STORYMIRROR

Ashish Mahato

Abstract Classics Others

3  

Ashish Mahato

Abstract Classics Others

লকডাউনের দিনগুলো

লকডাউনের দিনগুলো

3 mins
191


                   ১


প্রতিটি দুপুরের একটা নিজস্ব রং থাকে

রোদে ঝলমল করে উঠে গলিপথ

ঘুঘু ডাকে, কাক-চড়াই বসে বাড়ির উঠোনে

তবু এখন সব ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট

বিশ্রী রঙহীন


                    ২


কোন প্রেমিকেই আর চিরকুট হাতে

গলিপথে দাঁড়িয়ে থাকে না

প্রেমিকারও ভীষণ মন খারাপ

        

                     ৩


তরুণদের আড্ডার জায়গায় এখন

সিগারেট,বিড়ির আলো জ্বলে উঠে না বলেই

ক্লাবের ভিতর এক প্রকাণ্ড অন্ধকার বসে আছে


                    ৪

স্কুল কলেজ বন্ধ

ঠিক সময় বাজারের ব্যাগ আসে না

তাই বলে আজ কাল মন খারাপ হয় না

আমার হাতে টিভির রিমোট থাকায়

টুক করে পালটে ফেলি চ্যানেল

    

    

                    ৫


আজ ১১ তারিখ আমার জন্মদিন

আমি বসে বসে ভাবছি

মা রাজরাণী হতে পারতো, বাবা রাজা

যদি আমি সিংহাসন হতাম


                   ৬   


এখন খাঁ খাঁ দুপুর

সারা শহর ঘুমিয়ে আছে

পৃথিবীর প্রাণ সৃষ্টির আগে থেকে


আমি বন্ধুদের সাথে রাত জেগে পার্টি করছি জেনেও

মা খাবার সাজিয়ে বসে আছে


                    ৭


সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে চৈত্র্য সেল বসে

মা সিরিয়ালে দাম হাঁকে

বাবা খবরে

ভাই দুজনের মুখ চেয়ে চুপ থাকে


                    ৮


আমার দাদা একসময় খুব ভালো বন্ধু ছিল

একসাথে বসে মদ খেতাম,রাত জাগতাম

তারপরের গল্পটা তো সবার জানা

ভালো বন্ধু ভালো স্মৃতি হয়


                   ৯


আজ ভোররাত দিদির জেঠশ্বশুর মারা গেলো

দিদি বললো এই দ্যাখ আকাশে এক নতুন তারা যোগ হলো


                  ১০


একমুহূর্তে আমি হারিয়ে ফেলছি

আমার চাকরি,পকেটে থাকা খুচরো পয়সা

দ্বিতীয় প্রেমিকার দেওয়া শোক

অথচ কিছুতেই হারাতে পারছি না

অসুস্থ মায়ের মেডিক্যাল প্রেসক্রিপসনটা


                   ১১


দারুণ শীত পড়েছে

আমি আর ভাই বিছানায় শুয়ে আছি সকাল দশটা অব্দি


আর পুরো সংসার

                 খিদে হয়ে মায়ের ভিতর ঢুকে পড়েছে

এবং মা কাঠের উনুনে ফুঁ দিচ্ছে


                     ১২


আগের শীতে মা আমার জন্য

উলের সোয়েটার বুনবে বলে ঠিক করেছিল

কিন্তু গরম তেলের ছ্যাঁকায় মার হাত ফুলে আসায় তা আর হয়নি

এই শীতে মা উল কিনতে গিয়ে দেখে

মুদিখানাতে এই মাসের সব টাকা দিয়ে এসেছে


অথচ আমার জন্য উলের সোয়েটার বোনার ভাবনাটা মায়ের পালটায় না


                     ১৩


একদা বাবাকে ফল,মূলের গাছ ভেবে

পুজো করে এসেছি

আর মা'কে শেকড়


প্রচন্ড খিদেতে বসে আছি আজ

অথচ গাছ থেকে কোনো ফল খসে পড়ছে না


                     ১৪


আজ রোববার পাশের বাড়ির

বিরিয়ানির গন্ধ পুরো পাড়া ছড়িয়ে পড়েছে

আমরা সকলেই আজ ঐশ্বর্যের স্বাদ পেলাম


                     ১৫


এইসময় কবিতা আসে -

"পূর্ণিমার চাঁদ" যদি "ঝলসানো রুটি" হতো

তাহলে কারো পেটে খিদে পোষা থাকতো না


                 ১৬


চাকরি বাকরি হারিয়ে

ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে বসে আছি

আর একটা শকুন মাথার উপর ঘুরে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ


                 ১৭


পাশের বাড়ির মনোজ'দার

বারো বছরের ছেলে, সকাল থেকে সারা পাড়া মাথায় করে রেখেছে

তার পোষা পাখি ময়না উড়ে গেছে বলে


সে হয়তো এখনো বুঝেনি জীবন মানে সংগ্রাম


      

                 ১৮

  

সাঁঝবেলা মনোজ'দার বৌ

সুজতাদি প্রদীপ হাতে পাড়ার মন্দিরে আসে

আর আমার চোখে অপ্সরা হয়ে ওঠে


   

                  ১৯


এই অসময়ে বড়জোর রেল ফাটক অব্দি হেঁটে যায়

তারচেয়ে বেশি হলে দামোদর নদী

নদীর পাড়ে বসে দেখি সহস্র ঢেউ এর উপর দুমড়ে মুচড়ে পার হচ্ছে আমার প্রতিচ্ছবি


                    ২০


খালি পায়ে হাঁটলে পা কেঁটে যায়

কিংবা কাঁটা ফুটে ওঠে

তারা জানে না এই পা জীবন পথে একমাত্র চলার সাথী


                     ২১


রাত হলে মনে হয় সূর্যের কোন অহংকার নেই


                     ২২


পাঁচিল টপকে প্রেমিকার রুমে ঢুকতেই

সে আমায় দস্যু ভেবে

অন্য রুমে ছুটে গেলো


                    ২৩


অন্ধকারে একা রাস্তা পার হতেই দেখি

গোপন শিরায় শিরায় পাখি কেঁদে ওঠে


                      ২৪


তুমি কথা দেওয়া কথা খুন করতে ভালো পারো


আমার বাবাও একবার চিতাবাঘ মেরে

সুন্দরবন ঘুরিয়ে এনেছিল


                     ২৫


অসময়ে কবিদের জীবনী নিয়ে ভাবি

শীতকালও এসেছে

সুতরাং সুপর্ণা আমার শুধু আমার প্রেমিকা হতে পারতো

আমি যদি ভাস্কর চক্রবর্তীর জায়গায়

"শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা" লিখে রাখতাম বছর খানে আগে


                   ২৬


আমি আর আমার পাঁচজন বন্ধু

ঠোঁটে সিগারেট নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি হঠাত্ 

প্রাইমারি স্কুলের প্রতিমা দিদিমণির সাথে দেখা

সিগারেট লুকিয়ে ম্যাডামের পা ছুঁয়ে চোখের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখি

                ভেঙে গেছে স্বপ্নেরসাম্রাজ্য


                    ২৭


দিদিমণি চশমায় আঙুল ছুঁয়ে বললো

নদীর গতিপথ ছিল তীব্র

আমার শক্ত গাঁথুনি ক্ষয়ে যাবে ভাবিনি


                    ২৮


রামু কাকার দুটো পা চলে গেছে

তার ছেলের সাড়ে সতেরো বছর বয়স

সে পাটিগণিতের পিতা পুত্রের অঙ্ক ভুল করেছিল বলে

সে আজ হয়ে উঠেছে পিতা আর তার বাবা পুত্র


                    ২৯


আজ ভাই বাবার পকেট থেকে

খুচরো পয়সা বার করে হাপপ্লেট বিরিয়ানি নিয়ে এসেছে

সে হয়তো জানে না বাঘ আর গরু এক ঘাটে জল খাই না


                   ৩০


এবার মাঠের অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে

বাবার চোখে সকাল বিকেল ভেসে ওঠছে

কাল সকালে কি রান্না হবে


Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Abstract