গুমাকুন
গুমাকুন
ভালোবেসেই আমাদের বিয়ে হয়েছিল, অফিসের কাজে প্রায় আমি বাড়ি দেরি করে ফিরতাম। একদিন আমি আর স্বর্ণা একটা কাজে একটু বের হচ্ছিলাম বাড়ি থেকে, এমন সময়ে বাবা বলল:-
- আকাশ তোমার কাছে কি দুশো টাকা হবে!
হঠাৎ কেমন যেনো একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো, মনে পাড়ে যায় ছোটবেলার টুকরো কিছু কথা। বাবাকে বলেছিলাম - বাবা পাঁচ টাকা দেবে। বাবা জিজ্ঞেস করেছিল - কেন কি করবি পাঁচ টাকা দিয়ে ?
- আমি বলেছিলাম ক্রিকেট বল কিনব, বন্ধুরা সবাই চাঁদা তুলে একটা বল কেনা হবে । কথা শুনে বাবা পাঁচ টাকার পরিবর্তে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বলেছিল -
যা যা তুই নিজে একটা বল কিনে নিস।
সেদিন নতুন বল নিয়ে যখন মাঠে যাচ্ছিলাম গর্বে আমার বুক ভোরে আসছিল : নিজের জন্য নয় এ গর্ব আমার মধ্যবিত্ত বাবার জন্য। যে বাবা আর্থিক দিক থেকে মধ্যে বৃত্ত হতে পারে কিন্তু নিজের অনেক না পাওয়া দিয়ে আমাদের সবকিছু দিয়েছেন। সময় কতটা দ্রুত চলে যায় আজ বাবা তার ছোট চাকরিটা আর করেন না। কেনো জানো কষ্ট হলো জানিনা, আমার মানিব্যাগে প্রায় দশ হাজার টাকা মত ছিল, পাঁচশো টাকার দশটা নোট বাবার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। ঠিক তখনই স্বর্ণা আমার হাত থেকে নোট গুলো নিয়ে নিল, তার সঙ্গে আমার মানিব্যাগ ও।
ঘটনার আকর্ষীকতায় আমি পুরো স্তম্ভিত!
আজ পাঁচ মাস হল আমাদের বিয়ে হয়েছে, বিয়ের আগে এবং এই কয়েকদিনে ওকে খুব ভালো মানুষ বলে মনে হয়েছে, যে কিনা আমার পরিবারকে নিজের পরিবার হিসাবে মেনে নিয়েছে। তাহলে কি আমি মানুষ চিনতে ভুল করলাম। এর পর যেটা ঘটল তার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। মানিব্যাগে যত টাকা ছিল তার থেকে পাঁচশো টাকা রেখে পুর টাকাটাই স্বর্ণা বাবার হাতে তুলে দিল। বাবা বলল:- আরে পাগলি আমি এত টাকা নিয়ে কি করব?
স্বর্ণা উত্তর দিল :- বাবা বাইরে যাও তোমাদের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দাও যা খেতে ইচ্ছে করে খাও।
স্বর্ণা আমার হাতে মানিব্যাগটা দিয়ে বলল:- শোনো বাবা মাকে জানো আর কখন টাকা চেয়ে নিতে না হয়। ওর কথা শুনে চোখে জল এসে গেল, চোখের জল আড়াল করতেই বেরিয়ে পড়লাম তারা তরি। জীবনে দ্বিতীয় বারের মতন আবার বুকটা গর্ভে ভোরে উঠল। পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা স্বর্ণার হাতটা যখন ধরলাম নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বলে মনে হল। আপন জনের জন্য সময় মত কিছু না করতে পারলে কিসের এত টাকা পয়সা, কিসের গর্ভ। আপন মানুষের ভালোবাসা ছাড়া বাকি সবিইতো ঘনস্থায়ী পৃথিবীতে হয়তো অনেকর স্ত্রী তার স্বামীকে বাবামার থেকে দূরে সরে নিতে চায়, আর স্বর্ণার মত অনেকের স্ত্রী আছে যারা শ্বশুর শাশুড়িকে
নিজের বাবামার মতই ভালোবেসে আগলে রাখে। খুশি আর আনন্দ করতে দামী রেস্টুরেন্ট কিংবা iphone এর মতোন দামী ব্র্যান্ড এর ফোন লাগেনা তাদের, বাবা মায়ের মুখের হাসি, পরিবারের প্রতি বিশুদ্ধ ভালোবাসা এবং মানসিকতা থাকলেই হয়