Kaustav Roy Chowdhury

Romance Inspirational

3  

Kaustav Roy Chowdhury

Romance Inspirational

বর্তমান সময়ে রবীন্দ্রনাথ

বর্তমান সময়ে রবীন্দ্রনাথ

8 mins
204


বেশ ক্লান্ত হয়ে নিজের বিছানার ওপর শুয়ে পড়ে অঙ্কিত। লকডাউনের জন্য কালকের ২৫শে বৈশাখের উৎসব নাকি পালন করা যাবেনা। এ আবার কি কথা? মনে মনে বেশ কষ্ট পায় অঙ্কিত। এই দিনটা নিয়ে কত আশা তার। কত ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছে বাড়িতে এই দিন সারা পাড়ার লোক জড়ো হয়। কত ছোট ছোট ছেলেমেয়ে সব এসে নাচ, গান, আবৃত্তি করে। ছবি আঁকার প্রতিযোগিতাও আয়োজন করা হয়। শেষে মিষ্টির প্যাকেট দেওয়া হয়। কত হইহুল্লোড়, কত মজা। একদিনের জন্য সবাই সব ব্যস্ততা ভুলে একত্র হয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। 


আর আজ যখন সারাদেশে এরকম একটা পরিস্থিতি, সবার মনে একটা আতঙ্ক তখন নাকি এই দিনটা পালন করা যাবেনা। কি অদ্ভুত ব্যাপার? মনে মনে ভীষণ রাগ হয় অঙ্কিতের। ধুর, কিছুই ভালো লাগছেনা তার। কিছুক্ষণের জন্য হলেও তো আয়োজন করা যেতে পারত নাকি। সমস্ত দূরত্ব আর পরিছন্নতার নির্দেশ মেনেও তো অনুষ্ঠান হতে পারত। কিছুক্ষণ একজায়গায় হলে এমন কি ক্ষতি হত? না, কিছুতেই তার মনের রাগ কমছে না। অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে সে তার বাবাকে কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কিছুতেই অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি তার বাবা।


বেশ ক্লান্ত ও রাগান্বিত মনে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে অঙ্কিত। নিবিড় ঘুমে স্বপ্নের মধ্যে সে দেখতে পায় কবিগুরু পাশে এসে বসে আছেন। ওনার মুখভার। ঘুমের মধ্যেই লাফিয়ে উঠে বসে সে। বোধহয় এবার রবীন্দ্রজয়ন্তী ঠিকমত পালন করা হবেনা। এতেই কবিগুরুর মুখে এক কষ্টের ছাপ। বাবার সম্বন্ধে অভিযোগ জানায় সে কবিগুরুর কাছে। না, কিছুতেই অনুমতি আদায় করতে পারেনি সে জন্মদিন পালন করার জন্য। একপ্রস্থ রাগ বেশ গরগর করে উগড়ে দেয় সে। 


উত্তরে কবিগুরু বলেন – “এতে এত রাগ করার কি আছে? গৃহবন্দী দশাতে থেকেও তো আমাকে স্মরণ করতে পারো।”


“ও তাহলে এই জন্য তুমি রাগ করনি? তাহলে তোমার মুখভার কেন শুনি?” – কৌতূহলী ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করে অঙ্কিত। 


কবিগুরু বলতে শুরু করেন – “আচ্ছা ধরো তোমার জন্মদিন, আর তোমার বাবা বেশ করে আয়োজন করল। খাবার দাবার কিনে আনল দামি রেস্তোরাঁ থেকে, রঙিন কেক আনল। সেই জন্য সবাই এক জায়গায় হল। সবাই কেক কাটল, তোমাকে গিফট দিল। তারপর খাওয়া দাওয়া করে যে যার বাড়ি চলে গেলো। তারপর আর সারাবছর তোমার দিকে কেউ ফিরেও তাকালো না। সেটা তোমার ভাল লাগবে? নাকি একজন এসে প্রতিদিন তোমার সাথে গল্প করল, সুখ-দুঃখের সব অনুভুতি তোমার সাথে ভাগ করে নিল সেটা বেশি আনন্দের হবে? নিশ্চয়ই দ্বিতীয়টা চাইবে তুমি। সেরকম আমিও তাই চাই। “বাহিরের চেয়ে অন্তরের অনুষ্ঠানটাই গুরুতর। শিশুকালে মানুষের সর্বপ্রথম শিক্ষাটাই এই।” সবাই আমার গান গেয়ে, কবিতা বলে চলে যায়। তারপর আমাকে বেমালুম ভুলে যায়। শুধু একদিনের জন্যই তোমাদের যত আড়ম্বর, বাকিদিন রবীন্দ্রপ্রীতির তো আর দেখতে পাই না।” 


কথাগুলো বেশ মনে লাগে অঙ্কিতের। কবিগুরুর মনে যেন বাঙালির প্রতি এক অভিমানের মেঘ জমে আছে। সত্যিই তো, যে বাঙালির জন্য তিনি এত কিছু করলেন, যার আদর্শ আর সংস্কৃতিকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরলেন সে কিনা কেবল একদিনের জন্যই তাকে স্মরণ করে। প্রথম বাঙালি হিসাবে নোবেল জয় করে সমগ্র বিশ্বের সামনে বাঙালির মান মর্যাদা বৃদ্ধি করলেন কিন্তু সেই নোবেলটাও তো বাঙালি ঠিক করে আগলে রাখতে পারলো না। আর সম্প্রতি রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটিতে দোলযাত্রায় যে অপসংস্কৃতির পরিচয় দিল বাঙালি তাতে রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক।


“তাহলে তুমি কি চাও?” – অঙ্কিতের সোজাসাপ্টা প্রশ্ন ধেয়ে আসে কবিগুরুর পানে। 


কবিগুরু বলতে থাকেন – “আমি চাই বাঙালি নিজের সাহিত্য, সংস্কৃতি আর আদর্শকে ধরে রাখুক, তাকে বিকশিত করুক। একদিনের জন্য এত আড়ম্বর না করে আমার সৃষ্টিকে আগে বয়ে নিয়ে যাক। নিজেদের প্রতিভা বিকাশ করুক। তা না করে বাঙালি আজ কেবল অন্যের পদলেহন করছে। আজকাল তো বাঙালি বাংলা বলতেও লজ্জা পায়। আর একসময় এই বাংলা ছিল ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান। নিজের সুপ্রাচীন গৌরব আর আদর্শকে বাঙালি আজ ভুলতে বসেছে। অবশ্য মাতৃভাষা কে দূরে ঠেলে দিয়ে যারা ইংলিশ মিডিয়ামের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছে তাদের কাছ থেকে আর কিই বা আশা করা যায়? বাংলা ভাষা কি এতই ঠুনকো?”


কথার মধ্যে বেশ রাগের গন্ধ পায় অঙ্কিত। তবে এই অকাট্য যুক্তিকে খণ্ডন করার কোন রাস্তাও খুঁজে পায় না। অগত্যা সে কথা ঘোরানোর চেষ্টা করে। বলতে শুরু করে – “সে তুমি যাই বল না কেন এই গৃহবন্দী দশা থেকে একদিন মুক্তি পেলে লোকের কি ভালো লাগত না? আমার বাবা তো কিছুতেই অনুমতি দিল না। কি এমন ক্ষতি হত? এমনিতেই ঘরে বসে বসে সবাই বিরক্ত হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে একদিন মুক্ত হলে তো সবার ভালোই লাগতো।"


কবিগুরু বলেন – “গৃহবন্দী দশা খারাপ কে বলল? সবকিছুরই ভাল খারাপ উভয় দিক আছে। খারাপ দিকটা বর্জন করে ভালো দিকটা গ্রহণ কর। আমাদের ছোটবেলায় তো আমরা চাকরদের শাসনে বড় হয়েছি। নিজেদের কর্তব্যকে সরল করে নেওয়ার জন্য তারা আমাদের নড়াচড়া একপ্রকার বন্ধ করিয়া দিয়েছিল। তার মধ্যেও তো আমরা দিব্য বেঁচেছিলাম বাপু। জানলা খুলে পুকুরঘাট দেখতাম, কে কেমনভাবে স্নান করে দেখে মজা লুটতাম। পুকুরধারে বটগাছটা কি করে বেড়ে উঠলো সেসব অনুসন্ধান করতাম।


“আমার বেশ মনে পড়ে, আমাদের দক্ষিণের বারান্দার এক কোণে আতার বিচি পুঁতিয়া রোজ জল দিতাম। সেই বিচি হইতে যে গাছ হইতেও পারে এ-কথা মনে করিয়া ভারি বিস্ময় এবং ঔৎসুক্য জন্মিত। গুণদাদার বাগানের ক্রীড়াশৈল হইতে পাথর চুরি করিয়া আনিয়া আমাদের পড়িবার ঘরের এক কোণে আমরা নকল পাহাড় তৈরি করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলাম— তাহারই মাঝে মাঝে ফুলগাছের চারা পুঁতিয়া সেবার আতিশয্যে তাহাদের প্রতি এত উপদ্রব করিতাম যে, নিতান্তই গাছ বলিয়া তাহারা চুপ করিয়া থাকিত এবং মরিতে বিলম্ব করিত না। এই পাহাড়টার প্রতি আমাদের কী আনন্দ এবং কী বিস্ময় ছিল, তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। 


তখনকার দিনে এই পৃথিবী বস্তুটার রস কী নিবিড় ছিল, সেই কথাই মনে পড়ে। কী মাটি, কী জল, কী গাছপালা, কী আকাশ, সমস্তই তখন কথা কহিত— মনকে কোনোমতেই উদাসীন থাকিতে দেয় নাই। পৃথিবীকে কেবলমাত্র উপরের তলাতেই দেখিতেছি, তাহার ভিতরের তলাটা দেখিতে পাইতেছি না, ইহাতে কতদিন যে মনকে ধাক্কা দিয়াছে তাহা বলিতে পারি না। কী করিলে পৃথিবীর উপরকার এই মেটে রঙের মলাটটাকে খুলিয়া ফেলা যাইতে পারে, তাহার কতই প্ল্যান ঠাওরাইয়াছি। মনে ভাবিতাম, একটার পর আর-একটা বাঁশ যদি ঠুকিয়া ঠুকিয়া পোঁতা যায়, এমনি করিয়া অনেক বাঁশ পোঁতা হইয়া গেলে পৃথিবীর খুব গভীরতম তলাটাকে হয়তো একরকম করিয়া নাগাল পাওয়া যাইতে পারে।”


আজকাল কারো মধ্যে আর প্রকৃতির প্রতি কোন ভালোবাসাই নেই। জলাজমি বুজিয়ে বড় বড় ইমারত তৈরির যেন এক অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে। বৃক্ষচ্ছেদন তো স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। প্রকৃতির ভারসাম্য ক্রমে ক্রমে বিনাশ করার যজ্ঞে নেমেছিলে সবাই মিলে। নিজেকে শক্তিশালী জ্ঞান করে প্রকৃতিকে নিজের ইচ্ছেমত চালনা করেছ। আর আজ তার ফল ভুগছ। প্রকৃতির রোষে পড়ে দেখ কেমন গৃহবন্দী হয়ে রয়েছ। নিজেকে যতই শক্তিশালী ভাবো না কেন, প্রকৃতির কাছে আজও অসহায় তোমরা।


“বাড়ির ভিতরে আমাদের যে-বাগান ছিল তাহাকে বাগান বলিলে অনেকটা বেশি বলা হয়। একটা বাতাবি লেবু, একটা কুলগাছ, একটা বিলাতি আমড়া ও একসার নারিকেলগাছ তাহার প্রধান সংগতি। মাঝখানে ছিল একটা গোলাকার বাঁধানো চাতাল। তাহার ফাটলের রেখায় রেখায় ঘাস ও নানাপ্রকার গুল্ম অনধিকার প্রবেশপূর্বক জবর-দখলের পতাকা রোপণ করিয়াছিল। বেশ মনে পড়ে, শরৎকালের ভোরবেলায় ঘুম ভাঙিলেই এই বাগানে আসিয়া উপস্থিত হইতাম। একটি শিশিরমাখা ঘাসপাতার গন্ধ ছুটিয়া আসিত, এবং স্নিগ্ধ নবীন রৌদ্রটি লইয়া আমাদের পুবদিকের প্রাচীরের উপর নারিকেলপাতার কম্পমান ঝালরগুলির তলে প্রভাত আসিয়া মুখ বাড়াইয়া দিত।


প্রকৃতি যেন হাত মুঠা করিয়া হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিত, কী আছে বলো দেখি। কোনটা থাকা যে অসম্ভব, তাহা নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারিতাম না।"


একবার ভালোবেসে দেখ প্রকৃতিকে, কতকিছু জানতে পারবে। হৃদয় দিয়ে তাকে অনুধাবন করে দেখো, তার চেয়ে বড় কোন শিক্ষক আর নেই। মুক্ত প্রকৃতির বুকে খুঁজে দেখো কত বিস্ময়ের সম্ভার লুকিয়ে আছে –

বহু দিন ধ'রে বহু ক্রোশ দূরে

বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে

দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,

দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।


দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া

একটি ধানের শিষের উপরে

একটি শিশিরবিন্দু।”


কবিগুরুর মুখ থেকে তার নিজের লেখা কবিতা শুনে অঙ্কিতের মুখে এক অপার্থিব প্রশান্তি ফুটে ওঠে।


কিন্তু সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে কবিগুরু বলতে থাকেন – “আর এই যে তুমি বাবার সম্বন্ধে এত অভিযোগের পাহাড় খাড়া করলে। কিন্তু বাবা যে এত স্নেহ আদরে মানুষ করছে সেই সুনাম তো করলে না। একদিনের মনোমালিন্যে এত বিতৃষ্ণা এসে গেল বাবার প্রতি! তোমরা পারোও বাপু। আমরা তো ছোটবেলায় এত আদর পাইনি। জমিদারির কাজে প্রায়শই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হত আমার পিতাকে। ইহাতে কোনোদিন অদৃষ্টকে দোষ দিই নাই । আসলে, আদর করা ব্যাপারটা অভিভাবকদেরই বিনোদনের জন্য, ছেলেদের পক্ষে এমন বালাই আর নাই।


“অনাদর একটা মস্ত স্বাধীনতা— সেই স্বাধীনতায় আমাদের মন মুক্ত ছিল। খাওয়ানো-পরানো সাজানো-গোজানোর দ্বারা আমাদের চিত্তকে চারি দিক হইতে একেবারে ঠাসিয়া ধরা হয় নাই।


আমাদের চেয়ে যাঁহারা বড়ো তাঁহাদের গতিবিধি, বেশভূষা, আহারবিহার, আরাম-আমোদ, আলাপ-আলোচনা, সমস্তই আমাদের কাছ হইতে বহুদূরে ছিল। তাহার আভাস পাইতাম কিন্তু নাগাল পাইতাম না। এখনকার কালে ছেলেরা গুরুজনদিগকে লঘু করিয়া লইয়াছে; কোথাও তাহাদের কোনো বাধা নাই এবং না চাহিতেই তাহারা সমস্ত পায়। আমরা এত সহজে কিছুই পাই না। কত তুচ্ছ সামগ্রীও আমাদের পক্ষে দুর্লভ ছিল; বড়ো হইলে কোনো-এক সময়ে পাওয়া যাইবে, এই আশায় তাহাদিগকে দূর ভবিষ্যতের-জিম্মায় সমর্পণ করিয়া বসিয়া ছিলাম। তাহার ফল হইয়াছিল এই যে, তখন সামান্য যাহাকিছু পাইতাম তাহার সমস্ত রসটুকু পুরা আদায় করিয়া লইতাম, তাহার খোসা হইতে আঁঠি পর্যন্ত কিছুই ফেলা যাইত না। এখনকার সম্পন্ন ঘরের ছেলেদের দেখি, তাহারা সহজেই সব জিনিস পায় বলিয়া তাহার বারো-আনাকেই আধখানা কামড় দিয়া বিসর্জন করে— তাহাদের পৃথিবীর অধিকাংশই তাহাদের কাছে অপব্যয়েই নষ্ট হয়।”  


অঙ্কিত বেশ বুঝতে পারে কবিগুরুর মনে বর্তমান বাঙালির প্রতি এক গভীর অভিমান জড়ো হয়েছে। এক অপরাধবোধ বেশ ভালোভাবে ঘিরে ধরে তাকে। কবিগুরুর চোখের দিকে তাকাতে পারে না সে। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে ভাবতে থাকে - আসলে তিনি তো শুধু কবিগুরু ছিলেন না। তিনি একাধারে ছিলেন ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকার, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। বাঙালির জন্য তিনি নিজের সমগ্র জীবন সমর্পণ করেছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই আজকে বাঙালির এই কুরুচিপূর্ণ সংস্কৃতি আর মুল্যবোধের অবক্ষয় দেখে তিনি অত্যন্ত বিরক্ত।


কিন্তু এ কি? কবিগুরুর কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়ে দেখল তিনি আর নেই। কোথায় গেলেন? অঙ্কিত বুঝতে পারে বাঙালির এই চরম অবনমন দেখে আর থাকতে চান না তিনি। তাই চলে গেলেন। মনে মনে বারবার বিড়বিড় করতে থাকে অঙ্কিত – “ক্ষমা করো, ক্ষমা করো ...... ”। এমন সময় বাবার ডাকে অঙ্কিতের ঘুম ভেঙে যায়। বালিশের পাশে দেখতে পায় কে যেন কাগজে লিখে গেছে – 


"চিরনূতনেরে দিল ডাক

পঁচিশে বৈশাখ ।"


সত্যিই এ যেন তার কাছে এক নতুন সকাল। কাল রাতের পুরনো অঙ্কিতকে ভেঙে কবিগুরু এক নতুন সত্ত্বার জন্ম দিয়েছেন যেন। আর হবে নাই বা কেন? বাঙালির নবজাগরণের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা কে অস্বীকার করতে পারে? কিন্তু এ কাগজের লেখাটাও কি তার? না, তা কি করে হবে? তিনি তো অনেক আগেই দেহত্যাগ করেছেন। স্বপ্নে দেখা দিতে পারেন কিন্তু কাগজে লিখে রেখে যাওয়া কি সম্ভব? অনেকগুলো প্রশ্ন অঙ্কিতের মাথায় ঘুরতে থাকে।


ঠিক সেইসময় অঙ্কিতের বাবা ঘরের জানলা খুলে দেয়। রবির কিরণ এসে সমগ্র ঘরকে আলোকিত করে দেয় আর পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসে-


ছোটো হয়ে গেছ আজ।

আমার টুটিল সব লাজ।

যত বড়ো হও,

তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড়ো নও।

‘আমি মৃত্যু-চেয়ে বড়ো’ এই শেষ কথা ব’লে

যাব আমি চলে।।


অঙ্কিত বুঝতে পারে – “মৃত্যুঞ্জয়ীর মৃত্যু হয় না। যুগে যুগে কালে কালে তিনি অমর। প্রতিক্ষণে ক্ষণে তিনি জন্ম নিতে চান।”



Rate this content
Log in

More bengali story from Kaustav Roy Chowdhury

Similar bengali story from Romance