১০০ টাকার ভালোবাসা !
১০০ টাকার ভালোবাসা !


২০×৫=একশো! বাসা ভাড়া ১৫০০, মিল খরচ ১৫০০, গাড়িভাড়া ৩০০, নাস্তা বাবদ ৫০০, ৪ শুক্রবার মসজিদে ৪০ টাকা, মোবাইলে ফ্লেক্সি ১০০ টাকা! প্রতি মাসে আমার জন্য বাবা বিকাশে টাকা পাঠায় ৪০০০ টাকা। এই ৪ হাজার টাকা উঠাতে আমার খরচ লাগে ৮০ টাকা। মোট খরচ-৪০২০ টাকা। ভার্সিটি থেকে বের হতে হতে এই হিসাবটা করতেছি কারণ আজ রিয়ার বার্থডে! এত দিনে আমি ওকে একটা কিছু দিতে পারিনি। কখনো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিক্রি করা চটপটি ফুচকার দোকান থেকে এক প্লেট চটপটি খাওয়াতে পারিনি । আমাদের রিলেশনের বয়স দু'বছর এর মাঝে ও আমাকে কতবার খাওয়াইছে কত গিফট দিছে তার হিসাব নেই। আমার বার্থডেতে রাত জেগে আমাকে ওইশ করা থেকে শুরু করে হৈ হুল্লোড় করে কেক কেটে আমার বন্ধু ওর বন্ধু সবাইকে খাওয়ানো, শেষে আমার হাতে একটা দামি ঘড়ি পড়িয়ে দেওয়া সহ সব করেছে। আমি বলেছিলাম, আমার বার্থডেতে তুমি অনেক কিছু করেছো আমি শুধু তোমাকে একদিন লাঞ্চ করাতে চাই। রিয়া কোনভাবেই রাজি হয়নি। আমি রাগ করে দুইদিন তার সাথে কথা বলিনি দেখে অবশেষে রাজি হয়েছে। একটা রেষ্টুরেন্টে এসে ওকে বললাম খাবার অর্ডার করো সে খাবারের ম্যানু দেখে সেই রেষ্টুরেন্টের সব থেকে কম দামের খাবার যেটা সেটাই অর্ডার করলো।আমি জিজ্ঞেস করলাম, "এতো কম দামের খাবার কেনো অর্ডার করলে?" সে হেসে বললো, "এই রেষ্টুরেন্টে এই খাবার টা আমার সবচেয়ে ফেভারিট তাই অর্ডার করেছি" বের হয়ে রিক্সা নিয়ে বাড়ি আসবো সেসময় সে আমার হাতটা ধরে বললো, "আমার অনেক দিনের ইচ্ছে তোমার হাত ধরে পুরো শহর হাঁটবো হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যা নামিয়ে বাড়ি ফিরবো! আজ যখন সুযোগটা ফেলাম তখন ইচ্ছেটা পূর্ণ করতে চাই" আমিও মনে মনে খুশি হলাম কারণ মানিব্যাগের খুচরো টাকায় রেষ্টুরেন্টের বিল দেওয়ার পর মানিব্যাগটা শূন্য হয়ে গেছে। সেদিন হেঁটেই বাড়ি ফিরলাম। রাতে রিয়া কল দিয়ে বললো ঘোরার ফাঁকে যে ছবি তুলেছিলাম সেগুলা ওকে পাঠাতে কিন্তু আমার এমবি নেই! এমবি যে কিনবো সেই টাকাও পকেটে নেই। আমি ওকে পাঠাচ্ছি বলে যখন পাঠাচ্ছিনা তখন সে হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার এমবি নেই। কিছুক্ষণ পর ১০০ টাকা ফ্লেক্সি এসেছে বুঝতেই পেরেছি এটা রিয়ার কাজ। ওকে ছবি গুলো পাঠিয়ে কল দিয়ে বললাম,"ভালোবাসো আমাকে?" "হুম" "এত বেশি কেনো ভালবাসো?" ওর আম্মু আসতেছে তাই পরে কথা বলবে বলে ফোনটা কেটে দিলো। আমি কল দিছি বলেই রিয়া মিথ্যা বলেছে। রিয়া যদি কল দেয় পুরো রাত কথা বললেও একবারও বলেনা আমার আম্মু আছে। এসব ভাবতে ভাবতে শুনতে পেলাম, 'এইই লইবেননি চুড়ি, আলতা, টিপ, শাঁখা, সিঁন্দুওওওওর" পিছনে ফিরে দেখলাম ফেরিওয়ালা! সেই ফেরিওয়ালার থেকে ১টা টিপের পাতা, একজোড়া কাঁচের চুড়ি, দুইটা ছোট ছোট চুলের কাঁকড়া, এইসব ৮০ টাকা দিয়ে কিনে হাঁটা ধরলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর মনে পড়লো রিয়ার চুলের বেণির কথা মেয়েটাকে চুলে বেণি বাঁধলে অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগে। চুলের বেণি বানাতে যেই ফুল লাগে সেরকম দুইটা ফুলের জন্য পেছনে দৌড়ে গেলাম কিন্তু সেই ফেরিওয়ালাকে সেখানে পাইনি। মনমরা হয়ে হাঁটা শুরু করলাম। এতক্ষণে হয়তো রিয়া অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে! লাইব্রেরিতে গিয়ে একটা রঙ্গিন কাগজ কিনে জিনিসগুলো মোড়ালাম, টেপ দিয়ে একটা টকটকে লাল গোলাপ গেঁথে দিলাম। কাগজ আর গোলাপের দাম ২০ টাকা। কাগজের উপরে লিখে দিলাম! "আমার ১০০ টাকার ভালোবাসা সাথে দুইটা স্যাড ইমুজিও এঁকে দিলাম।" দূর থেকে দেখলাম রিয়া নীল রঙের শাড়ি পড়ে তার কোমর পর্যন্ত চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে পেছন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ১০০ টাকার ভালোবাসাটা পেছনে রেখে টিপ টিপ করে হেঁটে ওর কানে কানে গিয়ে বললাম, "ভালোবাসি, ভালবাসবো আজীবন!" ও সামনে ফিরতেই ওর সব কটা চুল আমার মুখ স্পর্শ করলো। অনেক বেশী খুশি হয়ে বললো, "আমার গিফট" মুখটা ফ্যাকাশে করে পেছন দিক থেকে ১০০ টাকার ভালোবাসাটা বের করলাম। রিয়া কৌতূহল নিয়ে বললো, "এটা কি?" আমি ওকে লেখাটি দেখালাম। ও রেগে কড়মড় হয়ে বললো,"লেখাটি পড়েছি কিন্তু এই স্যাড ইমুজি কেনো সেটাই জানতে চেয়েছি!" নীচু স্বরে বললাম, "এত কম টাকার গিফট দিলাম তাই স্যাড ইমুজি" ও আমার পকেট থেকে কলম বের করে স্যাড ইমুজিগুলো কেটে দুইটা হ্যাপি ইমুজি এঁকে দিলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো," আমাকে এই ১০০ টাকার ভালোবাসলেই হবে সারাজীবন।" "জানো, এই ১০০ টাকা আমি বিশ দিন ভার্সিটিতে হেঁটে গিয়ে বাঁচিয়েছি।" এটা বলার পর রিয়া আমাকে আরো শক্ত করে জাপটে ধরলো। ১০০ টাকার ভালোবাসা।