সুপ্রভাত
সুপ্রভাত
লিলির মোবাইলে রোজ অনেক অজানা ম্যাসেজ আসে ফেসবুকের মাধ্যমে। যখন সময় কাটে না, লিলি সে গুলি পড়তে শুরু করে। এই রকম এক সকালে ঘুম থেকে উঠে লিলি যখন তার অজানা ম্যাসেজ গুলি পড়ছে আর বিরক্তি সহকারে ডিলিট করছে, একটি ম্যাসেজে চোখ আটকে গেল। ছোট একটি বার্তা, " সুপ্রভাত লিলি, তোমার প্রতি সকাল হোক তোমার প্রিয় রঙিন কাগজের চরকির মত রঙিন। "
রঙিন কাগজের চরকির কথা তো খুব বেশি কেউ জানে না।প্রোফাইলে র ছবি বড় করে দেখার চেষ্টা করে ও লাভ হল না, একটি পাখির ছবি দেওয়া। নামটি ও এমন বোঝার উপায় নেই ছেলে না মেয়ে।
সারা দিন লিলি ভাবতে লাগলো কিন্তু কোনো লাভ হল না।
পরের দিন সকালে ও এক ই ম্যাসেজ এল। এভাবে গত এক মাস লিলির অভ্যেসে দাড়িয়ে গেছে ঐ ম্যাসেজ পাওয়া। লিলি তার উত্তর দিতে গিয়ে অনেক অনুনয় বিনয় করেছে তাকে সামনে আসার জন্য কিন্তু কোনো উত্তর পায় নি। লিলি রোজ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ঐ "সুপ্রভাত" ম্যাসেজের জন্য।
এভাবেই কাটছিল দিনগুলো। একদিন হঠাৎ ঐ ম্যাসেজ আর এল না। সারা দিন লিলির কোনো কাজে মন নেই। সে ঘোরে ফেরে আর ফোন নেড়ে চেড়ে দেখে। কিন্তু না কোনো ম্যাসেজ আর আসে না। অজানা ভয় লিলি কে গ্রাস করতে থাকে, সে ঠিক আছে তো?
লিলি এবার তার চিন্তার কথা, তার উদ্বেগের কথা ম্যাসেজ করতে থাকে, কিন্তু না সে দেখে না। এভাবে চলতে চলতে লিলি অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। সে রোজ তার অনুভব জানাতে থাকে আর অধীর অপেক্ষা করতে থাকে তার উত্তর পাবার জন্যে। এরকমই একটি সকালে লিলি তার ফোন টি খুলতেই খুশিতে নেচে ওঠে, আবার সেই' সুপ্রভাত'।একে একে লিলি এতদিন যা যা লিখেছিল তার সব উত্তরের জায়গায় একটি কথা ভেসে ওঠে 'লিলি দেখা করতে চাও আমার সাথে? "
লিলি সম্মতি জানাতে সে লিলির বাড়ির কাছের একটি ক্যাফেতে দেখা করবে জানিয়ে লিখলো, 'নিশ্চয়ই অসুবিধা হবেনা? "
তার মানে সে এটাও জানে লিলি কোথায় থাকে। লিলি সারা দিন নিজেকে তৈরি করল কি বলবে, কি পরে যাবে, কি পারফিউম লাগাবে ইত্যাদি। আজ যেন সময় আর কাটছে না। যথারীতি সময় লিলি রেডি হয়ে ক্যাফের দিকে এগোতে লাগলো দুরুদুরু বুকে। অনেক প্রশ্ন তার মনে--- সে চিনতে পারবে তো, সে কেমন দেখতে, সে কি সত্যিই তার পরিচিত ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে ক্যাফের ভিতর ঢুকতেই এক কর্মী একটি টেবিলের দিকে দেখিয়ে দিল। সে টেবিলে যে বসে তার পিছনের দিক লিলি দেখতে পেল আর দেখলো টেবিলে রাখা রঙিন কাগজের চরকির পাখা।
টেবিলের সামনে যেতেই চমকে উঠলো লিলি, এ যে তিতাস সেন, যাকে এক বছর আগে লিলি রিজেক্ট করে ছিল, সম্বন্ধ করা বিয়ে তে সে বিশ্বাসী নয় বলে। তিতাস লিলির দিকে একটি গোলাপের তোড়া এগোতেই লিলি গটমট করে বাইরের দিকে হাটা দিতেই তিতাস দৌড়ে এসে লিলির হাত ধরে বললো, 'সরি, আমার জন্য তোমার যদি কোন খারাপ লেগে থাকে। " লিলি ছলছল চোখে তিতাসকে বলে উঠলো, " তুমি খুব বাজে। "
উলুধ্বনি আর লোক সমাগমে লিলির আজ ফোনের ম্যাসেজ দেখা হয় নি। ফোন খুলতেই তিতাসের ম্যাসেজ, " সুপ্রভাত , আমার রঙিন চরকি, আমার জীবন কে আরো রঙিন করতে আজ আসছি আমার বরযাত্রী নিয়ে।"