একাকীত্ব
একাকীত্ব


আমি, আমার বাড়ির সাদা দেওয়ালের টিকটিকি আর ফুটপাথের ইউক্যালিপটাস গাছটা...
আমি এবং আমার বাড়ির সাদা দেওয়ালে বসবাসকারী টিকটিকিটা...আমাদের দুজনের মধ্যে অমিলটা কোথায়? মাঝেমাঝেই খুঁজে বেড়াই... আমরা দুজন একই বাড়ির বাসিন্দা আমাদের মাথার উপরে এক ছাদ পায়ের নীচে একই রঙ্গীন মেঝে... কখনোসখনো আমি যে জানালার ধারে এসে দাঁড়াই-শিশু সূর্য্যের ওম অথবা মোম জ্যোৎস্না গায়ে মেখে নেব বলে... টিকটিকিটাও ঠিক তাই... আমার মতো টিকটিকিটারও কিছু সঙ্গীসাথী, ব্ন্ধুটন্ধু এখনও আছে বোধহয় কোথাও...মাঝেসাঝে তাদের দেখা পাওয়া যায়... শীত আসলেই ক্লান্ত টিকটিকিটা ঘুমাতে চলে যায়... আমারই মতো দুচোখভরা শীতঘুমে, আমি এবং আমার বাড়ির সাদা দেওয়ালের টিকটিকিটা... আমার বাড়ির সামনের ফুটপাথে একলা দাঁড়িয়ে থাকা ইউক্যালিপটাস গাছটা...ওর কথাও বলি একটু গাছটা আর আমি প্রায় সমবয়সী দুজনে হাত ধরাধরি করে বড় হয়েছি, যৌবন ছুঁয়েছি একসাথে তারপরে ব্যস্ততার দিনগুলো পেরিয়ে টেরিয়ে...আমার মতো গাছটা কিম্বা গাছটার মতো আমি দুজনেই দিব্যি দাঁড়িয়ে আছি... গত বর্ষায় এক ঝড়ো রাতে ইউক্যালিপটাস গাছটার প্রিয়ব্ন্ধু শিকড় উপড়ে উল্টোদিকের ফুটপাথে মুখ থুবড়ে... একলা দাঁড়িয়ে থাকা গাছটার মন খারাপের খবর কেউ রাখেনি গাছটার কান্না বৃষ্টির জলের সাথে... সেই বৃষ্টির মাঝরাতেই আমার টেলিফোনটা বেজে উঠেছিল বৃষ্টি, গাছের কান্না, ঝড়ো হাওয়া আর আমার হাহাকার মিলেমিশে একাকার... আমি, আমার বাড়ির সাদা দেওয়ালের টিকটিকিটা আর ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা ইউক্যালিপটাস গাছটা... তিনজনের মধ্যে অমিলটা আজও খুঁজে পাইনা .... কখনো কোনো নিশাচর রাতে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে দেখি...কোথাও কিছু নেই, শুধু ইউক্যালিপটাসের মসৃণ গা নিঃশব্দ শিশিরে ভিজে যাচ্ছে... জানালার ঠান্ডা রেলিংএ ঠেকানো আমার গাল বেয়ে সেই শিশিরের ছোঁয়া... সেই রাতেই টের পাই টিকটিকিটা এখনও মাঝেমাঝেই আমারই মতো কাকে যেন ডাকে... আমি, আমার বাড়ির সাদা দেওয়ালের টিকটিকি আর ফুটপাথের ইউক্যালিপটাস গাছটা...