The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Indira Mukhopadhyay

Tragedy Classics

5.0  

Indira Mukhopadhyay

Tragedy Classics

সুহাগ রাত

সুহাগ রাত

7 mins
3.5K


ডালে ফোড়ন দেবে কি না দেবে ভাবতে ভাবতে কিছুটা বেখেয়ালে দিয়েই ফেলল সোহাগী। খানিকটা তেল ছলাত করে কড়াইয়ের বাইরে পড়ল। কয়েকটা জিরে দুম দাম ফেটে সোহাগীর হাতের ওপরে এসে ছিটকলো। শুকনো লঙ্কাটা একটু বেশীই খরে গেল । তেজপাতা দিতেও ভুল হয়ে গেল তার। মন চঞ্চল হলে যা হয়। দোনামোনায় কাটছে ক'টা দিন। গতকালের ভেজে রাখা আধখানা রুইমাছের মুড়োটার গতি হল না যে! কি করবে ডালে সাঁতলে দেবে? ওদিকে তার দিদি বাজারে গেছে। মাংসের পিঁয়াজ, রসুন সব কেটেকুটে তাকেই নিতে হবে। কাজের বাড়ি ফোন করে জানিয়ে দিল সোহাগী। আজ সে ছুটি নিল।


সোহাগী একক মা। অর্থাত এখন মিডিয়া যাকে সিঙ্গল মাদার বলে গালভরা এক নামে অভিহিত করেছে। সোহাগীর মেয়েটা সাবালক হয়েছে। মায়ের চরিত্রের ঋজুতা আছে। সেই সতেরো বছর বয়সে সোহাগী সুন্দরবন ছেড়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিল মেয়ের হাত ধরে। মেয়ের নাম চৈতি। চত্তির মাসে জন্ম তাই সোহাগীর বাবা আদর করে নাম দিয়েছিল। সেই চৈতি এখন বেশ ডাগরডোগর। কলকাতার জল পড়ে শহুরে জৌলুস। হাতে স্মার্টফোন। সকালের কলেজে পড়ে সে। বেলায় যায় বিউটি কোর্স করতে। কন্যাশ্রীর টাকায় নিজেই ব্যবস্থা করেছে। কোর্স ফি দিয়ে ভর্তি হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে। কলেজের ফার্স্ট ইয়ারেই সরকার আবার ঘোষণা করেছে রূপশ্রী প্রকল্পের। মেয়েদের বিয়ের খরচ জোগাবেন নাকি সরকার মহোদয়া। অতি উত্তম ব্যাপার স্যাপার। সোহাগী অবিশ্যি মেয়ের বিয়ে নিয়ে অতদূর ভাবেনি কোনোদিন।সোহাগীর দিদি আদুরী কিন্তু চৈতির বিয়ে নিয়ে বেশ হুঁশিয়ার। কুড়ি একুশ বছরের সোমত্ত মেয়ে কে আর পড়াস নি বাপু। দিনকাল খারাপ। সোহাগী ভাবে দিদির যে কেন এত মাথাব্যথা! আর না পড়িয়েই বা উপায় কি? সম্বন্ধ করে পাত্র দেখে বিয়ে দেবার সামর্থ্য সোহাগীর নেই। দিদি আদুরী যবে থেকে শুনেছে ঐ রূপশ্রী প্রকল্পের কথা তবে থেকে উঠে পড়ে লাগল। চৈতির মাথা খেল। কলেজ থেকে ফর্ম তুলল। ছবি, আধার, রেশনকার্ড, মার্কশিট সব জমা দিয়ে এল এক ভরদুপুরে।


এবার? এবার আর কি? মাসীর বরের গোঁফে তা দেওয়া আর চৈতীর প্রহর গোণার শুরু। রাজপুত্তুর আসবে ঘোড়া ছুটিয়ে। বিয়ে হবে একদিন। নিয়ে যাবে সেইদিন। না, না চৈতীর বিয়ের ভূত চাপে নি কখনো। ঐ মাসীটাই কাল। মনে মনে ভাবে সে। বিয়ে মানেই পরের দাসত্ব করো। তাদের ঘরে কি আর লোকজন রেখে খায় কেউ? তার মায়ের কাজের বাড়ির মত? শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সব করতে হবে। ভোরবেলা ঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠো রে। রান্নাবান্না, মোছা কাচা আর সকলের মন জুগিয়ে চলা। কলেজের বন্ধুরা এ নিয়ে খুব আলোচনা করে। দ্যাখ এক্ষুনি আমরা বিয়েশাদী করছি না। ডিগ্রী পাই। যাহোক একটা কাজ বাগাই। মায়ের কাজের বাড়ির সব দিদিমণিরা কি সুন্দর ল্যাপটপ কাঁধে সকালবেলাতেই বেরিয়ে পড়ে আপিসে যায়। কি স্বাধীন জীবন তাদের। নিজের টাকায় নিত্য নতুন কুর্তি, বন্ধুদের সঙ্গে ফূর্তি।

মন উশখুশ করে কলেজ পড়ুয়া চৈতীদের। তাদের হাতে পয়সাই বা কোথায় যে ঘন ঘন শপিং মলে যায় কিম্বা মাল্টিপ্লেক্সে যায়! সোহাগী অবিশ্যি সান্ত্বনা দেয় মেয়েকে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখ। দুটো পয়সা রোজগারে মন দে। আজ কাজ করতে পারতাম বলেই তোর বাবাকে ত্যাগ দিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম। নয়ত কি হত বল আমাদের্! ভিক্ষে করে খেতে হত। আজ তো সম্মানে বাঁচি রে আমরা। হাত পাতি না কারো কাছে। তোকে কলেজ অবধি পাঠাতে তো পেরেছি। চৈতী ভাবে ঠিক‌ই বলছে তার মা।

অগ্যতা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছটা চৈতীর মাথায় গেঁথে গিয়েছিল।

বিউটিকোর্সের দিদিমণিকে ম্যাডাম বলে চৈতীরা। ম্যাডাম বলেছিল প্রথমে তিনহাজারে ঢুকলে প্রাথমিক বিউটিশিয়ান কোর্স। তারপরে সার্টিফিকেট ছ'মাস পর। ছ'মাস পর আবার চারহাজার দিলে ব্রাইডাল মেকাপ। আবার সার্টিফিকেট। তারপর আবার তিনহাজার দিলে ফিজিওথেরাপির প্রিলি। আবার সার্টিফিকেট। চৈতীরা কিন্তু প্রথম থেকে একবারও সার্টিফিকেট পায়না। এনরোলমেন্ট চলতেই থাকে। সোহাগী ভাবে। মেয়ে তো নিজের কন্যাশ্রীর টাকাতে কোর্স করছে। কলেজের ফি দিছে, ব‌ইপত্র কিনছে। পরে অবিশ্যি চৈতীর এই ম্যাডামকেও একটু একটু ঠগ বলে মনে হয়েছে। তবে দশহাজার খরচা হবার আগেই সিঁদুর দান প্রক্রিয়া শেষ। চৈতীর গোত্রান্তর হয়েছে।


এদিকে শহর তথা রাজ্য তথা দেশ জুড়ে থিকথিক করছে অসাধুদের উপদ্রব। তাদের উত্তরোত্তর রমরমায় প্রায়শই ফাঁদে পড়ে যায় চৈতীর মত মেয়েরা । তন্ত্র, বশীকরণ, ব্ল্যাক ম্যাজিকের পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণের প্রলোভন। যাব কি যাব না করতে করতে স্বয়ং চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করে এল চৈতী আর আর দুই বন্ধু।

প্রাতঃকালীন কলেজ তাদের। সারাটা দিন অঢেল সময়। কোনোদিন সন্ধ্যায় কেটারিং এর কাজ করে কিছু হাত খরচ প্রাপ্তিতে মন ভরে ওঠে কানায় কানায়। কোনোদিন কোনো ইভেন্টের কাজের খোঁজ পেয়ে বিরিয়ানির প্যাকেট মায়ের হাতে তুলে দিয়ে আনন্দ পায়।মদ্যা কথা এহেন কন্যাশ্রীরা বসে থাকেনা। লক্ষ্মীর ভাঁড় উপচে ওঠার চেষ্টায় যারপরনাই ছুটে বেড়ায়। এমনি চলছিল বেশ। কলেজের আরেক বন্ধুর ফাঁদে পড়ে এক রবিবার কালিঘাট থেকে মেট্রো ধরে কবি নজরুল এবং সেখান থেকে অটোর ভাড়া গুণে মেয়ের দল অবশেষে পৌঁছায় সোনারপুরের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ফাঁদ পাতা ছিল সেখানে।

গল্পের শুরু এইবার। বিশাল লাইন। প্রচুর কন্যাশ্রীরা লাইনে। তাহাদের মাথাপিছু একজন অভিভাবক। প্রধানত:তাদের মায়েরাই এসেছে কারণ তাঁদের টুপি পরানো সহজ । বেঞ্চিতে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে তারা । একসময় ডাক পড়ে চৈতীর।যাদের মাসিক আয় সর্বসাকুল্যে পাঁচ-ছ'হাজারের বেশী নয় তাদের এখুনি মাত্র আট হাজার টাকা দিতে বলা হল। এর বিনিময়ে মেয়ে এবং তার মা পাবে বিস্তর সুবিধা।অপুষ্টি নিবারক মাল্টিভিটামিন ক্যাপস্যুল পাবে। মখমলি ত্বকের জন্য অনন্য সাধারণ বডি লোশন, রেশমী ও পশমী চুলের জন্য ভাইটালাইজিং শ্যাম্পু, ব্রণ, মেচেতা চিরতরে দূর করবার ফেসপ্যাক, মেনোপজের পর মেয়েদের মায়ের শরীর ঠিক রাখবার জন্য "অল উইমেন ওয়েল বিইং' নামে বিশেষ বড়ি এবং আরো কতকিছু থাকবে সেই আট হাজারী গিফট হ্যাম্পারে।


বিক্রি না করতে পারলে নিজেরাই ব্যবহার করে দেখ এই প্রোডাক্টের মাহাত্ম্য। পেলেও পেতে পারো অমূল্য রতন! তবে ফোকটে ব্রেনওয়াশ টা হয়েও হল না। শুধু যা একটা ছুটির দিন নষ্ট হল আর আসা যাওয়ার ভাড়াটুকুনি।

এর আগে ইলেভেন ক্লাসে ভর্তি হবার পর আচমকা কন্যাশ্রীর টাকা আসার খবর জেনেছিল চৈতী। ক্লাসটিচার সর্বসমক্ষেই জানিয়েছিলেন সেইসব মেয়েদের নাম যাদের টাকা ব্যাঙ্ক একাউন্টে ঢুকেছে। ব্যাস্! সেই কথা চাউর হবার পরেই এক বন্ধুর মামা চাকরীর প্রলোভন দেখিয়েছিল মেয়েগুলোকে। রাতারাতি বায়োডেটা জমা দিতে বলেছিল মেটিয়াবুরুজে তার অনামা কোম্পানিতে। সেখানে চৈতীরা হাজির হয়েই শুনেছিল মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে চাকরী দেবার খবর। ভুলেও পা বাড়ায় নি তারা।


এবারেও গ্যাঁটের কড়ি খরচা করে দলে দলে কন্যাশ্রীরা সেই ফাঁদ এর জাল থেকে মুক্ত করে ফিরে এল সে যাত্রায়। পিরামিড ব্যবসায়ের প্রলোভনের ফাঁদে পা দেয় নি তারা সেটাই রক্ষে। ফিরতে ফিরতে চৈতী আর তার বন্ধুরা বলল আটহাজারী চাকরি? আটহাজারের বিনিময়ে। আর আছে রহস্যের মোড়কে আবৃত রূপলাগির বিজ্ঞাপন।

আমরা স্যানিটারি প্যাড কিনতে পারিনা, জ্বর হ‌লে প্যারাসিটামল মায়ের কাজের বাড়ি থেকে চেয়ে এনে খাই আর আমরা করব এই কাজ? চৈতী বললে, আমার মায়ের কাজের বাড়ির দিদিদের দাতব্য করা সালোয়ার কামিজ টেঁকে নিয়ে পরে দিন কেটে গেল রে। আমাদের আবার শরীর ভালো রাখার ভিটামিন বড়ি আরা রূপ চর্চার জিনিষ!

চৈতীর এক বন্ধু বলল এদের সংখ্যা বাড়বেই। আশ্চর্যের কিছু নেই। বেকারত্বের হাহাকার। লোক ঠকিয়েই খায় এরা । আমরাও বেকার।চাকরীর জন্যে মরিয়া আমরা । এর থেকে ভলো আমাদের বিউটি কোর্স শেষ করে নাপতেনির কাজ। মানুষকে তো আর ঠকাই না আমরা।


এ যাবত জীবনটায় শুধু ঠগ দেখে আসছে চৈতী। মায়ের মুখে শুনে আসছে ছোটবেলা থেকে তার ঠগ-জোচ্চর বাপের কথা। মেয়ের জন্ম দিয়েছিল সোহাগী। তাই তার বর আরেক মেয়েছেলের সঙ্গে ভেগে পড়েছিল। আসলে সোহাগীর বিয়ের পর থেকেই কানাঘুষো শুনত তার বরের খারাপ স্বভাবচরিত্রের কথা। চৈতীর জন্ম কেবলি উপলক্ষ মাত্র। সোহাগীর বাপের কাছ থেকে কড়ায় গণ্ডায় পণ আদায় করে বিয়ে করেছিল চৈতীর ঠগবাজ বাপ।

ফাল্গুনের শেষ বিয়ের দিন ছিল সেদিন। চৈতীর মাসী আদুরী শুধুমাত্র শাঁখা সিঁদুর দিয়ে এক পাত্রের সঙ্গে চৈতীর বিয়ে দিয়ে দিল। চেনাশোনা পাত্র। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সেলস এর কাজ করে। নিজেদের ঘর। মন্দিরে বিয়েটা সেরেই নিয়ে এসেছে আদুরী। এসেই বোন সোহাগীকে বলেছে, শোন্‌ একটা নয়া পয়সা লাগল না, তাই এ যাত্রায় বিয়েটা দিয়েই দিলাম। এমন রোজগেরে পাত্র হাতছাড়া করতে নেই, বুঝলি?


মাছের মুড়োটা ডালে ফেলে ঘেঁটে দিল সোহাগী। ভাগ্যিস মুড়োটা কাল ভেজে রেখেছিল সে। একটু পিঁয়াজ, রসুনের ছঁক দিয়ে ফালাফালা করে টমেটো কেটে ডালের মধ্যে ফেলে দিল। বুকের ভেতরটা যেমন উথালপাথাল হচ্ছিল তেমনি ডালের কাঁটায় মাছের কাঁটায় সব সুস্বাদু মশলা মিশে গিয়ে ঢেউ উঠল কড়াইতে। একটা মাত্তর মেয়ের জামাই ঘরে এসেছে বিনা নিমন্ত্রণে। ভাত বেড়ে তো দিতে হবে সোহাগীকে। কোনো দাবীদাওয়া নেই যাদের। মাছের মাথা দিয়ে একথালা ভাত তো সে দিতেই পারবে আজ। বুকের ভেতর থেকে ঘামে ভেজা দুটো পাঁচশো টাকার নোট বের করে আদুরীকে বলল, বাজারে যা দিদি। মুরগী, মাছ নিয়ে আয়।জামাইয়ের জন্যে মিষ্টি আর দই আনিস একটু ।আমার চৈতীর বিয়ের দিন। আমরা একটু ফিষ্টি করব না? কথায় বলে জামাইয়ের জন্য মারে হাঁস, গুষ্টি শুদ্ধ খায় মাস।


বইয়ের পর চৈতীর কলেজ যাওয়াটা চালু র‌ইল তবে শ্বশুরবাড়ির নির্দেশে ঐসব বিউটি কোর্স টোর্স মঞ্জুর হল না। এখন চৈতী কলেজ থেকে রোজ ফেরে আর তার শ্বশুর শুধোয়, তা বলি রূপশ্রীর টাকাটা কবে আসবে গো বৌমা? চৈতী বোঝে তার চতুর মোসো আর এই শ্বশুর খুব বন্ধু।একেবারে হরিহর আত্মা। টাকাটা পেলে বেশ ভালোই ভাগ বাঁটোয়ারা হবে দুজনের মধ্যে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। জীবনে আরো একবার ঠগ দেখল সে। তবে এবার একসঙ্গে দুজন, এই যা। কোথায় যাবে এবার চৈতীরা? ঠগ বাছতে যে গাঁ শহর সব উজাড়!

সেই ফাগুনের সোহাগ রাতে চৈতীর বর সোহাগীর মেয়েকে আদরে ভরিয়ে দিল । সোহাগী সেদিন ঘরের বাইরের দালানে শুয়েছে। মাঝ রাতে সে শুনতে পেল মেয়ের গলা... তাঁর জামাই কে বলছে সে, হ্যাঁ গো তুমি আবার সকলের মত জোচ্চুরি করবে নাতো? 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy