পতিতার মেস
পতিতার মেস
আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করে পুরসভা একটি নতুন চাকরি পেলাম,, যাতায়াতের সুবিধার্থে বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাড়ি র খোঁজে আছি,, কিন্তু নিজের সামান্য যোগাযোগে একটি বাড়ি ও জুটলো না। আমি চাইলেই মেসে থাকতে পারতাম, কিন্তু নিজের অনেক বাজে অভ্যাস আছে যা অনেকের মাঝে নষ্ট হয়ে যাবে,, বা পাগল উপাধি নিতে হবে,,যেমন থাকতে ই আমি পাগলের মতো গান ধরি,, সেটা হয়তো গান এর ভাষা ও ছন্দ দুটিরই এক সাথে শ্লীলতাহানি হয়,, তবুও আমি গান ধরি,,, তবে আমি কবিতার প্রতি একটু সিরিয়াস,, নিজে লেখা র চেষ্টা ও করি,,, কোনো লাইন দুবারের বেশি তিনবার কাটতে হলে নানারকম বিশেষণ বেরিয়ে আসে,,, আর এই কারণে আমি মেসে যেতে চাইছি না,,, কিন্তু বাড়ি ভাড়া ও পাচ্ছি না,,, অবিবাহিত পুরুষ সেই কারণে ও অনেকে ভাড়া দেয়নি,, তাই আমি নিজে চেষ্টা না করে একটি দালাল ধরলাম,, তাকে সব ভালো অভ্যাস গুলোও বললাম,,, বেটা একগাদা টাকা নিল,,,, শেষে একটি বাড়ি দেখে দিল,, বেশ ভালো, দুই তলা বাড়ি,উপর তলা আমার,নীচের তলা ফাঁকা,,মনের মতো ই অনেক গুলো জানালা,,,,, আমি আর ওই অভ্যাস দুজনে ই দিব্যি থাকবো ওই ঘর টাতে,,, বেশ তৃপ্ত হলাম,, দালাল টা আরও কিছু টাকা নিয়ে বিদায় নিলাম,,,, আমি গোছানোর নামে গোটা ঘর টাকে আরও অগোছালো করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল,, আমিও ক্লান্ত হয়ে গেলাম,,, একটি সিগারেট ধরিয়ে ডায়রি নিয়ে বসে পড়লাম জানলার পাশের চেয়ার টায়,,,, জানলা টা খুলে দিলাম,,,
বাড়ির পাশের গলি টা যেয়ে শেষ হয়েছে ওই তিনতলা বাড়ি টাতে,,, বাড়িটার প্রতি তলায় চারটি করে রুম,, মোট বারোটি,,, প্রতি ঘরে ই আলো জ্বলছে,,, শুধু তিনতলা র একদম বাম দিকের ঘরটি ছাড়া,,, এটি হয়তো মেস হবে,,, যাই হোক একটা আধটা যদি সিগারেট খাওয়ার সঙ্গি পাওয়া যেতে পারে,,,, কিন্তু আর একটু সন্ধ্যা হতেই বুঝলাম মেয়েদের মেস,,, মনে কত রকমের রঙীন ভাবনা এলো মনে,,, পকেট থেকে পেন বেরিয়ে এলো, ডায়রি টাতে বেশ কিছু টা লিখে ফেলেছি,,, অনেকক্ষণ মেস বাড়ির দিকে লক্ষ্য পরেনি,,, এরপর তাকিয়ে দেখলাম অনেক গুলো রুমের আলো নিভে গেছে,, একটা লোক এদিক ওদিক তাকিয়ে ওই বাড়ি টির দিকে এগোচ্ছে,,,, আমি দেখতে থাকলাম,,,, লোক টা মেস বাড়ির ভিতরে গেল,,,, কিছুক্ষণ পর দু তলার রুমে একটি ঘরের লাইট নিভে গেল,,, আমি পেন দিয়ে ডায়রি র পাতায় আঁকিবুকি কাটতে কাটতে ওই পাতার লাইন গুলো পড়ার অযোগ্য হয়ে গেল,,,, হটাৎ করে আর একটি রুমের লাইট আবার জ্বলে উঠলো,,, কিছুক্ষণ পর এক বয়স্ক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলো,,, ভাবনা ভেঙে যাওয়ায় পর আমি কিছুক্ষণ অচল মন নিয়ে বসে রইলাম,,,, ঘরগুলো লাইট জ্বালাতে নিভাতে থাকলো আরও কিছুক্ষণ,,,, পেন ডায়রি তে লিখলো,
" সমস্ত ভাবনার শেষ
আমার বাড়ির সামনের গলির
শেষ কিনা পতিতার মেস"
রাতে আর হোটেলে খেতে গেলাম না,, বাইরে গেলে যদি কোনো ভদ্রলোক দেখে ফেলি সেই ভয়ে নয়,,, যদি কেও আমায় ভদ্রলোক ভেবে ফেলে সেই ভয়ে ,।।। মন মন খুব রাগ হলো সেই দালাল টার উপর,,, নয় সে আমার ওই অভ্যাস গুলো শুনে আমায় পাগল ভেবেছে অথবা ওই শালা হয়তো এই মেসের ও দালাল,,, এই সব ভাবনার মাঝে মন মন শপথ করলাম ওই পতিতাদের মেস দেখা জানলা আর খুলবো না,,,কাল সকালে উঠে আগে আর একটা দালাল দেখবো,, এই বাড়ি পাল্টাতে হবেই,,, এই সব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম,,
সকালে উঠে অফিস,, অন্য একটি দালাল দেখা, বিকালে খাবার কিনে এনে রেখে দেওয়া,,, সন্ধ্যা থেকে ডায়রি আর সিগারেট,,,
আরও এক সপ্তাহ কেটে গেল,,, কোনো ঘর না পাওয়ায় এখানেই থাকতে হচ্ছে,,,, কতগুলো সন্ধ্যা ঘরে চুপ করে বসে কাটালাম,, আর ভালো লাগছিলো না,,,,,,
আরও কিছু দিন কেটে গেল,,,
একদিন অফিস এর জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে দরজায় তালা দিচ্ছি,,, এমন সময় এক মোটা বয়স্ক মহিলা আর একটা অল্প বয়সী মেয়ে কে নিয়ে টোটো থেকে নামল,,, ওই অল্প বয়সী মেয়ে টার গায়ে হাফহাতা ছেলেদের লাল গেঞ্জি আর নীচে পাটিয়ালা ,,,, মুখে মাস্ক,,, গায়ের রঙ অতিরিক্ত ফরসা,,, রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে,,, জরাজীর্ণ চেহারা,চুল গুলি ও গা এর মতো তামাটে, নাকের কানে র কিছু পরে নেই,,অলংকার বলতে হাতে এক বালা,,আর তার চোখ দুটি,,,,,এক পলক এর জন্য চোখে চোখ পড়ল,, তার চোখে অনেক কিছু ভেসে বেড়াচ্ছিল,আমি অল্প কিছু ই দেখলাম,, আরও কিছু দেখার আগে বয়স্ক মহিলা টা তার হাত ধরে টান দিল,,,দ্রুত গতি তে সেই গলি র দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,, মেয়ে টি ওই মহিলার টানে দ্রুত পায়ে তার দিকে ছুটে চললেও যেন একটা পিছু টান রয়েছে সেটা তার চলার ভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে,,,
তার চোখের পাতা পরিষ্কার বুঝিয়ে গেল,,, মস্তানি চেহারা শুধু তার বাইরের,,, ভেতরে তীব্র ঝড়ের আশঙ্কায় ভীত এক উপকূলবাসী,,,
আমি তার চোখে সম্মোহিত হয়েছিলাম,, আমি ও তাদের পিছু পিছু দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেলাম,,, কোনো কিছু না ভেবেই আমি ও তাদের পিছু পিছু গলির মধ্যে ঢুকলাম,,, একি ওরা দুজন তো ওই মেসের দিকে যাচ্ছে,,, আমি থমকে গেলাম,,, মেয়ে টা একবার ঘুরলো আর একটা ভয়ানক না বীভৎস তাও নয় ধ্বংসাত্মক না না কোনো রকম হীন এক মুচকি হাসি দিল,,, আমি যে তাকে অনুসরণ করছিলাম সেটা সে বুঝতে পেরেছিল,,, আর যেমনি আমি থমকে গেলাম সে ওই হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিল সে এখন ভদ্রলোকদের,,, আর আমি তো ছোট লোক 🙂।। আমি শেষ অবধি দাঁড়িয়ে ছিলাম যদি রাস্তা ভুল বলে ফিরে আসে,,,
"চাতকের ইচ্ছায়
কি আর বিনা মেঘে বৃষ্টি হয়"
আমি এক অচেনা কে হারিয়ে যেতে দেখলাম, মনে হচ্ছে ছুটে ওই মেসের ভিতর চলে যাই,,, কিছুক্ষণ ওই মেয়ে টার চোখ দুটি পড়ি,,,,,
অফিস থেকে ফোন এলো,,, শরীর খারাপ অজুহাতে ছুটি নিলাম,,, আমি সেই রকম হীন হাসি আর গভীর চোখে বিভোর হয়ে আমার রুমের দিকে এগোতে থাকি,,,, এক বয়স্ক লোক তার স্ত্রী কে বলছে শুনলাম"আরে এ তো ঘোষ বাবু,, এ আবার এই দিকে কবে থেকে যাতায়াত শুরু করলো,,, সমাজ টা শেষ হয়ে গেল"
আমি মনে মনে বললাম,,, "সমাজ টা শেষ হয়ে গেল,, একটি মেয়ে কে জোর করে রাত জাগা পরী বানাতে নিয়ে গেল সেটা নজরে এল না"
আমি অনেক ভাবনার মিশ্রণ নিয়ে রুমে ঢুকলাম একটি সিগারেট ধরিয়ে,, এত ভারী লাগলো যে ঘুমিয়ে গেলাম,,,,, ঘুম থেকে যখন উঠলাম তখন প্রায় দুপুর শেষ, এক কাপ চা করে সেই জানলার ধারে বসে,, আবার সেই মেয়ে তে পড়লাম,,,,,, সমস্ত রাগ যেয়ে পড়লো সেই দালালের উপর,, কেনো জানি না মনে হচ্ছে আমার বাড়ি দেখে দেওয়া দালালের স্ত্রী হচ্ছে ওই মেয়ে টাকে মেসে নিয়ে যাওয়া মহিলা,,,,
অনেক ভাবনায় ডুবে,,, বিকেল গিয়ে সন্ধ্যা হলো,,, মনে হলো মেয়ে টিকে যদি আর একবার দেখতে পেতাম তার ঘরের লাইট নেভার আগে খুব ভালো হতো,, কোনো কিছু না ভেবে ই জানলা খুলে দিলাম,,, দেখলাম তিনতলা র বামদিকের শেষ ঘরটা তেও লাইট জ্বলছে,, বন্ধ কাচের জানালা দিয়ে একটি মেয়ের অবয়ব দেখলাম,, এটাই যে ওই মেয়ে টা সেটায় কোনো সন্দেহ নেই,,, মেয়েটি হয়তো খাটের উপর বসে আছে,, এক মুখ হাসি নিয়ে কোনো ভদ্রলোকদের আশায়, সমাজ শেষ করার ভাবনায়,,,
আমি তীব্র এক আশঙ্কা নিয়ে বসে আছি,,, ভগবান কে ডাকছি যেনো ওই ঘর টার আলো না নেভে,,,, অনেক লোক এলো গেলো কিন্তু অনেক ঘরের লাইট নিভলো আবার জ্বলে উঠল,,, কিন্তু সেই ঘরের আলো জ্বলছে,,, ভগবান আমার কথা শুনলে,,,,,, এখন আর আবছা অবয়ব টাকে বসে থাকতে দেখছি না,,,,, অনেক রাত হলো হয়তো ঘুমিয়ে গেছে,,, আমার ভাবনা গুলো আবার রঙীন হয়ে উঠেছে,,, ডায়রি টা ভর্তি হচ্ছে,,,, আমি ও ভোর রাতে এক বুক তৃপ্তি নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম,,,,,
সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হলো,,, উঠে ই আগে জানলার দিকে তাকালাম,,, মেয়েটি গেটের বাইরে একটি চুড়িদার পরে দাঁড়িয়ে আছে,,, আমি তার মুখ টা দেখতে ছুটে গেলাম,,,, মেয়েটি স্নান করে চুলে রোদ নিচ্ছে,, আমি বেশরমের তার দিকে তাকিয়ে রইলাম,, সেও আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকল,,, আমি বিভোর হয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম,,, তারপর ভিতর থেকে কে যেনো একজন রিয়া নামে ডাকলো,,, সে ভেতরে চলে গেল সেই রকম হীন হাসি দিয়ে,,,, আমি ও রুমে চলে এলাম,,,,,
সেই হাসি র নেশা য় আবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো,,, সেই সমাজ শেষ হয়ে গেছে বলা লোকটি র স্ত্রী ব্যাগ গুছিয়ে কোথাও গেলেন,,,,, আবার মেস বাড়ি র লাইট জ্বলে উঠল,,,, কিছুক্ষণের মধ্যেই লাইট জ্বলা নেভা শুরু হয়ে গেল,,,, রিয়া র ঘরের লাইট জ্বলছে,,,,, আমি আবার ভগবান কে ডাকতে শুরু করলাম,,,,, রিয়ার ঘরের লাইট যেনো না নেভে,,,, সত্যি নিভছেও না,,,, রিয়াও আজ ওর ঘরের জানলার ধারেই দাঁড়িয়ে আছে,,,, হঠাৎ দেখি সমাজ শেষ হয়ে গেছে বলা লোকটি ও বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ওই মেস বাড়ির দিকে যাচ্ছে,, সমাজ শুরু করতে যাচ্ছে হয়তো,,,,, মেস বাড়ির ভিতরে গেল,,, কিছুক্ষণ পর তিনতলার বামদিকের শেষ ঘরের লাইট টাই নিভলো,,,,, সেই দিন আমি ভুল ছিলাম ভদ্রলোক টি মেয়ে টিকে ভালো করেই দেখেছিল,,,শুধু সুযোগের অপেক্ষায় ছিল,,,,আমি কিছু ভাবতে না পেরে জানলা টা বন্ধ করে দিলাম,,,, আমার ও ফোন টা বেজে উঠল,,,,, অন্য দালাল টা ফোন করেছে,,, ছোটলোক পাড়া তে বাড়ি পেয়েছে,,,, আমি রাত জেগে ট্রলি ব্যাগে সব কিছু ভরে নিলাম,,,,, ডায়রি টাও নিলাম,,,,,
এরপর একটু বিছানা নিলাম,,,, কন্টিনিউ চোখ দিয়ে জল কেটে যাচ্ছে,,,, কয়েক দিন রাত জেগে বোধহয় ঠান্ডা লেগেছে,,,,, হালকা ঘুমের ঘোরে সকাল দশটা,, আমি ট্রলি ব্যাগ টানতে টানতে বেরিয়ে গেলাম,,, রিয়া স্নান করে আবার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে,,তামাটে মুখে কালচে ছোপ এসেছে এক রাতেই,,,চোখ গুলি র গভীরতা রাত জাগায় শেষ,,রকমহীন হাসি আজ খুব সাধারণ,,,, আমি চলতেই থাকলাম,,, ট্রলি ব্যাগ এর চাকা গুলো ঘুরতে চাইছে না,, হয়তো ডায়রি টা যেতে চাইছে না,,,, আমি আবার ছোট লোকের দালাল,,, হেঁচকা টান মারতে এগিয়ে চললাম,,,, পেছনে রয়লো "পতিতার মেস"
"আমার ভালোবাসা শেষ
ওটা ছিল পতিতা র মেস"

