কৃতজ্ঞতা
কৃতজ্ঞতা


প্রায় আধঘণ্টা দেরিতে ট্রেন স্টেশনে ঢুকল। ঘড়িতে সময় তখন পৌনে দুই। নিজের বগিতে উঠে যথাস্থানে বসে পড়লাম। পাশের সিটগুলোতে আমার সহযাত্রীরা তখন দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে নিতে ব্যস্ত। খিদে পেয়েছিল আমারও। ব্যাগ থেকে টিফিনবাক্স বার করেছি, এমন সময় কানে এলো একটা ক্ষীণ কণ্ঠস্বর, “বাবু কিছু খাইতে দে না।”
চমকে তাকিয়ে দেখলাম নোংরা, ছেঁড়া কাপড় পরা অর্ধনগ্ন এক বাচ্চামেয়ে হাত বাড়িয়ে রেখেছে আমার এক সহযাত্রীর দিকে।
“ভাগ, ভাগ। দূর হ।” ওনার সুতীব্র ধিক্কারে ভয় পেয়ে বাচ্চামেয়েটি হাত বাড়াল আমার দিকে। আমি তার হাতে একটা শুকনো রুটি তুলে দিতেই সে বিদায় নিল।
মেয়েটা চলে যেতেই আমার সহযাত্রীটি ব্যঙ্গাত্মক সুরে বললেন, “কাজটা ভালো করেননি। এইসব বাচ্চা ছেলেমেয়েদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করায় এদের সমুহ। এরা সকলেই একটি গোষ্ঠীর সদস্য। এবার দেখবেন একটু পরে গোষ্ঠীশুদ্ধ সকলে এসে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে যে আপনার দেওয়া খাবার খেয়ে বাচ্চাটি অসুস্থ। এ'সব হল টাকা হাতানোর ফন্দি, বুঝলেন।”
***
অনন্তপুর স্টেশনে কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর আবার ধীর গতিতে চলতে শুরু করছে আবার ট্রেনটা। আমার সহযাত্রীটির কথা কানে বাজছিল তখনও। আচমকা চোখ পড়ল প্ল্যাটফর্মে। দেখলাম সেই বাচ্চা মেয়েটি শুকনো রুটিটা খাচ্ছে।
ট্রেনটা এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। দূর থেকে বাচ্চাটির মুখ দেখে বুঝতে পারলাম যে ওই সরল মুখখানিতে অভিযোগ নেই আমার জন্য, আছে এক কৃতজ্ঞতার আভা।