সাহিত্যের হাল
সাহিত্যের হাল


হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য এবং সাহিত্যচর্চা।( সুব্রত বালা, মাষ্টার্সে অধ্যায়নরত, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বাংলা বিভাগ।)
সুশিক্ষিত মানেই স্বশিক্ষিত নয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত রাষ্ট্রগুলো উন্নতির শীর্ষে অবস্থান করছে কিন্তু আমরা দিন দিন সমাজ বাস্তবতার নানান দিক থেকে নিম্নস্তরে ধাবিত প্রধান কারণ কি? তাহলে কি আমরা সু শিক্ষিত হয়েও স্বশিক্ষিত হতে পারছিনা? আপাতত তাই তো মনে হচ্ছে। আসলে আমাদের সমাজের নানান নিয়ম কানুন এমন ভাবে পরিবর্তন হচ্ছে তাতে আমরা উন্নতির শিখরে ধাবিত না হয়ে নিম্নগামী হয়ে যাচ্ছি।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যায় যে, ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্টারনেট ইত্যাদি এই সামাজিক মাধ্যম গুলোর মাধ্যমে আমরা কি শিখছি? বর্তমানে বিশ্বকে ইন্টারনেটের ভাষায় গ্লোবাল ভিলেজ বলা হয় কারণ আমরা আমাদের হাতে থাকা একটি স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ দিয়ে পৃথিবীর কোথায় কি হচ্ছে বা হয়েছে সব জানতে পারছি কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ যুবক-যুবতীরা এটাকে ভালো কাজে ব্যবহার না করে খারাপ উদ্দেশ্য ও খারাপ কাজে ব্যবহার করছে। মনোবিকাশ উন্নত না হওয়ার এটাও একটা প্রধান কারণ।
আমার বয়স যখন পাঁচ কিংবা ছয় তখন দেখতাম আমার দাদু এবং পাড়ার কিছু মুরুব্বীরা অবসর সময়ে পুরাতন কিছু বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করতেন এবং পড়তেন। পঞ্জিকা পড়তেন জ্যোতিষ শাস্ত্র সহ নানান বই তারা অধ্যায়ন করতেন। এক কথায় সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এবং বিভিন্ন বই নিয়ে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে এগুলো একদমই চোখে পড়ছে না। গ্রামে গ্রামে যুবসমাজের হাতেও স্মার্টফোন কিন্তু তারা ফেসবুক-টুইটারে ভালো কিছুর বদলে খারাপ কিছু করার জন্য মাতাল হয়ে থাকে। সেই দাদুদের আমলের ঐতিহ্য এবং সাহিত্য চর্চা গুলো এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। খেলাধুলার কথা ধরা যাক, যেহেতু আমি গ্রামে বড় হয়েছি আমি যখন চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি তখনও আমাদের গ্রামে ফোনের প্রচলন ছিল না।বিকেল বেলা পাঠশালা থেকে ফিরে মাঠে খেলতে যেতাম সিজন অনুযায়ী ক্রিকেট-ফুটবল কাবাডি আরও বিভিন্ন ধরনের গ্রাম্য খেলা খেলতাম গুরুজনরা আমাদেরকে উৎসাহ দিতেন। কিন্তু বর্তমানে মাঝেমধ্যে যখন বাড়িতে বেড়াতে যাই যে যার কাজে ব্যস্ত কারো খেলাধুলার সময় নেই পড়াশোনার ফাঁকে একটু সময় পায় সেটা স্মার্টফোনে গেম খেলে বা ফেইসবুকিং করে কাটিয়ে দেয়। তাহলে প্রশ্ন এখানে সমাজের কি আসলেই উন্নতি হলো নাকি দিন দিন অধঃপতন হচ্ছে?
ছোটবেলায় যখন বুঝতে শিখেছি তখনই দেখলাম ঘরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ কবি-সাহিত্যিকদের ফটো। কিন্তু বর্তমানে খুব কম বাড়িতে ঢুকে দেখা যায় শিক্ষামূলক কোন ফটো দেয়ালে আছে। এর মাধ্যমে এটাই বোঝা যাচ্ছে যে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য এবং সাহিত্য চর্চা। সাহিত্য চর্চা করে অবশ্যই আমরা স্বশিক্ষিত হতে পারি। স্মার্ট ফোন ল্যাপটপ ব্যবহার করে আমাদের ভালো জিনিস গুলো বুঝতে হবে এবং সেই বিষয় জ্ঞান আরোহন করতে হবে। আশা করি এই আধুনিকতার যুগে তাহলে আমরা আর পিছিয়ে থাকব না উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো।
আমাদের চিন্তা চেতনাকে বিকশিত করতে হবে তা না হলে খুব শীঘ্রই আমরা আরো বেশি খারাপ পরিস্থিতির শিকার হব।
"জয় হোক বাঙালি জাতির, জয় হোক আধুনিকতার।"