তোমায় রাখিব যতনে
তোমায় রাখিব যতনে
----- করে দেব!কেমন আছিস!?চিনতে পারছিস....?
----( পিছন ফিরে) চিনতে পারব না!তুই!আমি তো বেশ আছি!তুই বল কেমন আছিস?
( দেব অর্থাৎ দেবমাল্য চৌধূরী,আর মল্লিকা ভট্টাচার্য! অন্তত বছর পাঁচেক পর বহু লোকজনের ভিড়ে মাল্টিপ্লেক্সে র ফ্লোরে দেখা!)
----- এখানে কি করছিস?যতদূর শুনেছি তুই তো ব্যাঙ্গালোরে এখন! এখানে.....!
---- সে ঠিকই বলেছিস মলি! বাঙালোরে ই পোস্টিং এখন!আসলে রিশার জন্মদিন কাল;আর বাপের বাড়ী তো এখানেই ওর!তাই আসলে অল্পসল্প কিছু কেনাকাটা! সারপ্রাইজ দেওয়ার ছোট্ট করে একটা প্ল্যান ছিল বুঝলি!তুই কি একা নাকি?তোর হাসব্যান্ড কোথায়?
---- হ্যাঁ, বাড়ির ওই অল্পসল্প কিছু কেনাকাটা আরকি!
----- আজ তো শনিবার! হাফ ডে তো!তোর হাসব্যান্ড আসেনি কেনো?
----- আরে না না!ব্যাংক থেকে ফিরে আলাদা টুকটাক কাজগুলো দেখতে হয় যে....! বাড়ির গাড়ি তেই এসেছি,সমস্যা নেই!
----- আচ্ছা বেশ! কফি খাবি? চলনা বসে খানিকটা গল্প করা যাবে!
----- আরে না না,আজ একদমই সময় নেই রে হাতে!অন্য আর একদিন হলে ক্ষতি কি....!
---- এই শহরেই আছি এখন কদিন,পারলে যোগাযোগ করিস দেখা হবে!
------- সেই ছোট্ট বেলার বন্ধু মল্লিকা আর দেবমাল্য।দুজনের ই মেয়েবেলা - ছেলেবেলা থেকে স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত। দেবের সাথে কথা শেষ হওয়ার কিছুক্ষন পরে লক্ষ্য করলো মলি বাইরে বৃষ্টি টা বেশ জোরেই পড়ছে।বলা যায় সম্বিত ফিরল সায়ন এর ফোনেই,মল্লিকার হাসব্যান্ড।
---- মলি,সামান্য কাজ পড়ে গেছে আমার,please কিছু মনে করো না,আনতে যেতে পারছিনা আমি। গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি,please চলে আসো তুমি,কোনো অসুবিধে হবেনা!
আধা ঘন্টার মধ্যেই কেনাকাটা শেষ করে নিচে এসে দেখে পার্কিং কমপ্লেক্স এই বাড়ির গাড়ি দাঁড়িয়ে! বলাই বাহুল্য,বিয়ের পাঁচ বছর পরেও সায়ন এই সমস্ত superiority র সবটুকুই ঢেলে দেয় মলিকে।ছোট্ট সংসার। সায়ন ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার,মলি একটা মাল্টন্যাশনাল কোম্পানি তে জব করে।
বৃষ্টি পড়লেও রাস্তা এ বেশ যানজট,আর ওই জোরে বৃষ্টিটার জন্যেও বেশ জ্যাম হয়েছে রাস্তাটা এ।গাড়ির উইপার গুলোর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে মলির কেমন জানি নিজের বিবাহিত জীবনটা ভাসতে থাকে চোখের সামনে!কই গত পাঁচ বছরে তো মলির জন্মদিনটা একবারও সেলিব্রেট হয়নি এভাবে,বা anniversary তে সায়ন একদিনের ছুটি ম্যানেজ এর surprise তো দেইনি ওকে! জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু এঁকে একবারো তো বলেনি আজ ক্যান্ডেল লাইট ডিনার! অথচ এমনটা নয় যে লং ড্রাইভ, লেট নাইট মুভি,বা ক্যান্ডেল লাইট ডিনার এ যায়না ওরা! দুজনের ই চাকরি সূত্রে mood refreshment এ weekend এ হয়েই থাকে এগুলো! কিন্তু কোনো special occasion এ জড়িয়ে ধরার অছিলায় বা আরো ভালো শব্দে cuddling এর বাহানায় mood এৱ refreshment হয়না তো....!আজকাল বড্ড কেমনজানি সাদামাটা লাগে এগুলো!
ভাবতে ভাবতে মলি কখন যেনো তার কলেজ শুরুর দিনগুলো তে ফিরে যায়,যেটাকে মেকি শব্দে বলে 'flashback'! যেগুলো এ সকালে ' হরলিক্স টা গিলে তাড়াতাড়ি বেরো' থেকে রাতে ' বাড়িটা ঢুকে একবার ফোন করবি ' পর্যন্ত সঙ্গী বলতে একমাত্র ছিলো দেব! মলির special paper ছিলো কেমিস্ট্রি,আর দেবের কম্পিউটার সাইন্স!তাই সিডিউল টা ম্যাচ না করলেও ছেলেবেলার সেই বন্ধুত্বের দাবিটা সকাল - সন্ধ্যেটা বেশ ম্যাচ করিয়ে দিতো ওদের! এই যেমন তাড়াতাড়ি ক্লাস শেষের পর চায়ের দোকানে আড্ডা,বা মলির ক্লাস এ দেরি হলে অপেক্ষা করে শেষে দুজনে একসাথে সাইকেল নিয়ে গল্পঃ করতে করতে ফেরা থেকে,প্ল্যান করে ক্লাস bunk করা পর্যন্ত! সেই ক্লাস সিক্সে বন্ধুত্বের শুরুটা হওয়ার পর এমনই ছিল ওদের বন্ধুত্ব ! সকলের সামনে হাতে গোলাপ দিয়ে " তোকে বড্ড ভালোবাসি " টা হয়তো ছিলনা কোনোদিনই কিন্তু কোথায় যেনো " তুই না থাকলে আমার কি হবে" টা ছিল বড্ড বেশি ।
- " দেব বাড়ি যাবি আমার একবার .....?"
- কেনো রে মলি! কাকিমা আবার সেই সর্ষে ইলিশ বানিয়েছে নাকি ....?"
- মলির সেই দিনটার কথা মনে পড়ে দেবের সাথে, most probably শেষের দিন!
- ইয়ারকি করিসনা দেব! বলেছিলাম তো তোকে বাড়িতে বিয়ে দিতে চায় আমার!কলেজটা শেষ হতে তো আর দেরি নেই, চাপটা বাড়িতে ভীষণই! চল না একবার তুই!
- খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে দেবমাল্য! কি বলবো আমি মলি! কিসের ভরসায় ছাড়বেন কাকু কাকিমা তোকে আমার কাছে! বাবার রিটায়ারমেন্টের দেরি আছে ঠিকই , কিন্তু চাকরি - বাকরি কিছুই তো করিনা আমি!
- চাকরি তো আমিও করিনা দেব! পড়া যেমন তোর ও শেষ হয়নি, শেষ তো হয়নি আমারও! এখন বাড়িতে বলনা একবার , বলনা একবার যে থাকতে চাই একসাথে ! দুজনের একজন চাকরি পেলে বিয়ে করবো, আর সংসার না হয় সাজাবো দুজনে চাকরি করেই!কোনো অসুবিধে হবেনা চলনা..!
-----( খানিকক্ষণ চুপ থেকে) আমি যাবনা! তুই বাড়ির একমাত্র আদূরে মেয়ে! অনেকবেশি সুখ - স্বাচ্ছন্দ্য ডিজার্ভ করিস তুই! আমি হয়তো তা দিতে পারবনা! বিয়ে করে নে,ভালো থাকবি!
সেদিন অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে ও লাভ হয়নি দেবমাল্য কে!ভীষণ একগুঁয়ে ও! তার ঠিক পাঁচ মাস পরে কলেজ এর ইতি,আর তারপর থেকেই সায়নকে কাছে টেনে নিয়েছে ও! সত্যিই যা যা ভাবতো ও,তার কি নেই আজ ওর কাছে! Loving husband, বড়ো বাড়ি,দুখানা গাড়ি,নিজের একটা বড়ো চাকরি ---- সব! এসব ভাবতে ভাবতে খেয়াল ই করেনি যেনো, যে কখন বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে ও! গাড়ি থেকে নেমেই চমকালো যেনো অদ্ভুত ভাবেই! হাতের জিনিসগুলো ড্রাইভারকে ধরিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে ওকে সায়ন!
----- কি ব্যাপার! এত ভালোবাসার কারণটা কি আজ.....!?
----- ইনক্রিমেন্ট হয়েছে sweet heart! বাড়ি ঢুকতেই দেবনা....আজ লং ড্রাইভ,তারপর লেট নাইট ডিনার! আমি ড্রাইভ করবো...চলো....!!
----- তাই!! আচ্ছা, দশমিনিট দাঁড়াও!মুখে সামান্য জল দিয়ে আসি আমি!
সত্যিই তো!ভীষণ সুখী আজ ও! ওর মত এরকম loving husband ই কতজন ই বা পায়!ভালো - খারাপের মাপকাঠির তুলনা অন্য কারো সাথে করাটাই তো দোষের! তবুও....সেই দিনগুলোর কথা কখন ই যেনো মনে পড়ে যায়,ফিরে যায় ও,তার একান্তই নিজের মেয়েবেলা টা এ,আর কখনই যেনো নিজের অজান্তেই বলে ওঠে ' তোমায় রাখিব যতনে...!!'