Sarbani Banerjee

Romance Others

3  

Sarbani Banerjee

Romance Others

বন্ধু দিবসসর্বানী ব্যানার্জি

বন্ধু দিবসসর্বানী ব্যানার্জি

5 mins
267



গদ্যটা একেবারে আসেনা তিয়াসার। কিন্ত কলেজে বাংলা স্টোরি কমপিটিশন, ফ্রেন্ডশিপ ডে উপলক্ষে। তবু লিখতোনা ও। কিন্ত সায়ন খুব ধরেছে। সবার সামনে সেদিন বলে কিনা- “এই যে কবি, গদ্যও লিখুন একটু আধটু; নাকি প্রতিভা ওই দু’চার লাইন ছন্দেই শেষ!”

আত্মসম্মানে লেগেছে খুব তিয়াসার। আর সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্টেড। কিন্ত বাড়ি ফিরে ল্যাপটপ টেনে নিয়ে লিখতে বসে বুঝলো কাজটা অত সহজ নয়। কি লিখবে কি বিষয়ে লিখবে ভাবতেই রাত কাবার। দু’লাইন লেখে তো তিন লাইনে আটকে যায়। মনে মনে ভাবে, উফফ কি মুস্কিলেই না পড়া গেলো!

পরদিন কলেজে পৌঁছেই রিক্তার মুখোমুখি। রিক্তা আবার সায়নের মস্ত ফ্যান। সবসময় সায়নের প্রশংসা ওর মুখে। গা জ্বলে যায় তিয়াসার! এলেন আবার প্রশস্তি গাইতে।

-“কিরে লেখা কতদূর? আজ দিবি নাকি?”

কেন যে সত্যিটা বলতে আটকালো বুঝতে পারেনা তিয়াসা। অথচ তিয়াসা মিথ্যে পছন্দ করে না একদম।

-“গল্প লেখা আবার কোন ব্যাপার নাকি! হয়েই এসেছে প্রায়। কাল ঘুম পেয়ে গিয়েছিল খুব। আজই শেষ হয়ে যাবে। বলে দিস তোর সায়নকে।“ কথাটা শেষ করেই তিয়াসা যেন একরকম পালায় রিক্তার সামনে থেকে।


সায়নকে চেনে সেই স্কুলবেলা থেকে। দেখতে সুন্দর, পড়াশোনায় ভালো, গানের গলা আছে বেশ। আর কি চাই! অহংকারে মাটিতে পা পড়েনা। মেয়েরা তো সবসময় ঘিরে থাকে ওকে। তিয়াসা কোনোদিনই বেশী পাত্তা দেয়নি। থেকেছে নিজের মত। মিশেছে যেটুকু মিশতে হয়।

বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে না আজ। গেলেই তো সেই আবার লেখা। মনে তো হচ্ছে কিছুই হবে না।অকারণ মুখটা পুড়বে। খুব রাগ হচ্ছে সায়নের ওপর। কি দরকার ছিলো ওভাবে সবার সামনে বলার! অন্যমনস্ক হয়েই হাঁটছিলো বাস রাস্তার দিকে।


-“কিরে কবি কি ভাবছিস? এত অন্যমনস্ক যে”! পাশেই স্লো হল একটা বাইক। উফফ আবার সায়ন।

-“না না কিছু না। অন্যমনস্ক কোথায়? এমনি হাঁটছি একটু।“

-“চল তোকে আজ পৌঁছে দিই।“

সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক তিয়াসা। কি মতলব কে জানে! কখনো তো বলে না! হয়তো লেখাটার বিষয়ে জানতে চাইবে। কি বলবে ও তখন? আচ্ছা ধূর ওকে বলবেই বা কেন? শেষ হোক আগে তারপর জমা দেবে একেবারে।

-“কিরে ওঠ!”

- “নারে বাসেই চলে যাবো। তুই যা।“

একটু যেন থমকালো সায়ন।

-“যাবি না তাহলে? আচ্ছা গল্পটা ভাবলি?”

-“হ্যাঁরে হয়েই গেছে প্রায়।“

-“ও! তাহলে তো ভালোই। কাল পাচ্ছি তাহলে?”

-“দেখি!” একটু গম্ভীর ভাবে পাশ কাটিয়ে যায় তিয়াসা। একটা চলন্ত বাসে উঠে পড়ে হাত দেখিয়ে। জানলা দিয়ে দেখে সায়ন দাঁড়িয়ে তখনো।

তারপর দু’দিন কেটে গেছে। কলেজ যেতে পারেনি তিয়াসা। কিচ্ছু হচ্ছে না। গল্প লেখা যে এতটা কঠিন বোঝেনি ও। এখন কলেজে গিয়ে মুখ দেখাবে কি করে? সেই ভাবনাতেই রাতের ঘুম উড়ে গেছে। কাল শুক্রবার। লেখা জমা দেওয়ার শেষ দিন। শনিবার ফ্রেন্ডশিপ ডে উপলক্ষে কলেজে একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান। সেখানে সবাই নিজেদের গল্প, কবিতা পড়ে শোনাবে। ইস্ সায়নের চ্যালেঞ্জটা যদি অ্যাকসেপ্ট না করতো সেদিন! তাহলে ও একটা কবিতা পড়তে পারতো। ছন্দের হাত ওর যথেষ্ট ভালো।


সন্ধে নাগাদ মোবাইলে অচেনা নম্বর। ধরতে ইচ্ছে করছে না। কে জানে কে! উফফ আবার বাজছে ফোনটা।

-“হ্যালো!”

-“হাই..আমি সায়ন..”


-“ও! তা কি মনে করে? বাড়িতে একটা কাজ পড়ে গেছে। লেখা তো হয়ে গেছে। শুধু শেষটা...সময় পেলাম না একদম। দেখি কি হয় আজ!”

-“দূর সেজন্য নয়। আমি খুব বিপদে পড়েছি। একটু হেল্প চাই।“

-“বিপদ? আর আমি তোকে কি হেল্প করবো? তোর কি হেল্প করার লোকের অভাব?”

-“আরে শোনই না। আমিও ভাবছিলাম একটা গল্প লিখব। লিখেছিও একটা। কিন্তু গলাটা এত জ্বালাচ্ছে! পড়তেই পারবো না শনিবার। গানের স্যার এখন রেস্ট নিতে বলছেন, অনুষ্ঠান আছে সামনের উইকে। মানে আমি বলছিলাম তুই যদি আমার আর তোর গল্প দুটো মিলিয়ে নিয়ে একটাই গল্প জমা দিস। আর অনুষ্ঠানে পড়ে দিস তো খুব হেল্প হয় রে।“

-“বা! সে আবার হয় নাকি? আর তোর নামই তো জানবে না কেউ!”

-“তা হোক, তবু তো আমি বুঝতে পারবো সবার কেমন লাগলো? ফ্রেন্ডশিপ ডে নিয়েই লেখা। তাই সেদিন যদি পড়া হতো…কিরে? রাজি হয়ে যা না প্লিজ;”

-“আচ্ছা ভেবে দেখি...তুই পাঠিয়ে দে।“

-“থ্যাংকস আ লট।“

তিয়াসা ভাবলো সারারাত। সায়ন লিখেছে কিন্তু বেশ। শুধু একটু এদিক ওদিক করে নিতে পারলেই দারুণ জমবে গল্পটা। আর ওর জন্যেই তো এই বিপদ। সবার সামনে সন্মানও বাঁচবে। কিন্তু না না সায়নের লেখা ও নিতে পারবে না। সায়নই বা কি ভাববে ওর সম্বন্ধে! তার থেকে থাক বলে দেবে, লেখা হয়নি। তারপর যা হয় হোক।

সকাল হতেই সায়নের মোবাইলে রিং করলো তিয়াসা। একরাশ সঙ্কোচ মনে।

মুহুর্তেই ওপারে সায়নের গলা, "কিরে গল্প শেষ?"

কিছুক্ষণ চুপচাপ।

"ঘুমিয়ে পড়লি নাকি? রাত জেগে লিখেছিস?"- অধৈর্য সায়ন।

- "মানে, তুই তো ভালোই লিখেছিস। গল্পটা তোর নামেই দিয়ে দে। আমি নয় পড়ে দেবো অনুষ্ঠানের দিন। আসলে আমি তেমন কিছু লিখতে পারিনি। বলিস না কাউকে।"

- "কলেজ আসবি তো?"

-"না!"

- "কেন? চলে আয় তো দেখি একটা কবিতা নিয়ে। তোর কবিতা আর আমার গল্প, পড়বি তুই।"

- "মানে?"

- "আরে প্রধান হোতা তো আমিই। বলে দেবো সবাইকে কিছু একটা। তুই আয় তো আগে কলেজে। কিরে চুপ কেন?"

-"দেখি" ফোনটা রেখে দেয় তিয়াসা।

কলেজে যায়নি তিয়াসা। তবে কবিতা পাঠিয়ে দিয়েছে সায়নকে।

শনিবার অনুষ্ঠানের দিন একটু তাড়াতাড়ি কলেজ পৌঁছে গেল তিয়াসা। সেজেছে হালকা। ভেতরে ভেতরে চাপা উত্তেজনা। গল্প তো বলেনি কোনোদিন। তাও আবার অন্যের লেখা।

আস্তে আস্তে সবাই এসে গেল। বাবা! রিক্তাটা কি সেজেছে! সায়নও এসেছে, হাতে গীটার। এই যে বললো গলা খারাপ। তাহলে? হয়তো বাজাবে শুধু। হাসলো সায়ন ওর দিকে তাকিয়ে। ও ও ফিরিয়ে দিলো হালকা হাসি।

শুরু হলো অনুষ্ঠান। গল্প পড়ছে দু’একজন। কবিতাও হলো কিছু। তিয়াসার মোবাইলে মেসেজ টোন। এ বাবা ফোনটাকে তো সাইলেন্ট করা হয়নি। বেস্ট অফ লাক…সায়ন।

বাবা! ফর্মালিটি! থাক এখন। মোবাইল সাইলেন্ট মোডে পাঠিয়ে অনুষ্ঠানে মন দেয় তিয়াসা।

সায়ন গীটার বাজাচ্ছে। ওমা! গানও তো গাইছে, গলা খুলে। একটার পর একটা...

'তোমাকে চাই',

'বন্ধু চল'- নতুন পুরনো মিশিয়ে, সবই আজকের দিনের জন্য পারফেক্ট।

তাহলে? সায়নের দিকে তাকায় ও। সায়নের চোখে উপচে পড়ছে এক অদ্ভুত আনন্দ।

হঠাৎ নিজের নাম শুনে চমকে তাকায় স্টেজ এর দিকে। এবার ওর পালা। পা দুটো ভারী হয়ে আসছে কেন? আগেও তো কতবার উঠেছে স্টেজে!

গল্প পড়ে ঘোরের মধ্যে। হাততালির শব্দে ঘোর ভাঙে। সবাই প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছে। আনন্দে হতবাক তিয়াসার পাশে তখন সায়ন।

মাইকে সায়নের গমগমে গলা, ”আজ কিন্তু তিয়াসা ফাটিয়ে দিয়েছে।" কোনরকমে গলাটা পরিষ্কার করে একটা হালকা ধন্যবাদ দিয়ে আস্তে আস্তে নেমে যায় ও স্টেজ থেকে। মাইকে তখন ঘোষণা হচ্ছে, ধন্যবাদ তিয়াসা চক্রবর্তী কে, সায়ন মুখার্জির লেখা গল্প এত সুন্দর এবং সহজ ভাবে পাঠ করবার জন্য।

অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে। এখন মাঝরাত। সায়নের ফোনে মেসেজ ঢুকলো-হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে...তিয়াসা।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance