STORYMIRROR

Rimon Hoshen Dhumketu

Drama

3  

Rimon Hoshen Dhumketu

Drama

তোর নামে সন্ধ্যা নামে

তোর নামে সন্ধ্যা নামে

6 mins
14

[চলো, বৃষ্টি ভেজা পায়ে প্রেয়সীর আগমনের মতোই একটি প্রেমের কাহিনী শুনাই! কাহিনীটা পুরনো। তবে তার উন্মাদনা বরাবরই বসন্ত ভোরের নবীন কৃষ্ণচূড়ার মতোই সতেজ ও স্নিগ্ধ]


রাজধানীর বুকে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে "সৈয়দ খান মঞ্জিল"। তিনতলা বাড়িটি শান শওকত ও চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যে শোভা-মন্ডিত। ঢাকা শহরের সেরা তিনজন সফল ব্যবসায়ীর মধ্যে সৈয়দ খান'রা একজন। বাড়ির মেজো ছেলে "সৈয়দ আরিয়ান খান মাহির" কে নিয়েই গল্পটা শুরু হয়। মাহিরের বাবা বাড়ির দ্বিতীয় কর্তা সৈয়দ মুনীর খান। দ্বিতীয় হলেও বাড়িতে তার হুকুমেই সবকিছু চলে।


মাহিরের বড়আব্বু সৈয়দ হেলাল খান। তিনি শান্ত স্বভাবের ব্যক্তি। তার স্ত্রী মৌরী খান। হেলাল খান ও মৌরী খানের তিন ছেলে মেয়ে। বড়ো মেয়ে "তানিয়া খান বর্ষা", মেজো মেয়ে "রুবাইয়া খান রূপ" আর ছোট ছেলে "সৈয়দ হাবীব খান"। বর্ষার খানের বিয়ে হয়েছে এক বছর হলো। রূপের বয়স সতেরো শেষের দিকে। বাড়ির সবচেয়ে চঞ্চল ও আদরের মেয়ে সে। হাবীব খানের বয়স সবেমাত্র এগারো। স্কুলে পড়ে। 


মাহিরের ছোটচাচ্চু সৈয়দ তারেক খান। তার স্ত্রী আইরিন খান। তাদের ছেলে "সৈয়দ তামিম খান" ও মেয়ে "রিমি খান"। 


মাহিরের ফুফু দুইজন আসমা খান ও নাজমা খান। দুজনেরই ভালো পরিবারে বিয়ে হয়েছে। আসমা খান স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার করছেন। কিন্তু ব্যতীক্রম ঘটেছে নাজমা খানের ক্ষেত্রে। 


আজ রূপকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে। মুনীর খানের ইচ্ছা মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। মতামত থাক বা না থাক তার ইচ্ছেকে অগ্রাহ্য করার সাহস কারো নেই। বাড়ির কর্তীরা সকাল থেকেই মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। মেয়েকে দেখতে আসবে বলে আজ কেউ অফিসে যায়নি। মুনীর খান আর তারেক খান ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে অপেক্ষা করছেন মেহমানদের জন্য। কিন্তু রূপের বাবা হেলাল খানেরই খোঁজ নেই। আর এক ঘণ্টার মধ্যেই হয়তো মেহমান চলে আসবে। মুনীর খান বিরক্ত হয়ে ফোন করলেন। ফোন রিসিভ হতেই স্বভাবসুলভ কর্কশ গলায় বললেন, 

"আসসালামুয়ালাইকুম। ভাইজান, কোথায় আপনি? যেকোনো সময় ওরা চলে আসবে!" 


ভ্রু-জোরা সংকীর্ণ করে এক মিনিট কি যেন শুনলেন। তারপর আকস্মিক চেঁচিয়ে উঠলেন, 

"কি! ঠিক আছে। রাখুন।" 


ফোনটা সামনে টেবিলের উপর রেখে সোফায় পিছনের দিকে হেলান দিলেন মুনীর খান। চেহারায় স্পষ্ট উদ্বেগ, কপালে চিন্তার কয়েক গোছা ভাঁজ। ছোটভাই খেয়াল করে উৎকণ্ঠায় শুধালেন, 

"ভাইজান, কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?" 


এক রকম বিষন্ন নিরস মুখে বললেন, 

"মাহির ফিরে এসেছে। আধ ঘণ্টার মধ্যেই বাড়িতে এসে যাবে।" 


তারেক খানের চেহারা জ্বলজ্বল করে উঠলো। যেন এখুনি লাফিয়ে উঠবেন! কিন্তু বড় ভাইয়ের সামনে তা করলেন না। গলা উঁচিয়ে বললেন, 

"তোমরা সবাই কোথায়? শুনেছো, মাহির ফিরে এসেছে!" 


মাহিরের নামটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এলেন সবাই। নাজমা খান আনন্দে আপ্লুত হয়ে শুধান, 

"কি? সত্যিই আমাদের মাহির ফিরে আসতেছে? কতদিন হলো ছেলেটা গেছে!" 


তারেক খানঃ "হুম। কতদিন তো হবেই! দেখতে দেখতে আট বছর হলো।"


মৌরী খান হাসি মুখে বললেন, 

"যাক। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলেই হয়। আমি ওকে আর কোত্থাও যেতে দিবো না।" 


সবাই সন্তোষ প্রকাশ করলেও মুনীর খানের চেহারায় অন্ধকার নেমেছে। বাপ-ছেলের মধ্যে যে যোজন যোজন দূরত্ব! তা এই জন্মে কমবে কিনা কারো জানা নেই। তারেক খান বড় ভাইয়ের হাতের উপর হাত রেখে নরম মসৃণ স্বরে বললেন, 

"আল্লাহ ভরসা। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।" 


বেলাল খান আর তামিম মাহিরকে নিতে এসেছেন। তামিম বিশ বছরের নওজোয়ান। মাহিরের সঙ্গে খুনসুটির সম্পর্ক তার। তামিম গাড়ি চালাচ্ছে। বেলাল খান আর মাহির পিছনে বসা। দশ বারো মিনিটের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যাবেন তারা। হঠাৎ হেলাল খানের ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করে বললেন, 

"ওয়ালাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ তারেক, আমরা দশ মিনিটের মধ্যে চলে আসবো। চিন্তা করিস না।" 


পরক্ষণেই ভ্রু কুঁচকে উঠলেন, 

"কি? এখন কোথায়? ঠিক আছে।" 


ফোন কেটে হেলাল খান ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন। পাশে বসা মাহিরের দিকে একবার তাকালেন। এক মুহুর্তে নজর ঘুরিয়ে অন্য দিকে করলেন। সঙ্গে ভদ্রলোকের চেহারার রঙটাও যেন ফিকে হয়ে গেলো! 


দশ মিনিটেই সৈয়দ খান মঞ্জিলে গাড়ি ঢুকলো। গাড়ি থামতেই এক মুহুর্তও প্রতিক্ষা করলো না। হনহন করে বেরিয়ে দ্রুত পায়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলো মাহির। উচ্চতা ৬ ফুট হবে। পরনে কালো ফুল হাতা শার্ট, হাতা গোটানো, কালো প্যান্ট, জুতো, কালো বেল্ট দিয়ে ইং করা, বাম হাতে চামড়ার বেল্টওয়ালা ঘড়ি, পেশীবহুল শক্তিশালী হাত শার্টের হাতা কামড়ে ধরেছে, অসম্ভব বিরক্তি যেন ভ্রু দুটিকে গুটিয়ে রেখেছে! ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই তারেক খান, নাজমা খান, আইরিন খান এগিয়ে এলেন। চাচা তো দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আবেগে জড়িয়ে ধরলেন ভাতিজাকে। 

ততক্ষণে তামিম আর হেলাল খান মাহিরের লাগেজগুলো ভিতরে নিয়ে এলেন। মাহির আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা করলো না। সবাইকে এড়িয়ে হনহন করে দুই তলায় উঠে গেলো। পাশেই সোফায় বসা মুনীর খানের দিকে ফিরেও তাকালো না। পিছন থেকে আইরিন খান বলে উঠলেন, 

"মাহির বাবা, দশ মিনিট অপেক্ষা কর! আমি তোর রুম গুছিয়ে দিচ্ছি।" 


হেলাল খান পাশ থেকে গলা নিচু করে বললেন, 

"আমি সকালেই ওর রুম পরিস্কার করে রেখেছি।" 


নাজমা খান কয়েক ধাপ এগিয়ে এসে অভিমানী গলায় শুধালেন, 

"ভাইজান, আপনি আগে থেকেই জানতেন তাহলে আগে বলেননি কেন?" 


হেলাল খান উত্তর না দিয়ে পাল্টা শুধান, 

"ওসব কথা পরে হবে। এখন বলো তো, রূপের কি অবস্থা? উপরে চলো।" 


বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হবে বলে তাদের সবার ঘর নিচ তলায়। ছেলে মেয়েরা সবাই দুই তলায় থাকে। আর তিন তলা পুরোটা গেস্টদের জন্য বরাদ্দ। দুই তলার দ্বিতীয় ঘরটাই রূপের। হেলাল খান ও বাকিরা রুমে ঢুকেই দেখলেন, খাটের উপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে মেয়েটা। পাশেই মা ও বড় বোন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। হেলাল খান এগিয়ে গেলেন। উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 

"এখন কি অবস্থা?" 


মৌরী খান বিষন্ন মুখে উত্তর দিলেন, 

"এখনো জ্ঞান ফিরতেছে না।" 


হেলাল খানঃ "চিন্তা করো না। একটু পর এমনি এমনিই ফিরবে।" 


হেলাল খান তামিমকে নিয়ে পাশের রুমে গেলেন। ভিতরে অন্ধকার। একটু এগিয়ে যেতেই দেখলেন, মাহির খাটের সঙ্গে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে আছে। তামিম চট করে দরজা বন্ধ করে দিলো। লাইটের সুইচ দিতেই ভেসে উঠলো সুদর্শন ছেলের চোখে পানি। হেলাল খান মাহিরের পাশে বসলেন। মোলায়েম কন্ঠে বললেন, 

"চিন্তা করো না। চোখের পানি মোছো।" 


বড়আব্বুর সস্নেহ সহায় শুনে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো মাহির। হেলাল খান জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে। মাহির বড়আব্বুর এক বাহুতে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বললো, 

"আপনি জানেন না বড়আব্বু, ওখানে এয়ারপোর্টে প্লেন ছাড়লো চার ঘন্টা লেটে। আর এখানে আসতে আসতে শুনি এই অবস্থা! আমার ভিতর থেকে কলিজা বেরিয়ে গেছিলো! কাঁদবো না তো কি করবো আপনিই বলুন?" 


হেলাল খান মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে স্নেহাতুর স্বরে বললেন, 

"কিচ্ছু হয়নি মাহির। সবকিছু ঠিক আছে। তুমি নিজেকে একটু সামলানোর চেষ্টা করো। তামিম, ফ্যানের সুইচটা দে তো বাবা! এসির লাইন এখনো লাগানো হয়নি।" 


তামিম খট করে ফ্যানের সুইচ দিলো। পাঁচ মিনিট পর ছেলের কান্না থামলো। এই বংশের সবচেয়ে জেদি আর রাগী তিনজন পুরুষ হলো সৈয়দ আনোয়ার খান। মানে মাহিরের দাদু। তারপরে আছেন মুনীর খান এবং সর্বশেষ মাহির খান। তবে বাবা আর দাদুর থেকে মাহির একটু আলাদা! বাবার দাদুর কাছ থেকে যেমন জেদ পেয়েছে তেমনই মায়ের মতো নরম, সুন্দর একটা হৃদয় পেয়েছে। যেটা বাবা বা দাদু কারোরই নেই। 


মাহির ঠান্ডা হতেই তামিম দৌড়ে গিয়ে তার লাগেজগুলো উপরে নিয়ে এলো। হেলাল খান নমনীয় গলায় বললেন, 

"ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো। খাওয়া দাওয়া করে একটা ঘুম দিলেই শরীর মন দুটোই চাঙ্গা লাগবে। এমনিতেই আজকে অনেক ধকল গেছে।" 


তামিম আর হেলাল খান বেরিয়ে গেলেন। মাহির আরো কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে দাঁড়ায়। পুরো রুমটা একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। চিরচেনা এই রুমে আজ আট বছর পর পা পরলো মাহিরের। বাবা আর দাদুর সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়েছিলো তারপর আর ফিরেনি। যদিও উন্নত প্রযুক্তির যুগে মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে মাঝে মধ্যেই যোগাযোগ হয়েছে! মাহিরের দাদু সৈয়দ আনোয়ার খান মারা গেছেন পাঁচ বছর হলো।


সময় ১২:৪০, সোমবার। 

মাহির ঘরের দরজা বন্ধ করে আলমারি খুললো। 




চলবে.....


📌📌 প্লিজ কেউ কপি করবেন না। প্রয়োজনে শেয়ার করবেন। কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ। 


গল্পঃ #তোর_নামে_সন্ধ্যা_নামে

লেখকঃ #রিমন_হোসেন_ধুমকেতু 

পর্বঃ ১






Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama