বন্দি
বন্দি


লকডাউন। নিস্তরঙ্গ দিন। গতে বাঁধা জীবনের পাশে অচেনা হাওয়া।
বাতাসে আতংক। চোরা অনিশ্চয়তা। সাবিনার ভয় করে না। পুরনো বইয়ের আলমারির ধুলো থেকে কুড়িয়ে আনে মণিমুক্তো।
কয়েকদিন ধরে বিকেলটা ছাদেই কাটায়। সাবিনা আর শবনম। মা মেয়ে। উত্তর-পূর্ব দিকে ছাদের যে কোনাটা একটু ভাঙা, সেখানেই হেলান দিয়ে দাঁড়াতে ভালবাসে শবনম। সাবিনা দুদিন বকুনি দিতে গিয়ে দেখেছে এই সময় তার কিশোরী কন্যার হাতের মোবাইলে যে রাঙা আলো আসে, প্রহরশেষের সেই সর্বনাশের আলোয় দূরের এক ফ্ল্যাটের বারান্দায় একই রকম আবির রং।
মনে পড়ে ঘুড়িগুলোর কথা। রঙিন ঘুড়িতে আসত হালকা প্রেমের আঁচ। ছাদের নরম রোদে বড়ি আর আচারের বয়ামের পাশে উঁকি দিত কবিতার খাতা। ঘুড়ির মধ্যে শব্দের ডানায় ভর করে থাকত প্রতিশ্রুতি। দুপুরের ছাদ থেকে নেমে আসা নারকেল দড়িতে চুপচাপ ওঠানামা করত কবিতার বই।
সে দিন ভেসে গেছে।
সাবিনা ঘর বদলে পাড়া ছেড়ে অন্য সংসারে বন্দিনী ছিল বহুদিন। আইনি মুক্তি তাকে দিয়েছে মেয়ের অধিকার আর স্বাধীন জীবন। আবার ফিরে আসা এই ছেলেবেলার পাড়ায়।
গলির শেষবাড়ির জেঠিমার গলা মনে পড়ে, "আবার তুই ওই মোল্লার মাইয়াডার লগে...."
এই কসমোপলিট্যান পাড়ায় এখন অনেক অচেনা মুখ। আলাদা করে মুসলমান পাড়া বলে আর কিছু নেই। বড় বড় ফ্ল্যাটে নানা ভাষা, নানা মত।
সাবিনা ভাবে, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং তো আগেও ছিল। ধর্মের ফাঁস আর সমাজের গার্জিয়ানি।
শবনমের মোবাইলের আলোয় দূরত্ব কমেছে।