মাতৃসুখ
মাতৃসুখ


অম্বর, আমার একমাত্র সন্তান, আজ ওকে দাহ ক'রে বাড়ি ফিরলাম| ওর বাবা বেঁচে থাকলে হয়ত তিনিই এ কাজ করতেন| কিন্তু এ দুঃখ সইতে পারবেন না বলেই হয়ত আমার কাঁধে গুরুভার চাপিয়ে নিশ্চিন্তে চলে গেছেন| ভাগ্যের কী ফের দেখুন, আজও ৮ই মার্চ, সেদিনও এমনই এক ৮ই মার্চ ছিল| অবশ্য ১৮ বছর আগে কলকাতায় এই দিনটা নিয়ে এখনকার মত এত হুজুগ ছিল না|
আমার দোষেই আমি মাতৃসুখ থেকে বঞ্চিত ছিলাম, আর আমার স্বামী এইদিনেই অম্বরকে আমার কোলে তুলে দিয়েছিলেন| অনেক দৌড়ঝাঁপ ক'রে ওনাকে দত্তকের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল| সেই অম্বর, আমার সব আনন্দ, সব সুখ দিয়ে গড়া সন্তান| শিক্ষার কোনো ত্রুটি রাখিনি আমরা, সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলাম ওর জন্য- তবু কেন যে এমন হল?
ওদের বন্ধুদের একটা জমাটি গ্রুপ ছিল, পড়াশোনার সঙ্গে গান-আড্ডা...এই বাড়িটা মাতিয়ে রাখত ওরা| তিথি মেয়েটা ওদের মধ্যে ভারি মিষ্টি স্বভাবের ছিল, সবার সাথে সমানভাবে মিশত, আমার বেশ লাগত মেয়েটার উপস্থিতি| তবে আমার ছেলে যে ওকে ভালবাসত সে কথা আমি অনেক পরে জেনেছি| তিথি অম্বরকে শুধু বন্ধুই মানত, এর বেশী হয়ত ভাবেওনি কোনোদিন| ওদেরই আরেক বন্ধু নির্বাণের সঙ্গে তিথিকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলেছিল অম্বর, আর সেটাই হল ওর কাল|
মা হিসেবে সন্তানকে প্রকৃত শিক্ষা হয়ত আমিই দিতে পারিনি, নয়ত যৌনঈর্ষার শিকার হয়ে সে এমন কাজ করার কথা ভাবে কেমন ক'রে? সুযোগটা সে ভালই নিয়েছিল, আমার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে মেয়েটার সর্বনাশ করতে উদ্যত হয়েছিল| কিন্তু কপাল ওর সেদিন খুব খারাপ ছিল, তাই তো আমি সময়ের আগেই ফিরে এসেছিলাম| আমি সহ্য করতে পারিনি, বিশ্বাস করুন আপনারা, ওই মেয়েটা তো আমারও সন্তানতুল্য| চোখের সামনে ছেলের ধর্ষকরূপ দেখে একটা পাথরের ফুলদানি ছুঁড়ে মেরে দিলাম ওর মাথায়...তারপর...সব শেষ| মেয়েটার কান্না আর আমার ছেলের রক্ত, মিলেমিশে একাকার ক'রে দিয়েছিল সাদা মেঝেটা|
আরও একবার মাতৃসুখ থেকে বঞ্চিত হলাম আমি, হয়ত সন্তানকে খুন করার দুঃখ আমায় সারাজীবন কুরে-কুরে খাবে| কিন্তু নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার রইলাম, অন্তত একটা মেয়েকে সম্মানহানির থেকে বাঁচাতে পারলাম...এই নারীদিবসেই|