STORYMIRROR

Debanjana Pramanik

Romance Tragedy

3  

Debanjana Pramanik

Romance Tragedy

অসমাপ্ত গোলাপ

অসমাপ্ত গোলাপ

5 mins
192

দেখতে দেখতে বছর পেরিয়ে যায়

নদীর স্রোতের মতো বয়ে চলেছে সময়, বিরামহীন তার গতি।

 গতকাল ছিল প্রেমিক-প্রেমিকার দিন,

ভালবাসা নিবেদনের প্রহর।

এখন ও তার রেশ বিদ্যমান ,

চারিদিকে বিরাজমান নানান বর্ণের গোলাপ।

মৌমাছির মতো ঝাঁকে ঝাঁকে ভিড় জমিয়েছে রোমিও-জুলিয়েটের দল, উদার্ত চিত্তে পুঁতে যাচ্ছে প্রেমের চারাগাছ। 


জীবন এখন যৌবনের মাঝামাঝি,

তবু যৌবনের রসের স্বাদ ঠিক অজানার কাছাকাছি ;

কবি না হলেও মাঝে মধ্যে কাব্যের স্রোতে গা ভাসাতে মন্দ লাগে না 

যাইহোক, প্রথমে নিজের পরিচয় টা দি...


আমি নন্দিনী মিত্র। ন্যুনতম শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে , মধ্যবিত্তের গণ্ডি পেরিয়ে, অতি সাধারণ বিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছি।

শিক্ষিকা হওয়ার দরুন নিজেকে অনেকটা আধুনিকতার ধাঁচে মানাতে পেরেছি। 

 যদিও পারিপার্শ্বিক নানা কটুক্তি শুনতে হতো, তবু পোশাকে অভিনবত্ব আনতে পারিনি।

 সে সব কথা থাক। গতকাল একটা বিশেষ দিন ছিল আমার কাছে। বিশেষ কেনো তো ক্রমশ প্রকাশ্য... 

 

 স্কুলের সকল শিক্ষক - শিক্ষার্থী বৃন্দ কুমির প্রকল্প ঘুরতে যাওয়া স্থির হয়েছিল।


 এই "ভ্রমণ " শব্দ টি একটা আবেগ । আমার কাছে সব অসুস্থতা ভুলিয়ে দেয়। তাই যখন শুনলাম ঘুরতে যাওয়া হবে , আর ঘরকুনো হয়ে থাকতে পারলাম না, সকাল বেলা বেরিয়ে 

 পড়লাম।।

   যেতে যেতে সবাই মিলে আবৃত্তি, গান গাইছিল। আমিও গুনগুন করে গেয়ে উঠলাম "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা"।

  সব মিলিয়ে ভালই কাটছিল। 

  গন্তব্যস্থলে পৌঁছে পেট পূজোর কাজে কিছু জন ব্যস্ত ছিলেন।

    কিছু জন রান্নার কাজে, আর আমরা কিছু জন চারপাশটা ঘুরে দেখছিলাম।

     হঠাৎ, খুব চেনা একটা মৃদু কণ্ঠস্বর কানে এলো । প্রথমে ভাবলাম আমি ভুল, 

     তারপর আবার শুনলাম আমারই নাম। ঘুরে তাকাতেই, বুক কেঁপে উঠল।

 অজান্তেই চোখের কোণে জমতে লাগলো বিন্দু বিন্দু জল। কোনো ক্রমে নিজেকে সংযত করে বললাম... তুমি ?,

   হ্যাঁ আমি! আমি আসবো ,আশা করিস নি তাই না ?

   আমি অবশ্য জানতাম তুই আসবি।

   ভ্রমণের সুযোগ তুই কোনোদিন ছাড়বি না।

   বললাম, তুমি এখানে?কী করে?

   আমি এখানে আসবো তুমি কী করে জানলে?

   ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় ম্যাডাম, তাছাড়া তোদের স্কুলের কয়েকজন সহকর্মীর সাথে আমার যোগাযোগ আছে। সেখান থেকেই খবর পেয়েছি।

   কিঞ্চিত চুপ করে আমি আমার সাথে থাকা সহকর্মীদের খাওয়ার জায়গায় যেতে বললাম,

   কারণ বিষয়টা আমার ব্যক্তিগত, তাই আমি এই বিষয়ে কাউকে জানাতে ইচ্ছুক নই।

   প্রথমে বলি, যিনি আমার ব্যাপারে এত ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন উনি আমার প্রাক্তন! দীর্ঘ চার বছরের প্রেমের যবনিকা টেনে বিদায় নিয়েছিলেন।

   শুনেছি উনি ওনার পরিবারের পছন্দের পাত্রীর সঙ্গে বিয়ে করেছেন আজ ৬ মাস হল। 

  সে সব কথা মনে পড়তেই নিজের ওপরে রাগ হচ্ছিল।


   কী রে, চুপ করে আছিস?

  খুব রাগ করেছিস তাই না ?

  না! রাগের কি কোনো কারণ আছে ?

  আমার এখন রাগ অভিমান হয়না, 

  কিছু ক্ষন চুপ থেকে বললাম,

 তা আমার ব্যাপারে এত খোঁজ খবর নিয়ে আমার সাথে দেখা করার কারণ কী?

 এমনি ইচ্ছে হলো,

 তা কেমন আছিস বল্?

 বাড়ির সবাই কেমন আছেন??

 আমি বিন্দাস !আর বাড়ির সবাইও খুব ভালো আছেন।

 কাকুর শরীর ভালো আছে তো? কয়েকদিন আগে তো ক্যান্সার থেকে উঠলেন।

 হ্যাঁ, বাবা চাকরি জীবনেও অবসর গ্রহণ করেছেন।

 এখন ঘরেই আছেন তো?

 হুঁ।

 তা তোমার খবর কী ?

 কেমন আছো ?

 সংসার কেমন চলছে?

 কেটে যাচ্ছে কোন রকম।

কেটে যাচ্ছে কেন ? ভালো থাকারই তো কথা।

ভালো অনেক কিছুরই তো থাকার কথা, সবকিছু কি আর সবার কপালে থাকে?

যাই হোক, তোর চাকরি জীবন কেমন কাটছে বল্ ?

ভালই!

তুমি একা এসেছ?

নাহ্,

 প্রিয়াঙ্কা ও তার বন্ধুরা মিলে এসেছে।

 বাহ্!

 কোথায় তারা?

 ঘুরছে কোথাও না কোথাও

 তুমি এখানে ঘুরছ আমার সাথে কথা বলছ তোমার বউ দেখলে রাগ করবে না তো?

 না না , রাগ করার জন্য একটা অধিকার জন্মাতে হয়, সেই সম্পর্ক এখনো গড়ে ওঠেনি। ও ওর বন্ধুদের সাথে আছে ।

 

তাছাড়া আমাকে প্রয়োজন পড়লে ও আমাকে ফোন করে নেবে।

সৌভিক দার মুখটা যেন কেমন শুকনো শুকনো দেখলাম।

   মনে হল, কী যেন বলতে গিয়েও বলতে পারলো না,

   আমারও আর জোর করতে ইচ্ছা হলো না।

   আমার কথা ছাড়, তুই বল , তোর অন্যান্য কাজ কেমন চলছে? মানে কবিতা ,গান ,নাচ ???

   হ্যাঁ করি , স্কুলে শেখাই,

   বাড়িতেও অভ্যাস করি।

   বাহ্ ভালো ছাড়বি না ও গুলো কোনোদিন।।

   পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল, চিরকাল এই সবের করার উদ্যোগ তুমি নিতে

   আমি নারাজ থাকলে একরকম জোর করে আমায় মানাতে।।

   মনে পড়ে সেগুলো?

   সবই মনে আছে নন্দু।

   অনেকদিন পর তোমার মুখে ওই নাম টা শুনলাম।

   কথা গুলোকে আর বাড়তে দিলাম না, 

   এড়িয়ে বললাম, দেখা যখন হলো এবার সস্ত্রীক আলাপ করতে চাই ।

   হেসে আমার কথার উত্তরে বলল 

   তার কি আর আমার সাথে ঘুরে বেড়ানোর সময় আছে? 

   আচ্ছা সে যদি সময় পাই পরে আলাপ করিয়ে দেবো।এটা বলেই চুপ করে থাকে।

   কিছুক্ষন পরে আমায় বলল,

   তুই আমাকে কল লিস্ট থেকে আনব্লক কবে করবি?

   আমার এসব খেয়াল নাই 

   বলে কথা টা চেপে দিলাম।

   ধীরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ভেসে গেলাম চড়ুইভাতির মূল স্রোতে,

   খাওয়া দাওয়া শেষ করে সব কাজ গুছিয়ে উঠতে সন্ধে হয়ে গেলো।

   এবার যে যার কাজ কর্মে ফেরার পালা।

   ইতিমধ্যে আমার প্রাক্তনটির সহধর্মিণী র সাথে আলাপ করার স্বাদ পূরণ হয়েছে।

   বেশ মিষ্টি মেয়ে, ছেলের বাড়ির পছন্দ আছে বলতে হবে।  

   এই কথা বলতেই ওনার স্বামী মৃদু হেসে বললেন

   হ্যাঁ, সেরা পছন্দ করেছে আমার বাড়ির লোক আমার জন্য।

   ছোট থেকে বুড়ো হলাম ওনাদের পছন্দ মেনে, নিজেকে বলি দিয়ে ওনাদের মুখে হাসি ফোটালাম ।

   কথা টা বলতে না বলতেই দেখলাম ওর চোখের কোনে জল!

   আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না খানিকটা অভিমান করেই বললাম...

   তোমার মায়ের পছন্দের পাত্রী খারাপ কিসের? আজকালকার চোখের আধুনিকা মেয়ে যেমন টি তোমার মা চেয়েছিলেন।

   সুন্দরী ,শিক্ষিতা, পোশাকেও আধুনিকতার ছোঁয়া আছে, তাছাড়া সব রকম পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেবে। তেমনটাই তো হয়েছে দেখছি, এতে সমস্যা কোথায়?

   একটু বেশি এই মেয়ে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা রাখে, যেটা আমার ওকে মানাতে কষ্ট হয় আশা করি মা ও কিছুদিন পর বুঝে যাবে ,কিন্তু তখন বোধয় অনেকটা দেরি হয়ে যাবে।

 আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল ওকে দেখে, প্রকাশ করার ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না।

 বেশ অনুরাগের দৃষ্টি দিয়ে বললাম ,

 সে যখন বুঝবে তখন দেখা যাবে । বর্তমান তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচো , ও যেমনটা চায় তেমন ভাবেই ভালোবেসে মানিয়ে নাও , দেখবে তুমি আর ও দুজনেই ভালো থাকবে।

  একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে, কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে তারপর বললো,

  ভালো থাকা বোধহয় আমার কপালে আর নেই জানিস, এ জন্মে হবে বলে মনে হয় না। দেখা যাক পরজন্মে যদি তোর মতন আবার কারো সাথে দেখা হয় তাহলে তাকে আজীবন আটকে রাখার চেষ্টা করবো।

  অনেকটা দেরি হয়ে গেল এবার তো যেতে হবে সকলে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

  দুজন দুজনের দিকে চেয়ে রইলাম ।

  সবটুকু দিয়ে দুজন দুজনকে সংযত করে ওখান থেকে রওনা দিলাম।

   তৎক্ষণাৎ, মাঠের প্রাঙ্গণ থেকে একটি সুর ভেসে আসছিলো...

    

"কথার ওপর কেবল কথা

সিলিং ছুঁতে চায় ,

নিজের মুখের আয়না আদল

লাগছে অসহায় ।

তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান" ।

       যাহ্! কলমের কালিও সমাপ্ত হলো, আমার নোটে গাছটিও মুড়োলো।।


Rate this content
Log in

More bengali story from Debanjana Pramanik

Similar bengali story from Romance