নয়নতারা
নয়নতারা
।বুকের উপর থেকে এক ঝটকায় তীব্র শীতের শিন-শিনে যন্ত্রনাটা সরিয়ে দিয়ে চট করে উঠে পড়েছিলাম সেদিন। পিঠের উপর সদ্য চেপে বসা সিগারেটের পোড়া দাগটা তেমন করে আর জ্বালাতে পারেনি। হয়তো পারতো।কিন্তু সব জ্বলুনি কী আর সহ্য করা উচিৎ। সহ্য! সবটুকুই সহ্য। মা বলে,' মেয়েরা সব সহ্য করতে পারে। আমি পারিনা তো? নিদারুণ শীতেও মাটিতে শুয়ে থেকে ভেবেছি, কই! আমার তো শীতবোধ হচ্ছে না। এটাও কী সহ্যশক্তি নাকি আমিই ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছি।নিজের ফর্সা, সুন্দর শরীরটাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আয়নায় দেখি।রোজ দু'বেলা নিয়ম করে দেখি। ভাবি,ভেতরে জমতে থাকা আগ্নেয়গিরিটা যদি এই মুহুর্তে ফেটে যায়, চলকে পড়া লাভাগুলি ঠিক কেমন লাগবে। থিতিয়ে দেবে কী,এই অপূর্ণ শরীরের তৃষ্ণা, নাকি চামড়ার নীচে লুকিয়ে থাকা দানবটা গিলে খাবে, এক আধখানা নিষ্পাপ জীবন। কেউ-কেউ যুদ্ধে জিতে যায়, আর আমার মত যারা,যারা জানে যুদ্ধ মানে রক্ত,উপচে পড়া,চুঁইয়ে পড়া রক্ত। শিরা-উপশিরা ফেটে সেই রক্ত যখন ভিজিয়ে দেয় স্যালিভায় ভেজা জিভ। চেটে-চেটে খেয়ে নিতে হয় সেই রক্ত। নইলে শ্বাপদের দাঁত চিড়ে নেবে সমস্ত পেলব আঁধার। আমি নয়নতারা। এই গল্প আমার বেঁচে থাকার। আমার হাড়-মজ্জায় যে পোকাদের সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে তাদের জীবাশ্ম হয়ে যাওয়ার আগে আমাকে খুঁজে নিতে হবে সেই দ্বীপ যেখানে খোলা চুলে,নগ্ন শরীরে বালি মেখে নেমে যাবো সমুদ্রের বুকে। বুনো ঝোপঝাড়ের গন্ধ ছিটিয়ে দেবো অন্তরালের চোখে। চোখ খুলে দেখবো মরা মাছেদের পাশে শুয়ে আছি। একা। আমি বেঁচে আছি।
