Anwesha Das

Romance

4.4  

Anwesha Das

Romance

আভা

আভা

4 mins
598


৩৬ বছর বয়সি একটি মহিলা গাম্ভীর্যের সাথে হেঁটে চলেছে নিজের কেবিনের দিকে। পরনে অফিস স্যুট।

- গুড মর্নিং ম্যাম। ( পি.এ )

- গুড মর্নিং রুহি। আজকের মিটিংয়ের ফাইল রেডি??( মহিলা )

- ইয়েস ম্যাম। ( রুহি )

- আমার কেবিনে তাড়াতাড়ি সাবমিট করো। ( মহিলা )

- ওকেই ম্যাম। ( রুহি )

এই বলে রুহি চলে যায়। মহিলাটি নিজের কেবিনে গিয়ে কাজে মন বসাতে পারেনা। চেয়ার ছেড়ে জানলার ধারে গিয়ে দাঁড়ায়ে। আজকে যেন তার পুরোনো স্মৃতিগুলো মস্তিষ্কে ছেয়ে যেতে চায়ছে। ধীরে ধীরে অতীতের সমুদ্রতলে ডুব দেয় মহিলা। 

           

             মহিলাটি হলেন চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির সি.ই.ও আভা চৌধুরী সেন। আভার একটি ছোট্ট মেয়ে আছে ; তার নাম আরতি - এই নিয়েই তার সংসার। আভার বিবাহিত জীবনের গল্পটা অন্য বিবাহিত মহিলার থেকে বেশ অন্যরকম।               


              সাতাশ বছর বয়সে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে আভা। সেইসময় আভারা ছিল মধ্যবিত্ত। আভার বাবা একটি সাধারণ অফিসে কাজ করত ও মা ছিল একজন গৃহিনী।             


              ২ বছর আভা ওই কোম্পানিতে চাকরি করছে। হঠাৎই একদিন কোম্পানিটা সেন ইন্ডাস্ট্রি এন্ড কোং কিনে নেয়। আজকে একসপ্তাহ পর কোম্পানিতে নতুন বস জয়েন করছে। তাই আজকে একটু আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে আভা। নিজের যাবতীয় কাজ সেরে বেরিয়ে পরে অফিসের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে একটা ফুলের তোড়া কিনে নেয়।  


   

              অফিসে গিয়ে নিজের কেবিনে বসে ভাবতে থাকে, নতুন বস ভালো হবে তো??? রাগী বা বদমেজাজি হলে?? এই কথা ভাবতে একটু ভয় পায় আভা। কারন আভা কোনোদিন তার মা বাবার মার তো দূর একটা বকা পযর্ন্ত খায়নি সেখানে যদি একজন বস ওকে কিছু বলে তাহলে তো নিজের কাছেই প্রস্টিজের ফালুদা হয়ে যাবে।


               ওকে ভাবতে দেখে পাশের কেবিন থেকে রিয়া বলে, 

- কী দোস্ত কবিদের মতো কী ভাবছ??

- ভাবছি আমাদের বস ভাল হবে তো?? 

- অবশ্যই হবে।

- তুমি বলছো??

- ২০০ % গ্যারান্টি দিচ্ছি। 

ওরা এই নিয়ে গল্প করছিল তখন পিয়ন এসে বলে যে বস এসে গেছে। তাই ওরাও দেরী না করে অভ্যর্থনা জানাতে যথাস্থানে দাঁড়িয়ে পড়ে। 

    

                 দূর থেকে আভা দেখতে পায় মি. সেনকে। হঠাৎই একটা ভালোলাগা ঘিরে ধরে আভাকে, কিন্তু আভা সেটাকে সেখানেই দমন করে দেয়। আভা যখন এই সব ভাবছিল তখন মি. সেন এসে তার হুঁশ ফেরায়। 

- হ্যালো! আমি আদিত্য সেন। ( আদিত্য )

- ও হাই আমি আভা চৌধুরী। স্যার আপনার জন্য। আভা মুচকি হেসে আদিত্যের দিকে কিনে আনা ফুলের তোড়াটা এগিয়ে দেয়।

- খুব সুন্দর ( আদিত্য )

- ধন্যবাদ। ( আভা )   

আদিত্য আবার সামনের স্টাফদের সাথে দেখা করার জন্য এগিয়ে যায়। ওরাও নিজেদের কেবিনে চলে যায়।


                   সময়ের সাথে সাথে আভা বোঝে আদিত্য যথেষ্ট ভদ্র ও দায়িত্ববান ছেলে এবং এমপ্লয়িদের সম্মানও করে। এরইমধ্যে আভার পদন্নতি ঘটে --সাধারণ এমপ্লয়ি থেকে আদিত্যের পি.এ হয়ে যায়। ফলে আদিত্যের বাড়ি ঘন ঘন আসা যাওয়ার সুবাদে আদিত্যের বাবা মার সাথে খুব ভালো পরিচয় হয়ে ওঠে। খুব কম সময়ের মধ্যে পি.এ আর বসের মধ্য সম্পর্ক অন্য পথ ধারণ করে। সময়ের অপব্যবহার না করে আদিত্য নিজের মনের কথা বলে দেয় আভাকে। আভাও তা স্বীকার করে। দুই বাড়ির সম্মতিতে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। দুই বছর আভা ও আদিত্যের জীবনে আসে আরতি। 

        

                    এত কিছু ভাবতে আভার খুব ভালো লাগছিল, কিন্তু সেই দুঃসময়টা মনে পড়লে আজও আভা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। 


                    সেদিন ছিল আভা ও আদিত্যের এনিভ্যার্সারি। আভারা কিছুটা সময় একা কাটতে চায় বলে আরতিকে আদিত্যের বাবা মার কাছে রেখে আসে। গাড়িতে করে আসার সময় স্মৃতিচারণে ব্যস্ত আদিত্যের খেয়াল না থাকায় অপরদিক থেকে আসা গাড়িটিকে লক্ষ্য করে না। ফলে.... অ‍্যাক্সিডেন্ড!!!


                    সেদিন আভা বেঁচে গেলেও আদিত্য আর ফিরে আসেনি। আদিত্য এর মৃত্যুতে তার বাবা মা ভেঙে পড়ে এবং এই সবের জন্য আভাকে দোষারোপ করতে থাকে। কিন্তু কেউ আভার মনের খবর রাখে না। এই ঘটনাটার বেশকিছুদিন পর আভাকে তার মেয়ের সাথে তাড়িয়ে দেয় আদিত্যের বাড়ি থেকে তার মা। 


                    আভা সেদিন আর ফিরে যায়নি নিজের বাড়ি। আদিত্যের অফিসে চাকরি করার সময় যে ফ্ল্যাটটা কিনেছিল সেখানেই ফিরে আসে। এরপর শুরু হয় আভার জীবনযুদ্ধ। সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না আভার পাশে ব্যতীত আভার বাল্যবন্ধু প্রীতম। নিজের চেস্টায় দাঁড় করায় বতর্মান ফ্যাশন হাউজটি। বিভিন্ন কুমন্তব্য ও  কুপ্রস্তাবের সম্মুখীন হয় আভা। কিন্ত লড়াই চালিয়ে যায় সে। সঠিকভাবে জবাব দেয় সমাজকে। 


- ম্যাম!! রুহি ডাকে আভা বাস্তবে ফেরে।

- বলো। তাড়াতাড়ি নিজের জায়গায় ফিরে এসে কথাটা বলে আভা।

- ম্যাম আপনার মেয়ে আসেছে। ( রুহি ) 

- কোথায় ও!!( আভা )

- প্রীতম স্যারের সাথে আছে। ( রুহি ) 

- আসতে বলো। ( আভা )

- ওকে ম্যাম। ( রুহি )


                    খানিকক্ষণ পর ৫ বছরের একটি মেয়ে দৌড়ে এসে আভাকে জড়িয়ে ধরে কপোলে চুম্বন করে। আভাও আরতির কপালে স্নেহের পরশ এঁকে দেয়। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে প্রীতম মনে মনে এক সুখময় হাসি হেসে কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করে। 

- তো মা মেয়ের গল্প হলো?? ( প্রীতম )

- ও প্রী মামা!! আজকে স্কুলের মিস বলেছে মায়ের মতো কেউ ভালোবাসা দেয় না। তাই আমি একটু মাকে আদর করছিলাম... বুঝলে?? ( আরতি ) 

- তাই!!!( প্রীতম )

- হুম। ( আরতি )

  

                      আরতির মিস্টি কথা শুনে কেবিনের মধ্যে একটা প্রশান্তির ঢেউ বয়ে যায়।।

                 

                           


Rate this content
Log in

More bengali story from Anwesha Das

Similar bengali story from Romance