Joydip Kanrar

Drama Classics Inspirational

4.0  

Joydip Kanrar

Drama Classics Inspirational

ভোঁ কাট্টা

ভোঁ কাট্টা

3 mins
23.7K



ছাদে ভীষণ হইচই হচ্ছে । আজ ওদের ম্যাচ । ওই ফ্ল্যাটের দত্তদের সাথে এবাড়ির মিত্তিরদের । দুজনদের দলই সমান । এ একটু ঢিল দেয় তো ওরা টান মারে আবার ওদল সুতো ছাড়ে তো এদল সুতো গোটায় । বুড়িকে ওরা খেলায় নেয়নি । ওদের মতানুযায়ী ঘুড়ি ওড়ানোর খেলায় মেয়েরা থাকলে অসুবিধা । বুড়ি তাই একা ছাদের এক কোণে বসে হাঁ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । মাঝে মাঝে নিজের মনেই বলে উঠছে ,"আরে ওরা ঢিল দিচ্ছে টানো টানো " । ওর কথা যদিও কেউ শুনছে না তবুও উত্তেজনার বশে বলেই চলেছে । প্রতিযোগিতায় নেয়নি তো কি হয়েছে দাদাদের হয়ে চিয়ারআপ তো করাই যায় । সব ভক্ত কি আর ভগবানের দেখা পায় তবুও তো ডাকে । 


বড়িগুলো সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রোদে শুকোতে দেবার জন্য ছাদে উঠলেন মিত্তির বাড়ির কর্ত্রী বিমলাদেবী , বুড়ির ঠাকুমা । বুড়িকে একা থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন " তুই একা ওখানে কি করছিস আয় এখানে " । বুড়ি একটু বিরক্ত হয়েই উঠে এলো । 

- "তুই একা কি করছিস ? খেলিসনি কেন ওদের সাথে ?" 

- " মেয়ে থাকলে খেলায় অসুবিধা তাই নেয়নি "। 

বিমলাদেবী হাসলেন । " মেয়ে থাকলে অসুবিধা এমন কথা বাপের জন্মে শুনিনি "। 

"ওরা তাই তো বললো"। 

বিমলাদেবী একবার আকাশে উড়তে থাকা ঘুড়ির দিকে তাকালেন । মনে পড়ে গেল শৈশবের কথা। বিমলাদেবী তার দুইভাইকে ঘুড়ি ওড়ানো শিখিয়েছিলেন । মাঞ্জা তৈরি থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু । তখনকার দিনে সে তল্লাটে বিমলাদেবীর ঘুড়ি ওড়ানোর প্রশংসা সর্বত্র । বিয়ে হয়ে যাবার পরও সেই নেশা যায়নি কিন্তু সংসারের চাপ সবকিছু ভুলিয়ে দেয় । আজকে নিজের নাতীরা বলে কি মেয়ে থাকলে ঘুড়ি ওড়ানোয় অসুবিধা !!

বিমলাদেবী বুড়িকে জিজ্ঞাসা করলো " তুই লাটাই ধরতে পারিস ?" ।বুড়ি মাথা নাড়লো । বিমলাদেবীর মনে হলো তিনি যেন আবার সেই শৈশবে ফিরে এসেছেন । কোমরে শাড়ির আঁচলটা গুজে তিনি বললেন যা ঘুড়ি আর লাটাই নিয়ে আয় । বুড়ি কিছুখন হাঁ করে দাঁড়িয়ে নিজের ঠাকুমাকে দেখছিলো । বিমলাদেবী গলা খাঁকিয়ে বললো " যা নিয়ে আয় ওদের আজকে দেখিয়ে দেব মেয়েরা কি জিনিস "। আর কিছু না বলে বুড়ি একটা ঘুড়ি আর লাটাই নিয়ে এলো । বিমলাদেবী ততক্ষণে বড়ি গুলো রোদে দিয়ে হাওয়া পরীক্ষা করছিলেন । বহুদিন আগে চাপা পরে যাওয়া আগুন আবার জ্বলে উঠেছে অগ্নুৎপাত আটকায় কে ...

আকাশে ঘুড়ি উড়লো । নীল রঙের এক ডিব্বা ঘুড়ি । বুড়ি লাটাই হাতে দাঁড়িয়ে রইলো । বিমলাদেবী কয়েকবার সুতোটা টেনে দেখে নিলেন । পুরোনো অভিজ্ঞতা । বিমলাদেবীর মনে হলো আবার সেই আগের মতো শক্তি ফিরে এসেছে । কয়েকমিনিট পেরোতেই এবাড়ির মিত্তিরদের পেল্লায় লাল ঘুড়িটা কেটে গেল । ছেলেগুলো হাঁ করে দেখছে তাদের ঠাকুমা ঘুড়ির সুতোয় নিখুঁত টান দিচ্ছেন আবার কখনো ঢিল আর বুড়ি ধরে আছে লাটাই । হটাৎ একটা চিৎকার এলো দত্তদের ওদিক থেকে । সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো নীল ঘুড়িটা কেটে গেছে আর দত্তদের ছেলেরা চিৎকার করছে " ভোঁ কাট্টা ..."। 

বিমলাদেবী চোখ বুঝলেন । আর সে শক্তি নেই ইচ্ছা থাকলেই সব কিছু হয়না বয়সের ভার সুতোর ওপর পড়লে সে তো আপনাআপনি ছিঁড়ে যাবে সে ঘুড়ি হোক কিংবা সম্পর্ক । বুড়ির ছোঁয়া পেয়ে চোখ খুলে দেখেন নাতীরা দাঁড়িয়ে । হাতে একটা পেল্লাই ঘুড়ি । নাতীরা এগিয়ে এসে সেটা বুড়িকে দিয়ে বলল " ওরা আর ঠাকমা তুমি লাটাই ধরো আমরা চিয়ার-আপ করছি "। একটা সুখের হাসি ফুটে উঠলো বিমলাদেবীর শিরা বেরিয়ে আসা মুখে । 

আবার ঘুড়ি আকাশে উড়লো । 

নাতীরা চিৎকার করছে " থ্রি চিয়ার্স ফর ঠাকুমা , হিপ হিপ হুররে .."। বেশকিছুখন লড়াই হলো । দত্তদের মাঞ্জাটা বেশ উঁচু দরের । হটাৎ দড়িতে ঢিল পড়লো । দেখতে দেখতে মিত্তির বাড়ির পেল্লাই ঘুড়ি নিচের দিকে নামতে নামতে আচমকা শোঁ করে ওপরে উঠে গেল । যা হবার তাই হলো । বিমলাদেবীর অভিজ্ঞ হাত এক নিমেষে কেটে দিলো দত্তদের ধারালো মাঞ্জা । বুড়ি চিৎকার করে উঠলো " ভোঁ কাট্টা ..." । নাতীরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো আকাশের দিকে বিমলাদেবী ফিরে পেলেন বহুকাল আগে হারিয়ে যাওয়া এক অকৃত্তিম আনন্দ । ঘুড়ির সুতো ভোঁ কাট্টা হয়ে গেলেও জীবনের সুতো এখনও জুড়ে আছে শৈশব কৈশোর সংসার ও বার্ধক্য । জীবনের সুতো ভোঁ কাট্টা হয়ে গেলে দুঃখের শেষ থাকে না । আকাশের কোনো এক কোনায় উড়তে থাকে হারিয়ে যাওয়া ঘুড়ি আলগা সুতো পড়ে থাকে হাতের মুঠোয় ....।। 


      


Rate this content
Log in

More bengali story from Joydip Kanrar

Similar bengali story from Drama