hassab bin ahmed

Romance

4.6  

hassab bin ahmed

Romance

হঠাৎ বিয়ে

হঠাৎ বিয়ে

20 mins
6.2K


হঠাৎ বিয়ে 

 Author- Hassab bin Ahmed 


          আমার নাম সাজিব, university of science and technology, meghalaya থেকে Masters of science 🧪, এ উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন রত আছি। সেমিস্টার পরীক্ষা শেষে বাসায় এসেছি।


সকাল ১০ টা বাজে, সকালের খাবার খেয়ে রুমে এসে মোবাইল দেখতেছি। এর ভিতর আম্মু রুমে প্রবেশ করলো।

আমি- আম্মু কিছু বলবে?

আম্মু - না, তেমন কিছু না, আসলে আমার বান্ধবীর একটি মেয়ে আছে..

     

    আমি আম্মুর কথা শেষ করতে না দিয়েই উত্তর দিলাম।

আমি - আম্মু আমি তোমাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি,আমি এখন বিয়ে করব না।তা ছাড়া আমি এখনো ছাত্র। আমি তোমাকে আগেই বলেছি নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে আমি বিয়ে করবো না।

আম্মু - আগে তো আমার কথা শেষ করতে দে। আমি জানি যে তুই বিয়ে করবি না। আমাদের কপালে কি আর ছেলের বউ দেখার সৌভাগ্য আছে। আমাদের কথা যদি ভাবতি তাহলে ঠিক ই বিয়ে করতি।সব বাবা মায়ের ই সপ্ন থাকে। তাদের ছেলেকে বিয়ে করিয়ে চাদের মতো সুন্দর একটি বৌমা নিয়ে আসবে। আমাদের তো আর সেই কপাল নেই। 

আমি - আম্মু, আবার এইসব শুরু করে দিলা। আচ্ছা ঠিক আছে,কি বলতে এসেছিলে বলো।

আম্মু - হুম, এখন তো আমার কথা ভালো লাগবে না। যা বলতে এসেছিলাম, আজকে বিকালে আমার বান্ধবীর মেয়ের বিয়ে। আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে।

আমি - আচ্ছা ঠিক আছে! যাবো তাও এখন আর ইমোশনাল হয়ো না প্লিজ!


     আম্মু চলে গেল, আব্বু আম্মু কি যে শুরু করেছে দুইটা মাস ধরে। শূধু একটি কথা, বিয়ে কর, বিয়ে কর!

আচ্ছা আপনারাই বলুন এখন বিয়ে করলে বৌকে ১০ টাকার আইচক্রিম কিনি দিতেও বাসা থেকে টাকা নিতে হবে। আর বাকি সব নাই বলি। যাই হোক এই সব বাদ।


বিকালে রেডি হয়ে গেলাম বিয়ে খাবার জন্য। মেয়ের বাবা টাকা খরচ করেছে বলতে হবে! শুনেছি একমাত্র মেয়ে! এতো মানুষ সবাই ব্যস্ত নিজের নিজের কাজে! আমার মনে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত মেয়ে গুলো, মেয়ে গুলো ব্যস্ত ইনস্টাগ্রাম রিল/ টিকটক তৈরি করাতে! আর আমি ভাবছি,কখন খেতে দিবে। আমর কথা হচ্ছে দাওয়াতে গিয়ে বিরিয়ানি না খেয়ে আসা যাবে না! আমার পছন্দের খাবার হচ্ছে দুটি।১. বিরিয়ানি,২.গাজোরের হালুয়া! ঘন্টা দুই পর খেতে দিয়েছে। আমি খাবার খেতে বসবো এমন সময় দেখি বিয়ে বাড়ীতে দৌড়াদৌড়ি করতেছে! এক পলকে কান্না - কাটির পরিবেশ তৈরি হয়ে গেল। আমি দৌড়ে আম্মুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার কি হয়েছে?

আম্মু - যে ছেলের সঙ্গে হুমাইরার বিয়ে ঠিক হয়েছিল! (আম্মুর বান্ধবীর মেয়ের নাম হুমাইরা) এই ছেলে তার গার্লফ্রেন্ডর সঙ্গে ভেগে গেছে! এখন তুই বল হুমাইরার কি হবে? তুই তো ভালো করেই জানিস আমাদের সমাজ এখন হুমাইরা কে অলক্ষী বলবে। এই মেয়েটার আর বিয়ে হবে না। তুই বল মেয়েটার কি দোষ! হুমাইরার আম্মু তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে! 


     বলতে বলতে আম্মু ও কেঁদে ফেলেছে ! সত্যি মেয়েটার ভাগ্য অনেক খারাপ!! হঠাৎ আমি আম্মুকে বললাম

আমি - আম্মু আমি হুমাইরা কে বিয়ে করবো!

    

     আমার কথা শুনে আম্মু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!

আম্মু - তুই কি সত্যি বলছিস??

আমি - জি আমি ভেবে চিন্তেই বলছি! তুমি আব্বুর সাথে কথা বলো।


  আমার কথা শুনে আম্মু অনেক খুশি! আর আব্বু তো মনে হয় এই কথার অপেক্ষাই ছিলো! তো দুই পক্ষের আলোচনা করে! সঙ্গে সঙ্গে বিয়ের বেবস্থা করা হলো! আর আমি এক পলকে বিবাহিত হয়ে গেলাম।লকে বলে মানুষ দুই প্রকার জীবিত আর বিবাহিত!

যিহেত বিয়েটা হঠাৎ করেই হয়ে গেল। তাই আব্বু সিদ্ধান্ত দিলো ,এখন হুমাইরা এই বাসায় ই থাকবে! আর হুমাইরার হায়ার সেকেন্ডারি পরিক্ষার ২ মাস বাকি আছে!তাই হুমাইরার পরিক্ষার পর যাক জমক ভাবে আমাদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে!

মানে মূল কথা হলো, আমি বিবাহিত হয়েও বেচেলার!

কিন্তু হুমাইরার আব্বু আম্মুর অস্থিরতা দেখে সত্যি খারাপ লাগছে! আমাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবে বুঝতে পারছে না! হুমাইরার আব্বু আমার হাত ধরে বলছে


হুমাইরার আব্বু - বাবা সজিব! তোমাকে দেখে আমি চিন্তা করতে ছি আল্লাহ কিভাবে মানুষ কে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন! সত্যি আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের একা ছেড়ে দেয় না! আমি বললবো না আমার মেয়ে ধনির ঘড়ের দুলালি! কিন্তু হুমাইরা আমাদের সবার অনেক আদড়ের! আমার মেয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করে বড়ো হয়েছে! তাই আমি মনে করি ও তোমার সঙ্গে মানিয়ে চলতে পাড়বে! আর ও একটু আবেগি! তাই তুমি একটু দেখে রেখো!

আমি - আপনি কনো চিন্তা করবেন না! আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমার ভালো ভাবে জিবন পার করতে পারি!


কিছু সময় পর আমাকে হুমাইরার রুমে প্রবেশ করতে দিলো! 


আম্মু - সজিব, বেশি দেড়ি করিস না! বাসায় যেতে হবে! রাত অনেক হয়েছে?


 আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে,চোখ বন্ধ করে রুমে প্রবেশ করলাম!


রুমে প্রবেশ করার পড় কেউ একজন হয়তো সালাম দিয়েছিলো। চোখ খুলে তাকালাম সুন্দর পরিপাটি রুম এতো সুন্দর রুম দেখতেও ভালো লাগে। আমার সামনে হয়তো হুমাইরা দারিয়ে আছে , সঠিক বলতে পারছি না কারন কালো বোরখা পরিহিত আছে এমনকি নিকাব ও পরেছে , আমি তো সালাম ফিরানোর কথা ভুলেই গেছি, মেয়েটি আমাকে একটা ছোফায় বসতে বললো আমি কোনমতে বসলাম , মেয়েটিও আমার পাশে থাকা ছোফায় বসলো, আমি ঘেমে গেছি তাই রুমাল দিয়ে মুখটা একটু মুছে নিলাম , মেয়েটি নরম সুরে বললো আমার নাম "হুমাইরা বিনতে আব্দুলা" সবাই আমাকে "হুমাইরা" বলে ডাকে ।


আমি তো কন্ঠ শুনেই শেষ এতো সুন্দর কন্ঠ কিভাবে হতে পারে।  

কিছু সময় নিরবতা , আমি শুধু মুখ মুছে যাচ্ছি! ভাবলাম এখন নিরবতা ভেঙ্গে কিছু বলা দড়কার!


আমি:- আপনি ভালো আছেন?

হুমাইরা:- জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?


(আমি তো ভাবতেছি এতো সুন্দর কন্ঠ হয় কিভাবে।)


আমি:- জি আমিও ভালো আছি। আমি জানিনা আমাদের এখানে কি বিষয়ে আলোচনা করা উচিৎ, আমার ‌কোন প্রশ্ন নেই আপনার কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাস করতে পারেন,  


হুমাইরা মাথা ঝাকিয়ে ‌জানালো কোন প্রশ্ন নেই , তারপর হুমাইরা নিকাব খুলতে লাগলো.,

আমি তো হা হয়ে তাকিয়ে আছি , এই আমি কি দেখেছি , মায়াবী চোখ, গোলাপী ঠোট, ঠোটের কোনে যেন হাঁসি লেগেই আছে। কান্নার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আমি হয়তো বলতে পারবো হুমাইরা কি পরিমান সুন্দরী, কিন্তু আমি হুমাইরার চেহারার মাঝে যে মায়া দেখিছি তার বর্ননা লিখে বুঝানোর কোন শক্তি আমার নেই। আমি এক পলকে চেয়ে আছি দেখে হুমাইরা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো এই লজ্জা পাওয়া মুখটা আরো সুন্দর লাগতেছে খেয়াল করলাম লজ্জায় হুমাইরার চেহারা আনার ফলের মতো লাল হয়ে গেছে আর সেই মিষ্টি হাসি তো আছেই। আমি তো এই হাসি দেখাই পাগল হয়ে গেছি।


এই জন্যই রবীন্দ্রনাথ বলেছে,

রমনী অনর্থক হাসে

তাহা দেখিয়া পুরুষ অনর্থক কাঁদে

অনেক পুরুষ ছন্দ মিলাইতে বসে

আবার কেহ গোলায়া দড়ি দিয়ে মরে !!!! """""


জানিনা আমার অবস্থা কি হবে? 

আমিও চোখ সরিয়ে আমতা আমতা করে বলল


আমি- আপনাকে দুটি কথা বলি?

হুমাইরা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো!

আমি - আপনি এই ভাবে হঠাৎ করে নিকাব সরাবেন না?

হুমাইরা - কেন?

আমি - আমি এতো সুন্দর চেহারা আর কখনো দেখি নাই! আপনাকে দেখে আমার হার্ট বিট বেড়ে গেছে! কখনো বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে!

( হুমায়রা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো!)

আমি - আর আপনি কান্না করবেন না! এতো সুন্দর চাঁদের মতো চেহারায় কান্না মানায় না!


  হুমায়রা কিছু বললো না! কাড়ো মুখে কোন কথা নেই! আমি চেয়ে আছি হুমাইরার অপরুপ সুন্দর চেহারার দিকে! এতো সুন্দর একটি মুহূর্তের মধ্যে আছি! আমার ফনের মনে হয় আমার সুখ সহ্য হচ্ছে না!‌বেজেই চলছে! ফোন রিসিভ করছি না দেখে হুমাইরা জিজ্ঞেস করলো ,কে ফোন করছে??

আমি - আম্মু ফোন করতেছে! য়াওয়ার জন্য!

হুমায়রা - ওওও! রাত তো অনেক হয়েছে! আপনার এখন যাওয়া উচিৎ!


আমি পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে হুমাইরার হাতে দিলাম! কিন্তু হাত ধরতে চেওয় ধরলাম না! আসলে সহস করতে পারলাম না!

আমি - আপনাকে এখন দেওয়ার মতো কিছু নেই! তাই আজ আমাদের দুজনের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাতে আপনাকে কথা দিচ্ছি! আমার দেহে একফুটা রক্ত থাকা পর্যন্ত আপনার সন্মানে/ মর্যাদার কোন কমতি হতে দিবো না। আমি আপনাকে সবসময় আগলে রাখবো। এখন থেকে এইটা আপনার! আর হ্যা মানিব্যাগে ভিতর আমার নম্বর আছে কল দিয়েন প্লিজ।


 হুমায়রা কিছু বললো না! আমি বের হয়ে যাবো ,এমন সময় হুমাইরা পিছন থেকে ডাকলো

হুমায়রা - শুনেছেন??

আমি - জি বলুন ( আমি মনে হয় এই ডাকের অপেক্ষায় ই ছিলাম)

হুমায়রা - সাবধানে যাবেন!!


আমিও মাথা নাড়িয়ে শিকার করলাম, এই প্রথম আমার মনে হচ্ছে আমার অনেক দামি বস্তু রেখে যাচ্ছি। সৃষ্টি কর্তা কি অকৃত্রিম সম্পর্ক দিয়েছেন মানুষ কে! যে মেয়েকে আমি কিছুক্ষন আগে চিনতাম ও না এখন সেই মেয়েটিকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। মনের ভিতর অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে, কিছু লজ্জা, কিছু ভালোবাসা, কিছু ভয়,সব কিছুর মিশ্র অনুভূতি একসঙ্গে হচ্ছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি। হঠাৎ আম্মুর ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল।

আম্মু - কি সজিব? বউ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। তোকে কি রেখে যোবো এখানে??

আমি - আম্মু তুমিও না। চলো জলদি।


    বাসায় পৌছে দেখি ১ টা বাজে! খুদাও লেগেছে অনেক। পরে অবশ্য হুমায়রাদের বাসায় খাবার খেতে দিয়েছিলো কিন্তু লজ্জায় খেতে পারি নাই। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আম্মু খেতে ঠাকছে। 

আমি- সজিব ঐ বাসায় তো কিছু খাস নি খেয়ে নে। আর জানিস আমি আজকে সত্যি খুশি। আজকে তুই সত্যিই খুব ভালো একটা কাজ করেছিছ।


খাবার খেয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি একটা নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে" আস-সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতু. বাসায় কি পৌঁছে গেছেন?"

 

কে হতে পারে? নিশ্চয় হুমায়রা।তাই রিপ্লাই করলাম

"ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ওয়া-রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু. জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবেই পৌঁছে গেছি! আপনি কে?"


কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই আসলো " আমি হুমাইরা" 

আমি ভাবতেছি রিপ্লাই না করে কল করি, কিন্তু এতো রাতে কল করটা কি ভালো হবে?? ভাবতে ভাবতে কল করেই ফেললাম। 

সঙ্গে সঙ্গে ই রিসিভ করে ছালাম দিলো

হুমায়রা - আস-সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতু

( আমি হুমাইরার কন্ঠ শুনলেই পাগলপ্রায় হয়ে যাই! এতো সুন্দর কমল কন্ঠ)

আমি- ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ওয়া-রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু. কি করেন??

হুমায়রা - কিছু না। আপনি কি করেন??

আমি - শুয়ে আছি!

হুমায়রা - খাবার খেয়েছেন?

আমি - জি খেয়েই শুয়ে পড়লাম। আসলে হয়েছে কি আপনাদের বাসায় তো লজ্জায় খেতে পারি নাই তাই, বাসায় এসে খেলাম। আপনি খেয়েছেন??

হুমায়রা - না, খাবো এখন।

আমি - কি বলেন, রাত প্রায় ৩ টা বাজে। জান এখুনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এমনি আজ আপনার উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে।

হুমায়রা - জি আচ্ছা! তাহলে রাখছি! বলেই ফোন কেটে দিল। 

মনে মনে শুধু বললাম আল্লাহ কালকে অন্তত একবার হুমায়রার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিও। 

রাত ৩ টা বেজে গেছে। তাই আর দেরি না করে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।

              ……

সকাল ঘুম ভাঙ্গলো আম্মুর ডাকে।

আমি রুম থেকে উঠে বাহির বের হতেই আম্মু বলা শুরু করলো " কিরে এতো বেলা হয়ে গেলো। মেয়েটাকে তো একবার দেখতে যেতে হবে নাকি?? তোর কি কোনো চিন্তা নেই?? আমরা সবাই কখন থেকে রেডি হয়ে আছি। হুমায়রার আব্বা কমছে কম ১০ বার কল করেছে, কখনো যাবো।"



আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আমার দোয়া এতো তাড়াতাড়ি কবুল হবে! কে জানে! রাত ভর চিন্তা করলাম কিভাবে হুমায়রার সঙ্গে দেখা করা যায় এখন দেখি মেঘ না চাইতেই জল। আমি ও রেডি হয়ে নিলাম। আমি কখনো ইস্টাইল করি না সাধারণ ভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করি! কিন্তু আজ দুটো সার্ট চেন্জ করলাম! মনে হচ্ছে কিভাবে গেলে হুমায়রার ভালো লাগবে। শেষ মেষ আধাঘন্টা পর তৈরি হলাম। আমার অবস্থা দেখে আমার নিজেরিই হাঁসি পাচ্ছে। সত্যি ভালোবাসা মানুষকে পাগল বানিয়ে দেয়। তারপর আব্বু আম্মু আমি বাজারে গিয়ে কিছু শপিং করে হুমায়রাদের বাসায় গেলাম। সবাই মনে হচ্ছে আমাদের অপেক্ষাই ছিলো। সবার সঙ্গে কথা বললাম! কিন্তু আমার প্রিয়তমাকে তো দেখতে পাচ্ছি না। অনেকেই এসেছে জামাই দেখতে, আর আমার দুচোখ খুঁজে বেরচ্ছে মায়া ভরা আরো এক জোড়া চোখ কে। কাকে কি জিগ্গেস করবো। আমার আব্বা আম্মা তো মনে হয় এই জগতে নাই। যে গল্প শুরু করেছ মনে হয় না, আজকে এই গল্প শেষ হবে। না আর তো সহ্য করতে 

পারছি না। এর ভিতর, আমার শশুর আব্বা বলে উঠলো। 

মা নিশি তোমার সজিব ভাইজান কে আপুর রুমে নিয়ে যাও। ওও আচ্ছা নিশি তাহলে হুমায়রার বোন। নিশি আমাকে হুমায়রার রুমে এনে দিয়ে গেলেন। মনে মনে শহুর আব্বাকে ধন্যবাদ দিলাম। হুমায়রাও দাঁড়িয়ে আছে আমিও দাড়িয়ে আছি। 

আছি - ভালো আছেন?

হুমায়রা - জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো! আপনি??

আমি - জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। বশে কথা বলি?

হুমায়রা - জি , আপনি বসুন। 

  

   আমি হুমাইরার খাটে বসলাম, হুমায়রা একটু দুরে গিয়ে বসলো। আমি পকেট থেকে একটা পেকেট বের করে হুমায়রা কে দিলাম " এইটা আপনার জন্য"

হুমায়রা আমার হাত থেকে পেকেট টা নিলো।

হুমায়রা - আপনাকে আমি একটা প্রশ্ন করি?

আমি - অবশ্যই, আপনি যে কোন প্রশ্ন নির্দিধায় করতে পারেন?

হুমায়রা - আপনি আমায় কেন বিয়ে করলেন? করুনা করে?

আমি - আসলে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কি হবে তা আমার যানা নেই। হয়তো এর থেকে কঠিন কোন প্রশ্ন আমাকে কেউ করে নাই। কিন্তু আমি এইটুকু বলতে পারি আমি আপনাকে করুনা করি নাই। অতো ভালোমানুষ আমি না। 

হুমায়রা - কাল যে ঘটনা টা ঘটলো তাই প্রশ্ন টা করছি! ভুল বুঝবেন না! আপনারো কি কোন গার্লফ্রেন্ড আছে?( আমতা আমতা করে বলল)

আমি - আসলে আমি একটু লাজুক প্রকৃতির ছেলে । কোন মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সাহস হয়ে উঠে নাই কখনো । যাকে আমরা সাধারণত বলদ মার্কা বলে মজা করি । কোন মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব করা তো বহু দুরের কথা কোন মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সাহস যোগাতে পারতাম না ‌ তো এভাবেই কাটছিলো দিন গুলো। সময় পার হতে লাগলো আমার প্রেম করার ইচ্ছে বাড়তে থাকলো , অনেক মেয়েকে প্রপোজ করার কথা ভাবলেও কাওকে বলতে পারতাম না। আরো একটি কথা আমি অনেক মুভি দেখতে ভালো বাসি । হঠাৎ একদিন বলিউডের একটি মুভি দেখলাম । মুভি টার নাম ছিল "বিবাহ "( vivah) । এই চিনেমা দেখার পর আমার প্রেম করার ইচ্ছে চলে গেল । আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি এরেঞ্জ মেরেজ করবো । তার পর থেকে আমার বউ এর জন্য অপেক্ষা করতেছে প্রেম করার জন্য ।🤗


হুমায়রা কিছু বলেছ না!দেখে আমি প্রশ্ন করলাম

" আপনার কোন বয়ফ্রেন্ড….."

হুমায়রা - না! কখনই না। আমি আল্লাহকে ভয় করি। আর ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম সম্পূর্ণ হারাম। 


আমি একটু সাহস করে হুমায়রার পাশে গিয়ে বসলাম।


আমি - আমি একটা কথা বলি দয়াকরে রাগ করবেন না!

হুমায়রা - বলুন কি বলতে চায়।


আমি ভয়ে ভয়ে আমতা আমতা করে বললাম

আমি - আ আমি কি আপনার হাতা টা ধরতে পারি??

হুমায়রা তার হাত আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বল্ল, এতে রাগ করার কি আছে। আমি আপনার স্ত্রী। আমি তো পুরোটাই আপনার। 

এই প্রথম বউ এর হাত স্পর্শ করলাম।এর আলাদা একটি ভালোলাগা আছে। যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

আমি - আমি আপনাকে দেখে সত্যিই অবাক হই । আপনি এতো ময়াময় একজন মানুষ। 

হুমায়রা - আপনি একটু বেশি বলেন।

আমি - বেশি না । সত্যি বলছি আমি আমার জীবনের, এতো সুন্দর ময়াভরা চেহারা দেখি নাই। আর আপনার কন্ঠ কি বলবো আপনার কন্ঠ শুনলে তো আমার অন্তর গলে পানি হয়ে যায়। 


আমি হুমাইরার হাত দুটো নিয়ে আমার ঠোঁট সুইয়ে দিবো এমন সময় নিশি আসলো, সঙ্গে সঙ্গে হুমায়রা আমার থেকে হাত শরিয় নিলো‌


নিশি - সবাই আপনাদের খাবারের জন্য ডাকছে।


(আমি মনে মনে বলি ডাকার আর টাইমিং পেল না)


কি আর করা উপাই নেই খাবার জন্য গেলাম। খেতে বসে তো আমার গলা শুকিয়ে গেল! এতো এইটেম মনে হয় আমি কখনো এক সঙ্গে দেখি নাই কমছে কম ১০ টা আইটেম তো হবেই! আমার অবস্থা দেখে হুমাইরা মনে হয় খুশি হয়েছে! এতো কিভাবে খাবো! কিছু খেয়ে সোজা হুমাইরার রুমে চলে গেলাম! হুমাইরাও আমার পিছন পিছন আসলো!

আমি - আজকে যে খাবার খেয়েছি এক বছর আর খেতে হবে না!

হুমাইরা আমার কথা শুনে মুচকি হাসি দিলো! যা হুমাইরার সৌন্দর্য কে অনেক গুন বৃদ্ধি করে দিয়েছে!

আমি - কি হলো দাঁড়িয়ে কেন বসেন!

( হুমায়রা আমার কথা শুনে বসোল ঠিকিই কিন্তু অনেক দূরে সরে গিয়ে!)

হুমাইরা - আপনাকে একটি প্রশ্ন করি!

আমি - অনুমতি নিতে হবে না! যখন খুশি তখন প্রশ্ন করতে পারেন!

হুমায়রা -আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কি? আপনার কি মনে হয়?

আমি - উদ্দেশ্য কি হবে! ভালোভাবে জীবন যাপন করা? আসলে আমি কখনো এইভাবে ভেবে দেখি নাই!

আপনি বলেন না!

হুমায়র- আমার মনে হয় এই প্রশ্নটার সবচেয়ে সেরা উত্তর দিতে পারবেন আমাদের স্রষ্টা, সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনিই উত্তর দিতে পারবেন যে, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যটা কী? আপনি কি একমত?

আমি - অবশ্যই!

হুমায়রা - মানুষকে আল্লাহ তা’য়ালা কোন উদ্দেশ্য ব্যতীত সৃষ্টি করেন নি। নিশ্চয়ই মানব সৃষ্টির একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন-


“আমি জ্বীন এবং মানুষকে এই কারণে সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা আমার ইবাদত করে। (সূরা যারিয়াত: আয়াত-৫৬)


তাহলে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যে হলো সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করা।

আমি জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক আর্টিকেল পড়ছি! কিন্তু এর মতো স্পষ্ট উদ্দেশ্য কখনো দেখিনাই!আর এর থেকে ভালো উদ্দেশ্য আর কি হতে পারে!এই উদ্দেশ্য টা হচ্ছে একটা পেকেজ! পৃথিবীতে আপনি যত ভালো ভালো ভালো উদ্দেশ্য খুঁজে বের করে নিয়ে আসেন! সব কিছুই আমার এই পেকেজের ভিতর আছে! ধরন আপনার জীবনের উদ্দেশ্য গরিব কে খাবার খায়ানো! আমি যদি আল্লাহর ইবাদত করতে চাই তাহলে আমাকে গরিব লোকদের খাবার খাওয়াতে হবে! যদি তা না করি তাহলে আমি মুছলিম হতে পারি নাই!

আমি - হুঁম ঠিক! আমারো মনে হয় এখন জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে হবে!

আমি - আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন ছিল?

হুমায়রা - জি বলুন?

আমি - আমার শরীরে কি তারকাঁটা ?

হুমাইরা - মানে??

আমি - না মানে যদি আমার শরীরে তারকাঁটা না থাকে তাহলে এতো দূরে দূরে থাকেন কেন? একটু পর তো চলেই যাবো!

হুমায়রা আমার কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে,একটু আমার দিকে এগিয়ে আসলো


  এই লজ্জা আমাকেই ভাংতে হবে! তাই আমি আস্তে আস্তে আমার মুখটা হুমাইরার ঘারের কাছে নিয়ে গেলাম! হুমায়রা চোখ বন্ধ করে আছে! মনে হচ্ছে অনেক ভয় পেয়েছে! এরপর হুমাইরার কানে কানে বললাম তোমাকে যে আমার মানিব্যাগ দিয়েছিলাম ওর ভিতর আমার ইউনিভার্সিটির আই কার্ড আছে! ঐ টা দেন!

হুমায়রা আমার কথা শুনে বড়ো বড়ো করে তাকালো


হুমায়রা - কেন দিবো? দিবো না,?

আমি - কেন আপনি আই কার্ড দিয়ে কি করবেন?

হুমায়রা - আপনি তো কাল বলেছিলেন যে মানিব্যাগে যা কিছু আছে সব আমার? তো এখন ঐ টা আমার! আমার বস্তু আপনাকে কেন দিবো ?

আমি - আপনি তো আমার স্ত্রী ?

হুমায়রা - স্ত্রী হলেই কি দিতে হবে?

আমি - না,মানে আমি যানতে চাচ্ছি -আরবিতে স্ত্রী কে কি বলে?

হুমায়রা- "রাব্বাতুল বাইত"

আমি - এর অর্থ কি?

হুমায়রা - ঘরের রানী!

আমি - তাহলে আপনি আমার কাছে রানী হয়ে গেলেন। ছো একজন ভালো রাজা অথবা রানীর প্রথম কর্তব্য হচ্ছে প্রজাদের ভালো - মন্দর দিকে নজর দেওয়া!তাই মহারানীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আমার প্রয়োজনীয় আই কার্ড দিয়ে আমাকে বাধিত কর যেন!

               ইতি

        আপনার অবাধ্য স্বামী

হুমায়রা - আপনার অনুরোধ মঞ্জুর করা হয়েছে!😄😄


হুমায়রা আমাকা আই কার্ড দিতে দিতে বলল

হুমায়রা - জানেন আপনি আপনি ভালো নাটক করতে পারবেন! 

আমি - আজকে জানলাম! হুমায়রা জানো আমি কাল ইউনিভার্সিটি চলে যাচ্ছি!!!

হুমায়রা - এতো জলদি?

আমি - হুম যেতে হবে!

হুমায়রা - আসবেন কতো দিন পার?

আমি- দেখি কি হয়! মনে হয় আসতে দেরি হবে!

হুমায়রা - আচ্ছা ঠিক আছে! তো এতে মন খারাপ করার কি আছে! 

আমি - না, ভাবছি আমার প্রেম শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলো!! শুনেছি চোখার আরাল হলেই নাকি মনের আরাল হয়! আমাদের ক্ষেত্রেও যদি এইরকম হয়! আমি প্রথম যেদিন আপনাকে দেখেছি ও দিনিই আপনার প্রেমের জালে আটকা পড়ে গেছে! আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না! 


আমি একটু সিরিয়াস হয়ে গেছি তাই মনে হয় হুমায়রা আমার হাত ধরল, এই প্রথম হুমায়রা নিজ ইচ্ছায় আমার হাত ধরল! এটাও একটা অন্যরকম ভালোলাগা!


হুমায়রা - আপনাকে কে বলেছে চখের আরাল হলেই মনের আরাল হয়! আই সব ফালতু কথা, আমি তো হজরত মুহাম্মদ স: কে কোখনো দেখি নাই, কিন্তু তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি! যারা এইসব বলে তারা হয়তো জানেই না যে কাউকে না দেখেই ভালোবাসা যায়! 

আপনি শান্ত হন! কালকে ভালোভাবে ইউনিভার্সিটি যান, ইনশাআল্লাহ আমাদের ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি হবে!

আমি - আমাদের ভালোবাসা? মানে আপনিও আমাকে ভালোবাসেন??

হুমায়রা - আপনি না অনেক দুষ্ট !!

আমি - যাক শুনে খুশি হলাম! এখন মরেও শান্তি পাবো!!

হুমায়রা - কি বললেন, আর কোন দিন যদি এইসব বলেন তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না!

বলেই আমার থেকে দূরে সরে গেলো! এর ভিতর নিশি আসলো

নিশি - ভাইয়া আপনাকে ডাকতেছে!


 আমি বাইরে গিয়ে দেখলাম যে আব্বু আম্মু বাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি! কি আর করার হুমায়রার থেকে ভালোভাবে বিদায় নেওয়া তো দূরের কথা! রাগ টাও ভাঙিয়ে যেতে পারলাম না!


বাসায় ফিরে বাজার করতে গেলাম, ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসে দেখি ৯ টা বাজে! এখনো হুমায়রা কোন মেসেজ ও দিলো না ফোন ও দিলোনা! তাই আমি ফোন দিলাম, রিছিভ করে ছালাম দিলো , কিন্তু আর কোন কথা বলছে না! 

আমি - কি হলো কথা বলবেন না?!

হুমায়রা -.....

আমি - রাগ কমে নাই এখনো??

হুমায়রা - আমার কারো উপর কোন রাগ নেই,

আমি - আচ্ছা সরি!! আসলে আমি মজা করে বলেছিলাম!! আর কখনো বলবো না!

হুমায়রা - মনে থাকে জেন!!

আমি - গিফট দেখেছো??

হুমায়রা - হুম!

আমি - পছন্দ হয়েছে??

হুমায়রা - জি আলহামদুলিল্লাহ, অনেক পছন্দ হয়েছে! কিন্তু আপনাকে ডায়মন্ডের রিং কি দিতে বলেছে??

আমি - কেন কি হয়েছে?

হুমায়রা - এতো টাকা খরচ করার কি দরকার ছিলো?

আমি - কাল আমি একটা হাদিস পড়লাম হাদিস টা হলো-

      " আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তোমরা পরস্পরে উপহার বিনিময় করো।কারণ তা অন্তরের শত্রুতা ও বিদ্বেষ ভাব দূর করে"।( ইমাম আহমাদ,আলমুসনাদ:৯২৫০)

আর জানেন তো উপহারের কোন দাম হয় না ! 

হুমায়রা - আলহামদুলিল্লাহ, শুনে খুশি হলাম, আপনি হাদিস ও পড়েন! আলহামদুলিল্লাহ!

আমি - খাবার খেয়েছেন ?

হুমায়রা - না?

আমি - কেন?

হুমায়রা - মন ভালো ছিল না?

আমি - এখন মন ভালোহয়েছে?

হুমায়রা - জি

আমি -তাহলে যান এখন খেয়ে নিন!

হুমায়রা - আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন কাল তো সকালে চলে যাবেন! 

আমি - জি! 


              ……


হোস্টেলে আসার দু দিন পার হয়ে গেলো ! হুমায়রার সঙ্গে সুধু একবার কথা হয়েছে! কোথায় যেন বেরাতে গিয়েছ! তাই কন্টাক করতে পারে নাই ! কিন্তু আমার তো হুমায়রার কথা না শুনলে ভালো লাগে না! কিছু সময় পর দেখি মেছেজ এসেছে হুমায়রার নম্বর থেকে! আমি মেজেজ চেক না করেই ফোন দিলাম!

হুমায়রা - আস-সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতু!

আমি - আপনি এতো নিষ্ঠুর কেন বলতে পারেন?( ছালাম ফিরিয়ে উত্তর দিলাম)

হুমায়রা - কেন আমি আবার কি করলাম!!!

আমি - কি করলাম মানে!! দুই দিন ধরে কোন খবর নেই!! 

হুমায়রা - আর বলবেন না, খালাতো ভাই বোন দের সাথে একটু বেশি ব্যস্ত ছিলাম!!

আমি - আপনার খালাতো ভাই আছে?? 

হুমায়রা - জি কেন!!

আমি - কতো বড়ো ??

হুমায়রা - মনে হচ্ছে কিছু পোড়ার গন্ধ পাচ্ছি!?

আমি - পোড়লে তো পাবেনই!!

হুমায়রা - আপনি এতো হিংসুটে কেন??

আমি - আগে বলেন বয়স কতো!!

হুমায়রা - আরে বাচ্চা ছেলে!!! ক্লাছ ৪ এ পড়ে!! আপনার কি মনে হয় আমি নন মাহরামে কাছে জাবো??

আমি - তাহলে ঠিক আছে!!

হুমায়রা - শুনেন না!!

আমি - বলেন না!!

হুমায়রা - আমার একটা প্রব্লেম হয়েছে!!

আমি - কি প্রবলেম!

হুমায়রা - কাল আমার একটা হোম ওয়ার্ক জোমা দিতে হবে hydroponic এর উপর!! আমি তো কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না কি করবো? আপনি তো botany (উদ্ভিদ বিজ্ঞান) ইর ছাত্র, অল্প হেল্প করেন না!!

আমি - আমি কেন হেল্প করবো !! আপনার খালাতো ভাইকে বলেন!

হুমায়রা - আমি কিন্তু সিরিয়াস!!

আমি - আচ্ছা ঠিক আছে লিখুন!! 

হুমায়রা - হুম বলেন

আমি - hydroponic is a method of growing plants without soil, the term "hydroponic" is come from the Greek word "hudar" for water and "ponos" for work.

            While modern agriculture is recently utilised hydroponics. growing without soil isn't actually a new concept. The some time disputed hanging garden of Babylon were considered of the seven wonders of the world and may have been one of the earliest example of hydroponic.

হুমায়রা - কিন্তু এইটুকু তো হবে না! 

আমি - এখন শুধু advantage and disadvantage লিখে দিলেই হয়ে যাবে!

হুমায়রা - কোথায় পাবো!!

আমি - আমি আপনাকে মেসেজ করে দিবো !! আর শুনেন আমি কাল আপনার সঙ্গে দেখা করতে যাবো আপনাদের কলেজের সামনে!

হুমায়রা - কি বলেন এই সব আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন!!

আমি - জি আমি পাগল হয়ে গেছি!! আমি আপনাকে না দেখে আর থাকতে পারছি না!!

 বলেই ফোন কেটে দিলাম! কারন নাহলে আমাকে হুমাইরা যেতে দিবে না!!


পরদিন বিকেলে হুমায়রা দের কলেজের সামনে, দাঁড়িয়ে আছি, কিছু সময় পর দেখি হুমায়রা আর ওর কিছু ফ্রেন্ড দের নিয়ে আসলো ! তারপর সবাইকে নিয়ে কিছু খাওয়া দাওয়া করে বিদায় করে দিলাম!! আর আমি আর হুমাইরা পার্কে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম!! কিন্তু সাধারণতে পার্কর যা অবস্থা করে রাখে এখন কার ছেলে মেয়েরা! তা দেখে আর পার্কের ভিতরে হুমায়রা কে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা করলো না!! অনেক ঘুরে একটা শিশু পার্কে গেলাম!! পার্কের ভিতরে গিয়ে দুজনে বসে কথা বলছিলাম!! আর আমি মোবাইল টিপছিলাম!! 


হুমায়রা - এই আপনি সব সময় এতো মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকেন কেন?? আপনি এতো দূর কি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন না মোবাইল টিপতে এসেছেন??

আমি - আচ্ছা সরি,মোবাইল রেখে দিলাম,, এখন বলেন!!

হুমায়রা - আচ্ছা প্রথমে আপনাকে মোবাইল ফোন অ্যাডিকশনের কথা বলি!! 

আমি - জি বলুন!!

হুমায়রা - একটা সার্ভে বলি প্রথমে শুনেন!!

            According to a recent survey -

 •86% of couples get less than 2 hours of quality time together.

•55% of father spend more time on their phone than with their family.

•33% of parents do not know their child's best friend's name.

•62% of family feel they are not connected.


               These surveys are a shame for us.Many say we are living a better quality of life, is it true? We need to think more deeply.If this continues, Muslims will have no future.An important part of Islam is family ties.If we leave the family ties, will our next generation be good Muslims?You have to think about your future generation.


আমি - হুম, খুবই চিন্তির বিষয়!!!


   আসলে মোবাইল ফোন অ্যাডিকশন সত্যিই ভয়াবহ একটি বিষয়!! তাই ভাবলাম কিছু সময় মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থেকে,, পুরোপুরি হুমায়রার সঙ্গে সময় কাটাই!! এর ভিতর হুমায়রা ফোন আসলো!!

হুমায়রা - জি আম্মু বলো!!

…………………………

হুমায়রা - না আম্মু, বাসায় ফিরতে দেরী হবে!! এক্সট্রা ক্লাস আছে!! 


বলেই ফোন রেখে দিলো!!


আমি - আচ্ছা আপনি এতো কিছু যানেন!! তাহলে মার সঙ্গে মিথ্যা কথা বললেন কেন??

হুমায়রা - তাহলে কি বলতাম,, যে তোমার মেয়ে তোমার মেয়ের জামাই এর সাথে পার্কে বসে প্রেম করছে??

আমি - হুম, তাও ঠিক!! আচ্ছা আরো একটি কথা!! আপনার যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল সে ছিলো ডাক্তার!! আর আমি একজন সাধারণ বেকার ছাত্র!! আপনার খারাপ লাগে না??উনার সাথে বিয়ে হলে কতো সুখে থাকতেন!!

হুমায়রা - এই আপনি এমন কেন বলেন তো, সবসময় সুধু ফালতু কথা বলেন!! আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসেন!! আমি আপনার সঙ্গে থাকবো না!!

আমি - আপনি রাগ করবেন না!! আমি তো সুধু মজা করার জন্য জিগাস করলাম!!

হুমায়রা - আমার জন্য আপনি ঐ ডাক্তার এর থেকে হাজার শুনে ভালো, হয়তো তাই তো আল্লাহ আমাদের স্বামী স্ত্রী বানিয়েছেন!! আর টাকাই যদি সুখ, হতো তাহলে বড়ো বড়ো লাখ পতি, কোটি টাকার মালিকরা আত্মহত্যা করতো না!! আর নেক্স টাইম যদি এইরকম ফালতু কথা বলেন আমি কিন্তু সত্যি সত্যি চলে যাবো আপনাকে রেখেই!!

আমি - আচ্ছা সরি!! আর বলবো না!!

হুমায়রা - আপনি যানেন বউ মানে কি??

আমি - আমি যানি না বউ মানে কি! কিন্তু আমার একজন প্রিয় লেখিকার গল্পে পড়েছিলাম বউ মানে কি! এইটা বলি??

হুমায়রা - আচ্ছা ঠিক আছে বলেন!!

আমি - 🌹💜🌹💜🌹💜🌹💜🌹💜🌹💜🌹

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

মেঘলা দুপুর শিশির ভেজা ভোর

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

মনের মাঝে অনেকখানি জোর

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

হাসি খুশি হঠাৎ করেই রাগ

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

দুঃখ সুখের সমান সমান ভাগ

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

ভিশন খুশি একটু অভিমান

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

মনের মাঝে অনেকখানি টান

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

মনের আকাশের উড়ে যাওয়া পাখি

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

প্রভাত দেখা মেলে দুটি আঁখি

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

হৃদয় সাগরে উচ্ছলে পড়া ঢেউ

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

মনের মত খুঁজে পাওয়া কেউ

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

দূর থেকে আরও কাছাকাছি

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,???

সারাদিন খোঁজ নেয়া আমি কেমন আছি

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,???

সুখের মাঝে চোখের কোণে জল

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,বউ মানে,,,,,,,,,,,,,,,,,,???

মনে পড়লেই হঠাৎ করেই কল


               (কবিতার লেখিকা-গল্পবুড়ি তিলোত্তমা/ জেনিন ফেরদৌসী মিষ্টি)


আমার কবিতা শুনে তো হুমায়রা হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যাবে মনে হচ্ছে!

হুমায়রা - সতি,এই ধরনের ও কবিতা হয় তা কাখনো ভাবিও নাই! সত্যি সুন্দর!!

আমি - হুমায়রা একটা কথা বলি রাগ করবেনা না তো??

হুমায়রা - আমার কাছে এতো অনুমতি নেয়ার কি আছে! আমি পুরোপুরি আপনারি!

আমি - আপনার গাল দুটো একটু ধরি? আপনার গাল দুটো অনেক কিউট ( চোখ বন্ধ করেই বলে ফেললাম)


হুমায়রার ছোট হাঁসি শুনে চোখ খুললাম!!


হুমায়রা - আপনি অনেক বোকা! অবশ্য আমার জন্য ভালো! বোকা হাজবেন্ড গুলো বউ কে অনেক ভালোবাসে!! আমি আপনার স্ত্রী আমি পুরোটাই আপনার, আপনার যা খুশি তাই করতে পারেন!!

আমি - জি আমি সত্যি অনেক বোকা.( গাল দুটো ধরে)

হুমায়রা - উঃ উঃ

আমি- কি হলো!

হুমায়রা - আরে এতো শক্ত করে কেউ গাল ধরে??

আমি - ও সরি ! আসলে তোমার গাল দুটো অনেক নরম,লেগেছে অনেক??

হুমায়রা - আরে না!!!


 আজকের সারাদিন আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় একটা দিন হয়ে থাকলো!! হুমায়রার সঙ্গে গল্প করা, দুষ্টুমি করা, ফুচকা খাওয়া, আইচ ক্রিম খাওয়া,সব মিলিয়ে পারফেট একটা দিন! 


সন্ধ্যায় হুমায়রা কে বাসায় নামিয়ে দিয়ে, আমি আবার ইউনিভার্সিটি যাওয়ার পথ ধরলাম!!!



এইভাবেই দুষ্টু মিষ্টি সময় কাটাতেই ২ কি মাস চলে গেল!! আজ হুমায়রা কে আমাদের বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে!!

মানে হচ্ছে আজ আমাদের অফিসিয়ালি বাসর রাত

এখন আমার রুমে প্রবেশ করার পালা!! কেমন যেন ভয় করছে!! ঘরে ঢুকে দেখি হুমায়রা খাটের উপর বসে আছে!!

আজকে হালকা সাজে হুমায়রা কে আরো মায়াবী দেখাচ্ছে!! মনে হচ্ছে এই মেয়ের প্রেমে না পড়লেই নয়!!

হালকা মেকাপ, চোখে টানা টানা কাজল,কিছু চুল সামনের দিকে

হালকা মেরুন শাড়ি পড়েছে, আমার গিফট করা পায়েল এবং ডাইমন্ড রিং!!

দেখেই আমার তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা!!

 আমি গিয়ে হুমায়রার পাশে বসলাম! আমার মাঝে অদ্ভুত এক নেশা কজ করছে,তা অসম্ভব কেউ সম্ভব করতে পারে! আমি হুমাইরার খুব বেশি কাছে চলে গেলাম!! দু'জন দু'জনের নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারতেছি!

হুমায়রা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো!

বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে!

মনে হচ্ছে আজ এই বৃষ্টির পানির মতো জমিন আর আসমান যেমন মিশে যায়!আজ আমরা দুজন দুজনের মাঝে এভাবেই মিশে যাবো!

কিন্তু ভালোলাগার মাঝে ভয়ও কাজ করছে!

 একটা সময় আমাদের মাঝে আর কোন বাধা থাকলো না! সব বাঁধা উপেক্ষা করে দুটি মানুষ এক হয়ে গেলাম!!

আজ পরিপূর্ণ হলো আমাদের হঠাৎ বিয়ের দাম্পত্য জীবনের পবিত্র ভালবাসা!!!


     🌹💐🏵️🪷🌸💮🌷🌺🥀🌻🌼

                সমাপ্ত 


( বি:দ্র: - অনুমতি না নিয়ে কপি করা নিষেধ। অনেকেই আমার গল্প নিজের নামে পোস্ট করেন , ইসলামে এইটা সম্পূর্ন হারাম, ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। )




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance