ভোরের স্বপ্ন
ভোরের স্বপ্ন


"রোজ ভাবি, সকালে উঠে চা বানিয়ে তারপর তোমাকে ডাকবো, কোন দিনই হয় না। এই অসুস্থ শরীরে তোমাকেই উঠে সব করতে হয়। সকালের ওষুধ টা ও নিজে নিয়েই খেতে হয় তোমায়। মাঝে মাঝে খুব স্বার্থপর মনে হয় নিজেকে।" চা এর কাপ এ একটা চুমুক দিয়ে, মার দিকে তাকিয়ে বলল ঠুমরী।
"কি যে বলিস, অফিস করে, এত দুরে যাতায়াত করে এসব পারা যায় নাকি। কত দিক সামলাবি। আজকাল তো বাড়ি থেকে বেরোতেও পারিনা শরীরের যা অবস্থা। সব বাইরের কাজ ও তোদের করতে হয়। বাড়ির কাজ গুলো অন্তত আমি..." প্রাতরাশ বানাতে বানাতে ব্যস্ত ভাবে অসমাপ্ত জবাব দিয়ে ঘরের দিকে ঘুরে তাকালেন মা, ওঁর ফোন টা বাজছে। ঠুমরী তারাতারি উঠে ফোন টা দিতে যাওয়ার আগেই মা এসে ধরলেন, "হ্যালো, হ্যাঁ বলো"
"কেমন আছো তোমরা?" ফোন এর ওপার থেকে একটা চেনা কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
"তোমাকে, ঠুমরী কে, বাবাই কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আর ভালো লাগছে না তোমাদের ছাড়া থাকতে।"
"আমাদেরও। তুমি চলে এসো।" ভেজা গলায় উত্তর এলো মার থেকে।
"সত্যি তো, বাবা কে তো অনেক দিন ফোন করা হয় না। ফোন নাম্বার টা.." ভাবতে ভাবতে অবাক হয়ে মার দিকে তাকিয়ে রইল ঠুমরী। ফোন এর ওপার থেকে বাবার কথা গুলো ও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল সে। কিন্তু কি করে? এত জোরে কথা বলছে বাবা?
"বাবা চলে আসুক না বাড়ি। আচ্ছা এখন কোথায় থাকে যেন..ধুত্.. কিচ্ছু মনে পড়ছে না কেন।" অস্থির হয়ে চেয়ার এ বসে পড়ল সে।
"কি রে ওঠ, কটা বাজে দেখ একবার, এখন না উঠলে দেরি হয়ে যাবে তো.." খাবার ঘরের দিক থেকে মার রাগী কন্ঠস্বর শুনে চমকে জেগে উঠল ঠুমরী। হঠাৎ করে বাস্তবে ফিরে আসার সঙ্গে যুঝতে একটু সময় লাগলো তার।
"কিরে চুপ করে বসে আছিস যে?" ঘরে ঢুকে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন মা।
"একটা স্বপ্ন দেখলাম"
"কি স্বপ্ন? ভালো না খারাপ? আমাকে বল?"
"ভালো। খুব ভালো।"
"বাঃ। ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয় তো"
"হুম..বাবার ছবি টা কোথায় আছে যেন? বাইরের ঘরের দেয়ালে টাঙিয়ে দেব।"
"হঠাৎ? তুই নিজেই তো নামিয়ে রাখতে বলেছিলি।"
"হ্যাঁ মা। এমনি আজ হঠাৎ মনে হলো তাই..মা চা খাবে?"
"হ্যাঁ আমি করছি, একটু দাঁড়া"
"তুমি বসো, ওষুধ টা খাও, আমি বানিয়ে আনছি"
"তোর দেরি হয়ে যাবে তো?"
"হ্যাঁ সে হোক। আমি বুঝে নেব" ওষুধ আর এক গ্লাস জল মার হাতে দিয়ে হেঁসে বলল ঠুমরী।