গাড়োয়ালের আলিগলি প্রথম পর্ব
গাড়োয়ালের আলিগলি প্রথম পর্ব


হরিদ্বার
গাড়োয়াল শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে উঁচু উঁচু বরফাবৃত গাড়োয়াল হিমালয়ের শৃঙ্গ সঙ্গে নীচে দিয়ে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী গঙ্গার বা যমুনার উপনদীগুলি। স্বপ্নের কাছাকাছি এই অঞ্চলে যাওয়ার জন্য আমাদের পরিকল্পনা প্রায় ১ বছরের। আমাদের ১৯ জনের দল ১৮ সালের অষ্টমীর দিন ১৭ই অক্টোবর হরিদ্বারে মিলিত হব। হরিদ্বার গাড়োয়ালের প্রবেশদ্বার বলা যায়। এখান থেকে শুরু করা যায় গাড়োয়াল হিমালয় ভ্রমন। সেই মত বিমানে দমদম থেকে দিল্লী, সেখানে রাতে পৌঁছে পরের দিন ভোরে দেরাদুন শতাব্দী ট্রেনে সাড়েএগারটা নাগাদ হরিদ্বারে পৌঁছলাম। হরির দ্বার মানেই সেখানে ধর্মীয় ভাব থাকবেই। হর কি পউরি ঘাট এর প্রানকেন্দ্র। আমাদের হোটেলের নামও হোটেল হরকিপউরি। একদম ঘাটের পাশে। এছারা আরও অনেক হোটেল ঘাটের আশেপাশে আছে, যেমন "গঙ্গা বেসিন"। শহর এবং হোটেল পরিষ্কার নয় খুব একটা। এখানে সেখানে নোংরা। গঙ্গা লাগোয়া হোটেলগুলির দাম খুব চড়া। স্টেশন থেকে পৌছতে অটো বা টোটো ভরসা। নো এন্ট্রি ভয় দেখিয়ে প্রথমেই অনেক দাম চাইবে, দামাদামিতে কমবে। নিরমিষ খাবার। তবে হৃষীকেশের দিকে রাস্থায় কিছু আমিষ পাওয়া যায়। খাবারের মান খারাপ নয়, দাম বেশী, বেশীরভাগ খাবারের হোটেল পরিষ্কার নয় তবে আমাদের হোটেল পরিষ্কার। জনপ্রতি ১০০-১২০ টাকা লাগবেই এক এক বেলা খেতে। আমরা পৌঁছে একটু বিশ্রাম নিয়েই বেড়িয়ে পরলাম ঘাট দেখতে। ঘাটে পৌছনোর জন্য ব্রিজ আছে, ব্রিজ থেকে দূরে ঘড়িঘর দেখা যায়। ঘাটে পৌঁছে একটু মাথায় গঙ্গা জল দিলাম। গঙ্গা এখানে স্রোতস্বিনী, কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে চ্যানেল দিয়ে দ্রুত বয়ে চলেছে। দূরে মহাদেবের সুউচ্চ মন্দির। এখানেই বিকেলে আরতি ও পুজাপাঠ হবে। ইচ
্ছা হোল "কঙ্খল" যাওয়ার। ২৫০ টাকা অটো ভাড়া শহরের দক্ষিণে অবস্থিত অঞ্চল। এখানে দক্ষেশ্বর মহাদেব মন্দির, সতী কুণ্ড, মা মনসা মন্দির, আনন্দময়ী মায়ের মন্দির। দক্ষেশ্বর আমাদের প্রথম গন্তব্য। এই মন্দিরের পাশদিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গা। এখানে পুজাপাঠের পর বলা হয় স্ত্রী স্বামীর পা ধুয়ে পুণ্য অর্জন করতে। দক্ষযজ্ঞ ঘটনার উল্লেখে নিবেদিত এই মন্দির। পাশেই সতিকুন্ড (বলা হয় এখানেই সতীমা জীবন ত্যাগ করেন) ও মামনসা মন্দির। সেখান থেকে একটু এগিয়ে মাআনন্দময়ী আশ্রম। বাঙালি অধ্যুষিত এই আশ্রমে ঢুকলে মন শান্তিতে ভোরে যায়।
কঙ্খল থেকে ফিরে আবার গঙ্গার ধারে। খানিক সিগাল জাতীয় পাখির আনাগোনা দেখেই আসন গ্রহন করতে হল হর কি পৌরি ঘাটের ঠিক উল্টো দিকে। ভালো ভিড় এর মধ্যেই। পূজার সময় গোনা শুরু। উল্টোদিকের ঘাটের সিঁড়িতে বসেপরে প্রথমে গঙ্গাপূজা দেখতে লাগলাম। সাড়ে পাঁচটা থেকে আধঘণ্টা মত পুজাপাঠ হওয়ার পর শুরু আরতি। এর মধ্যে অনেকেই নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন পাতার ভেলায় প্রদীপ। এক স্বর্গীয় অনুভুতি। ১৫ মিনিট ধরে কম করে ১০ জন পুরোহিত গঙ্গামাকে আরতি করলেন। সঙ্গে ঘণ্টা ও স্ত্রোতর শব্দ পরিবেশকে ভাবগম্ভির করে তুলল। লোহার শিকল ঝোলানো আছে, সেগুলো ধরে স্নান করা যায়। কিন্তু আরতি দেখায় প্রধান বাঁধা এগুলি। তবে প্রায় ১৫-২০ মিনিট চলা এই ধর্মীয় আচার মনকে শান্ত ও গম্ভির করবেই। "জয় গঙ্গা মাইয়া" ধ্বনিতে শেষ হওয়ার পর আর বিশেষ কিছু করার ছিল না হোটেলে ফিরে পরের দিনের প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া। দুঃখ একটাই, এই ভ্রমণসূচিতে আমরা হৃষীকেশ রাখিনি, তাই রামঝুলা লক্ষণঝুলা অন্য সময়। তবে হরিদ্বারে বা দেরাদুনে দুইদিন থাকলে হৃষীকেশ দেখে আস সম্ভব।