STORYMIRROR

Ranjit Bagdi

Romance Tragedy Others

3  

Ranjit Bagdi

Romance Tragedy Others

মেঘবৃষ্টি

মেঘবৃষ্টি

4 mins
171

সময় টা আষাঢ়ের শুরু , ধরণী তখন এই এই নুতন নুতন মেঘের মুখ দেখছে । বৃষ্টির ছোঁয়া তখনও পাই নি পৃথিবী ।

প্রায় দিন বৃষ্টি না হলেও ,মাঝে মধ্যে মেঘ ঘনীভূত হয় ঝড়ো হাওয়াও বইতে থাকে । আর এমন দিন বড়ো চঞ্চল করে তোলে আর এক বৃষ্টি কে ।হুম তোমরা ঠিকই ভাবছো ,এখানে আমি একটি মেয়ের কথা বলছি । বৃষ্টি দেখতে বেশ সুন্দরী ,উচ্চতা খুব একটা নয় ,সে এখন ক্লাস 12 এ পড়ে । তার বন্ধুর মধ্যে পড়ে মেঘ ,মেঘনা ,শ্রেয়সী ,উজ্জ্বল ,উত্তম ,অনুপম এবং আরো অনেকে । এর মধ্যে উজ্জ্বল ও মেঘ তার বেশ কাছের বন্ধু । বৃষ্টি সৎ চরিত্রের একজন মেয়ে ,সে কখনোই ছেলেদের সাথে তেমন ভাবে মিশতে চাইতো না ।তার মেলা মেশা বা কথা বলার দুই বন্ধু ছিল উজ্জ্বল ও মেঘ ।উজ্জলের বাড়ি বৃষ্টির বাড়ির থেকে দূরে ।অন্যদিকে মেঘ এর বাড়ি বৃষ্টির বাড়ির 2-1 কিলোমিটার হবে।

মেঘ ও বৃষ্টির টিউশন ঘটনাক্রমে একই টিউশন মাস্টার এর কাছে এবং যাতায়াত মাধ্যম হলো বাস । মেঘ ছেলে টা লম্বা ,ফর্সা সুদর্শন এবং অনেক টা লাজুকে ।মেয়েদের সাথে কথা বার্তা বলার অভ্যাস তেমন নেই তার ।তাই সে বৃষ্টির সাথেও খুবই কম কথা বলে । মেঘ পড়াশুনায় মোটামুটি অন্যদিকে বৃষ্টি বেশ মেধাবী । তারা একসাথে টিউশন পড়ে ।তবে মেঘের খেলা থাকার কারণে বৃষ্টি একাই যায় মাঝে মাঝে । বৃষ্টির মেঘের এই টিউশন না যাওয়ার ব্যাপার টা পছন্দ হতো না , খুব রাগ হতো তার মনে মনে । কেন না বৃষ্টি মেঘকে ভীষণ পছন্দ করত তবে অপ্রকাশ্যে ।তাই মেঘ না চাইলেও বৃষ্টি কোনো না কোনো বাহানা করে মেঘের খাতা নিয়ে যেত বাড়ি। লিখে দিত বাকি থাকা প্রশ্ন উত্তর পরিপাটি করে । এর পর দিন যায় মাস যায় একই ভাবে চলতে থাকে তাদের খাতা দেওয়া নেওয়া কথা বলা আরো অনেক কিছু । বৃষ্টি পড়াশুনা ,মেঘের যাতে টিউশন না কামাই করে এসসব বোঝানোর বাহানা করে প্রায়ই কথা বলতে থাকে মেঘের সাথে । এরপর এই গুরুত্ব দেওয়া ,সব বিষয়ে সাহায্য করা ,মেঘকে নিজের কাছে কাছে রাখার চেষ্টা পরিনত হয় ভালোবাসায় । তবে বৃষ্টির বলা আর হয়ে ওঠে না মুখ ফুটে । সাহসে কুলাই নি তার ,বৃষ্টির ভয় যদি কিছু বলে ,পাছে বন্ধুত্ত হারায় ,আর যদি কথা না বলে এইসব । মেঘ মেয়েদের খুব একটা পছন্দ না করলেও বৃষ্টিকে সে পছন্দ করতো ,বৃষ্টির কাছ থেকে পাওয়া গুরুত্ব সে খুব ভালোবাসতো । হ্যাঁ এরপর মেঘও ভালোবেসে ফেলে বৃষ্টিকে ।তার উপলব্ধি করা আগেই হয়ে গেছে যে বৃষ্টি তাকে খুব ভালোবাসে ।

সেদিন দিন টা মেঘলা ছিল ,বৃষ্টিও পড়ছিল রিমঝিম করে । মেঘ জানতো বৃষ্টি ,বৃষ্টি ভালোবাসে আর তাকেও ।মেঘ ঠিক করলো আজই সে বৃষ্টিকে মনের কথা জানাবে ।মেঘ ফোন নিয়ে চলে গেল বাড়ির ছাদে ,বৃষ্টির ফোনে বেজে উঠলো তার লাগানো পছন্দের রিংটোন । বৃষ্টি ফোন ধরলো ,কিন্তু একি অন্যদিনের তুলনায় মেঘের গলার স্বর যেন সে একটু অন্যরকম অনুভব করলো ,কেমন জানি একটু কাঁপা কাঁপা ও ভিতপ্রাই । এরপর আমতা আমতা করতে করতে মেঘ বললো ,এই বৃষ্টি আমি তোকে কিছু বলতে চাই ।বৃষ্টি বুঝে গেল সে কি বলতে চাই । অনেক টা আনন্দে এবং অনেক টা না জানার ভান করে বৃষ্টি বললো কি ?? বল । এরপর নার্ভাস অবস্থায় মেঘ বললো আমি তোকে খুব ভালো বেশি ফেলেছি ( I Love you ) । এরপর বৃষ্টি তার পছন্দের মানুষ টার কাছ থেকে এই খুশির প্রস্তাব টি পেয়ে খিল খিল করে হাসতে থাকে আর বলতে থাকে সত্যি ?? মেঘ চুপ থাকে ।এরপর বৃষ্টি হাসি থামিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর উত্তর দেয় হ্যাঁ আমিও তোকে ভালোবাসি। এইভাবে এক বৃষ্টিমুখর দিনে ,শীতল আবহাওয়া ও বিদ্যুৎ এর ঝলকানির সাথে শুরু হয়ে যায় মেঘ ও বৃষ্টির ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ এর প্রথম পর্ব । এরপর চলতে থাকলো রাতের পর রাত দিনের পর দিন একে অপরের প্রেম আলাপন ।দেখাও করতে লাগলো তারা মাঝে মধ্যে টুকিটাকি উপহারের বহর নিয়ে। এইভাবেই হাসি খুশিতেই পার হতে লাগলো তাদের ভালোবাসা ।দেখতে দেখতে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে তারা পা দিলো কলেজ জীবনে ।

কে কি নিয়ে পড়বে আলোচনা করার পর তারা ঠিক করলো তারা একই বিষয়ে অনার্স করবে । বেশ এইভাবে শুরু হলো পথ চলা । কিন্তু এই একসাথে ব্যাপার হটাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো । না না বিচ্ছেদ হলো না তাদের । বৃষ্টি সুযোগ পেল অন্য এক ভালো জায়গায় সে ভর্তি হলো সেই জায়গায় ।আর মেঘ থেকে গেল সেখানেই ।সেদিন রাত্রি বেলা মেঘ শিশুর মতো এই দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় কাঁদতে লাগলো । মন খারাপ ছিল বৃষ্টিরও , বৃষ্টি বললো সোনা কেঁদো না ,এইভাবে কেও কাঁদে বলো ! আমি তো শুধু আমাদের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে একটু তাড়াতাড়ি সফল হওয়ার চেষ্টা করছি ।তুমি কেঁদো না গো ,আমি তোমায় ছাড়া কোথায় যাবো বলো তো ?? আর তাছাড়া আমাদের তো কোথাও হবে ফোনে আর ভিডিও কল তো আছেই ! আর হ্যাঁ তুমিও কিন্তু মন দিয়ে পড়াশুনা করবে ।আমাদের যে কোনো একজনকে সফল যে হতেই হবে গো ।মন টাকে শক্ত করো আর কেঁদো না । মেঘ কান্না থামায় এবং ইচ্ছা না থাকা সত্তেও মেনে নেয় সব টা । আস্তে আস্তে সম্পর্ক 2- বছরের হয়ে ওঠে । মান অভিমান বাড়ে ,ঝগড়াও হয় খুব ।মাঝে মধ্যে এতটাই বেড়ে যায় যে দুই একদিন তারা না কথা বলেও থাকে ।রেগে ফোন কেটে দেওয়া ,মোবাইল বন্ধ করে রাখাও চলে মাঝে মধ্যে ।আবার যোগাযোগ হয় মান অভিমান ভেঙে আবার ভালোবাসে দুইজন দুই জনকে ।অনেকবার তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ বলেও তারা দুই জনই প্রতিজ্ঞা রাখতে পারে না । কেন না তাদের দুইজন এরই দুইজন কে ছাড়া চলে না । তাদের মধ্যে অভিমান হয় ,রাগ হয় ,অনেক ঝগড়া হয় শুধু হয় না ছেড়ে যাওয়া টা ......


Rate this content
Log in

More bengali story from Ranjit Bagdi

Similar bengali story from Romance