঘটনা ঘটে যায়। একটি লোক নিজের বউয়ের সাধের কাজে জলে নেমেছিল। কিন্তু জল থেকে উঠে আসার আগেই। দিনের আলোয় সবার চোখের সামনে লোকটিকে কে। যেন পা ধরে টেনে নিয়ে চলে যায় জলের গভীরে। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পরও উদ্ধার করা যায়নি। পাঁচ ছয় দিন পর জলের উপর ভেসে ওঠে লোকটির দেহ। লোকে বলে নাকি লোকটি নতুন বিয়ে করার লোভে। তার বউকে বিষ খাইয়ে মারে। তাই এটা ওর বউ এর বদলা। এই ঘটনার পর সবাই মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে লোকে এই ঝিল থেকে দূরে দূরে থাকতে শুরু করে। লোকে জলে নামা বন্ধ করে দেয়। এক বুড়ো বলে। এই ঝিল তোমার ইচ্ছে তখনই পূরণ করবে। যখন তুমি যখন জলের মধ্যে ডুব দেবে তখন তোমার শরীর সেই জল থেকে বেরিয়ে আসবে কিন্তু তোমার আত্মাটা নয়। তোমার ইচ্ছে তখনই পূরণ হবে। যখন ইচ্ছে শক্তি প্রবল হবে। কিন্তু লোভ চলবে না। এইসব কারণে ঝিলের ব্যবহার লোকে বন্ধ করে দেয়। লোকে ঝিলটি কে লোকে যতটা ভয় পায়। ততটা সম্মান করে। মানুষের মনে সবসময় লোভ ও পাপ থেকেই যায়।


এরকম গল্প অনেক শুনেছে সমর। কিন্তু কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে কেউ জানে না। এসব কথায় কান না দেয় না সমর।

এইরকম ভাবে দিন কাটছিল সমরের। সমর প্রায় দিন ভিমরুলের ঝিলের পাশে এসে বসে থাকে কখনো একা কখনো বা বন্ধুদের সাথে কখনো চুপচাপ বসে থাকে কখনো মাছ ধরার সরঞ্জাম তৈরি করে কখনো মাছ ধরে ওরা ভূতের হাত থেকে বাঁচতে লোকে যেসব পুরনো ঠাকুর ঝিলের পাড়ে ফেলে দিয়ে যেত সেইসব দিয়ে আশেপাশে ঘেরা মত বানিয়ে নিয়েছি যাতে ওরা ভূত দেখলে ভূতকে ওরা ঠাকুর দেখাতে পারে ঠাকুরের মূর্তি গুলো কে একপাশে রেখে বসে মাছ ধরে যদি কোন বিপদ হয় ঠাকুরের মূর্তি গুলোর কাছে দৌড়ে পালাতে পারে ঠাকুরের মূর্তি কাছে বসে মাছ ধরা যায় না তাই একটু দূরে গিয়ে মাছ হতে হয় তার উপরে যদি কেউ দেখে নেয় ঠাকুরের পাশে বসে মাছ ধরছে তাহলে বিপদ এটা হবার সম্ভাবনা কম তাও দূরত্ব বজায় রাখতে হয় যাতে কিছু হলেই দৌড়ে ঠাকুরের কাছে যেতে পারে

যখন ওর 11 বছর বয়স হল। তখন থেকেই ওর পরিবার নানান রকমের চাপ সৃষ্টির শুরু করে। ওর ওপর এখন ওকে বাবা দাদার সঙ্গে কাজে যেতে হয়, মাঝে মাঝে। আবার ঘরের কাজে সাহায্য করতে হয়। এখন আর মাঠে ঘোরাফেরা, ঝিলে গিয়ে মাছ ধরা হয়ে ওঠে না আজকাল। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল ওর বাবা অসুস্থ তাই সমরকে কাজের হাল ধরতে হয়। এছাড়া এর একটা বিশেষ কারণ হলো, লোকের নানান রকম কথা বলে। একটা ভূতের ভয় তো আছেই। পরিবারের চিন্তা হয়। এসব নিয়ে কখন কি ঘটে যায় কে জানে। আসলে কিছু লোকই থাকে যারা মানুষকে সুখী দেখতে পারেনা। তাই লোকে আনন্দটা কিভাবে মাটি করা যায়। এইসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। প্রায় দিন সমর শুনতে পায়, কিগো তোমায় ছেলেকে বিয়ে দেবে না। বড় হয়ে গেল তো। জানো এখানে অমুক জায়গায় অমুক পাত্রী আছে, খুব ভালো মেয়ে বলতো কথা বলব। সমর বিয়ে কি জিনিস জানে না। ওর মনে হয় বিয়ে হলেই লোকে পাল্টে যায়। যেমন ওর দাদা পাল্টে গেছে। সমর জানে না প্রেম কি জিনিস। অনেকের কাছে শোনে কিন্তু বুঝতে পারেন না। এইসব নানান রকম কথাবার্তা সমরের মনটা খারাপ করে দেয়। তাই কিছু সময় একটু আলাদা কাটাতে চায়। তাই চলে যায় ভিমরুলের ঝিল এর কাছে গিয়ে বসে থাকে। ঝিলের পাড়ে জলের দিকে তাকিয়ে থাকে। সমর কিছু একটা ভাবছে জলের দিকে তাকিয়ে। ঠিক তখন ওর চমক ভাঙ্গে। হঠাৎ যখন জলটি নড়ে ওঠে। সমর দেখে কেউ যেন জলের উপর ঢিল ছুড়ছে। তাকিয়ে দেখি একটি মেয়ে দাড়িয়ে। মেয়েটিকে সমর চেনে। মেয়েটির নাম ফুল। মেয়েটিকে সে আগেও দেখেছে। প্রায় সময় বিকেলের দিকে। ঝিল পাড়ে বড় গাছটার তলায় বসে থাকে। চুপচাপ কোন কথা বলে না মনমরা হয়ে বসে থাকে সবসময়। বয়স আন্দাজ 8 কি 9 বছর হবে। দেখে মনে হয় ফুল আজ কোন এক কারনে খুব খুশি। আজ এই রূপ দেখে অবাকই হল সমর। এর আগে তো নয়। তাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। ফুল সমরের দিকে তাকিয়ে বলল, কি দেখছো গো ওরম করে। সমর একটু থতমত খেয়ে গেল। তারপর কিছু বলতে যাবে। তার আগে ফুল বলে উঠলো। জানো আজকে না আমি খুব খুশি। কোমর দুলাতে দুলাতে গলায় একটা সোনার চেন ( হার ) দেখিয়ে বলল। এই দেখো, এটা আমার মা আমাকে দিয়েছে। এটা মাকে মায়ের বাবা দিয়েছিল। এখন এটা আমার এই আনন্দে একটু নাচানাচি করছিল। হাতে একটা ভাঙ্গা গাছের ডাল সেটা নিয়ে বারবার ডানদিকে বাদিকে ঘোড়ার ছিল। এই সব কথা শোনার পর। সমর আবার নিজের মত বসে থাকে। ঠিক তখন ফুল চিল্লিয়ে ওঠে। ফুলের দিকে তাকাতেই ফুল বলে ওঠে। আমার গলার হারটা জলের মধ্যে পড়ে গেল। জানিনা কিভাবে গলার হারটা খুলে এই ডালের উপর আটকে গেল। আমি জোরে নাড়া দিতেই জলের ওপর গিয়ে পরলো। সমর জলের দিকে তাকিয়ে দেখে। যেখানে পড়েছে জলের ওপরে তরঙ্গটা এখনো বোঝা যাচ্ছে। সমর উঠে দাঁড়ালো দেখে। ততোক্ষণে ফুল প্রায় কেঁদে দেবে অবস্থা। তার চোখ দুটো ছল ছল করছে জলে। সমর নিজের পাঞ্জাবীটা খুলে পাশে রেখে জলের নেমে যায়। তখন দেখতে পায় ফুলের চোখে ফোটা ফোটা জল। ওই অবস্থায় বলে, গলার হারটা যদি না পাই তাহলে বাবা অনেক মারবে। সমর ডুব দেয় জলে। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর। সমর হাত উঁচু করে দাঁড়াতেই দেখা যায়। সমরের হাতের মধ্যে সেই গলার হারটা। এই দেখে ফুল একটু লাফিয়ে ওঠে সমর জল থেকে উঠে আসে। তারপর ফুলের হাতে, গলার হারটা ধরিয়ে দেয়। তখন ফুল বলে ওঠে, একটু পরিয়ে দেওনা না গো। নাহলে আবার খুলে যেতে পারে। পরে যদি হারায় তখন তো আর তুমি থাকবে না। খুঁজে দিতে। সমর এইরকম এক ঘটনার জন্য অপ্রস্তুত ছিল। ফুলের হাত থেকে হারটা নিয়ে পরিয়ে দেওয়ার আগে। আড়চোখে চারিদিকে দেখে নিল কেউ নেই তো আশেপাশে। তারপর এ হাত কাঁপতে কাঁপতে গলায় পরিয়ে দিল। একটা গভীর নিঃশ্বাস ছাড়লো হারটা পড়ানোর সময় ওর বুকে ধরপরানি টা বেড়ে গিয়েছিল মনের মধ্যে কিরকম যেন করে উঠছিল বারে, বারে। আগে অনেকবার অনেক মেয়ে মানুষের সাথে থেকেছে। কিন্তু আগে এরকম হয়নি। আজ কেন এরকম কেন হচ্ছে। সে আগে তার বোনেদের সাথে কতবার খেলেছে। তার পিসি, মাসি, দিদি তাদের সাথে থেকেছে কিন্তু এরকম আগে তো হয়নি। এই অনুভবটা একটু আলাদা। সমর গলায় হারটা পরিয়ে গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল। হয়ে গেছে এই বলে গাছের নিচে বসতে যাচ্ছে। ফুল জিজ্ঞেস করে ওমা তোমার কাপড়টা সব ভিজে গেছে। তুমি ঘরে যাবে কি করে। সমর বলে ঘরে যাওয়ার আগে সব শুকিয়ে যাবে। তারপর শুকনো পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়ে গাছ তলায় বসে পরলো। ফুল তখন আঁচলটা টেনে সমরের মাথাটা মুছে দিতে, দিতে বলল। এরকম ভাবে থাকলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে তো। এরপর সমরের ভেজা পিঠটাকে মুছতে গিয়ে। দেখে ফুলের নিজেরও এখন হাত কাঁপছে। মনে মনে নিজেকে বোঝায়। আমাকে সাহায্য করেছে, তাই আমি ওকে সাহায্য করছি। পিঠখানা মুছতে মুছতে ফুলের বুকের ভিতর জোরে জোরে ধরপরানি শুরু হলো। এরপর যখন আঁচলটা নিয়ে বুকের কাছে নিয়ে যাবে গা টা মুছে দেওয়ার জন্য। সমর ওর দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলে দিল ব্যাস অনেক হয়েছে। দুজনে একে অপরের উপর চোখ পড়তে। কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর সমর মুখটা ঘুরিয়ে নিলো। ফুল ওর পাশ থেকে উঠে এসে। একটি গুড়িতে বসলো। প্রায় অনেকক্ষণ দুজনই চুপচাপ থাকার পর। ফুল নিজেই জিজ্ঞেস করল। কিগো তোমরা তো এখন আর মাছ ধরো না ? মনমরা হয়ে বলল। কি জানো আমারো না খুব মাছ ধরতে ইচ্ছা করে। তোমাদের মত। কথাটা শুনে সমর বলে উঠলো। তাহলে আমি তোমাকে একটা বর্ষি বানিয়ে দেবো। তুমিও নয় আমাদের সাথে মাছ ধরো। ফুল বলে তা হয় না। আমি মেয়ে মানুষ। এইসব আমায় মানায় না। সমর বলে আরে কেউ দেখতে পাবে না। তুমি বরং মাছ পেলে আমাদের দিও জানতে পারবে না। এরপর ফুল বলে, সন্ধ্যা হয়ে এলো। আমার যেতে হবে। এই বলে চলে গেল। তারপর একদিন দেখা হলে। সমর তাকে বড়শি দেয়। কিন্তু ফুল সেটা না নিয়ে চলে যায়। এরপর অনেক দিন কেটে যায় আর দুজনের দেখা হয়নি। প্রায় অনেকদিন কথা হয়নি। সময় জানতে পারে ফুলের নাকি বিয়ে হয়ে গেছে। তাই আর সে আসে না।


         এরপর প্রায় দু'বছর কেটে গেছে

সমর একদিন তৈরি হয়ে দুপুরের দিকে তাড়াতাড়ি করে কোথায় যেন যাচ্ছিল। সেই ঝিলপারা এর পাশ থেকে যাওয়ার সময়। দেখে সেই গাছটার তলায় ফুল বসে আছে। সাদা শাড়ি পড়ে। ওকে দেখে সে দিকে এগোয়। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে কিরে বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছিস। ফুল মনমরা হয়ে বলে বেড়াতে না সারা জীবনের মতো থাকতে। বিজয় বলে কেনরে কি হয়েছে। ফুল বলে আমার স্বামী মারা গেছে আমি এখন বিধবা। তাই শ্বশুর বাড়ির লোক আমায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। সমর এতক্ষণ ফুলকে দেখে হেসে কথা বলছিল। এবার তার একটু মন খারাপ হলো। সমর বলল আমি তো জানিনা এসব। এত সবকিছু এই দুই বছরে অনেক কিছু ঘটে গেছে। অনেক কিছু পাল্টে গেল জীবনে। ফুল জিজ্ঞেস করে। তুই কোথায় যাচ্ছিস তৈরি হয়ে। সমর একটু হেসে মাথা চুলকিয়ে বলে। তোদের গ্রাম থেকে ছাড়িয়ে যেতে হবে অন্য গ্রামে। বউকে আনতে যাচ্ছি। ও বাপের বাড়ি গেছিল। তাই আনতে যাচ্ছি। ফুল কথাটা শুনে ওর মনের ভেতর ছ্যাঁত করে উঠলো। নিজেকে সামলে ফুল বলল, কবে বিয়ে করলি। সমর বলল, প্রায় এক বছর হতে চলল। ফুল বলল, জানিস আমি বড় একা। কথাটা শুনে কিছুক্ষণ দুজনে চুপ করে রইলো। ফুলের গলাটা একটু ভারী হয়ে এল। বলল, আর মনে হয় আমাদের দেখা হবে না, আমার বাবা মনে হয় আমায় বেচে দেবে। তখন সমর বলে ওঠে, কি সব বলছিস এসব কথা। কিচ্ছু হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে। মন খারাপ করিস না। কথাটা শুনে ফুল জলের দিকে একমনে তাকিয়ে রইল। তারপর সমর বলে আজ একটু তাড়া আছে। শ্বশুরবাড়ি একটু দূরে। এখন যদি না বেরোই তাহলে দেরি হয়ে যাবে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। আজ বরং আসি। এক গাল হেসে সমর চলে যেতে শুরু করল। তখন ফুলের মনের ভেতর এক ঝড় উঠলো। সেই ঝড় যেন সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফুলের প্রচন্ড ইচ্ছে করছিল চিল্লিয়ে বলবার। আমায় নিয়ে চল এখান থেকে, এই নরক থেকে। যেখানে যাবি সেখানে নিয়ে চল। আমি আর থাকতে পারছি না এই নরকে। কিন্তু বলতে পারল না মনের কথাটা সমরকে। সমর ধীরে ধীরে চলে চলে গেল এখান থেকে। সমর জানতো না যে এটা তাদের শেষ বারের মতো দেখা। অন্তত তার জীবিত অবস্থায়।


to be continue




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama