অপ্রকাশিত অনুভূতি
অপ্রকাশিত অনুভূতি
প্রিয় দর্শনা ,
আমি জানি , আমি জানি যে তুমি ভাববে আজকালকার হোয়াটস্যাপ ফেসবুক এর যুগে আমি তোমায় কোনো চিঠি লিখতে বসলাম।অপেক্ষায় রাখবোনা তোমায় উত্তর আমিই দিচ্ছি ।এই সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় ছোট ছোট কথাগুলোই সীমাবদ্ধ ।ছোট ছোট তার উত্তর মানে আমরা যাকে বলি রিপ্লাই ।তাই ঘটা করে চিঠি লেখার আয়োজন ..।
ভাবছি বলেই দি ।কি বলবো ? চিঠি টা পরে হয়তো ভাবতে পারো হঠাৎ এত রোমান্টিক কি করে হলাম ।আসলে আমার এই সিরিয়াস ইঞ্জিনিয়ারিং লাইফ এ তুমি একফোঁটা হাসির ঝলক এনেছিলে ।সবার কাছে পরিচিত ছিল আমরা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড ।তবে আমাদের এই খুব ভালো বন্ধুত্বটা সম্পর্কে পরিণত হতে পারতো হয়তো তুমি আমি দুজনেই চেয়েছিলাম তাই কিন্তু মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়ালো সাহস টা ।দেখোনা আজও সেই সাহস নেই যে তোমার কাছে ছুটে গিয়ে বলবো -দর্শনা .....
ক্রিং ক্রিং
কলিং বেল বাজলো ....
চিঠিটা অসম্পূর্ণ রেখেই রৌনক দরজা খুলতে গেল । একটা কুরিয়ার এসেছে ওর নামে ।খুলে দেখলো ওরই একটা ছবি তবে সেটা হাতে আঁকা।নিচে সই ও আছে ।দর্শনা সেনগুপ্ত। তার সাথে একটা চিঠিও আছে ..
চিঠিটা খুলে নিজের মনেই বললো "হাতের লেখাটা আর শুধরালো না ।সত্যি টেলিপ্যাথি এর জোর আছে ।হয়তো ওই সাহস করে বলেছে চিঠি তে কথাটা ।পড়তে শুরু করলো..
প্রিয় রৌনক,,
একটি বিশেষ কারণেই তোমায় চিঠি লিখছি ।কথাগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বলার চেয়ে চিঠি তে বলাই শ্রেয় বলে মনে করলাম ।তোমার শতাধিক ব্যাস্ততার মধ্যেও চিঠি তা একবার পরে দেখার অনুরোধ রইলো ।
ছবিটি অনেকদিন আগেই এঁকেছিলাম তোমায় দেব বলে ।দেওয়া হয়নি ।সেই একবার হঠাৎ ঝগড়া হলো তারপর ভুলেই গেছিলাম ।যাই হোক এখন দিলাম ভাবলাম চলে যাওয়ার আগে দিয়েই যাই ।
জানো রৌনক নতুন চাকরি পেয়েছিলাম ।তার সাথে একটা উপহার ও যা নিয়ে আমি এই পৃথিবীতে থাকতে পারবোনা ।শুনলে ভাববে উপহার বলছি কারণ কেউ কিছু দিলে তা যেই দিক আর যাই হোক উপহার ই তো হয় ।
আমাদের মধ্যে যা অপ্রকাশিত তা অপ্রকাশিতই থাক ।আর যা প্রকাশিত তার খাতিরেই বলছি তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ।একবার আসবে রৌনক ?
এর থেকে বেশি কিছু লেখার ক্ষমতা এখন আমার নেই ।ঠিকানা -১৪ নং বটতলা রোড আর যোগাযোগ করতে হলে ৯৮৪৫****** এই নম্বরে করো ।
ইতি
তোমার খুব কাছের বন্ধু
দর্শনা
তারিখ - ৭/৬/১৯
চিঠিটার তারিখ দেখে রৌনক ভাবলো আজ ২০/৬ /১৯ হয়ে গেছে ।চিঠি টা আসতে বেশ কয়েকদিন দেরি হয়েছে ।একবার নম্বরটায় যোগাযোগ করি ।ঠিকানাটাও স্পষ্ট নয় ।
চিঠির ভাষায় দর্শনাকে কেন যেন অন্যরকম লাগলো ।যার কথার মধ্যে সবসময় থাকতো উচ্ছাসের ছোঁয়া, তার এই চিঠির কথাগুলো থেকে মনে হচ্ছে মানুষটা যেন ভেতর থেকে দমে গেছে ।উপহারটাই কি ওকে দমিয়ে দিলো ?কি সেই উপহার?
এইসব কথা ভাবতে ভাবতে রৌনক দর্শনার দেওয়া নম্বরে ডায়াল করলো ।প্রথমবার ফোন বেজে কেটে গেল ।দ্বিতীয়বার ফোন করতে একজন মহিলা ফোন ধরলেন।গলাটা কাঁপা কাঁপা
.---------কে বলছেন ??
---------দর্শনা আছে ???? আমি রৌনক ওর কলেজ এর বন্ধু.....( রৌনক এর মনে হলো ইনি দর্শনার মা হতে পারেন ...কিন্তু গলাটা এরকম লাগছে কোনো ?)
----------- আজ সাতদিন হলো দর্শনা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে .
রৌনক আকাশ থেকে পরে ।অবাক হয়ে কি জিজ্ঞাসা করতে যাওয়ার আগেই ফোনটা কেটে যায় ।রৌনক আর ফোন করতে পারেনা ।ধীরে ধীরে নিজের অসম্পূর্ণ চিঠির কাছে পৌঁছায় ।চিঠি দেখতে দেখতে ভাবে দর্শনার প্রতি তার ভালোবাসাটা প্রকাশ করলে কি সে তাকে বাঁচাতে পারতো ??
কোনো উত্তর পায়না ।দর্শনার আঁকা নিজের ছবিটার উপর হাত বোলাতে থাকে ।তারপর যত্ন করে অপ্রকাশিত ভালোবাসার চিঠি দুটো গুছিয়ে রাখে ।ছবিটা দেখতে দেখতে সে ভাবে যদিও তার ছবির পাশে দর্শনার ছবি নেই তবুও ওই ছবিতে অদৃশ্য দর্শনা রয়েছে, তার ছোঁয়া রয়েছে,তার ভালোবাসা রয়েছে ।
এইসব কথা ভাবতে ভাবতে রৌনক এর চোখে জল আসে .।জল মোছেনা ।একভাবে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে।

