মা
মা
অবশেষে মা একটি বাড়ি বানিয়ে ফেলছেন নিজের মতো করে। লম্বা লম্বা শোবার ঘর, ছোট্ট একটা বৈঠকখানা। পশ্চিমদিক চেপে রান্নাঘর৷
এতোদিন মা গড়েছেন অন্যের ঘর। জোড়া জোড়া চোখের সামনে চক ডাস্টার রেখে ইস্কুলের ভঙ্গিতে পড়িয়ে গেছেন জীবন৷ ধর্ম, বর্ণ, রঙ এক কড়ায় রান্না করে খিচুড়ি খাইয়েছেন সরস্বতী পূজোর দুপুরে৷ মা'র চোখে সন্যাসী গেরুয়া, হাতে গার্হস্থের পাপোশ, পায়ে ভিখারির চটি। প্রিয় রঙ চাঁপা, শাড়ির ওপর ঢেলে পাটে পাটে সাজিয়ে নিতেন নিজেকে।
সারাজীবন মা'র দরকার পড়েনি কোনো ঘর কিংবা বাড়ির৷ আমি সহ কয়েকশ সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দিতে দিতে মা নিজেই হয়ে গিয়েছিলেন অন্নপূর্ণা ঘর। বর্ষার ছাতা সারিয়ে তুলতে গিয়ে হয়ে গেছেন আকাশ। মা কি কখনও ঘুমিয়ে ছিলেন?
ভোর বেলায় ঘুম ভাঙলে কতবার দেখেছি পাশে নেই৷ ঝাঁটার শব্দ, কোনো দিন নতুন ধান সেদ্ধর গন্ধ কোনো দিন বাসনের ঠুংঠাং৷ শেকড় আঁকড়ে পড়ে থাকার মতো সরে গিয়ে মাথা রাখতাম মায়ের বালিশে৷ মা আমাদের অভিকর্ষ৷
মায়ের শরীরে কখনও গাছ গজায়নি, না ফুটেছে ফুল। অথচ সবার হাতে দিয়েছেন আদিম পৃথিবী৷ নিরক্ষরেখা বরাবর বেঁধে দিয়েছেন মায়াকাঞ্চন৷ তখনও তাঁর কোনো ঘর নেই প্রাসাদ প্রমান।
এখন ঘর হচ্ছে, সন্তানের হাতে হাত রেখে দাঁড় করিয়েছেন নিজস্ব পৃথিবী৷ ইট কাঠ বালি সিমেন্ট এর তৈরি মজবুত খাঁচা৷ মা, তুমি কি জানো তুমি নিজেই একটা পৃথিবী?
