গোলাপদিন
গোলাপদিন
ওরা দুজনেই রোজ বসে ফুটপাথে। একজন মুখোশ বিক্রী করে,রঙ-বেরঙের। অন্যজন ফুল, গোলাপ-রজনীগন্ধা। অফিস ফেরৎ বাবুরা, ঘরোয়া মানুষজন, এমনকি কলেজের হাল ফ্যাশনের তরুন-তরুনীরাও মাঝেমধ্যে আসে ওদের কাছে। নেড়েচেড়ে দেখে, দুটো-একটা কথা বলে, কেনেও কিছুকিছু। আজ রজনীর কাছে গোলাপের চাহিদা ভীষন। কথায় কথায় জানতে পারে, আজ নাকি ভালোবাসার মানুষকে গোলাপ দিতে হয় ! সে যাই হোক, সব গোলাপ বিক্রী হয়ে যাবে ভেবে খুশী হয় সে। তবে দেবুর কাছে আজ খদ্দের নেই বললেই চলে, একবার আড়চোখে দেখে নেয় রজনী। বড় মিষ্টি ছেলে দেবু, কখনো রজনীর ভরা যৌবনের দিকে গিলে খাওয়া চোখে তাকায়নি সে। হঠাৎ কি মনে হলো রজনীর, সে আলগোছে একটা গোলাপ সরিয়ে রাখে, ভাবে বাড়ী ফেরার সময় এটাই সে দেবে দেবুকে আর বলবে, তুই কি ভালো ! জিনিষপত্র গোছাতে গোছাতে একটু অন্যমনস্ক হয়েছিল রজনী, হঠাৎ দেখে তার সরিয়ে রাখা গোলাপটা কখন তুলে নিয়ে ফুটপাথের অন্য দিকে যাচ্ছে দেবু। মনটা ভেঙে যায় তার, দেবুর তাহলে গোলাপ দেবার জন্য অন্য কেউ আছে !
রজনী দেখে ফুটপাথের উল্টোদিকে রোজকার মত হাঁটতে বেরিয়েছে সেই বুড়োবুড়ী, হাতে হাত ধরে আস্তে আস্তে....অবাক চোখে সে দেখে দেবু ঐ গোলাপটা ওদের হাতে তুলে দিচ্ছে..। পড়ন্ত বিকেলের গোধূলি আলোয় একবিন্দু মুক্তোর মত আনন্দাশ্রু ঝরে পড়ে রজনীর মায়াবী চোখ থেকে। সে ভাবে, দেবুর মনের মধ্যেই তো একটা মস্ত গোলাপ বাগান।