প্রেমিকার হৃদয়ের সুবাস
প্রেমিকার হৃদয়ের সুবাস
মানিব্যাগের ছবিটা উনার প্রেমিকার, আম্মু। নাম রিপা, উনার সমবয়সী। ছোট্ট বেলার প্রেম, সেই স্কুল জীবন থেকে শুরু হয়েছিল। টানা ছয় বছর চলেছে। তারপরে হঠাৎ ভেঙে যায়। রিপা আপুই ভেঙে দিয়েছিল। বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাই! বড় বাড়ির পাত্র, বিদেশে থাকে, সেই নিউইয়র্ক! দেখতে, শুনতেও ভালো, তাই পরিবার রাজি হয়ে যায়। শুরুতে রিপা আপু রাজি না থাকলেও একসময়ে রাজি হয়ে যায়। পরিবার খুব চাপ দিচ্ছিল তো! উনার বয়সও বেড়ে যাচ্ছিল। ঐদিকে নেহান সাহেব তখনও স্টুডেন্ট, অনার্স করছে, সবে সেকেন্ড ইয়ার। এইটুকু পড়াশোনা দিয়ে তো বড় চাকরি পাওয়া যায় না। তাই না, আম্মু? তবুও চেষ্টা করে ছিলেন, মনমতো মিলছিল না। দুই-তিনটে স্টুডেন্ট যোগাড় করে প্রাইভেট পড়িয়ে যা পেতেন? উনার পকেট খরচই হয় না। তারমধ্যে পরিবারের একমাত্র ছেলে, বংশের মধ্যে বড় নাতি। উনার বিয়ে নিয়ে সবার কত জল্পনা-কল্পনা! সবার মন ভেঙে পালিয়ে বিয়েও করতে পারেন না, তাই বাধ্য হয়ে প্রেমিকার ইচ্ছেটাকেই মেনে নেন।' 'সত্যি, বিয়ে হয়ে গেছে?' 'হ্যাঁ, আম্মু। প্রায় তিন বছর আগেই বিয়ে হয়েছে। উনি আমাকে রিপা আপুর অনেক ছবি দেখিয়েছেন, তারমধ্যে বিয়ের ছবিও ছিল। বিয়ের এক বছরের মাথায় একটা বাচ্চাও হয়েছে। ছেলে বাচ্চা, নাম তাহসিন আহমেদ। সকলে আদর করে তানসোনা বলে ডাকে। তানসোনার বয়স এখন দুই বছর। হাঁটতে পারে, কথা বলতে পারে। কিন্তু উচ্চারণ এখনও স্পষ্ট হয়নি, ছোট ছোট শব্দ বলে। উনার কাছে রেকর্ডিং আছে, আমাকে শুনিয়েছেন। গলাটা কী যে মিষ্টি! তানসোনা দেখতেও মাশাআল্লাহ, খুব সুন্দর। একদম রিপা আপুর মতো দেখতে হয়েছে।' আম্মু তৎক্ষণাৎ কিছু বলল না। আমার দিকে নীরবে চেয়ে থেকে কী কী যেন ভাবল। তারপরে আচমকা জিজ্ঞেস করল, 'ঐ মেয়ের সাথে নেহানের যোগাযোগ আছে এখনও?' আমি একটু যেন থমকে গেলাম। যোগাযোগের বিষয়ে কী নেহান সাহেব কিছু বলেছিলেন? খুব ভেবেও মনে করতে পারছিলাম না। কিন্তু আম্মুকে তো উত্তর দিতে হবে। তাই বললাম, 'মনে হয় যোগাযোগ নেই। উনি বলেছিলেন, প্রেমের সম্পর্কটা নেই, আর সম্পর্ক না থাকলে যোগাযোগ থাকবে কেন?' 'থাকতেই পারে। বিয়ের পরে যেই যোগাযোগ থাকে? সেটা হয় ভয়ঙ্কর ধরনের, খুবই নোংরা আর নির্লজ্জতার। ভদ্রসমাজে এটাকে বলে পরকীয়া। তোর জামাই পুরোনো প্রেমিকার সাথে প্রেম না, পরকীয়া করছে।'

