Sourav Singha

Romance Tragedy

4.0  

Sourav Singha

Romance Tragedy

প্রেম ও বন্ধুত্বের দোটানায়

প্রেম ও বন্ধুত্বের দোটানায়

9 mins
731



                এক

"""****""""""'*****"""****"""""""""**********"""


আমার বন্ধু তূর্যকে আজকাল আর ফোনে পাওয়া যায় না। যখনই ফোন করি সবসময় ব্যস্ত পাওয়া যায়। শেষমেষ এই করোনা মহামারী কালে একটা সুযোগ করে ওর বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম।"কি বস ,কি ব্যাপার ? ডুবে জল খাচ্ছ যে বন্ধু, ফোনটা ধরার সময় হয়না? লাজুক হেসে তূর্য বলে "আরে দেখেছিলাম ভেবেছিলাম যে করব কিন্তু...."। ব্যাপারটা আন্দাজ করে বললাম "আরে হ্যাঁ বুঝেছি , তা মেয়েটা কে?"ওর মুখের হাবভাব, খুশি দেখে একটি নামীই মাথায় আসলো 


2018 সালের রথের দিন এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে আমার বন্ধুটিকে বিশেষ খুশিতে ডগোমগো থাকতে দেখেছি।দীর্ঘ আট মাস বাদে আবার এরকম খুশি প্রাণবন্ত দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগলো।যদিও তার সাথে আমার সখ্যতা ভাটা পড়ে গিয়েছিল। তবুও একজন প্রকৃত সুহৃদের মতো আমি খুশি হওয়ার চেষ্টা করলাম। অনেক চেষ্টা করেছিলাম আমি এবং অন্যান্য সমস্ত বন্ধু মিলে। যদিও সবাই খানিক ব্যর্থ হয়ে যেত। আমরা চেয়েছিলাম হাসিখুশি, মন খোলা ,ইয়ার্কি-ফাজলামি মারা সেই আগের তূর্যকে ফিরে পেতে।কখনো-সখনো যদিও আগের মত হওয়ার খানিক আভাস মিলত কিন্তু কয়েক ঘণ্টা বাদেই আবার দেখা যেত সে যেই কি সেই।


যে ছেলে পুজোতে,জন্মদিনে অনেক জোরাজুরি করার পরেও মদ এবং সিগারেট ছুঁয়েও দেখত না, সেই ছেলে যখন দিনে একটা-দুটো প্যাকেট সিগারেট শেষ করে ফেলত তখন আমরা সবাই অবাক হয়ে যেতাম। গভীর রাত অব্দি জেগে থাকতো, ঘুম হতো না। একেবারে রাতের শেষে ক্লান্ত, শক্তি শূন্য, কালশিটে চোখ বুজে অনেক অবেলায় ঘুম থেকে উঠতো ।পুরো এলোমেলো চেহারা, চুল দাড়ির কোন ভাল কাটিং ছিলনা।দেখলেই কিরকম একটা যেন অস্বাভাবিক পাগল-পাগল লাগতো ওকে।আমার বাবা-মা থেকে শুরু করে প্রতিবেশী, ওর আমার পরিচিত গুরুজন এবং বড় দাদা-দিদিরা ভ্রুকুটি করে তাকাতো কিন্তু মুখে কিছু বলতো না ।যদিও সেই চোখের মুখের ভাষা আমার ভালই বোঝা ছিল কিন্তু তুর্য ওসবের ধারতো না। ও যেনো অন্য কোন জগতে বাস করত! সেটা একমাত্র ওই জানতো আর আমরাও জানতাম কি কারনে তার এই অবস্থা !কিন্তু শত বোঝানোর পরেও হয়তো কোনও লাভ হচ্ছে না। যার বোঝানোর সবথেকে বেশি দরকার ছিল , সবথেকে বেশি ওর পাশে থেকে ওর জীবনে চলার শক্তি প্রদান করার কথা ছিল সে তার দায়িত্ব পালন করেনি।


এই করোনা মহামারীতে দেশ ও বিশ্ব জুড়ে লকডাউন । এই সময় মানুষের শরীর মন দুটোই নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। সেই সময়ে এরকম আকস্মিক খুশি ওর ভাগ্যে জুটেছে ।সেটা দেখে বন্ধু হিসেবে সত্তিকারের খুশি অনুভব করেছিলাম। আমি আর তূর্য বেশ আরো নানান বিষয়ে কথাবার্তা বললাম। এভাবে বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আবার ওর ফোনের ঘন্টি বেজে উঠলো ।আবার দুজনে নিভৃত কথাবার্তা বলার জন্য জন্য অধীর আগ্রহে যেনো অপেক্ষা করছিল । আর আমিই মরা এসে পাকা ধানে মই দিলাম।আমিও আমার মত ফোন খুলে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে চোখ বুলাতে লাগলাম। আর এভাবেই মিনিট 25 অতিবাহিত হল। তারপর এত ঘনিষ্ঠ প্রেমালাপে মত্ত এক যুগলকে আর বিরক্ত করার ইচ্ছা করলো না ।"আমি আসছি তাহলে, আবার পরে কথা হবে ।ফোন ধরিস তূর্য ।"


রাস্তায় বেরিয়ে কয়েক পা হেঁটেছি এমনি পিছন থেকে আওয়াজ এল," আজকে বেশি কথা বলতে পারলাম না ।আশা করি তুই বুঝতে পারছিস আমার ব্যাপারটা। একটু ঘোরের মধ্যে আছি তো। সব হবে একটু এডজাষ্ট করে প্লিজ।" ওর দিক থেকে ফিরে হাসিমুখে রাস্তায় হাটতে লাগলাম।হঠাৎ মনে পড়ল অর্জুনের কথা। সে কি জানে, তুর্য আবার হাসিখুশি জীবনে ফিরেছে। হয়তো জানে না কারণ বন্ধুত্বের সমীকরণ এখন পুরো অচেনা হয়ে উঠেছে।


              দুই

*****""""""""********'"""""""**"""""""*****"'***'"""*****

কদিন বাদে ফের তূর্য সাথে দেখা করার জন্য ওর বাড়িতে গেলাম। মোবাইল ফোন থেকে ক্ষণিক অব্যাহতির পরে দুই বন্ধু গল্প-স্বল্প করছিলাম।


রিম্পি আর অর্জুনের ফটো ও ভিডিও গুলো দুজন একসাথে বসে দেখছিলাম। দুজনে বেশ আনন্দেই কাটাচ্ছ দিনগুলো।নতুন উদ্বোধন হওয়া মেট্রো চড়ে সল্টলেক স্টেডিয়াম গেছিল। কিন্তু দুজনের কেউই সেখানে লাইক বা কমেন্ট করার কথা তখন ভাবতে পারতাম না। থেকেও না থাকার মত নীরব দর্শক হয়ে থাকতাম।


একদিন কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,"আচ্ছা তোর সাথে রিম্পির এখন আর কথা হয়না??"

-"যেটুকুনি হয় সেটাকে কথা বলা বলে কিনা জানিনা। কিছু জিজ্ঞাসা করলে হম বা ইয়েস, স্মাইলি পাঠানো ছাড়া আর কিছুই বলেনা।

-"আশ্চর্য তো। এই মহামারীর সময় একবারও জানতে চাইল না? কেমন আছিস, কি করছিস?"


-"খুব রাগ হয় কিন্তু ওকে হয়তো কেউ দিব্যি দিয়ে রেখেছে।"


-"আচ্ছা। প্রেমের কাছে তো বন্ধুত্বের দাবি চিরকাল খাটোই রয়ে গেছে। আর মেয়েদের কাছে প্রেমিকই সব। বন্ধুরা তো শুধু অসময়ের সঙ্গী।"


- "সেদিন মেসেজ পাঠিয়েছিল। তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর সম্পর্কে জানার জন্য?"


-"তা বলেছিস কি? এখন তো তার সাথে কথা হচ্ছে তোর।"


-"হালকা-পাতলা বলে দিয়েছি। আমাকেও তো বলতে বারণ করেছে আমিই বা কি করব? সবাই যদি প্রেমিক-প্রেমিকা কে বেশি প্রাধান্য দেয় আমি দিলে কি দোষ?"


-"হ্যাঁ , আমিতো এখন পর হয়ে গেলাম।"


-"নারে ভাই । বিপদের সময় আমার পাশে ছিলিস। যতটুকু পেরেছিস সাহায্য করার অনেক চেষ্টা করেছিস । সেটা এখনকার দিনে কজনই বা করে??"


-" ওকে তবু মেসেজ করা যায় কিন্তু অর্জুনকে তা ম্যাসেজ করার কথা ভাবা যায় না। বিশেষ করে যে ব্যবহারটা ও করেছে ওইদিন। তার প্রেমিকা তথা আমাদের বান্ধবীর সাথে , তাকে ছাড়া ঘুরতে গিয়েছি বলে।"

-"এমন কোন অপরাধ তো আমরা করিনি।যাইহোক রিম্পি অর্জুন দুজনেই তো আমাদের মিউচুয়াল ফ্রেন্ড।"

-"এখন মনে হচ্ছে সত্যি ভুল করে ফেললাম। কেন অনুঘটক হয়ে ওদের মধ্যে সম্পর্কটা তৈরি করালাম?"

-"ছাড় ওসব , মাক্সটা পড়ে নে। একটু হাঁটাহাঁটি করে আসি।"


 দুই বন্ধু মিলে হাঁটছি এমন সময়ে তুর্য আবার ফোনালাপে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অথচ আমি চুপ করে অর্জুন আর তুর্যের বন্ধুত্বের কথা ভাবতে লাগলাম। সেই ক্লাস এইট থেকে, একটি মিশনের হোস্টেলে পড়ার সময় , ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল ওদের মধ্যে। দুই বন্ধু মিলে ছোটখাটো অভিযানও করেছে।সেইসব আপাত রোমহর্ষক কাহিনী শুনে আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছিলাম। তার মধ্যে রয়েছে, কি করে ওরা দুজনে মিলে অত্যাচারী অন্য বড় ছেলেদেরকে শায়েস্তা করেছিল এবং হোস্টেলের পাঁচিল টপকে বাইরে ঘোরাঘুরি করে আবার চুপিসারে হোস্টেলে ঢুকে পড়া। আমি এই গল্পগুলো শুনে খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। অর্জুন এখন কলকাতায় চাকরি করে। ক্লাস এইট এর পরে দীর্ঘ 10 বছর পর 2019 সালের ফেব্রুয়ারিতে বিধান নগর স্টেশন ওদের দুই বন্ধুর আবার দেখা হয়। আমিও ছিলাম সাথে।


দীর্ঘ এতগুলো বছর পর দুই বন্ধুর মিলন খুব ভালো লাগছিল। বর্তমান যুগে যেখানে একসাথে কয়েক বছর পড়াশোনা করার পরেও আর যোগাযোগ থাকে না। অনলাইন মাধ্যমে থাকা নাম,পরিচয়গুলো অদেখা বিজ্ঞাপনের মত। দেখার পরেও কোনো অনুভূতি জাগে না । সেখানে তুর্য-অর্জুন এবং সুজয়-তূর্য বন্ধুত্ব সেদিন থেকে তিনজনের বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছিল। ক্ষনিকের ব্যবধানে 3 জনের বন্ধু হয়ে উঠায় আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, অনেকদিন স্থায়ী হবে এই বন্ধুত্ব ।


কিন্তু জীবনে কোন কিছুই হয়তো চিরস্থায়ী নয় ।বাবা- মায়ের ভালোবাসা একমাত্র নিঃস্বার্থ এবং শর্তহীন। মনের মধ্যে নানা কারণে বন্ধুত্ব এবং কারো সাথে হওয়া আপাত ভালো সম্পর্ক নিয়েও আশঙ্কার মেঘ ঘনাতে থাকে । আমরা তিনজন অত্যন্ত আবেগ অনুভূতি সম্পন্ন তিনটি ছেলে। যারা বন্ধুত্বের মর্ম খুব গভীরভাবে বোঝে। অথচ সেদিন তূর্যর সাথে অর্জুনের ঝগড়া ঝামেলা হয় সেদিন আমার সমস্ত ধারণা পাল্টে গেছিল।


তূর্য তখনও ফোনালাপে মগ্ন। আমি মাঝে মাঝে ওর দিকে দেখছিলাম।আস্তে কথা না বলতে না পারা বেচারা কখনো কখনো এত জোরে বলছে যে, আশপাশের মানুষ অকারণে ঔৎসুক্য নিচ্ছিল আমাদের প্রতি। "চল ভাই ওই খোলা মাঠের পাশে বসি ।কেউ নেই ওখানে।"


তুর্যর কথায় সাড়া দিয়ে আমরা দুজন খোলা মাঠের পাশে বসলাম । আমি আর তুর্য দুজনই একটু নিরিবিলি এবং ব্যক্তিগত স্বতন্ত্রতা পছন্দ করি। এখনো অনবরত কথা চালিয়ে যাচ্ছে তার বিশেষ মানুষটির সাথে। আমি সেই মেয়েটির নাম নিতে চাইনা ।কারণ গত দু'বছর ধরে আমার বন্ধুটিকে ধাপে ধাপে অনেক কষ্ট দিয়েছে ।আবারো ফিরে এসেছে। জানিনা এবার কি হয়।


অতএব, আমি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আত্মবিশ্লেষণের আবার মগ্ন হলাম। এই জোড়েটির কথোপকথন এর মাঝে বিরক্ত করতে আমি চাই না । তবে আত্মবিশ্লেষণের অনেক নতুন নতুন দিক সামনে আসতে লাগলো যেগুলো আগে একেবারেই গুরুত্ব দেয়া ভাবা হয়নি। অর্জুনের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছেদ কি শুধুই ওর পুরুষালি হীনমন্যতা কারণে নাকি এর পিছনে রিম্পীর হাত ছিল? সেই সময়ে তুর্য আর তার প্রেমিকাকে অলিন্দ নিলয় বলে ডাকা রিম্পি এই কাজটি করতে পারে কি? তুর্য স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না। তুর্য বলেছিল "ওকে দিব্যি কাটানো হয়েছে ।ওর প্রতি জোর করা হচ্ছে। তাই ও কথাবার্তা বলতে পারছে না আর একসাথে ঘুরে বেড়াতে পারবে না।" তখন থেকেই রিম্পি,তুর্য আর অর্জুনের সম্পর্ক একেবারে শেষ। 


তবে আমি একমত হতে পারতাম না বিম্পির ব্যাপারে। কারণ আমি ওর সম্পর্কে যা জেনেছি, যা দেখেছি সেসব দুজনকে বলা সম্ভব ছিল না। জীবনে প্রথম প্রেম রিম্পি'র বান্ধবীর সাথে হয়েছিল বলে, রিম্পি ওর কাছে তখন অনেক বেশি প্রাধান্য পাচ্ছিল। আর নারীসঙ্গের প্রতি অনাগ্রহী আমাকে ওদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে বাধা দিতো। আমিও বিশেষ আগ্রহ দেখাতাম না । বন্ধুত্বের দোটানায় আমি বরাবরই ভারসাম্যহীনতা অনুভব করতাম । কখনো বুঝতে পারিনি আর অনুভব করিনি প্রেমের গভীরতা। বন্ধুত্ব আমার কাছে অনেক বেশি দামি ।তাই চুপ করে বন্ধুত্বের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।


হঠাৎ মশার কামড়ে খেয়াল হলো সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।" এবার বাড়ি চলতো। আর বসতে পারছি না।"

(থতমত খেয়ে বেচারা ফিসফিস করে তার প্রেমিকাকে কি যেন একটা বলে ফোনটা রাখল।)

-"ভাই রাগ করিস না। চল আজকে একসাথে চা ও জলখাবার খবর।"

যাবনা যাবনা করেও শেষ পর্যন্ত ওর জোরাজুরি কাছে হার মানতে হলো। দুই বন্ধু বেশ কথাবার্তা বলতে বলতে মনের আনন্দে তুর্যদের বাড়িতে গেলাম।


                 তিন

***"""*"""******"""****"""****"""****"""**""**""""****

বারবার একই জায়গায় আঘাত হলে অনুভূতি লোপ পেয়ে যায়। আবারো রিমি সেই অন্যায় কাজটি করেছে। গত দুবছর ধরেই দুমাস -তিনমাস বাদে বাদে এই ব্রেকআপের জ্বালায় আমি তূর্যের পরিবার সবাই অস্থির। দীর্ঘ আট মাস পর টানা তিন মাসের কথাবার্তা তূর্য'র ক্ষত অনেকটা ভরিয়ে দিয়েছে। খুব সহজভাবেই জানায়, রিমির সাথে আর তার কথা হচ্ছে না। অথচ দুজনেই দুজনের প্রতি আকৃষ্ট। তবে রিমির আকর্ষণ এখন শুধু স্পর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মানসিক আকর্ষণটা নাকি ছেলেমানুষি ক্যাবলামি দেখে চলে গেছে। অনেক বোঝানোর পরেও রিমি বুঝতে চাইল না ।সব পুরুষের মধ্যেই একটা বাচ্চা ছেলে রয়ে যায়। অতি আপন জনের কাছেই সেই সারল্যটি প্রকাশ পায়। অবশ্য গতানুগতিক ছেলেদের মত কথাবার্তা, চালচলন ,অতি চৌকস ভাব এবং মেয়েদের প্রতি বিশেষ ভঙ্গিমায় ব্যবহার করার দিক থেকে তূর্য সম্পূর্ণ আলাদা। সেজন্যই রিমির তুর্যকে ভালো লেগেছিল। ভরসা করতে পেরেছিল । সম্পূর্ণ আনুগত্য ও একনিষ্ঠ থাকার জন্য তুর্য ছিল একমাত্র বিকল্প। ভালোবাসার কারণগুলি কি আছে তাহলে মন্দবাসার উৎস?

 

তূর্য তবুও ওকে ভালবাসে। নিজের সমস্ত খামতি গুলোকে দূর করতে চায়। যথাযোগ্য প্রতিষ্টিত হয়ে, ভালোবাসা সে আদায় করবেই। মানতে পারে না সে "প্রথম কয়েক মাসের এত গভীর অনুরাগ কি জন্য খসে গেল??"


তবুও এবার তুর্জ একটা বাস্তব বোধের পরিচয় দিচ্ছে। অপন বন্ধুটির উন্নতি দেখে যখন মন আনন্দে ভরে উঠছে তখন একটি বাজে খবর শুনতে হলো। চার মাস বাদে অর্জুন, তুর্যকে ফোন করে জানালো তার এবং রিম্পি'র ব্রেকআপ হয়ে গেছে।


কারণ হিসেবে যা জানতে পারি সেটা তুর্যের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না জানতাম। তবে আমার 

ক্ষীণ আন্দাজ এর থেকেও অনেক বেশি কিছু ঘটেছে । ।রিম্পি'র জীবনের সাথে জড়িত অন্য কেউ জানেনা ।রিমিও জানে না যে, তার প্রিয় বান্ধবী তার প্রাক্তন প্রেমিকের বন্ধুর সাথে এক বছরের সম্পর্কে রয়েছে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অথচ রিম্পি বলেছিল "টাকা-পয়সা ওয়ালা ছেলে আমার পছন্দ না। চরিত্রবান ছেলেরা এত মেয়েদের দিকে তাকায় না। আজ পর্যন্ত কোন ভাল ছেলেই পেলাম না।আমার কপালটাই পোড়া।" আজ কেঁদে কেঁদে অর্জুন বলে চলেছে"ওর সাথে গত এক বছর মোটেও সুখের ছিল না। পদে পদে আমার চেহারা ছবি নিয়ে নানান কটুক্তি করেছে। কেন ওকে বেশি আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইতাম? ওকে চোখে হারাতাম? এটাই নাকি আমার দোষ"।


 ওর জন্য কোন কিছুই খামতি রাখেনি অর্জুন। খুব কষ্ট করে বড় হওয়ার পরেও চাকরির বেশিরভাগ টাকা রিম্পি'র জন্য খরচ করেছে।"হালকা সিগারেট, মদ খেয়ে নাও । এত নিরামিষ থাকো কেন ?তোমায় নিয়ে ডিস্ক যাওয়া যায় না।" এসব কথা শোনাতো অর্জুনকে। দুঃখে-রাগে আমিও বললাম" হয় ভগবান, আমাদের সামনে এত নীতি কথা বলা , স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে চলা মেয়েটি অর্জুনকে এইসব করতে বলেছে!" তূর্য'র চোখে এত কিছু জানার পরেও দুঃখ দেখতে পেলাম না। রাগে ওর চোখ লাল হয়ে গেছে। রিমি আর রিম্পা দুই বেস্ট ফ্রেন্ড আমাদের দুই বেস্টফ্রেন্ডকে এভাবে ধোঁকা দিলো! এবার তুর্য বুঝে গেছে, বন্ধুত্ব বিচ্ছেদের কারণটা কি? আরো খোঁজ নিয়ে জানা গেল অন্যান্য ছেলেদের সাথে রিম্পি সমান্তরালে অল্পবিস্তর সম্পর্ক চালিয়ে গেছে।


আমরা তিনজন এখন আবার আগের মতো কথাবার্তা বলি। ফোনে কনফারেন্সে কথা বলতে বলতে কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। করণা মহামারীর প্রকোপ কিছুটা কমলেই তিন বন্ধু মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে।


ঐদিকে আর কদিন বাদেই রিমির জন্মদিন। রিমিকে উপহার দেওয়ার জন্য তুর্য জীবনের প্রথম কবিতা লিখল । একটা সুন্দর ছন্দময় কবিতা লিখে আমাদেরকে দেখালো।


       প্রেম পরাগ

  

সৌরভী বাতি যেন দীপান্বিতা'র সাঁঝে!

জারদৌসিচ্ছদ "রিমি" সাজে।


সহাস্য চচ্ঞল বানধ্বী মাঝে,

সুস্বাদু উপাদেয় আহার সাজে।


 হরষিত হৃদয়ে নৃত্যযাপন,

 কল্পিত মন হয় চনমন।।


দুরাভাষ বার্তা ও কথোপকথন

দুজনে নিভৃতে শুধু বিনোদন।


সুমধুর ধ্বনিত কর্ণ কূহরে,

শ্রুতিব বচন তব সরস সুধারে।


ভাগে অভিমান হও যোগ,

মিলনে পারাগ প্রযোগ।


ঘুচায়ে আঁধার জ্বালাও প্রদীপ

মৃদু স্মৃতে ছোট্ট "সৌরদীপ"l


ক্ষণে ক্ষণে হোক মধুর আলাপন,

জনম দিবসে লহ এই নিবেদন।।


 কবিতাটি পড়ে, রিমির মনে পরিবর্তন আসবে কি? সেটা সময় বলে দেবে। দেখা যাক.......

       


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance