বৃষ্টি পর্ব-১❤
বৃষ্টি পর্ব-১❤
স্টেশনের বেঞ্চে বসে তন্ময় হয়ে ভাবছিল সুমন। ছোটো বেলার গ্রাম, স্কুল, কলেজ, বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর বৃষ্টির কথা। অতীতের সব স্মৃতিগুলো ধীরে ধীরে আবছা হয়ে উঠেছে সুমনের কাছে।স্বপ্ন,আশা ,আকাঙ্খা সবই ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল স্কুল জীবনের সেই মেয়েটি। বছর আটেক আগে জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করেছিল বৃষ্টিকে।
সুমন সিগারেট ধরিয়ে আর অনেকখানি ধোঁয়া উড়িয়ে আবার ডুবে পড়ল অতীতের স্মৃতি ভেজা দিনে।পাঁচ বছর আগের কথা। তখন সুমনের পরিবার বাস করত পলাশপুরের শহরতলীতে। সেখানেই একটি স্কুলে পড়াশোনা করত। তার পরিবারে ছিল বাবা ও মা। বাবা রামমনোহর দেবনাথ একটি বেসরকারি কর্মসংস্থানে কর্মরত ছিলেন। আর পাশের গ্রামের এক উচ্চবিত্ত পরিবারের একমাত্র মেয়ে ছিল বৃষ্টি। তার সাথে বেশ ভাব জমেছিল সুমনের। বন্ধুত্ব কখন যে প্রেমে রূপান্তরিত হল বুঝতেই পারেনি সুমন। তাদের প্রথম আলাপের দিনটি সুমনের আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে ।
সেদিন আকাশ ঢেকে ছিল ঘন কালো মেঘে। বিদ্যুতের আলো ঝলকে উঠছিল আকাশে। মাঝে মাঝে ঝড়ো শীতল হাওয়া শরীরে ঝাপটা মারছিল । স্কুল ছুটির কিছুক্ষন পরেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। সুমন তার নীল ছাতা হাতে এগিয়ে চলল বাড়ির দিকে। কিন্তু প্রবল ঝড়ো হাওয়া আর এগোতে দেয় না। সুমন বাধ্য হয়ে চায়ের দোকানের (বন্ধ)চালা ঘরে আশ্রয় নেয়। বৃষ্টি একটু থামলেই বেরিয়ে পড়বে। সুমন দেখে চালা ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে একটি সুন্দরী মেয়ে। পোশাক দেখে বোঝা যায় সেও স্কুল ছাত্রী। মাথার আধ ভেজা চুল কাঁধের একপাশে রাখা, আধভেজা পোশাক, টসটসে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে ঠোঁটের এক কোণে, তার সুন্দর চোখ দুটো আরও বেশি আকর্ষণ করে সুমনকে । সুমন তার ছাতা গুটিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে বৃষ্টি থামার। মাঝে মাঝে চোখ চলে যায় সুন্দরী মেয়েটির মুখের দিকে। মেয়েটিও একবার করে আড় চোখে তাকায়। বৃষ্টি আরও বাড়তে থাকে, হাওয়া আরও ঝড়ো হয়। দুজনে কিছুক্ষন নিরবে দাঁড়িয়ে থাকার পর মেয়েটি সুমনের কাছে এগিয়ে এসে বলল - "এখন কটা বাজে?"
সুমন চাইছিল মেয়েটি তার সাথে কথা বলুক যাতে সে তার সাথে আলাপ করতে পারে। সুমন তার ব্যাগ থেকে হাত ঘড়িটা দেখে বলল -"সা-সাড়ে চারটে। "
মেয়েটি এবার বিরক্তিভরে বাইরের অবিরাম বর্ষনের দিকে তাকিয়ে রইল। এবার সুমন একটু সাহস করে বলল- "তুমি কোন ক্লাসে পড়ো? "
" ইলেভেন, আর তুমি?"
"আমিও ইলেভেনে পড়ি , আচ্ছা তুমি কি আমাদের স্কুলে নতুন? "
"হ্যাঁ, আসলে আগে আমি মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতাম ওই চিএপুর গার্লস স্কুলে ,তারপর এই স্কুলে...।কেন বলতো?"
" না মানে আগে কোনোদিন তোমায় দেখিনি তো, তাই আরকি জিজ্ঞাসা করলাম। "
"তোমার নামটা কী?"
সুমন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল -"আমি সোমনাথ। সোমনাথ দেবনাথ ,তবে সবাই আমায় সুমন বলেই ডাকে। ওটা আমার ডাক নাম । "
"বৃষ্টি"
সুমন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল -"হ্যাঁ, তখন থেকে একরকম ভাবে পড়েই চলছে । "
"আমি বৃষ্টির কথা বলিনি আসলে আমার নাম বৃষ্টি।"
সুমন একটু লজ্জিত হয়ে জিভ কেটে বলল - "সরি আমি বুঝতে ...। "
মেয়েটি সুমনকে থামিয়ে দিয়ে বলে-"আরে এতে সরি বলার কী আছে! সত্যিই তো বৃষ্টি থামতে চাইছে না । "
দুজন এমন ভাবে গল্পে মেতে উঠেছিল যেন মনে হচ্ছিল পরস্পরের বহু দিনের পরিচয়। আবার দুজন কিছুক্ষণ নিরব রইল।
হঠাৎ একটা বাসের তীব্র হর্ন শোনা গেল। মেয়েটি তাড়াতাড়ি তার ব্যাগটাকে কাঁধে নিয়ে বৃষ্টি তে নেমে পড়ল। সুমন তার ছাতাটা তার কাছে এগিয়ে দিয়ে বলল- "ভিজে যাবে তো! "
"আমি চলে যেতে পারব, বাস চলে এসেছে। "
"আরে তুমি নিয়ে যাও না, কাল স্কুলে দিয়ে দেবে ।"
অনেক আপত্তি সত্ত্বেও সুমন ছাতাটা মেয়েটির হাতে ধরিয়ে দিল।মেয়েটি বেরিয়ে যাওয়ার আগে মিষ্টি স্বরে বলল- "থ্যাঙ্ক ইউ, বাই।"
"বাই"
সুমন কাদা মাখা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পথে রওনা হল।
************************************************
(ক্রমশ)
(গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাদের মুল্যবান কমেন্ট আবশ্যিক)