পরিণতি
পরিণতি
বিকেল থেকেই আকাশটা কালো হয়ে আছে। চারটে তেই নেমে এসেছে অন্ধকার। কালো মেঘ আর ঘনিয়ে আসা অন্ধকারের সাথে মনামি কোথায় যেন মিল খুঁজে পায় নিজের জীবনের সাথে।টিভি টা অফ করে একা ব্যালকনিতে এসে বসে। ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর মেঘের গর্জনে মনখারাপ গুলো আরও জাঁকিয়ে বসেছে। এখন আর মেঘের গর্জনকে ভয় করেনা ওর। কিন্তু একসময় মেঘের গর্জনকে খুব ভয় পেত মনামি। কতবার ভয় পেয়ে ও আঁকড়ে ধরেছে নীলাদ্রির হাত। যেদিন যেদিন মনামি আর নীলাদ্রি দেখা করত ঠিক সেদিনই যেন অঝোর ধারা নিয়ে কোন খেয়ালে নেমে আসতো বৃষ্টি। বৃষ্টি ওদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
শেষ কবে দেখা হয়েছিল নীলাদ্রির সাথে তা মনে নেই মনামির। তবে এটুকু মনে আছে মনামির বিয়ের দিন ফোন করে ওকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল নীলাদ্রি।স্মৃতির দরজা টা তারপর থেকে বন্ধই ছিল।কিন্তু এই সেদিন হঠাৎ নিউ মার্কেট থেকে ফেরার পথে বাসে দেখা হয় নীলাদ্রির সাথে। হালকা নীল শার্ট, চোখে চশমা, এলোমেলো চুল আর মুখে পরিচিত সেই গাম্ভীর্য। সব মিলিয়ে বেশ দেখাচ্ছিলো ওকে। নিজের মনের খুব কাছের যে মানুষটা সেদিন তাকেই মনামি দেখেছে লুকিয়ে, অপরাধীর মত। আর নীলাদ্রি? জানতেই পারেনি ব
াসে অত লোকের ভিড়ে মনামির উপস্থিতির কথা, তবে অনুভব করতে পেরেছিল কিনা জানিনা।হঠাৎ বেজে উঠল কলিং বেল। দরজা খুলতেই বিধস্ত চেহারায় অনিমেষের সেই হাসি মুখ। মনামিকে দেখে বলল 'কি ম্যাডাম আজ এত চিন্তিত দেখাচ্ছে? ফোন করিনি বলে রাগ করেছো?' মনামি শুধু বললো ভিজে জামায় দাঁড়িয়ে না থেকে চেঞ্জ করে নাও। আমি খাবার আনছিমনামি ঘড়িতে দেখলো সাড়ে আটটা বাজে। বিকেল থেকে কিভাবে যে এতটা সময় কেটে গেছে বুঝতেও পারেনি ।আবার ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় মনামি।মনে মনে ভাবে যে মানুষটাকে ঘিরে আমার সমস্ত অতীত আর যার স্মৃতির ভিড়ে কাটছে বর্তমানের অনেকটা সময় তাকে প্রকাশ্যে মনে রাখার অধিকারটাও আজ আর নেই। নীলাদ্রি,তোমার ভালোবাসা কোন কাব্যে বা সাহিত্যে অনেক উঁচুতে স্থান পেতে পারে।কিন্তু আমার মত অতি সাধারণ একটা মেয়ে তোমার ভালোবাসার দাম দিতে পারেনা।পরিস্থিতির চাপে স্বপ্নগুলো ভেঙে যায়।আজও তুমি আছো আমার হৃদয়ে কিন্তু তা একান্তই গোপনে। এটাই আমার ভালোবাসার পরিণতি। Im sorry নীলাদ্রি, পারলে ক্ষমা কোরো।
বৃষ্টিটা থেমে গেছে। রাত নটায় সল্টলেকের ফাঁকা রাস্তাটা শূন্য হৃদয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক যেন নীলাদ্রির মত।