STORYMIRROR

Atanu Chatterjee

Drama Thriller

4.5  

Atanu Chatterjee

Drama Thriller

“রামকিঙ্করের রাজপ্রাসাদ "

“রামকিঙ্করের রাজপ্রাসাদ "

8 mins
14

                                                                                                           “রামকিঙ্করের রাজপ্রাসাদ "

                                                                                                                                                  Atanu Chatterjee

অধ্যায় ১: ছায়ার নিচে এক প্রাসাদ

বীরভূমের এক প্রাচীন গ্রাম—নাম শ্যামপুর। গ্রামের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এক ধ্বংসপ্রায় রাজপ্রাসাদ, যার নাম রামকিঙ্করের রাজপ্রাসাদ। কেউ জানে না, কে ছিলেন রামকিঙ্কর। কেউ বলে, তিনি ছিলেন এক শিল্পপতি, কেউ বলে, এক রাজা, কেউ বলে, এক খুনি। কিন্তু সবাই জানে—প্রাসাদে ভয় আছে।

রাতের বেলা কেউ সেখানে যায় না। বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় কান্নার শব্দ, দরজার খটখট, আর দূর থেকে ভেসে আসে এক নারীর গান।

এই গল্প শুরু হয় এক তরুণ উকিল—অভিষেক মুখার্জির আগমনে। কলকাতা থেকে সে আসে শ্যামপুরে, তার মামার মৃত্যুর তদন্তে। মামা ছিলেন সেই প্রাসাদের আইনজীবী, হঠাৎ এক রাতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায় প্রাসাদের ভেতরে, চোখ খোলা, মুখে আতঙ্ক।

অভিষেক আসে, সঙ্গে তার বন্ধু—পুলিশ অফিসার রুদ্র সেন। রুদ্র বিশ্বাস করে, এটা দুর্ঘটনা নয়, খুন। কিন্তু কে খুন করল? কেন?

প্রাসাদের ভেতরে তারা খুঁজে পায় এক পুরনো চিঠি, যেখানে লেখা—

“রামকিঙ্করের অভিশাপ এখনও জীবিত। যে সত্য জানবে, সে মরবে।”

অভিষেকের সঙ্গে দেখা হয় এক রহস্যময় নারী—মৃণালিনী। সে বলে, “আমি রামকিঙ্করের বংশধর। আমার দাদু এই প্রাসাদে খুন হয়েছিলেন। আমি জানি, এখানে কী লুকিয়ে আছে।”

রুদ্র সন্দেহ করে মৃণালিনীকেই। কিন্তু অভিষেক তার চোখে দেখে এক অদ্ভুত যন্ত্রণা, এক প্রেম, এক ভয়।

রাত বাড়ে। প্রাসাদের ভেতরে তারা খুঁজে পায় এক গোপন কুঠুরি, যেখানে আছে রক্তমাখা কাপড়, পুরনো অস্ত্র, আর এক মৃতদেহ—যার পরিচয় কেউ জানে না

অধ্যায় ২: রক্তের গন্ধ

শ্যামপুরের আকাশে তখন গাঢ় মেঘ। রাজপ্রাসাদের চারপাশে বাতাস থমথমে। অভিষেক মুখার্জি সেই গোপন কুঠুরির সামনে দাঁড়িয়ে, যেখানে পাওয়া গেছে অজ্ঞাত মৃতদেহ। রুদ্র সেন মৃতদেহের ছবি তুলে পাঠিয়েছে ফরেনসিক টিমে। কিন্তু তার আগে, সে খেয়াল করে—মৃতদেহের ডান হাতে আঁকা আছে একটি চিহ্ন: একটি ত্রিভুজ, যার ভেতরে একটি চোখ।

“এটা কি কোনো গুপ্ত সংগঠনের চিহ্ন?” রুদ্র ফিসফিস করে।

অভিষেক চুপ। তার মনে পড়ে যায় মামার পুরনো ডায়েরি, যেখানে লেখা ছিল—

“রামকিঙ্করের প্রাসাদে শুধু ইট আর পাথর নেই, আছে রক্তের ইতিহাস।”

সেই রাতে, অভিষেক আবার দেখা করে মৃণালিনীর সঙ্গে। তারা বসে প্রাসাদের পুরনো লাইব্রেরিতে, যেখানে ধুলো জমে আছে শতাব্দীর বইয়ে। মৃণালিনী বলে, “আমার দাদু বলতেন, রামকিঙ্কর ছিলেন এক শিল্পী, কিন্তু তার শিল্প ছিল রক্ত দিয়ে আঁকা।”

অভিষেক জিজ্ঞেস করে, “তুমি কী জানো সেই ত্রিভুজ চিহ্নের কথা?”

মৃণালিনী থেমে যায়। তারপর বলে, “এই প্রাসাদে একসময় এক গোপন সভা বসত। নাম ছিল ‘অগ্নিচক্র’। তারা বিশ্বাস করত, সত্যকে রক্ষা করতে হলে রক্তপাত প্রয়োজন।”

রুদ্র সন্দেহ করে, এই ‘অগ্নিচক্র’-ই হয়তো মামাকে খুন করেছে। কিন্তু প্রমাণ নেই।

পরদিন সকালে, প্রাসাদের পেছনে পাওয়া যায় একটি পুরনো বাক্স। তার ভেতরে আছে—

একটি রক্তমাখা ছুরিএকটি প্রেমপত্র, লেখা মৃণালিনীর নামেএকটি পুরনো পুলিশ রিপোর্ট, যেখানে রামকিঙ্করের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ছিল

অভিষেক বুঝতে পারে, এই প্রাসাদ শুধু রহস্য নয়, প্রেম আর প্রতারণার ইতিহাসও বহন করে।

রাত্রে, মৃণালিনী অভিষেককে বলে, “তুমি যদি সত্য জানতে চাও, তবে প্রস্তুত হও হারানোর জন্য।”

অভিষেক জানে, সে ফিরে যেতে পারবে না। সে এখন রামকিঙ্করের রাজপ্রাসাদের অংশ।

অধ্যায় ৩: রামকিঙ্করের দিনলিপি

অভিষেক মুখার্জি প্রাসাদের পুরনো লাইব্রেরিতে খুঁজে পায় একটি ধুলো ধরা কাঠের বাক্স। তার ভেতরে আছে এক চামড়ার মোড়া ডায়েরি—রামকিঙ্করের নিজস্ব লেখা। প্রথম পাতায় লেখা—

“আমি রামকিঙ্কর, শিল্পী, প্রেমিক, অপরাধী। এই প্রাসাদ আমার সৃষ্টি, আমার অভিশাপ।”

ডায়েরির পাতা উল্টে অভিষেক পড়ে—

১৯৪৭

“শ্যামপুরে আমি এসেছি এক স্বপ্ন নিয়ে। এখানে আমি গড়ব এক শিল্পের রাজ্য, যেখানে রঙ হবে রক্ত, ছায়া হবে প্রেম। আমি ভালোবাসি এক নারীকে—নাম তার চারুলতা। সে আমার মডেল, আমার প্রেরণা, আমার সর্বনাশ।”

১৯৪৮

“চারুলতা হঠাৎ হারিয়ে যায়। কেউ বলে, সে পালিয়েছে। কেউ বলে, তাকে খুন করা হয়েছে। আমি জানি না। কিন্তু আমি জানি, আমার হৃদয় ছিন্নভিন্ন।”

১৯৪৯

“আমি গড়ি এই প্রাসাদ, তার স্মৃতিতে। কিন্তু প্রতিটি ইটে আমি শুনি তার কান্না। আমি জানি, সে ফিরে আসবে না। কিন্তু আমি চাই, কেউ জানুক তার গল্প।”

অভিষেক ডায়েরি বন্ধ করে। তার মনে হয়, এই প্রাসাদ শুধু এক স্থাপনা নয়, এক প্রেমের কবর।

রুদ্র সেন ডায়েরি দেখে বলে, “এই লোকটা হয়তো খুনি ছিল। চারুলতার মৃত্যু রহস্যময়। আমরা খুঁজে বের করব।”

মৃণালিনী বলে, “চারুলতা ছিলেন আমার ঠাকুরমা। আমি জানি, তিনি মারা যাননি। তিনি বন্দি ছিলেন এই প্রাসাদের নিচে।”

সবাই স্তব্ধ।

রাত্রে, তারা নামে প্রাসাদের গোপন সিঁড়ি দিয়ে নিচে। সেখানে তারা খুঁজে পায়—

একটি পুরনো কক্ষ, যেখানে চারুলতার ছবি আঁকা আছে দেয়ালেএকটি শিকল বাঁধা খাটএকটি চিঠি, লেখা রামকিঙ্করের হাতে—

·  “আমি তোমাকে বন্দি করিনি, আমি তোমাকে রক্ষা করেছি।”

অধ্যায় ৪: আদালতের অগ্নিপরীক্ষা

শ্যামপুরের জেলা আদালতে শুরু হয় মামলার শুনানি। অভিষেক মুখার্জি এবার শুধু একজন অনুসন্ধানকারী নয়, মামলার প্রধান উকিল। তার মামার মৃত্যুর তদন্ত এখন পরিণত হয়েছে এক বিস্তৃত ষড়যন্ত্রের মামলায়—যার কেন্দ্রে আছে রামকিঙ্করের রাজপ্রাসাদ

প্রথম সাক্ষী—মৃণালিনী। সে আদালতে দাঁড়িয়ে বলে, “আমার ঠাকুরমা চারুলতা বন্দি ছিলেন সেই প্রাসাদের নিচে। আমি নিজে সেই কুঠুরি দেখেছি। আমার বিশ্বাস, রামকিঙ্কর তাকে বন্দি করেননি, বরং রক্ষা করেছিলেন।”

প্রতিপক্ষ উকিল—বিষ্ণু দে, এক চতুর ও কৌশলী ব্যক্তি। তিনি বলেন, “আপনার ঠাকুরমা কোথায়? তার কোনো প্রমাণ নেই। এই গল্প কি শুধু আবেগের খেলা?”

রুদ্র সেন আদালতে প্রমাণ হাজির করেন—রামকিঙ্করের ডায়েরি, মৃতদেহের ছবি, এবং সেই ত্রিভুজ চিহ্ন। তিনি বলেন, “এই চিহ্ন অগ্নিচক্রের। তারা এক গুপ্ত সংগঠন, যারা বিশ্বাস করে রক্তের মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠা হয়।”

আদালতে হঠাৎ এক নতুন মোড় আসে—এক বৃদ্ধ পুরুষ হাজির হন, নাম তার হরিপদ ঘোষ। তিনি বলেন, “আমি ছিলাম রামকিঙ্করের প্রাসাদের রক্ষক। আমি জানি, চারুলতা মারা যাননি। তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন, কারণ তিনি জানতেন, অগ্নিচক্র তাকে হত্যা করতে চায়।”

সবাই স্তব্ধ।

অভিষেক বলেন, “তাহলে আমার মামা কেন খুন হলেন?”

হরিপদ বলেন, “তিনি সত্য জানতেন। তিনি চেয়েছিলেন অগ্নিচক্রের মুখোশ খুলে দিতে। তাই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।”

আদালত উত্তপ্ত। বিচারক বলেন, “এই মামলায় শুধু খুন নয়, ইতিহাসের বিচার হচ্ছে।”

অভিষেক শেষ যুক্তিতে বলেন—

“রামকিঙ্করের রাজপ্রাসাদ শুধু এক স্থাপনা নয়, এক অভিশপ্ত প্রেম, এক গুপ্ত সংগঠনের আস্তানা, এবং এক সত্যের কবর। আজ আমরা সেই কবর খুঁড়ে বের করছি ইতিহাসের রক্তমাখা পৃষ্ঠা।”

আদালত উত্তপ্ত। বিচারক বলেন, “এই মামলায় শুধু খুন নয়, ইতিহাসের বিচার হচ্ছে।”

অভিষেক শেষ যুক্তিতে বলেন—

“রামকিঙ্করের রাজপ্রাসাদ শুধু এক স্থাপনা নয়, এক অভিশপ্ত প্রেম, এক গুপ্ত সংগঠনের আস্তানা, এবং এক সত্যের কবর। আজ আমরা সেই কবর খুঁড়ে বের করছি ইতিহাসের রক্তমাখা পৃষ্ঠা।”

অধ্যায় ৫: আগুনের বৃত্ত

রাত্রি গভীর। রাজপ্রাসাদের চারপাশে অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। অভিষেক, রুদ্র, এবং মৃণালিনী গোপনে প্রবেশ করে প্রাসাদের সেই অংশে, যেখানে একসময় ‘অগ্নিচক্র’-এর সভা বসত। পুরনো মানচিত্রে চিহ্নিত সেই কক্ষ—“অগ্নিকক্ষ”—এখন ধ্বংসপ্রায়, কিন্তু মেঝেতে এখনও আঁকা আছে সেই ত্রিভুজচিহ্ন, যার ভেতরে চোখ।

হঠাৎ তারা শুনতে পায় পায়ের শব্দ। রুদ্র ইশারা করে চুপ থাকতে। ছায়ার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে এক মুখ—হরিপদ ঘোষ। কিন্তু তার চোখে ভয়।

“তোমরা চলে যাও,” সে ফিসফিস করে। “তারা ফিরে এসেছে।”

“কারা?” অভিষেক জিজ্ঞেস করে।

“অগ্নিচক্র। তারা এখনো সক্রিয়। তারা জানে, তোমরা সত্যের খুব কাছে চলে এসেছ।”

ঠিক তখনই এক বিস্ফোরণ ঘটে প্রাসাদের পেছনের অংশে। ধোঁয়া, আগুন, আর চিৎকারে ভরে যায় রাত। রুদ্র দৌড়ে যায়, দেখে—একজন অচেনা লোক আগুন লাগিয়ে পালাচ্ছে। সে ধরা পড়ে না, কিন্তু তার হাতে ছিল সেই ত্রিভুজচিহ্নের উল্কি।

পরদিন সকালে, পুলিশ আসে। তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় চমক আসে ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে—প্রথম যে মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, তার ডিএনএ মিলে যায় রামকিঙ্করের সঙ্গে।

অভিষেক স্তব্ধ। “রামকিঙ্কর কি বেঁচে ছিলেন এতদিন?”

মৃণালিনী বলে, “না। কিন্তু তার ছায়া এখনও বেঁচে আছে। হয়তো তার উত্তরসূরি কেউ এইসব ঘটনার পেছনে।”

রুদ্র খুঁজে পায় একটি পুরনো ছবি—রামকিঙ্কর, চারুলতা, এবং আরেকজন যুবক। ছবির পেছনে লেখা—

“আমার উত্তরাধিকার, আমার অভিশাপ।”

এই যুবক কে? সে কি এখনো জীবিত? সে কি অগ্নিচক্রের নেতা?

অভিষেক বুঝতে পারে, সত্যের দরজা খুলছে, কিন্তু তার পেছনে আছে আগুনের বৃত্ত—যেখানে প্রবেশ মানেই মৃত্যু।

অধ্যায় ৬: মুখোশের আড়ালে

রুদ্র সেন এখন বিপদে। আগুন লাগানোর রাতে সে ধাওয়া করেছিল যে ছায়ামূর্তিকে, তার বিরুদ্ধে এখন পাল্টা অভিযোগ এসেছে—অগ্নিচক্রের সদস্যদের একজন তাকে আদালতে ফাঁসাতে চাইছে। অভিষেক বুঝতে পারে, এই মামলা শুধু তার মামার হত্যার নয়, বরং এক বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ।

মৃণালিনী তাকে নিয়ে যায় প্রাসাদের এক গোপন ঘরে, যেখানে আছে একটি আয়না—পুরনো, ভাঙা, কিন্তু তার পেছনে খোদাই করা—

“যে মুখ দেখবে, সে সত্য জানবে। কিন্তু সত্য সর্বনাশ ডেকে আনে।”

আয়নার পেছনে তারা খুঁজে পায় একটি চিঠি, লেখা চারুলতার হাতে—

“আমি পালিয়েছিলাম, কারণ আমি জানতাম, রামকিঙ্করের উত্তরসূরি আমার মৃত্যু চায়। আমি বেঁচে আছি, কিন্তু আমার মুখ কেউ দেখেনি।”

চিঠির সঙ্গে একটি ছবি—এক যুবক, যার মুখ রামকিঙ্করের মতো। অভিষেক বুঝতে পারে, এই যুবকই হয়তো বর্তমান অগ্নিচক্রের নেতা।

রুদ্রের ফোনে আসে ফরেনসিক রিপোর্ট—ছবির যুবকের নাম অভিজিৎ রায়, একজন শিল্পপতি, যিনি সম্প্রতি শ্যামপুরে জমি কিনেছেন। তার কোম্পানির লোগো সেই ত্রিভুজচিহ্ন।

অভিষেক ও রুদ্র সিদ্ধান্ত নেয়, তারা অভিজিৎ রায়ের মুখোমুখি হবে। তারা যায় তার বাংলোয়, যেখানে অভিজিৎ হাসিমুখে বলে—

“রামকিঙ্কর ছিলেন আমার পূর্বপুরুষ। আমি তার উত্তরাধিকার রক্ষা করছি। কিন্তু তোমরা যা খুঁজছ, তা শুধু ইতিহাস নয়—তা আগুন।”

মৃণালিনী বলে, “তুমি আমার ঠাকুরমাকে খুঁজে বের করেছ?”

অভিজিৎ চুপ। তারপর বলে, “সে বেঁচে আছে। কিন্তু সে এখন আমার বন্দি।”

অভিষেক রেগে ওঠে। “তুমি কি জানো, তুমি কী অপরাধ করছ?”

অভিজিৎ হাসে। “আমি শুধু ইতিহাস পুনরুজ্জীবিত করছি। রামকিঙ্করের রাজপ্রাসাদ আবার জেগে উঠবে। কিন্তু তার জন্য দরকার রক্ত।”

এই অধ্যায়ের শেষে, অভিষেক ও রুদ্র বুঝতে পারে—তাদের সামনে শুধু এক খুনি নয়, এক বিশ্বাসঘাতক উত্তরাধিকারী, যার পরিকল্পনা ভয়ংকর।

অধ্যায় ৭: মুক্তির ছায়া

অভিষেক, রুদ্র, এবং মৃণালিনী সিদ্ধান্ত নেয়—চারুলতাকে উদ্ধার করতে হবে। অভিজিৎ রায়ের বাংলোয় ঢোকার জন্য তারা তৈরি করে একটি পরিকল্পনা। রুদ্র পুলিশের সহায়তা চায়, কিন্তু অভিজিৎ এতটাই প্রভাবশালী যে স্থানীয় প্রশাসন নীরব।

রাত্রে, তারা গোপনে প্রবেশ করে বাংলোর নিচতলার গোপন কুঠুরিতে। সেখানে তারা খুঁজে পায়—

একটি ছোট্ট ঘর, যেখানে আলো নেইএকটি কাঠের খাট, যার পাশে একটি পুরনো হারমোনিয়ামএকটি বৃদ্ধা, যার চোখে ভয়, কিন্তু মুখে শান্তি

মৃণালিনী ফিসফিস করে, “ঠাকুরমা…”

চারুলতা ধীরে ধীরে বলে, “তোমরা এসেছ? আমি জানতাম, কেউ একদিন আসবে।”

অভিষেক জিজ্ঞেস করে, “আপনি এতদিন এখানে ছিলেন?”

চারুলতা বলেন, “আমি পালিয়ে ছিলাম। অভিজিৎ আমাকে খুঁজে পায়, বন্দি করে। সে চায়, আমি রামকিঙ্করের সত্যকে মিথ্যা বলি।”

রুদ্র বলে, “আপনি আদালতে সাক্ষ্য দেবেন?”

চারুলতা মাথা নাড়ে। “আমি দেব। আমি বলব, রামকিঙ্কর খুনি ছিলেন না। অগ্নিচক্রই সবকিছুর পেছনে।”

তারা চারুলতাকে নিয়ে পালায়। কিন্তু অভিজিৎ রায় তাদের পথ রোধ করে। তার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র।

“তোমরা ভাবছ, সত্য জিতবে?” সে চিৎকার করে। “এই প্রাসাদ  আমার! এই ইতিহাস আমার!”

মৃণালিনী সামনে দাঁড়ায়। “এই ইতিহাস রক্ত দিয়ে লেখা, কিন্তু আমরা তাকে ভালোবাসা দিয়ে লিখব।”

রুদ্র ঝাঁপিয়ে পড়ে, অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। অভিজিৎ ধরা পড়ে।

অধ্যায় ৮: রাজপ্রাসাদের পুনর্জন্ম

আদালতের রায় ঘোষিত হয়েছে—অভিজিৎ রায় দোষী। অগ্নিচক্রের ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হয়েছে। চারুলতা দেবী, যিনি এতদিন বন্দি ছিলেন, এখন মুক্ত। তার সাক্ষ্যে রামকিঙ্করের নাম মুক্তি পেয়েছে—তিনি ছিলেন প্রেমিক, শিল্পী, আর এক অভিশপ্ত ইতিহাসের শিকার।

শ্যামপুরে উৎসবের আবহ। রাজপ্রাসাদে শুরু হয়েছে সংস্কার। অভিষেক মুখার্জি ও মৃণালিনী একসঙ্গে দাঁড়িয়ে প্রাসাদের সামনে। মৃণালিনী বলে, “এই প্রাসাদ শুধু ইট-পাথর নয়, এটা আমাদের পূর্বপুরুষদের গল্প।”

অভিষেক বলে, “এটা আমাদের ভবিষ্যতেরও গল্প। যেখানে প্রেম থাকবে, কিন্তু ভয় থাকবে না।”

রুদ্র সেন কলকাতায় ফিরে যায়, কিন্তু তার চোখে থাকে এক তৃপ্তির ছায়া। সে বলে, “এই মামলায় শুধু আইন জিতেছে না, মানবতা জিতেছে।”

চারুলতা দেবী প্রাসাদের এক কক্ষে বসে হারমোনিয়াম বাজান। তার কণ্ঠে ভেসে আসে এক পুরনো গান—

“যে ছিল অন্তরালে, সে আজ আলোয়…”

রাজপ্রাসাদের সামনে একটি ফলক স্থাপন করা হয়:

রামকিঙ্করের রাজপ্রাসাদ—ভয়, প্রেম, এবং সত্যের স্মৃতিসৌধ


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama