অধরা রজনী
অধরা রজনী


ভালোবাসার আবিরে চিরকাল রাঙাবো তোমায় প্রিয়ে।
-কি হচ্ছে কি, সবাই দেখতে পাচ্ছে তো।
-দেখুক না, তাই বলে প্রেম করব না!!
-না করবে না, কিছু প্রেম তুলে রাখো দেখি।
-যা বাব্বা ভবিষ্যতে কি হবে কে জানে তখন তুমি অন্য কারও বৌ হয়ে গেলে দেখলাম তখন কি করব আমি শুনি!!
-অত সুখ নেই আমার কপালে।
হেসে উঠলো দুই জনেই।
***********************
ভোরবেলা কোমরের কাছে শীতল স্পর্শে ঘুমটা ভেঙে গিয়েছে। স্পর্শ টা খুব কাছের খুব চেনা। মেঝেতে অমিত বসে আছে,হাতে জলন্ত সিগারেট আর ওর চোখের চাহনিটা ঠিক স্বাভাবিক নয়, ক্রমশ ও এগিয়ে আসছে আমার দিকে। সারা ঘরের মত আমার চোখের সামনে আরো ধোঁয়া বাড়তে থাকে, একসময় আমার দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম হল , কোনোমতে মুখটা বাড়িয়ে দিলাম জানালার দিকে, তখনও ভোর পুরোপুরি হয়নি। ঘরের ধোঁয়া ও উধাও হয়ে গিয়েছে। আমায় আরো ঘুম পেয়ে বসেছে আমি তলিয়ে যাচ্ছি এক মায়ার জগতে, দিশেহারা মানুষজন দরদস্তুরে ব্যস্ত সেখানে। আমি কি ভুল করে এপথে চলে এসেছি!! আমার হাত দুটো কি শক্ত করে বাঁধা একটুও নড়ার উপায় নেই। তারমধ্যে কালোকাপর পড়া মানুষ গুলো আমার দিকে এগিয়ে আসছে ক্রমশ। তারপর হঠাৎ কি যেন একটা শুনে আমার গালে জোরে একটা চর কসালো। ব্যাস আমি আবার তলিয়ে গিয়েছি।
*******************************************
-এই তনি ওঠ না রে, আর কত ঘুমাবি! তোর বর তো অফিসে কিছু না খেয়েই চলে যাবে।
তিয়ার কথায় ধরমরিয়ে উঠে বসেছি, সত্যিকারের অনেক বেলা হয়ে গেছে। আজকে ভালো মন্দ সব খেয়ে নে কালকে তো তোর উপোস হি হি।
******************************************
-আচ্ছা মিতালিরা জানে আমার বিয়ে হচ্ছে।
-হ্যাঁ মনে হয়। তুই এখনও ওদের কথা ভাবিস? ওরা তো ভুলেও তোর কথা মনে করে না বোধহয়। ভাবার মতো একজন ই ছিল ও বাড়িতে অমিতদা সেও আর পৃথিবীতে নেই তিনবছর হল, তুই তোর আগামী দিনের কথা ভাব।
-অমিত মনে হয় শান্তি পায় নি জানিস,
কাল ও স্বপ্নে এসেছিল ।
-তুই উল্টোপাল্টা চিন্তা ভাবনা বন্ধ কর। বিয়ের আগে সব মেয়েদের ই একটা অস্থিরতা কাজ করে তার সাথে তুই অমিত দা কে টেনে আনিস না।
-অমিত যে সংসারের হাল ছেড়ে দিয়ে সুইসাইড করবে আমি কোনোদিন ভাবনায় ও আনিনি। ও যে এতটা ভীতু ছিল ধারনা ছিল না রে।
-তুই থামবি না কাকিমা কে ডাকব আমি।
-এই মাকে একদম না রে কিছু বলিস না প্লীজ অনেক বছর পর ওদের আমি আনন্দে দেখছি।
-তুই কি রে তনি, পাগলি মেয়ে একটা। তুই দেখিস খুব সুখী হবি, খুব ভালো থাকবি, আমার মন বলছে।
************************************
যদেতত্ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম । যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব ।।”
ভিড়ের মধ্যে দেখি অমিত দাড়িয়ে আছে ওর ভাবগতিক ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছে না হঠাৎ চোখ পড়ল আমার হাতের দিকে--প্রসুন আমার হাতটা চেপে ধরে মন্ত্রোচ্চারণ করে চলেছে জোরে জোরে। এক অদ্ভুত ভালোলাগা শিহরন হয়ে বয়ে গেল শরীরে।
*******************************
সবার চোখে জল, কেউ কাছছাড়া করতে চাইছে না আমাকে। আমি আজ অনেকটা স্বস্তি বোধ করছি চোখে জল আছে ঠিকই কিন্তু সেই পরিমাণ দুঃখ হচ্ছে না সেটা অনুভব করতে পারছি। আমাদের গাড়িটা যখন চলতে শুরু করলো প্যাণ্ডেলের শেষ দিকটা তখনও দেখা যাচ্ছিল। দেখলাম অমিত জলন্ত সিগারেট হাতে ক্রমশ আবছা হয়ে আসছে। আর কাঁধের কাছে একটা নতুন স্পর্শ আমি নতুন করে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। খনিকের স্পর্শে বড় কাছের মানুষ মনে হল ওকে।