শ্রাবণ সন্ধ্যায় তুমি আমি
শ্রাবণ সন্ধ্যায় তুমি আমি
"আমায় একটা কাজ দিবেন? আমি সব কাজ করতে পারবো। আর আমায় বেতনও কম দিবেন!"
মেয়েটার মুখ দেখে মনে হয় দুই তিন দিন পেটে কিছু যায়নি! বয়সটা খুব বেশি হলেও বাইশের কাছাকাছি হবে। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে খুব। মাঝে মাঝে বাজ পরছে। মেয়েটার পোশাকের কিছু অংশ ভেজা। চেহারা হালকা শুকানো মনে হলেও লাবণ্যতা হারিয়ে যায়নি। হরিণীর মতো ডাগর ডাগর চোখ ছলছল করছে। সেই ডাগর চোখের জাদু যেন যে কারোরই কঠিন হৃদয় গলিয়ে ফেলবে!
মন্ডল বাড়ির বড় কর্তীও সেই চোখের জাদু থেকে রক্ষা পেলেন না। তার মনে মেয়েটার জন্য অদ্ভুত একটা অনুভুতির জন্ম হয়। তিনি বললেন,
"তুমি কি রান্না করতে পারো?"
"জ্বী। পারি।"
"ঠিক আছে। আমার ছেলের বিয়ে। রান্নার জন্য লোক নেওয়া হয়েছে। তুমি তাদের হাতে হাতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি অন্যান্য যেই কাজগুলো রয়েছে। সেগুলোও করবে!"
"কিন্তু..!"
"বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলে তোমায় চলে যেতে হবে না। তুমি আমাদের বাড়িতেই কাজ করবে।"
"জ্বী।"
"তাহলে ভিতরে গিয়ে কাজে লেগে পরো। আর হ্যাঁ! আগে মাথা ভালো করে মুছে কিছু খেয়ে নাও।"
মেয়েটা ছলছল চোখে বাড়ির বড় কর্তীর দিকে তাকালো। যেন অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতীক স্বরূপ এখুনি তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরবে! বাড়ির বড় কর্তী বললেন,
"আমি বাড়ির কাউকে ডাক দিচ্ছি। সে তোমাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে সব বুঝিয়ে দিবে।"
বড় কর্তীর ডাক শুনে বাড়ির ভিতর থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে এলো। বয়সটা খুব বেশি হলে বিশ হবে। পরনের পোশাক বেশ দামী! গায়ে হালকা গহনাও রয়েছে। মনে হয় এই পরিবারেরই কোন সদস্য হবে। বা কোন আত্মীয়ও হতে পারে! মেয়েটা এসেই বললো,
"ফুপি, আমায় ডেকেছো?"
"হ্যাঁ রে! শোন্! এই মেয়েটা আজ থেকে আমাদের বাড়িতে কাজ করবে। ওকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে আগে কিছু খাওয়াবি। তারপর কাজগুলো বুঝিয়ে দিবি।"
"ঠিক আছে ফুপি।"
মেয়েটা বাড়ির ভিতরের দিকে গেলো। বাড়ির বড় কর্তী এতক্ষণ লক্ষ্য করেননি। কিন্তু এবার তিনি দেখলেন মেয়েটার ঘন কালো চুল! যা বিনুনি করা রয়েছে এবং কোমর ছাপিয়ে চলে গেছে নিচ পর্যন্ত!
শহরের সবচেয়ে বড় বিজনেসম্যান হিসেবে যদি কারো নাম সবার আগে আসে! তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি হলেন মোহাম্মদ আশরাফ মন্ডল। আর তার স্ত্রী হলেন রুকসান বেগম। মন্ডল বাড়ির বড় কর্তা হলেন মোহাম্মদ আশরাফ মন্ডল এবং বড় কর্তী হলেন রুকসান বেগম। শহরের মাঝখানে দুইতলা বিশিষ্ট্য বড় একটা বাড়ি আলোয় ঝলমল করছে। শান শওকত ও আভিজাত্যের ছোঁয়া পাওয়া রাজকীয় এই বাড়িতে বিয়ের আমেজ। বাড়ির একমাত্র ছেলে রিমন মন্ডলের বিয়ে। আত্মীয় স্বজন ও তাদের কোলাহলে মুখর পুরো মন্ডল বাড়ি।
রিমন নিজের ঘরে শার্ট প্যান্ট পরে ইং করে রেডি হচ্ছে। বাহিরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আছে। রিমনের জিম করা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মেয়েদের বুকের ভিতর ধুপধুপানি বেড়ে যায়! তার বয়স পঁচিশ পেরিয়েছে। দু'মাস আগেই পঁচিশতম বার্থডে চলে গেছে। স্টাইল করা চুলের তো কোন কথাই নেই! রিমন তাড়াতাড়ি নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। তাকে এইভাবে শার্ট প্যান্ট পরা অবস্থায় দেখে বৃষ্টি বললো,
"এভাবে সেজেগুজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?"
রিমন তাড়াহুড়োর মধ্যে উত্তর দিলো,
"ফ্রেন্ডদের মিট করতে যাচ্ছি। মা কোথায়?"
"বাহিরে।"
"ওকে। বাই।"
বৃষ্টি রিমনের নিজের বোন। কিন্তু সে মেয়ে হওয়ায় বাবা মায়ের কাছে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। বৃষ্টির বিয়ে হয়েছে দু'বছর হলো। রিমনের মা রুকসান বেগম মানে বাড়ির বড় কর্তী বাহিরে বসে আছেন। বাড়ির বাহিরে বসার একটা জায়গা রয়েছে। তিনি সেখানেই রয়েছেন। রিমন গিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
"মা, আমি একটু ফ্রেন্ডদের মিট করতে যাচ্ছি।"
"আর দুইদিন পর তোমার বিয়ে! আজ আবার কিসের ফ্রেন্ড? সবাই তো এখানেই রয়েছে।"
"মা, ওরা বিদেশ থেকে আসছে। ওদের মিট তো করতেই হবে! তা ছাড়া কোম্পানির একটা ডিলও রয়েছে!"
"বাপ ছেলে শুধু কোম্পানি নিয়েই থাকো! আমি কিন্তু স্পষ্ট বলে দিচ্ছি রিমন! বিয়ের পর অবন্তীকে সময় দিতে হবে!"
"ওহ্ মা! তুমিও না।"
"যাও। কিন্তু সাবধানে।"
রিমন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। রুকসান বেগম বসে থাকলেন। তিনি একাই রয়েছেন। এমনিতেই তিনি একা সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করেন। বাড়ির কর্তা আশরাফ মন্ডল এখন অফিসে রয়েছেন। জরুরী একটা মিটিং অ্যাটেন্ড করেছেন তিনি। আশরাফ মন্ডল নিজের পরিবারকে ভালোবাসেন। কিন্তু তিনি বিজনেসের পিছনে অধিক সময় ব্যয় করেন। রিমনও তার মতোই হয়েছে।
শ্রাবণ মাস।
তাই সারাদিন মেঘলা আকাশ এবং ঝিরঝিরে বৃষ্টি নিয়েই কাটে। মাঝখানে আকাশ ভেঙে ঢল নামে। সাথে বিদ্যুৎ চমকানোর কানে তালা লাগা শব্দ!
রিমনের বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। রাতে সে খাওয়া দাওয়া করবে না। কারণ বন্ধুদের সাথে ছিলো। টুকিটাকি খাওয়া দাওয়া হয়েছে। রাতে কিছু কাজ করতে হবে। তাই সে দিয়াকে বললো, কেউ যেন তার ঘরে এককাপ কফি পাঠিয়ে দেয়! দিয়া রিমনের মামাতো বোন। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। ঘরে ঢুকতেই রিমনের ফোনটা বেজে উঠলো। সে ফোন রিসিভ করে কানে গুজে শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। এমন সময় হঠাৎ.....
মেয়েটা কফির কাপ হাতে রিমনের ঘরে ঢোকে। রিমন মেয়েটার দিকে তাকিয়েই থমকে যায়!
চলবে.......
গল্পঃ শ্রাবণ সন্ধ্যায় তুমি আমি
(সূচনা পর্ব)
লেখকঃ রিমন হোসেন ধুমকেতু

