সাহায্য
সাহায্য
ফাঁকা ফাঁকা দাঁড়ানোর জন্য লাইনটা খুব লম্বা। রচনা দেবী ঘাড়টা কাৎ করে দেখে নিলেন। কতোজনের পরে তিনি। নবপল্লীর ছেলেরা ঈশ্বরের দূত। প্রশংসা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবার। এই স্বার্থসর্বস্ব দুনিয়ায় কে আর অন্যের দুঃখ দেখে! এবার তারা চাল আলু বিতরণ করছে। এটা দ্বিতীয়বার। এভাবেই মাসে দুবার করার ইচ্ছে তাদের।
ছেলেগুলোর মধ্যেআ তোড়জোড়ের শেষ নেই। হিসেব করেই বাজেট তৈরি হচ্ছে প্রত্যেকবার। স্থানীয় সংবাদ চ্যানেলটিকে তারিখ জানানোই ছিলো। এবারও সম্প্রচারিত হবে। এবাদে ফেসবুক তো রয়েইছে। লকডাউন হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট। গতবার অনেক শেয়ার হয়েছে। আজকের বিতরণের ছবিসহ পোস্টও করবে।
স্বল্প রোজগেরে পরিবারগুলি ভয়ে তটস্থ। লকডাউন যদি উঠেও যায়, সব কি স্বাভাবিক হবে? আগের মতো! মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে কে যাবে ঘরের বাইরে? আর যদি লকডাউন বাড়িয়ে দেয় সরকার! পাড়ার ছেলেরা এগিয়ে এসেছে, এটাই শান্তি। দেরিতে হলেও, মন্মথ বাবুকে বোঝাতে পেরেছেন তাঁর স্ত্রী। গতবার মন্মথ বাবু লাইনে দাঁড়াননি। ছবি তোলাতুলির কথাটা শুনে আত্মমর্যাদায় ঠেকছিলো। তবে কোনো প্রতিবাদ করেননি। শুধু স্ত্রী ছেলেকে বারণ করলেন। গরীবের আবার মানসম্মান কি! কর্তার কানে এই কথাটা বাজিয়ে বাজিয়ে রাজি করাতে পেরেছেন। রচনা দেবী। এবার তিনিই লাইনে দাঁড়াবেন, বলেছিলেন।
দূরত্বটা কমে গেছে। আর মাত্র দুজনের পর। চাল আলুর প্লাস্টিক পুঁটলি ধরানোর সময় ছবি তুলছে ওরা। রচনা দেবী মাথা নীচু করে কি যেন ভাবলেন! তারপর ঘোমটাটা আরেকটু টেনে এগিয়ে গেলেন সামনে।