ফিরে আশা, ফিরে আসা
ফিরে আশা, ফিরে আসা
"Happy New Year 2012" মেসেজ টা বন্ধুদের ফরওয়ার্ড করছিলো সিদ্ধার্থ। দিনে ১০০ টা মেসেজ পাওয়া যায়, তাই বেছে বেছে খুব কাছের বন্ধুদের নামগুলোই সিলেক্ট করছিলো। আঙুলটা আটকে গেলো একটা নামে এসে, রিয়া। ছয় মাস পেরিয়ে গেছে, কিন্তু মনে হয় যেন কালকের ঘটনা।
তখন সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে সিদ্ধার্থ। ইচ্ছে নিজের প্রিয় বিষয় ইংরেজি নিয়ে স্নাতক হওয়ার। সেই মতো কলেজেও ভর্তি হলো আর শুরু হল টিউশন পড়তে যাওয়া। ওর কলেজ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত হওয়ার দরুন বর্ধমান এ পড়তে যাবে ঠিক করলো। স্যার এর নাম ডাঃ অমিত রায়ে, খুব নাম, এবং প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী। প্রথম দিন থেকেই ভালো লেগে গেলো স্যার এর পড়ানো, আর তার মিষ্টি ব্যবহার। আশ্চর্য প্রাণবন্ত মানুষ, আর যে কোনও বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্য। ফেরার সময়ে ট্রেনে আলাপ হল, পারমিতা, সুতপা, শুভমিতা, আর রিয়ার সাথে। ওরা একই কলেজে পড়ে, আর তাই একই সাথে যাবে। সিদ্ধার্থ ওদের দলে স্থান পেলো, ঠিক হলো যে প্রতি সপ্তাহে ওরা পাঁচ জন এক সাথে যাবে।
সিদ্ধার্থের প্রথম থেকেই ভালো লাগতো রিয়া কে। যেন অন্যদের থেকে আলাদা, স্বতন্ত্র। ওর দুষ্টুমি ভরা চোখ, মিষ্টি হাসি, আর ঠোঁটের কোণের তিল মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলো। সপ্তাহে একদিনের দেখা আর কথায় ওদের মন ভরতো না, তাই বাকি দিন মেসেজ এ চলত গল্প। আস্তে আস্তে একটা ভালোলাগা তৈরি হতে দেরি হয়েনি। এবং সেটা যে দু তরফে, সেটা সিদ্ধার্থ ভালোই বুঝতে পারছিল। এর মধ্যেই একদিন রিয়া আব্দার জ
ানালো একসাথে সিনেমা দেখতে যাওয়ার। ওদের শহরেই একটা নামী প্রেক্ষাগৃহে একটি হিন্দি সিনেমা. সিদ্ধার্থ মনে মনে উত্তেজিত, এই প্রথম ওদের একসাথে ঘুরতে বেরোনো।
সিনেমার টিকিট কেটে অপেক্ষা করছিলো সিদ্ধার্থ। রিয়ার আসতে একটু দেরি হলেও, সিনেমা শুরু হওয়ার আগে ঢুকে গেল ওরা। একই রোমান্টিক সিনেমা, তায় কর্নার সীট, বিপদ ঘনিয়ে আসতে দেরি হয়েনি। কখন যে ওদের হাত ছুঁয়েছে, এ ওর কাঁধে রেখেছে মাথা, টের পায়নি কেউই। ছবির নায়িকা ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে নায়ক এর কান্না, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি রিয়া। অজান্তেই ওর গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়েছে জল, আর সেটা মুছিয়ে দিতে দিতে, ওর গালে ঠোঁট ছোঁয়াতে গেছিল সিদ্ধার্থ। ছিটকে সরে গেছিল রিয়া। ওর চোখে তখন শুধু বিশ্বাসভঙ্গ আর অবিশ্বাস। নিমেষে সীট ছেড়ে, বেরিয়ে গেছিল রিয়া, অবাক হয়ে বসে থাকা সিদ্ধার্থ কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে। কোনো কথায় কান দেয়নি, কোনো কথা বলেওনি। সিদ্ধার্থ ফোনে, মেসেজে জানতে চেয়েছে বারবার, কোনো উত্তর পায়েনি। টিউশন এ দেখা করে কথা বলতে চেয়ে, সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই রিয়া টিউশন এর দিন বদলে নিয়েছিল, সেই থেকে দেখা সাক্ষাৎ একদম বন্ধ।
নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে সিদ্ধার্থ, ক্ষমা চেয়ে মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছিল, সুযোগ পায়েনি সে। স্ক্রিন এর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে, এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। ইতস্তত করে মেসেজটা পাঠিয়ে দিলো। যদি নতুন বছর, নতুন আশা জাগায়, তার জীবনে রিয়ার ফিরে আসার।