bid sonu

Drama Romance Fantasy

3  

bid sonu

Drama Romance Fantasy

টেপের মাছ পর্ব 2

টেপের মাছ পর্ব 2

21 mins
272


নমস্কার, আমি মরিস। আরে রাগ করবেন না, অল্প একটু কথা বলে কোথায় চলে গেলাম। আরে দুপুর হয়েছে দুপুরে কি আপনাদের খিদে পায় না। তাই খাবার খেতে গিয়েছিলাম। খাবারটা কিন্তু হেবি বানিয়েছে নায়লা।


হম.., ওর বর কে পিরিত করে, প্রীতি বলে ডাকে। ওর নাকি এত বড় নাম বলে প্রেম দেখাতে পারে না।


কথাগুলো শুনলে হাসি পায়,

                     [ রাগী দাঁত খিচিয়ে বলে ]


এসব কথা ছাড়ো। যেটা কথা বলছিলাম, 

তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগে না ? গল্পটা যদি আমার হয়। তো তোমাদের কাছে অন্য এক ব্যক্তি। নিজের নাম দিয়ে কেন।

 তোমাদের মনে হচ্ছে এ তার লেখা,

হম....

            [ ভাবার ভঙ্গিতে বলল]


উত্তরটা হলো যে, সে জানেইনা। সে যে আমার গল্প লিখছে বা এরকম বলা যায়। আমি তাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছি। এই কথাগুলো তার মাথায় তার অজান্তে unconsciously সে আমার কাজটা করে দিচ্ছে।

হুম তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না, এসব কথা। করতে হবে না। তাহলে করো না। আমি তো এটাই চাই।

যাই হোক অনেক বাজে কথা হল। এবার একটু এগোনো যাক,


ঝিল মাঝে মাঝে জেগে ওঠে, নতুন শিকারের খোঁজে। এমন কোন মানুষের খোঁজে, যাদের এই সমাজ যোগ্য শাস্তি দিতে পারে না। যাদের লোভ অনেক বেশি। যারা লোভে পড়ে এখানে আসে। বা যারা শুধু অন্যের জন্য এই ঝিলে আসে। তাদের এই ঝিল সব কিছু দেয়, কিন্তু প্রাণটা নিয়ে নেয়। এই ঝিল লোভী মানুষের খোঁজে, যে মানুষ যত লোভী তার ততই পাপ। অভাগা মানুষেরা বলে, যাদের কেউ থাকে না তাদের শুধু সে আছে। এই কথাগুলোকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়, কিন্তু ভয় সবাই পায়। .........

সমর ঘরে ফিরে জানতে পারে। একটা মেয়ের নাকি ঝিলের জলে মৃতদেহ পাওয়া গেছিল। সবাই সন্দেহ করছিল নাকি, ওর বাবা মেরে ফেলেছে। মেয়েটা পাশের গ্রামেই থাকে। ওর বাবার নাকি চরিত্র ভালো ছিলো না। পয়সার লোভে নাকি, এক বুড়োর সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল। বিধবা হয়ে যাওয়ার পর, মেয়ের সঙ্গে নাকি খারাপ ব্যবহার করত।

সমরে এটা জানতনা যে, মারা কে গেছে। তারপর যখন, সমর তার শ্বশুরবাড়ি থেকে বউ-বাচ্চা নিয়ে ঘরে ফিরে আসে। ফেরার পর তার মুখের হাসিটা পুরোপুরি মুছে দেয়, দুটি ঘটনা।

সমরের বাবা মারা গেছে। আর ওর দাদা এই খবরটা সমরকে না দিয়ে, দাহ কাজ করে নিয়েছে। ওকে না জানিয়ে প্রায় শ্রাদ্ধ করে নেবার চেষ্টা করছিল সমরের দাদা। এইসব করার কারণ হলো। সমরের বাবার জমি, যা দুই ভাইয়ের মধ্যে যেটা ভাগ হতো। ওর বাবার হাফ বিঘা জমির মধ্যে থেকে। নিজের ভাগের জমি ছাড়াও, সমরের পাঁচ কাঠা জমি থেকে দু কাটা জমি নিজের বলে হাতিয়ে নেয়। ভেবেছিলো ওর ভাই কিছু বোঝার আগে, ওই 2 কাঠা জমি নিজের নামে করে নেবে। কিন্তু সমর ঠিক সময় ঘরে ফিরে আসার কারণে, এটা হয়ে ওঠে না। তারপর সময় ঝামেলা করে। নিজের জমি ফেরত নেয়। সমরের বাবা জানতো, ওর বড় ছেলে এরকম কিছু করতে পারে। ওর বড় ছেলে আগে এরকম ছিল না। কিন্তু যখন থেকে ওর বড় ছেলে, ওই হালদার বাড়ির মেয়ের সাথে বিয়ে করেছে। তবে থেকে ওদের মতন লোভী হয়ে গেছে। হালদার বাড়ির ছেলেরা কয়েকদিন শহরে গিয়ে কিছু টাকা কমাতেই। সবাইকে টাকার গরম দেখিয়ে বেড়ায়। যেন ওরা একাই বড়লোক। এইসব নানান কারণে, সমরের বাবা সমরকে জোর করে কাজ শেখান। যাতে ছোট ছেলেকে না খেয়ে, না থাকতে হয়।

সমর নিজের জমির ভাগ নেওয়ার পর। ওর দাদা আলাদা হয়ে যায়।

ওর বাবার মৃত্যুর পর, মন মেজাজ ভালো ছিলনা।

বাবার শ্রাদ্ধের কাজ। তার ওপরে ওর দাদার সঙ্গে জমির ঝামেলা। এরমধ্যে বেশ কিছুদিন ব্যস্ত ছিল। একদিন সমর পাশের গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে জাবার সময়, একদল লোক কারোর মৃত্যুর সম্বন্ধে কথা বলছে। একটা মেয়ের নাকি লাশ পাওয়া গেছে ঝিলের জলে যেদিন মেয়েটির ডুবে মারা যায় সেই দিন থেকে ওর বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সমর তাদের কথা শুনে বুঝতে পারেনা কার কথা বলছে । এই ব্যাপারটা জানতে, সমর জিজ্ঞেস করে। কার কি হয়েছে, মারাটা কে গেছে। লোক গুলো সমরের কথা শুনে, বলে। কি অবস্থা তুমি জানো না, এই বলে একটা ঘরের দিকে দেখিয়ে বলে। ওই বাড়ির মেয়ে। সমর জিজ্ঞেস করে, আমি তো বাড়ির মেয়েকে চিনি না। নাম কি তার। লোক গুলোর মধ্যে একটা বয়স্ক লোক বলে। বড় মিষ্টি মেয়ে ছিল। ওর বাবা লোভে পড়ে এক বদমাইশ লোকের ঘরে বিয়ে দিয়ে দেয়, বেছারা মেয়েটা। সমরকে উদ্দেশ্য করে বলে, জানো ওর মা টা মারা গিয়েছিল বেশিদিন হয়নি। একটা বছর যেতে পারিনি মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। মেয়েটার বিধবা হবার কিছুদিনের মধ্যে, এইসব হয়ে গেল। আমার মনে হয় ওর বাবাই, মেরে জলে ভাসিয়ে দিয়েছে। ওর বাবা নিজের মেয়েকে কোনদিনও পছন্দ করত না। সমর নাম জিজ্ঞেস করে। লোকটা বলে, হতভাগী মেয়েটির নাম, ফুল। বেচারি। কথাটা কানে যেতেই সমর চমকে উঠলো। ওকে একবার দেখতে পাই। একবার ধরা পড়ুক। পিটাতে পিটাতে গ্রামছাড়া করব। এইসব কথা যেন সমরের কানে দিয়ে গেল না। মৃত্যুর খবর সমরের যেন, বিশ্বাস হচ্ছিলো না। এইতো কিছুদিন আগে দেখেছি,সেই জলজ্যান্ত মানুষ তাকে সেই মেয়েটা নাকি মারা গেছে। সবকিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছে সমরের মাথার মধ্যে। এই কথা গুলো সমর কাউকে বলতে পারিনি। নিজের মনের ভেতরে গভীর অন্ধকারে লুকিয়ে রেখেছিল। 

প্রায় কুড়ি বছর আগে........

সমর যখন, ফুলকে একলা ছেড়ে চলে যায়, নিজের দাম্পত্য জীবনের দিকে। তখন ফুল একা গাছ তলায় বসে, গাছের মাথা ঠেকিয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে। আমি কেন এই সবকিছু আমার সাথেই কেন হল। আমার জীবনটা কি এরকম ভাবেই চলবে। আমি কি দোষ করেছিলাম। আমার দোষ এটাই যে আমি একজনকে... । তারপর উঠে বসে হাঁটুর ওপর মাথা রেখে গভীর নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর আবার হারিয়ে যায় নিজের পৃথিবীতে। মনে মনে বলে, আমার দোষ ছিল যে। আমি এক নিচু ঘরের মেয়ে মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছি। এইসব কথা ভাবতে ভাবতে বুকের ভিতর জ্বলে যায় ফুলের। দুচোখ ভরে জল নেমে আসে, গাল ছুঁয়ে যায়। ফুল মাথাটা উঁচু করে ঝিলের দিকে তাকায়। সেদিকে তাকিয়ে ভাবে, শুনেছি তো এই ঝিলের জলে নামলে কেউ ফেরত আসে না। এই ঝিল নাকি মানুষের শেষ ইচ্ছা পূরণ করে। সেই ইচ্ছে যা খুশি হতে পারে। কে জানে কোনটা সত্যি, কতটা সত্যি। কিন্তু এটা সত্যি যে, এই জলে যে নামে তার মধ্যে যদি কোন কিছু পাওয়ার লোভ থাকে। সেটা পূরণ করার আশায় যায়। তাদের পরিনতি বড় ভয়াবহ হয়। ফুলের মনের মধ্যে অনেক আশা, কিন্তু সেগুলি তো পূরণ হবে না। এখন একটাই ইচ্ছা সেই ইচ্ছে পূরণের জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে। ধীরে ধীরে জলের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করল। হাটু জলে নেমে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু কিছুই হলো না, হতাশ হলো। তারপর জলের মধ্যে হাটু গেড়ে বসে পরলো। জলের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ সেই অবস্থায় বসে রইল। ঝিলের জলে অল্প অল্প ঢেউ, ওর বুক ছুঁয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর গরমের জালা থেকে একটু আরাম পাচ্ছে। এরকমভাবে অনেকক্ষণ বসে থাকে, যখন দেখে আর কিছু হবে না। তখন ফুল পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। ফুলকে আবার, ওই নোংরা শয়তান লোকটার ঘরের ফিরে যেতে হবে। আবার শুরু হবে, প্রতিদিনের মত গালাগালি মারপিট। বিয়ের পর ভেবেছিল কিছু না হোক। এই নোংরা লোকটার কাছ থেকে তো বেঁচেছি। কিন্তু স্বামীর যে বাবার থেকে, এক কাটা উপরে। সে বাবার থেকে কোনো অংশে কম যায়না। ফুল মনে মনে বলে যদি ঘরে ফিরে যেতে হয়। তাহলে বাবার অবস্থাও সেরকম হবে, যেরকম স্বামীর হয়েছিল। এতো সব কিছু করা সত্ত্বেও মনের দুঃখটা কিছুতেই যাবে কি। ফুলের দুচোখ ভরে জল বেরিয়ে আসে। কান্না কষ্টে রাগে দুঃখে ভরা মন নিয়ে। কাঁদতে কাঁদতে জলের মধ্যে দুই হাত দিয়ে, জোরে জোরে আঁচড়াতে থাকে। এই আশায়, যদি এই সব ভুতুড়ে গল্প সত্যি হয়ে যায়। তাহলে ফুল এই যাত্রায় বেঁচে যায়। ফুল মনে মনে ভাবে। মনে হয় সম্ভব নয়। কাঁদতে কাঁদতে হাঁপিয়ে ওঠে। যখন আর পারে না সহ্য করতে। জলের অপর নিজের গা টা হেলিয়ে দেয়। শুয়ে পড়ে জলের মধ্যে। এই ঝিলের জল শুধু গরমের জ্বালা মেটাচ্ছে, মনের জ্বালাটা নয়। ফুল এবার কিছু হবে না দেখে, ঘরে ফিরবে বলে জল থেকে উঠে দাঁড়ায়।


( ফুলের বিয়ের আগের ঘটনা )...........


অনেকক্ষণ ঝিল পাড়ে বসে থেকে। সন্ধ্যা হবার ফলে।

ফুল যখন ঝিলপার থেকে ঘরে ফিরছে। মনে মনে ভাবছে, আজও এলো না ছেলেটা। ফুল অভিমান করে মনে মনে বলে। কাল আসলে, আর কথা বলবো না। এইসব নানান রকম কথা ভাবতে ভাবতে, ঘরে এসে ঢুকলো। ঘরে ঢুকতেই, ফুলের ওই নরম মনে ধড়াস করে উঠলো। ফুল অবাক হয়ে, আশ্চর্য ভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে, ওর বাবার দিকে। ফুল এর বাবা আজ নেশা করেনি। ওরে বাবা একটা লোকের সাথে ঘরে বসে, হেসে হেসে গল্প করছে। ফুল এই কথাটা ভালভাবেই জানে, কিরকম একটা করে। ওর বাবা কখন যদি, কোন লোকের সামনে ভালো মানুষ সাজে। তার ওপরে যদি, হেসে হেসে গল্প করে।তাহলে বুজতে হবে খারাপ কিছু হতে চলেছে। ফুলের বাবা এক বড় হাত মারবার ধান্দায় আছে। মনে মনে কোন ফন্দি আঁটছে। ফুলের বাবা, ফুলকে দেখতে পেয়ে এসে ডাক দেয়, তাও আবার মিষ্টি গলায়। বলে, কিরে বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। ভেতরে আয়, দেখ কে এসেছে। ওর বাবা সেই অচেনা লোকটিকে বলে। এই দেখুন আমার মেয়ে ফুল। বলেছিলাম না, খুব শান্ত মেয়ে, ভদ্র মেয়ে। এরপর লোকটি মাথা ঘুরিয়ে ফুলের দিকে তাকায়। তাকানো দেখে মনে হল, পা থেকে মাথা অব্দি সব দেখে নিচ্ছি। ওই তাকানোর মধ্যে কেরকম একটা ভাব। যেন শিকার খুঁজে পেয়েছে। লোকটার ঠোঁটের কোণে একটা বাঁকা হাসি। লোকটার চেহারার মধ্যে একটা হিংস্র ভাব। লোকটার হাবভাবে দেখে ফুল চোখ নিচু করে নেয়। হাতে ধরে থাকে কাপড়ের আঁচলটা জোরে মুঠো করে চেপে ধরে। ফুলের মনের ভেতরে একটা অজানা ভয় চেপে বসেছে। ফুল ওদের এড়িয়ে ঢুকে যায় রান্নাঘরে। তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়। ফুলের বাবা লোকটিকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করে। কেমন লাগলো পছন্দ তো। লোকটি কিছু একটা ভাবতে-ভাবতে বলল, হ্যাঁ পছন্দ বটে। ফুলের বাবা উত্তেজিত হয়ে বলে, তাহলে এটাই পাকা কথা। লোকটা ইতস্তত ভাবে বলে। এত তাড়া কিসের ঘরের সবার সঙ্গে কথা বলি। তারপর জানাবো। কথাটা শুনে ফুল বুঝতে পারে। ওর বাবা হয়তো ওর বিয়ে ঠিক করেছে। না হলে কোথাও বিক্রি করে দেবার চেষ্টা করছে। কথাটা মনে আসতেই বুকটা কেঁপে উঠলো। ঠিক সেই সময়, হঠাৎ করে দরজা ঠেলে ঢুকে আসে। ওর বাবা হঠাৎ এ ঘটনায় ফুল চমকে উঠে। বাবাকে দেখে মনের ভয়টা আরো চার গুণ বেড়ে যায়। সেই মুহূর্তে ফুল বাবার চোখে সেই পুরনো নিশংস লোকটিকে দেখতে পাচ্ছে। ওর বাবা আস্তে করে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে। চোখ বড় বড় করে হাতটা চেপে ধরে বলে, চুপচাপ রান্নাকর বদমাশি করবি না। রান্না যেন ভাল হয়। এটা তোর জন্য ভালো হবে। নাহলে তো, জানিস কি হতে পারে। ফুল বুঝতে পারবে যদি এই লোকটা না বলেদেয়, তাহলে ওর অবস্থা ঠিক সেরকম হবে যেরকম ওর মায়ের অবস্থা করতো। ওর বাবা এই সব কথা বলে, দরজাটা খুলে আবার সেই হাসিমুখে বাইরে বেরিয়ে আসে। ফুল বাধ্য মেয়ের মত, রান্না করতে শুরু করে। ও বুঝতে পারে, এই লোকটার জন্য ওর বাবা কাজ করে। ওর বাবার নজর লোকটার টাকার দিকে। ফুলের বাবা লোকটার কাছ থেকে কত টাকা ঝাপা যায় এ নিয়ে ব্যস্ত। ওর বাবা শুধু বিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে। ওই লোকটা ওর বাবার কাছ থেকে পন হিসেবে কিছু চায় না। ফুল মনে মনে ভাবে ওর বাবা শ্রমিক থেকে মালিক হবার স্বপ্ন দেখছে। খেয়েদেয়ে পেট মোটা করে, সেদিন রাতে নাক ডেকে ঘুমিয়ে নিয়ে সকালবেলা চলে যায়। ফুল ভাবে আপদ বিদায় হয়েছে।


কিন্তু দুই তিন দিন পর, লোকটা রাজি হয়ে যায়। কিন্তু শর্ত একটাই বিয়ে তাড়াতাড়ি হতে, হবে। তাই এক মাসের মধ্যে বিয়ের তারিখ বার করে, বিয়ে হয়ে যাবে। ফুল বুঝে পায় না, তার এই দুঃখের কথা কাকে শোনাবে। ফুল শেষবারের মতো সমরের সঙ্গে দেখা করতে চায়। দেখা করার জন্য ঝিলের পাড়ে যায়, কিন্তু সমর আসে না।

এক মাস পর ফুলের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের দিন ফুল আশা করেছিল, সমর তাকে এখান থেকে তুলে নিয়ে যাবে। বাঁচিয়ে নিয়ে যাবে, এই নরক থেকে। কিন্তু কেউ এলোনা তাকে বাঁচাতে। ফুল মাঝে মাঝে ভাবে ওর মা মারা গেছে তাই ওর বাবা ওকে বিয়ে দিয়ে দিল। যত তাড়াতাড়ি ঝামেলা কাটুক। শুনেছি মেয়েরা নাকি বোঝ হয়। কিন্তু আমার বাবার জন্য আমি শুধু মাত্র একটা বস্তু। যাকে বিক্রি করে বাবা বড়লোক হতে চায়। মাঝে মাঝে মনে হয় ওই ঝিলে গিয়ে ডুব দিয়ে দিই বাবা। বাবা মনে হয় নিজেই ইচ্ছে করে মাকে মেরে ফেলেছে। যাতে সে তাড়াতাড়ি বড়লোক হতে পারে।


•ফুলের বর ও তার পরিবার, ফুলকে বিনাপয়সার কাজের লোক বানিয়ে এনেছিল। ওই বাড়িতে যার যা দরকার, সব কাজ ওকে দিয়ে করাতো। জানতো যে, এর আর কোথাও যাবার উপায় নাই। বের হয়ে বলার কোনো লোক নেই অসুবিধে এটাতেও ছিলনা ফুলের। অসুবিধে হয়েছিল হল, তাদের ব্যবহারে। তার জেনো ফুলকে দুই চোখে দেখতে পারেনা। তারপরে ফুলের বর, বড় নিশংস মানুষ। ফুলের বর ফুলকে বিনা কারণে মারধর করতো। আবার বাইরে কার সঙ্গে যদি ঝামেলা হতো, তাহলে। সেই সুদ ফুলকে মার খেয়ে পুরন করতে হতো। এতো সব কিছুর করা সত্ত্বেও, ওর বর ওর ভালোভাবে দুটো কথা ববলতো না। দিনের-পর-দিন ফুলের ওপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার হতেই থাকে। আর, সেটা দিনে দিনে আরো বাড়ে। এই সব কিছুর বিরুদ্ধে। ওর বাবাও কিছু বলতো না। কিন্তু ফুল ওর মা কে, ওর বাবার হাতে মার খেতে খেতে মরে যেতে দেখেছে। ফুল একসময় ভেবে নেয় তারও সাথে এই হবে। কিন্তু একদিন সবকিছু বদলে গেল। অত্যাচার টা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছায়। সব বাঁধ ছাড়িয়ে যায় সেদিন দুপুর বেলা। ফুল নিজের কাজকর্ম শেষ করে, নিজের ঘরে একটু ঘুমাচ্ছে। তখন ওর দেওরের ছেলে ঘরে ঢুকে আসে। কোন খারাপ কিছু হওয়ার আগেই ফুলের ঘুম ভেঙে যায়। ফুল চেচামেচি শুরু করে, কিন্তু ওর বাড়ির লোকেরা ফুল কে উল্টো দোষ দেয়। ওর পরিবারের কেউ ফুলের কথা তো বিশ্বাস করা তো দূরের কথা, শুনতে চাইল না। তারপর ওর বর ফুলের চুলের মুঠি ধরে ঘরে নিয়ে গেল। তারপর প্রচন্ড মারলো। এত মার মারলো যে দুদিন উঠতে পারিনি। এর সত্ত্বেও পর পরিবারের লোক কেউ ছেড়ে কথা বলত না। এই সবকিছু ফুলের সহ্য হচ্ছিল না।


ফুল জল থেকে উঠে দাঁড়ায়। দাঁড়িয়ে এটা বুঝতে পারে যে ওর দুঃখ এখনো শেষ হয়নি। এখনো আরো বাকি আছে। তাই ধীর পায়ে বাপের বাড়ির দিকে হেঁটে চলল। ফুলের মনের ভেতর এখন এক প্রবল ঝড় উঠেছে। ও জানে না এরপর ওর সাথে কি হতে চলেছে। কিন্তু যাই হোক এখন ফুল চুপ থাকবে না আর। হেরে যাবে না কারোর কাছে।


ফুল কিছুটা দূর হেটে যেতে দেখতে পায়। ওর বাবা কিছু একটা বিড়বিড় করতে করতে তার দিকে হেঁটে আসছে। ফুল দেখতে পেল, বাবা ওর দিকে তাকিয়ে। এগিয়ে আসছে তারই দিকে। এটা দেখে ফুল মনে মনে একটু ভয় পায়। ফুল বুঝতে পারেনা এবার সে কি করবে। কিছু বুঝতে না পেরে, ভয় ফুল বলে। আমি তো এখানে শুধু হাঁটতে এসেছিলাম। ঘরে একা একা ভালই লাগছিল না। ফুলের বাবা থেমে যায়। একটু অবাক হয়। তার এক মুহূর্তের জন্য মনে হয় তাকে কেউ, বাবা বললে ডাক দিল। কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই। কাউকেই তো দেখতে না পেয়ে। এই সবকিছু কারোর বদমাশি মনে করে, চিল্লিয়ে বলে। কে, দম থাকলে সামনে আয়। তার মনে হলো আজ নেশাটা একটু বেশি হয়ে গেছে, তাই হয়তো ভুলভাল শুনছি। তাই অতো সবকিছুতে মাথা না ঘামিয়ে। আবার হাঁটতে শুরু করে। আবার মনে বিড়বিড় করতে শুরু করে বলে। কোথায় গেছে জানোয়ার মেয়েটা। এই বলে নানান রকম বাজে কথা বলে। আরও দ্রুত হাঁটতে শুরু করে। ফুল যেন এই মুহূর্তে সবকিছু ভুলে গেছে। তার মনে একটা ভয় কাজ করছে। ফুলের মনে সাহসটা যেন আর তার মধ্যে নেই। ভয়ে এক পা, দুই পা, করে পিছন দিকে হেঁটে চলল। বাবা তার দিকে এগিয়ে আসছে। ফুল ভয়ে পড়ে যায় মাটিতে। হাত দিয়ে মুখটা ডেকে নেয়। বাবার শক্ত হাত খানা আবার এসে পড়বে তার গায়ের উপর। ফুল কে অবাক করে, একটা ঘটনা ঘটে গেল। ফুল দেখতে পেল, ওর বাবা ওর কাছে এলো, কিন্তু ওকে দেখে দাঁড়ালো না। এর থেকে বড় কথা, ফুলের বাবা কাছে এলো খুব কাছে, কিন্তু তারপরেই ফুলের শরীর ভেদ করে চলে গেল। এক মুহূর্তের জন্য ফুল এমন মনে হল। সে যেন এই পৃথিবীতে নেই। তার শরীরটা আর তার কাছে নেই। ফুল ঘটনার পর প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল কি হচ্ছে তার সাথে ফুল বুঝতে পারেনা। ফুল ধপ করে মাটিতে পড়ে যায়। ফুল বিশ্বাস করতে পারছিল না ফুল দেখছে। ওর বাবা ঝিলের দিকে এগিয়ে চলেছে।

এই ঘটনার,

                        9-10 বছর পর.....


একদিন সকাল গড়িয়ে, দুপুর হবে, হবে করছে। ঠিক সেই সময়। বিরু প্রায় তাড়াতাড়ি করে। দৌড়াতে, দৌড়াতে কোথায় যেন যাচ্ছিল। সমর বিরুকে দেখতে পেতোয়ে ডাক দিল। ওই বিরু, শোন এদিকে। এত তাড়া কিসের ।


বিরু কাছে আসতেই, সমর আবার জিজ্ঞেস করল। কিরে কোথায় যাচ্ছিলি, এত তাড়া কিসের তোর। বিরু হাঁপাতে, হাঁপাতে জবাব দেয়। ঘরে। সমর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। কেন রে কি হলো ? কার কি হয়েছে ? বিরু মাথাটা উঁচু করে, সামনের দিকে তাকিয়ে। বড় , বড় চোখ করে বলে, আবার শুরু হয়েছে। সমর অবাক গলায় বলে, কি শুরু হয়েছে, এই ভর দুপুরে। বীরুর জোরে নিঃশ্বাস পড়ছে। হাঁপাতে, হাঁপাতে বিরু বলে, আরেকটা বাচ্চা হারিয়ে গেছে। ভিমরুলের ঝিলের জলে, বাচ্চাটা মাছ ধরতে গিয়েছিল। বিরু আরো কিছু বলার আগে। সমর বলে, তুই ঠিক জানিস তো। বিরু বলে, আরে হ্যাঁ। ওর সাথে আরেকজন গিয়েছিল। সে নিজের চোখে দেখেছে। সমর একটু সন্দেহের গলায় বলে। আগেরগুলোর মত নয় তো। বিরু বলে, না রে। ওই মেয়েটা কে ও নাকি দেখা গেছে , ঝিলের ধারে। লোকে বলছে, ওই মেয়েটা নাকি করছে এইসব। সমর বলে, এসব কথা আগেও অনেকে বলেছে। কতটা সত্যি, আর কতটা মিথ্যে। সে তোর থেকে ভালো আর কেউ জানে না। বিরু বলে এবারে ঘটনাটা যদি সত্যি। হয় তাহলে কি হতে পারে বুঝতে পারছিস। সামনেই বর্ষাকাল। সমর মনে মনে বলে, তাহলে তো বড় বিপদ আসছে। এমনিতেই বর্ষাকাল হলে, ওই ঝিলের জল প্রায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একটা গভীর নিঃশ্বাস ছাড়ে। শেষবার এই ঝিলকে কে শান্ত করার জন্য যে ক্ষতিটা হয়েছিল। বিরু সমর কি ভাবছে আন্দাজ করতে পেরে। বিরু বলে, সাবধান এবার আমরা নয়। এবার অন্য কেউ। তোর আমার পরিবার আছে, ছেলে মেয়ে আছে। দেখ নিজের কথা না ভাবলেও। বৌদির কথাটা ভাব। তোর ছেলে মেয়ে কথাগুলো ভাব। তুই না থাকলে, ওরা না খেয়ে মরবে। সমর বলে, সে সময় কিন্তু, আমাদের থেকে বেশি ওর দরকার ছিল। এরপর ধীরে ধীরে মনে পড়ে, জয়ার সাথে প্রথম দেখা। তারপর বিয়ে, প্রেম। প্রথম সন্তান। এসব স্মৃতি গুলো যেন শক্তি দেয় সমরকে। সমর, বিরু কে বলে। চল ঘরে ফেরা যাক। এই বলে দুজনের হাঁটতে শুরু করে। বিরু জিজ্ঞেস করে তাহলে আমরা, এই ঝামেলার মধ্যে নেই। সমর কোন জবাব দেয় না, চুপ করে থাকে।


এই ঘটনার

প্রায় পাঁচ বছর পর ................

সমর এসে বসলো। সমরকে চিন্তায় দেখে, জয়া বললো। কি হয়েছে কি গো কি হলো এতো চিন্তা কীসের । সমর গভীর গলায় বলে, জানো আবার শুরু হয়েছে। জয়া নিজের কাজ করতে করতে বলে, জানি। ওই সব কথা জানি । সমর জয়ার দিকে তাকিয়ে বলে। এবার কি ঘটেছে। জয়া ওর বড় মেয়ের, দিকে তাকিয়ে বলে। তোর বাবা কে বল বাজার নিয়ে আসতে। না হলে কালকের, নুন ভাত খেতে হবে। মেয়েটি বিজয়ের দিকে ঘুরে বললো। মা কি বললো শুনলেতো। যাও নিয়ে আসো। সমর সময় উঠে দাঁড়ালো বাজারে যাবার উদ্দেশে। সমর যখন ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলো। মেয়ে সমর কে ডেকে বলল। শোনো না বাবা আজ মাছ নিয়ে আসবে। সমর ওর মেয়ের দিকে না তাকিয়ে বলে আনবো। এরপর সমর হেঁটে চলে হাটের দিকে। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে গেল। বিরুর ওই কথাটা হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর পুরনো স্মৃতি কথা ।

এরপর,

           সমর হারিয়ে গেল,

                                           8-9 বছর আগে.......

সমর রতিনকে উদ্দেশ্য করে বলে। আজ তোর জন্য দেরি হল। বললাম তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে চল। না, তুইতো দেরি করবি। আজ রাত সেখানে কাটিয়ে দেওয়া যেত, না উনি ওখানে কাটাবেন না। তোর জন্য আমাকে আমাদেরকে এই বিকেল বেলা, হেঁটে যেতে হচ্ছে। একটু পরেই সন্ধে নামবে। অন্ধকারে রাস্তা চিনে যাবি কিভাবে, দেখব। সমর, রতিন আর বিরু অন্য গ্রামে, রতিন এর জন্য মেয়ে দেখতে গিয়েছিল। রতিন তারা তারি বিয়ে করতে চায়। রতিন মেয়ে দেখেই, বিয়ে পাকা করে নেয়। সমর ও বিরু ভেবেছিল মেয়ে দেখে সন্ধ্যার মধ্যে ঘরে ফিরে আসবে। কিন্তু রতিন হঠাৎ বিয়ের পাকা কথা শুরু করার ফলে। যেখানে সবাইকে দুপুরবেলা বেরোতে হত। ওরা তিনজনএ বার হতে বিকেল হয়ে গেল। কারো কিছু করার নেই, এতটা রাস্তা হেঁটে যেতে হবে। তাই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে, হাঁটতে গল্প করছিল তিনজনে। বিরু রতিনকে জিজ্ঞেস করে, কিরে তোর এত তাড়া কিসের বলতো। প্রায় এক বছর হতে পারলো না। তোর বউ মারা গেছে, তুই এখনই বিয়ের জন্য লাফালাফি করছিস। রতিন বলে, দেখ আমার কোন যায় আসে না। ও বেঁচে আছে না মরে গেছে। ওর সাথে বিয়ে হওয়ার আগে ভালোই ছিলাম। কথাগুলো মনে পড়লে বুকটা ফেটে যায়। বিয়ের পর যতদিন আমাদের বাডিতে ছিল, আমাকে জ্বালাতন করে গেছে। যেদিন থেকে আমার জীবনে এসেছে। সেদিনটা থেকে আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছে। যার ওর আর ওর বাবার কুকর্মের ফল, ভোগ করতে হচ্ছে আমাকে। সমর জিজ্ঞেস করে, তুই তার ব্যাপারে এই ঘটনাগুলো না জেনে, বিয়ে করতে গেছিলিস কেন। এত কিসের তারা ছিল তোর। বিরু মাঝখান দিয়ে বলে, ধুর বাজে কথা বলিস না তো। রতিন বীরুর কথায় কান না দিয়ে, অপর দিকে তাকিয়ে, একটা গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে। বলতে শুরু করে। না রে, মনের জালা মনের ভেতরে একটা বড় ঘা লেগেছে। বড় ব্যথা। বিরুর দিকে তাকিয়ে বলে, সেটাকেই পূরণ করার এক চেষ্টা বলতে পারিস।

সমর জিজ্ঞেস করে কেন রে কি হলো তোর। এরকম কথা বলছিস কেন। রতিন সেই সব কথায় কান না দিয়ে। একটু অন্যমনষ্ক ভাবে বলে চলল, তোরা আমার সম্বন্ধে কিছুই জানিস না। যে এতসব কথা বলবো। এটা ওর দ্বিতীয় বিয়ে, আর ও 8 কি 9 বছর বয়সে বিধবা হয়। একটা গভীর নিশ্বাস ছেড়ে বলে। এই বিয়েতে আমার মত ছিল না কোনদিনই, বাধ্য হয়ে করতে হয়। ওর বাড়ির লোক জোর করে বিয়ের জন্য। ওর বাবা টাকা ও গায়ের জোর দেখিয়ে। জোর করে বিয়ে দেয়। এর পেছনে আমার মামা বাড়ির লোকের সবচেয়ে বড় হাত। তারাই এই বিয়ে ঠিক করে। বিরু বলে, তুই বলতে চাস তোর জোর করে বিয়ে দিয়েছে। এক ধনী ব্যক্তি তার মেয়ের সাথে। দূর এসব বাজে কথা । বিরু হতাশার সাথে নিঃশ্বাস ছেড়ে, ব্যঙ্গর সরে বলে। আমাদের সাথে এরকম কেন হয় না কে জানে। বিরু অন্যমনস্ক ভাবে, বির, বির করে বলে। মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, আমার বউ পছন্দ করে কিনা। জানিনা সে আমার সাথে থাকতে চাই কিনা। রতিন আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে। বলতে গেলে সব যে, ওই মেয়েটার দোষ তা নয়। রতিন এর কথা শেষ হবার আগেই সমর বলে ওঠে, তোর তো মামা বাড়িতে বিয়ে হয়েছিল। তোর যে জোর করে বিয়ে হয়েছিল সেটা জানি না তো। রতিন মুখ দিয়ে একটা গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে, মাটির দিকে মুখ করে। ধির গলায় বলতে শুরু করে, সেই সময়টা চাইলেও ভোলা যায় না। সেই দিনগুলোর কথা এখন মনে পড়লে মাঝে মাঝে কেঁপে উঠি। মামাবাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে। নিজের বিয়ের ভাত খেয়ে এলাম। তারা, এমন ভালো মন্দ খাইয়ে দিল। যা আর কোনদিনও.....।

বিরু জিজ্ঞেস করল, তো এতসব ঘটলো কি ভাবে।

রতিন সে কথায় কান না দিয়ে, আবার অন্যমনস্ক ভাবে বলতে শুরু করল। তার জীবনের দুঃখের কথা।

একদিন ভোরে, ঘরে মামা এলো

আমরা তো সবাই দেখে অবাক। মামা এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আমাদের ঘরে আসছে। শেষবার এসেছিল মায়ের বিয়ের পরে, মাকে ছাড়তে। মামা, বাবার সাথে মায়ের বিয়ে সম্পর্কটাকে রাজি ছিল না। দাদু মারা যাওয়ার পর তো, কোনদিনও কথাও বলতো না। এত বছর পর হঠাৎ আশায়। আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম। 

দু-তিনদিন থাকলো। যাওয়ার আগের দিন, মামা নিজের বোনের কাছে একটা আবদার করলা। যে সে নিজের ভাগ্নে কে, তার সাথে নিজের বাড়ি নিয়ে যেতে চায় কিছুদিনের জন্য। মা প্রথমে রাজী হয় না। মামা এই বলে রাজি করায় যে। দু'চারদিন মামা বাড়ি ঘুরে আসবে। সেই কবে ছোটবেলায় গিয়েছিল মামাবাড়িতে। শান্তিতে তো একদিনো থাকতেও পারেনি। দু'একদিন থাকবে আমার ঘরে, আসবে সেখান থেকে নয়।......

এই শেষ বয়সে মরার আগে যত পাপ করেছি। জীবনে যাতে সব পাপ মুছে ফেলা যায়। সেই চেষ্টা করছি। এতসব কথার পর মা, আর কোনো মতে আপত্তি করতে পারে না। বাধ্য হয়ে আমাকে যেতেই হয়। যদি জানতাম সেখানে গেলে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। তাহলে হয়তো ........

এই বলে চুপ করে গেল রতিন,

মামা বাড়ি গিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। বোঝার কোনো উপায় ছিল না কি হবে, আর কি হতে চলেছে। আমি সারাদিন খেতাম আর ঘুরে বেড়াতাম। মাঝেসাজে সেখানে একটা থাকা ছোট্ট নদীর পাড়ে গিয়ে বসতাম। সেখান থেকে ওদের বাড়ি দেখা যেত। বাড়িটা অনেকটা দূরে হলেও বেশ বড় ছিল, তাই দূর থেকেও দেখা যেত। আমি যেই নদীটার সামনে বিকেলবেলা করে বসে থাকতাম। সেখানের লোকজন কমই আসে। শুনেছি নাকি ওই গ্রামের মেয়েমানুষেরা স্নান করা তো দূরের কথা জল নিতেও ভয় পেত। সেটা আজও বুঝে যায়। সেখানে শুধু ছেলেরা স্নান করতে আসে। তাও আবার যারা ওই বাড়ির লোকের প্রিয়। সেই ঘাটে যেসব মেয়েমানুষেরা আস্ত, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই জমিদার বাড়ির। যদিওবা ভুল করে বা না জেনে কোন মেয়ে চলে আসতো।এই সব কুকর্ম নাকি ওর ঠাকুরদার বাবা করত। কিন্তু সেই লোকটা মারা যাওয়ার পর সেরকম ঘটনা আর ঘটেনি। লোকে তো এটাই বলে। প্রায় সময় খালি পড়ে থাকে, মামা হল জমিদারের বন্ধু। তাই সেখানে যাওয়ার কোন অসুবিধা হয় না। জানি সে লোক শুধু নামেই জমিদার। কিন্তু কি করা যায়, তার সঙ্গে আর ঝগড়া করতে পারিনা। আর যখন চেয়েছিলাম, তখনো তো পারিনি। প্রায় সময় দুপুর বেলার দিকে ও স্নান করতে আসত যখন দেখতাম স্নান করতে যাচ্ছে তখন আমি চলে আসতাম। সেখানে দুপুরবেলা 2-1 দিন গেছিলাম। এর থেকে বেশী তাকে আমি দেখিওনি, আর জানিও না। যেদিন ঘটনাটা ঘটে সেদিন সকাল বেলা। মামা আমায় ডেকে নিয়ে যায় জমিদার বাড়িতে। আমিও যাই। দুইতলার একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে একটি চেয়ারে বসিয়ে দেয়। মানুষ এখানে বসি। আর মামা বাইরে চলে যায়। এই বলে, তুই বস আমি আসছি। আসার সময় দেখতে পারি বাড়ির বাইরে উঠোনে বিয়ের জন্য, সবকিছু তৈরি করা হচ্ছে। আমি জানতাম বিয়ে হচ্ছে। এটাও জানতাম জমিদারের মেয়ে বিধবা। কিন্তু এটা জানতাম না কার সাথে। আমি ঘরে বসতে না বসতেই একজন মহিলা প্লেটে করে কতগুলো মিষ্টি জল নিয়ে এলো। আমিও নিয়ে খেতে শুরু করলাম। তখন দেখিয়ে বাইরে কতগুলো মহিলা ভিড় জমিয়েছে।

তারা আমাকে দেখছে আর হাসছে। আমি বুঝতে পারিনা এরা কারা। ঠিক তারপর মাথাটা কিরম যেন করে উঠলো। আমার মনে হল আমি পড়ে যাচ্ছি মাটিতে। তারপর যা মনে আছে, সবকিছুই আপছা, আপছা। তারপর হয়তো একটু চোখ যখন খুলি। তখন দেখি বিছানায় শুয়ে। তখন কেউ যেন মুখে জল জাতীয় কিছু দিয়ে দেয়। আবার অন্ধকার তারপর দেখি। যে ও আমার মুখে তুলে দিচ্ছে হয়তো। আর দু-একজন মুচকি হাসছে। তারপর ঠিকঠাক মনে নেই। কিছু সবকিছু যেন এক স্বপ্নের মতন। সবকিছু গুলিয়ে যায়। যখন পুরোপুরি হুঁশ আসে তখন, আমি বিছানায় শুয়ে। আমার চারিদিকে কতজন লোক দাঁড়িয়ে। তারপরে যেটা হয়, সবি গায়ের জোরে। সে ভালোভাবেই জানতো আমি কোনদিন রাজি হব না। কিন্তু আসল কাজ টা তো করিয়ে নিয়েছে।

এরপর আর কি,

এই বলে চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর। আবার বলল,

প্রথমদিকের ছাড়তে রাজি ছিল না। জানতো মেয়ে ঘর থেকে বের হলেই। তার মেয়ের বিয়েটা ভেঙ্গে যাবে। আমার কথা হল গড়ে উঠেছিল টা কবে। এমন নয় যে তার যোগ্যতা নেই। সে কোন কাজ পারে না, পারে সবই। কিন্তু বুদ্ধি লাগিয়ে ভালোভাবে কাজটা করতে পারব না। একটা কাজ শুধু ভালো পারে, সেটা লোককে খারাপ কথা বলা। বড় ছোট কাউকে মানতো না। আরেকটা গুণ ছিল যে কথায় কোথায় রেগে যাওয়া। যে কয় বছর আমার সাথে আমার জীবনে ওরা দুইজন ছিলো। জীবনটাকে নরক বানিয়ে রেখেছিল। আর ওই সবকিছু সহ্য হচ্ছিল না। তার বাবা মারা যাওয়ার পর। কিছুটা শান্তি ফিরে এলো। কিন্তু মেয়ে কিছুদিনের মধ্যে, সেই শান্তির আবার কেড়ে নিল। গেল, মরে গিয়েও শান্তি দেয়নি।

আজও একটা রাত শান্তিতে ঘুমাতে দেয় না।

রতিনের নিঃশ্বাসের ব্যাগটা হঠাৎ বেড়ে গেল। রতিনের গলাটা নরম হয়ে এল। গলা দিয়ে বেরিয়ে এলো শুধু একটাই কথা। আর পারিনা এরকমভাবে আর বাঁচতে। পারছি না এরকমভাবে আর থাকতে পারছি না। জানিস রাতে ঘুমাতে পারি না, ভয় লাগে। যদি সে আবার ঘরে ঢুকে পড়ে। ঘরে কোন মহিলাকে দেখলে বুকটা ধক করে ওঠে। মনে হয় পর আবার ফিরে এসেছে। একা একা শুতে পারি না। ঘুমাতে গেলে বারে বারে মনে হয়, একটা হাত এসে জড়িয়ে ধরে। যে আমাকে গায়ের উপর পা টা তুলে দেবে। এরই মাঝে বিরু বলে ওঠে, ইস কি সব কথা বলে। একটু বিরক্ত ভান করে বলে, তুই তোর বউয়ের সাথে কি করিস সেসব জানার আমাদের কোনো ইচ্ছে নেই। খেয়েদেয়ে কাজ নেই শুধু নোংরা কথা।

রতিন গম্ভীর গলায় উত্তেজিত হয়ে বলে, নোংরা কথা নয়। ইস কি অবস্থা মাইরি, কি সব কথা বলে ছেলেটা, বিরু বিরক্ত স্বরে বলে ওঠে। রতিন বিরুর কথার গুরুত্ব না দিয়ে। বলল, আমার শুধু ভয় লাগে ও যদি আবার ফিরে আসে। আমার জীবনের এই ভয়টা, সব সময় মনের মধ্যে চলতে থাকে। এইসব ভাবনাগুলো আমার মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছে। আমার ওর সাথে কাটানো সময়গুলো মনে পড়লে। পুরো কথাটা শেষ করার আগে বিরু বলে ওঠে, দূর চুপ করতো। সারাদিন বউ, বউ করে বেড়াচ্ছে। সারা রাস্তা বউয়ের কথা বলে মাথা খারাপ করে দিল। বিরু আস্তে করে বলে, কি জানি আমি আমার বউয়ের কাছে কখন পৌঁছাব। এইসব কথার মধ্যে। সমরের তার বউ এর কথা মনে পড়তেই, ওর মনটা খারাপ হয়ে যায়। রতিন মাথাটা নীচু করে বলে। আমি আর ওর সাথে এক মুহূর্ত কাটাতে পারব না। আমি ওকে আমার জীবনে কোনমতে দেখতে চাই না। বিরু আস্তে করে সমরের কানে বলে। এর মাথাটা পুরোপুরি গেছে।

আমি আর সেই পুরনো সময় কাটাতে চাই না।

আমি চাই।

বিরুর কথাটা শুনে দুজনেই ওর মুখের দিকে তাকায়। বিরু ওদের অবাক হয়ে যাওয়া মুখটাকে দেখে, ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে। কেন কি হলো, আমার অবস্থা তোদের মত নয়। আমার বউয়ের সাথে আরও 50 বছর বেঁচে থাকতে চাই। আর সেটাই হবেই।

তোরা শালা নজর দিবি না, আমার বউয়ের উপর। কথাটা শুনে দুইজনেই চোখ ঘুরিয়ে নেয়, অন্যদিকে। বিরু আরো কিছু বলতে যাবে। ঠিক তখন অন্ধকারের মধ্যে রতিন হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। সমর বিরক্ত হয়ে বলে, দেখ এবার এই রাতের অন্ধকারে হেঁটে ফিরবার অবস্থা। এই অন্ধকারে এইরকম ভাবে চলা যায়। কখন কি বিপদ হবে, কে জানে। রতিন উঠতে উঠতে বলে, তো কি করবি। তাহলে এখানেই বসে পড়বি নাকি। সমর রেগে বলে, দরকার পড়লে সেটাই করব। বারবার করে বললাম, আজকে রাতটা থেকে যা, থেকে যা কে কার কথা শোনে। এবার মরো অন্ধকারে। বিরু অস্বস্তিকর মনোভাব নিয়ে বলে, দেখ এখন ঝগড়া করিস না। এখানে এই অবস্থায় কিছু তো করার নেই। এখন আমাদের এগিয়ে যেতেই হবে। থেমে থাকলে হবে না। এই বলে বিরু হাঁটতে শুরু করল। তারপর ওর পিছন পিছন দুজনে হেঁটে চলল। কিছুদূর হেঁটে চলার পর, বিরু একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে পরল। পিছন ঘুরে বলল, ওই দেখ কে বসে আছে। ওরা দুজনে সামনে এসে দেখে বয়স্ক গোছের একটা সাধু বাবা বট গাছের নিচে বসে। বিরু সমর কে বলল, ওর কি গরম কালেও ঠান্ডা লাগছে নাকি। চল দেখি সেখানে গিয়ে। বসা যাক তিনজনে সেদিকে হেঁটে চলল।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama