Average Guy

Drama Romance Fantasy

2.6  

Average Guy

Drama Romance Fantasy

ছোটো মালকিন 2

ছোটো মালকিন 2

10 mins
383



ঘরটা বেশ বড়। আমাকে পূজা ওর নিজের ঘরে নিয়ে এসেছে, দোতলায়। খোলা মেলা, আলো বাতাস যুক্ত ঘর। ছিমছাম করে সাজানো। কোনো কিছুতেই বাড়াবাড়ি নেই। প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই আছে ঘরে। পুরনো দিনের কাজকরা পালঙ্ক (খাট); গদিওয়ালা সোফা সেট; বড় ফ্ল্যাট স্ক্রীন টিভি। তাছাড়া একটি ছোট ফ্রিজ আছে ঘরে। একটা সুন্দর অফিস টেবিলে একটা ল্যাপটপ রাখা। আর আছে আধুনিক মিউজিক সিস্টেম আর জোরালো দুটো স্পিকার । আমার যেটা দৃষ্টি আকর্ষণ করলো সেটা হচ্ছে একটা বড় বইয়ের আলমারি। তাতে নানান ধরনের বই। তার মানে পূজা এইসব বই পড়ে। আমার ওর সমন্ধে ধারণাটা আরো ভালো হয়ে গেলো। ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করে যদি এইসব বই ও পড়ে, তাহলে জ্ঞান আছে বলতে হবে। আমি বইয়ের আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে বই দেখছি, আর কোন বইটা পড়তে নেবো তাই ভাবছি । 


এদিকে পূজা আমাকে সমানে ডেকে যাচ্ছে, "সুমিত এদিকে একবার এসো, এটা দেখে যাও।" আমি পেছনে না দেখে, "আসছি, আসছি" বলছি।


পূজা এসে আমায় হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ঘরের অন্য প্রান্তে। আমি বললাম, "আমি কিন্তু কয়েকটা বই ধার নেবো পড়ার জন্যে।"


পূজা বললো, "আচ্ছা বাবা নিও, যত খুশি বই নিও। এখন এটা দেখো।"


আমি দেখলাম একটা বড় দেওয়ালে উঁচুতে ওপর লম্বা একটা কাঠের তাক। তাতে পরপর সাজানো আছে অনেক গানের সিডি। আমার দিকে মাথা নিচু করে ও বললো, "বলো কি শুনবে ?"


আমি বললাম, "আরে তোমার তাকটা বানিয়েছো তোমার চোখের ৬ ফুট লেভেলে। আমার চোখে চশমা দেখছো না, আমি অত ছোট লেখা পড়তে পারছি না আমার চোখের ৫ ফুট লেভেল থেকে।" 


আমি এদিক ওদিক দেখতে থাকলাম, বললাম, "কোনো প্লাস্টিক স্টুল টুল নেই তোমার ঘরে ?"


পূজা হেঁসে উঠলো, "তুমি স্টুল খুঁজছো? দাঁড়াও আমি তোমায় সাহায্য করছি ।"


ও আমার সামনে মাথা নিচু করে ঝুঁকে গেলো। ওর লম্বা বাঁ হাতটা দিয়ে আমার থাই দুটোকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর সোজা দাঁড়িয়ে উঠলো। ওর সঙ্গে সঙ্গে আমি আকাশে উঠে গেলাম ওর হাতের ওপর বসে। হটাত করে আমি ওপরে উঠে যাওয়ায়, আমি ঘাবড়ে গিয়ে দু হাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরেছি। পূজা হো হো করে হেঁসে উঠল। বললো, "আরে ঘাবড়ে যেও না। আমার হাত থেকে তোমায় পড়তে দেবো না। তুমি ভীষন ছোটো, খুব হালকা, আমি তোমায় আমার কোলে সারাদিন তুলে রাখতে পারি।"


আমি বললাম, "কি করছো পূজা? নামিয়ে দাও আমায় ।"


ও বললো, "কেনো ? লজ্জা করছে একটা মেয়ের কোলে চড়তে?"


আমি বললাম, "লজ্জা তো করারই কথা l সাতাশ বছরের একজন জোয়ান পুরুষ মানুষকে, তুমি ২১ বছরের একটা বাচ্ছা মেয়ে, আমাকেই বাচ্ছা ছেলের মতন কোলে তুলে নিয়েছো।…"


আমি কথা শেষ করার আগেই পূজা আমায় ওর কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো। আমি ভাবলাম, আবার আমি ওর মনে দুঃখ দিয়ে বসলাম। এত কাণ্ড করে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করলাম, আবার সব কেঁচিয়ে না যায়। 


আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ওর ঐ প্রকাণ্ড লম্বা দেহটাকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার মুখ পৌঁছলো ওর বুক অবধিই।আমার এই আকস্মিক আচরণে ও একটু আশ্চর্যই হয়ে গেলো। মাথা অনেকটা নিচু করে আমায় দেখলো।


আমি বললাম, "তুমি আমার পুরো কথাটা না শুনেই আমাকে নামিয়ে দিলে কোল থেকে ? আমি বলছিলাম লজ্জা করছে একটা বাচ্ছা মেয়ের কোলে চড়তে। খারাপ লাগছে বলেছি কি ? তোমার ওই শক্তিময়ী হাতের বেষ্টনীতে তোমার ওই নরম, প্রশস্ত বুকের ওপর বন্দী হয়ে আমি সারা দিন কাটিয়ে দিতে পারবো।"


পূজা ভীষণ খুশি হয়ে নিচু হয়ে আমাকে এবার দুহাতে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নিলো। ওর বলিষ্ঠ হাত দুটো আমায় পেছন থেকে তুলে ধরে রেখেছে। আমার হাত দুটো স্বাভাবিক ভাবেই ওর কাঁধের ওপর দিয়ে গিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরেছি। আমার থাই দুটোর তলায় ওর হাত দিয়ে ধরায়, আমার পা দুটো দিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরেছি। আমার মুখটা এখন ওর মুখের একদম সামনে। 


পূজা এখন হাসছে। আমায় আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে বললো, "আমার এই নরম বুকের ওপর যদি  বন্দী করে আর যদি না ছাড়ি, তাহলে কি করবে ?"


আমি বললাম, "তাহলে তোমার বাবার কাছে ছুটির অ্যাপ্লিকেশন পাঠাবো ফোন থেকে ইমেইল করে।" 


পূজা আবার হাঁসলো, "আচ্ছা, তুমি তখন কি বললে ? আমি বাচ্ছা মেয়ে হয়ে তোমার মতন একজন জোয়ান পুরুষকে কোলে তুলে নিয়েছি ? আমায় বাচ্ছা মেয়ে মনে হয় তোমার ?"


আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওর দুহাতের ভেতরে ওর কোলের ভেতরে বন্দী। বললাম, "আমার ২৭ আর তোমার ২১, আমার কাছে তুমি বাচ্ছাই।"


পূজা বললো, "আচ্ছা চলো, তোমায় দেখাই কে বাচ্ছা ?" বলে হাঁসতে হাঁসতে আমায় কোলে করে নিয়ে গেলো বড় একটা আয়নার সামনে, আলমারির একটা পাল্লা জোড়া। সেখানে আমায় কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আসতে আসতে আমায় ওর কোলে দোলাতে লাগলো।  আয়নার ভেতর দিয়ে আমার দিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে বলল, "এবার বলো আমার জেনারেল ম্যানেজার সাহেব, কে বাচ্ছা ? আর তুমি কার কোলে ?"


আমি পূজার গলা জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রেখে বললাম, "আমি তো সেই কথাই বললাম, যে তুমি একটা বাচ্ছা মেয়ে হয়ে আমার মতন জোয়ান লোককে একটা বাচ্ছা ছেলের মতন কোলে তুলে নিয়েছো।"


পূজা হটাৎ গম্ভীর হয়ে গেলো । ও আমাকে কোলে নিয়ে চলতে শুরু  করলো। আমার মাথা তখনও ওর কাঁধে ওপর রাখা। বললো, "সুমিত, আমি মনে হচ্ছে তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। আমাদের আর বেশীদুর এগোনো উচিত নয়। তুমি আমার সব সত্যি জানো না। তা জানলে তুমি আমার সঙ্গে ভাব করতে না।"


আমি আবার সোজা হয়ে, ওর কোলে, ওর হাতের ওপর বসলাম। ওর মুখ ভীষন গম্ভীর, চোখে জল। ও আমার চোখে চোখ রেখে বলে চললো, "আমি তোমার বস মিস্টার আগরওয়ালের মেয়ে নই। ওনারা আমাকে দত্তক নিয়েছেন আমার ছোটবেলায়। আমার নিজের বাবা মার পরিচয় আমি জানি না। আমি অনাথ।"


আমি ওর কোলে চড়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে মিটি মিটি হাঁসছি। ও একটু রাগ রাগ করে বললো, "তুমি এতে হাঁসির কি পেলে ?"


আমি আরো একটু হেঁসে বললাম, "আমি সব জানি মিস পূজা আগরওয়াল । তোমার বাবা আমায় তোমার সমন্ধে সব বলেছেন।"


পূজা অবাক, "তুমি জানতে যে আমাকে ওনারা adopt করেছেন ? তুমি জানতে যে আমার এইরকম বিশাল লম্বা আর বেঢপ মোটা চেহারা ? সব জেনেশুনে তুমি আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে ? কেনো ?"


আমি বললাম, "দুটো কারণ। প্রথম হচ্ছে, আমি তোমার বাবাকে খুব শ্রদ্ধা করি। সেদিন মুম্বাইতে তোমার গল্প বলতে বলতে উনি আমার কাছে কেঁদেছেন। তোমাকে তিন মাস বয়সে যখন নিয়ে এসেছেন, তখন ওদের দুজনকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে ওনাদের গুরুজনদের সাথে। তোমাকে বুক ভরে ভালোবেসে নিজের মেয়ে হিসেবেই বড় করেছেন। আর সেই তুমি, ওনাদের বাবা - মা বলা বন্ধ করে দিয়েছ দু বছর হলো। সেই থেকে ওরা দুজন মরমে মরে আছেন । আমি তোমার বাবার দুঃখ দেখতে পারিনি। ওনাকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি একবার চেষ্টা করে দেখবো, তোমাকে ফেরাতে পারি কিনা। তোমার সঙ্গে নতুন বন্ধুত্ব হয়েছে, সেটা মিথ্যের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত নয়। তোমায় আমি সত্যি কথাটা বলতামই । আমি জেনেশুনে প্ল্যান করে এসেছি তোমার সঙ্গে আলাপ করতে। আমিই তোমার বাবা মাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছিলাম, যাতে তুমি আমায় দরজা খুলে দিতে আসো। আর আমি তোমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই।"


পূজা আমার কথা মন দিয়ে শুনছিল । মুখ এখন আর গম্ভীর নয়। স্বাভাবিক হয়েছে। আমায় কিন্তু কোল থেকে নামিয়ে দেয়নি । আমাকে ওর বুকের ওপর শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে রেখেছে । বললো, "তুমি কে গো ? তুমি একেবারেই একজন বাইরের লোক হয়ে, শুধু আমার বাবার প্রতি শ্রদ্ধায়, এক হতভাগ্য পিতার সঙ্গে তার অকৃতজ্ঞ কন্যার মিলন ঘটানোর অসম্ভব এক দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছো।"


এ কথার কি কোনো উত্তর হয় ? আমি চুপ করে রইলাম আর মুচকি হাঁসলাম ।


পূজা এবার বলল, "আর দ্বিতীয় কারণ ?"


আমি বললাম, "দ্বিতীয় কারণ - আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা । আমি তার দেখা পেয়ে গেলাম। আমার কোনো কিচ্ছু এসে যায় না তুমি কোথা থেকে এসেছো, তোমার বাবা, মা, পরিবার কে বা কারা । তুমি এখন যেমন, আমি সেই তোমাকেই পছন্দ করি। আমি তোমার ওই বিশাল লম্বা চেহারার আকর্ষণেই তো তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার আরো বেশি উৎসাহ পেয়েছি। আর তোমার চেহারা মোটেই বেঢপ মোটা নয়। সুন্দর সুঠাম স্বাস্থ্য, তোমার অসীম শক্তি অনেকের কাছেই যেটা ঈর্ষণীয়। তুমি আমায় কোলে তুলে অবলীলায় ঘুরে বেড়াচ্ছ, আমাকে তোমার বুকের মধ্যে এত অসহায় ভাবে বন্দী করে রেখেছো। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি তোমার হাতের মধ্যে কতটা safe, কত secured, কতখানি protected।"


পূজার মুখ হাঁসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।  বললো, "তুমি জানো, আজ মনে হচ্ছে যে ভগবান আছেন। যেদিন আমার সেই অভিশপ্ত জন্মদিনে আমি প্রথম জেনেছিলাম যে আমি যাদের বাবা মা জেনে এসেছি, মেনে এসেছি, তারা আমার কেউ নয়, সেদিন থেকে আমার ভগবানের ওপর আর বিশ্বাস ছিলো না। আজ বুঝতে পারছি, সেদিন যদি ওই ঘটনাটা না ঘটতো, তাহলে তোমাকে আমি আমার জীবনে পেতাম না। চলো বাবা মা কে গিয়ে দেখিয়ে আসি, বাবা যাকে পাঠিয়েছিল আমাকে উদ্ধার করতে, তাকেই আমি আমার কোলে বন্দী করে ফেলেছি । " 


পূজা আমায় কোলে নিয়েই চলতে আরম্ভ করলো দরজার দিকে ওর বাবা মায়ের কাছে নিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে। আমি বলে উঠলাম, "কি করছো? সত্যি সত্যিই কি আমাকে কোলে করেই নিয়ে যাবে নাকি ওনাদের সামনে ?"


পূজা একগাল হেঁসে বললো, "কেনো ? তুমি তো এখন আমার। আর ওনারা খুশিই হবেন তোমাকে আমার কোলে দেখে । আমার বাবা মা তো, আমি যতই ওদের ওপর অভিমান করে থাকি না কেনো, আমি ওনাদের খুব ভালো ভাবেই চিনি।"


আমি বললাম, "ঠিক আছে, আমাকে নিয়ে যেও, কিন্তু পরে। আগে একটু বাবা মা কে জড়িয়ে ধরে আদর করে এসো।"


পূজা তখনও নাছোড়বান্দা, "হ্যাঁ, আমি তো যাচ্ছিই ওনাদের কাছে। কিন্তূ তুমিও চলো। তোমার জন্যেই তো আমার মাথাটা ঠিক হলো।"


আমি হাঁসতে হাঁসতে বললাম, "আরে পাগলী মেয়ে, আগে আমায় তোমার কোল থেকে নামাও, তারপর চলো।"


পূজা ও হাঁসছে, "উফফ বাবাঃ, বড্ড এঁড়ে তুমি। কোল থেকে নামাও, কোল থেকে নামাও….", বলে কপট রাগ দেখিয়ে আমায় ওর কোল থেকে নামিয়ে দিলো। তারপর আমার হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে নেবে গেলো। 


আমাকে নিয়ে সোজা ওর বাবা মায়ের ঘরের দরজায়। মিস্টার আগরওয়াল দেখছি বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। আর ম্যাডাম খাটের ওপরেই বসে আছেন। আমাদের দেখে দুজনেই উঠে দাঁড়িয়েছেন। ওনাদের মুখে সংশয়। পূজা আমাকে ছেড়ে এগিয়ে গেলো। ওর বাবা মা দুজনকেই একসঙ্গে এক আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরলো। তিন জনের এক সঙ্গে মুখে হাঁসি, চোখে জল।


পূজা এবার আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে গেলো। ওর বাবা মায়ের সামনে দাঁড় করিয়ে বললো, "বাবা, মা, আমাকে সুমিত সব সত্যি কথা বলে দিয়েছে। যে ও কোনো অফিসের কাজে আজ আসেনি। ও প্ল্যান করে তোমাদের বাড়ি থেকে বাইরে পাঠিয়ে শুধু আমার সঙ্গে বন্ধু করতে এসেছে। বাবা মা, তোমরা আমাকে এত বছর ধরে, অনেক মূল্যবান আর আমার অনেক প্রিয় উপহার দিয়ে এসেছো। কিন্তূ আজ আমাকে এই যে বন্ধু উপহার দিলে, সেটা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।"


মিস্টার আগরওয়াল এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন । বললেন , "বাবা, আজ তুমি আমাদের জন্যে যা করলে, তার ঋণ আমরা জীবনে শোধ করতে পারবো না।"


আমি লজ্জিত ভাবে বললাম, "কি বলছেন স্যার। আমিও তো কত ভালো এক বন্ধু পেলাম। এ তো আমারই লাভ।"


ম্যাডাম এসে আমায় হাত ধরে ওনাদের বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসালেন, খাটের একটা কোণায়। আমার পিঠের পেছনে বালিশ দিয়ে দিলেন। তারপর দেখলাম, স্যার, ম্যাডাম আর পূজা, গিয়ে খাটের বাকি তিনটে কোণায় বসে গেলো। সবাই নিজদের পিঠের পেছনে গদির মতন করে বালিশ নিয়ে নিলো। স্যার আমাকে বললেন, "এটা কি করলো বলো তো তোমার ম্যাডাম ? এই যে খাটের তিন কোণায় আমরা তিনজন বসলাম, এটা হচ্ছে আমাদের নিজস্ব আড্ডার আসর। এখন থেকে তুমি এই চতুর্থ কোনটায় বসবে। মানে এখন থেকে তুমি আমাদের পরিবারের চতুর্থ সদস্য।"


ওনাদের তিন জনের মুখে এক গাল হাঁসি। আমি পূজার মুখের দিকে চেয়ে দেখি, ওর মুখে এক অসাধারণ প্রশান্তির হাঁসি। আমি সত্যি ওনাদের এই রকম ভাবে আমাকে গ্রহণ করাতে অভিভূত। আমি সেটা বলেই ফেললাম, "আপনারা আমাকে এভাবে আপন করে নিচ্ছেন, আমি তো কল্পনাই করতে পারছি না।"


ম্যাডাম বললেন, "শোনো, এখন থেকে তুমি আর আমাদের স্যার, ম্যাডাম বলবে না। আংকেল, আণ্টি বলবে। আর তোমার চেয়ে আপন আর আমাদের কে আছে ? তুমি আমাদের ভাঙ্গা হৃদয় আবার জুড়ে দিয়েছো।"


আমাদের কথার মাঝখানেই ম্যাডাম সরি আন্টি'র কাজের মেয়ে, চা, গরম গরম পানির আর ভেজিটেবল পাকোড়া দিয়ে গেলো। আণ্টি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার কলকাতার বাড়ির কথা, আমার বাবা, মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। আমি লক্ষ্য করলাম পূজা কোনো প্রশ্নই করলো না। শুধু একমনে আমার মুখের দিকে অদ্ভুত এক মায়াভরা চাহুনি দিয়ে আমার কথা শুনতে থাকলো।


আজ কেমন মনে হচ্ছে এই লম্বা চওড়া মেয়েটা যেনো আমার অনেক দিনের চেনা, অনেক আপন জন। আমাদের দুজনকে পাশাপাশি হয়তো খুবই বেমানান লাগে দেখতে। ওর মাথার সমান হতে গেলে আমাকে ওর কোলে চড়তে হয়। কিন্তু আমাদের মন দুটো এরই মধ্যে খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। 








Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama