পুষ্পাঞ্জলি : শারদ সংখ্যা
পুষ্পাঞ্জলি : শারদ সংখ্যা
প্রত্যেকবারের পুজোর মত এইবারেও পুজো এসে গেল, কিন্তু এই বারের পুজোটা বেশ আলাদা অনেক কান্না, অনেক হাহাকারের মধ্যে এলেন মা দুর্গেশনন্দিনী ,কেননা আমরা সবাই জানি সারা পৃথিবী জুড়ে করোনাভাইরাসে প্রচুর মানুষ মারা গেছে ৷ কিন্তু তবুও আমরা মনে করি মা আসছেন তাই সবকিছু মঙ্গলময় হয়ে উঠবে, তাই পাড়ায় পাড়ায় পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে, কম বেশী হলেও মা আমার জন্য নতুন জামা-কাপড় এনেছেন,
ও!! আমি কে সেটা তো জানাতেই ভুলে গেছি ,
আমার বাড়ির শোভাবাজারে...
আমার বাবার নাম সহ সোহম সেন...
মায়ের নাম অনন্যা সেন,...
আমি অজানা... ৷
আমার নিজস্ব একটা বুটিক আছে ,আমি বরাবরই চাকরি করতে চাইনি ,নিজের একটা কিছু করতে চেয়েছি ৷দেখতে দেখতে এসে গেল ষষ্ঠী ,আজ মায়ের বোধন পুজো মানেই তো খাওয়া দাওয়া আর আমার মা খুব ভালো রাঁধেন ৷দেখতে দেখতে এসে গেল সপ্তমী ,সপ্তমীতে মায়ের পুষ্পাঞ্জলী হয় ৷ আর অনেক বয়স্করা অঞ্জলি দিতে যান, সপ্তমীর সারাদিন খাওয়া-দাওয়া বন্ধু-বান্ধবদের আসা,এইসব আনন্দের মধ্যে কেটে গেল সারাটা দিন। রাত্রি যখন শুতে যাচ্ছি তখন মা এসে বললেন।
কাল তাড়াতাড়ি উঠে পড়িস পুজো দিতে যেতে হবে, মা চলে যাওয়ার পর আমি শুয়ে পড়লাম।তারপরে শুয়ে শুয়ে অনেক পুরনো কথা আমার মনে পড়ে গেল, মনে পড়ল অভিরূপদার কথা।তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম, আমি ভোরবেলা উঠে পড়লাম স্নান সেরে নতুন শাড়ি পড়ে যখন নিচে নামলাম তখন দেখতে পেলাম মা পুজোর জন্য ডালা সাজাচ্ছেন। মা প্রত্যেকবারের মতো সিঁদুর,আলতা,লাল পাড় সাদা শাড়ি, ফল, মিষ্টি দিয়ে সাজিয়েছে।আমাকে দেখে মা বলল তাড়াতাড়ি চল না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আমি শুনতে পেলাম মাইকে ঠাকুরমশাই মন্ত্র পড়ছেন,এরমধ্যে মনে পড়ল অভিরূপদার কথা চার পাচ বছর হয়ে গেছে অভিরূপদা বিদেশে চাকরি নিয়ে চলে গেছে, এবারে কি অভিরূপদা আসবে,তার সঙ্গে দেখা হবে।যদিও আমি জানি অভিরুপদার পছন্দ ছিল বৈশালী কে, এত বছরে হয়তো তাদের বিয়েও হয়ে গেছে। কিন্তু আমি সেদিনও ভালবাসতাম, আজও ভালবাসি।এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে পুজো মণ্ডপের সামনে এসে পড়েছি আমি বুঝতে পারলাম না, যাইহোক মা বললেন চল পুজোর ডালাটা দিয়ে আমরা অঞ্জলিটা দিয়ে আসি। যখন অঞ্জলীর জন্য গিয়ে দাঁড়িয়েছি তখন দেখি,অভিরূপদার মা আমার মাকে ডাকছেন, যাইহোক দুজনের মধ্যে কি যে কথা হলো আমি তো জানিনা দেখলাম সবাই মিলে আমার মাকে অঞ্জলি দিলাম অঞ্জলি শেষ করে যখন বাইরে বের হলাম তখন আমার মা আমাকে ডাকলেন আর বললেন যে একটু পুজো মন্ডপের পিছনে যেতে হবে। সেই শুনে আমি তো অবাক হয়ে গেলাম, যাইহোক আমি মায়ের সঙ্গে গেলাম গিয়ে দেখি সেখানে অভিরূপদার মা অভিরূপদা কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, সবথেকে আমার আশ্চর্য লাগল যে অভিরূপ দ্য হুইল চেয়ারে বসে আছে।
আমি ছুটে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি করে এরকম হলো,
তো অভিরূপদার মা বললেন যে গাড়ির একটা অ্যাক্সিডেন্টে পায়ে চোট লাগার জন্য হাঁটাচলা করতে পারছে না
কিন্তু ডাক্তাররা বলেছেন ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু সময় লাগবে তাই ও বিদেশ থেকে এখানে চলে এসেছে,
সেই সব শুনে আমি অভিরূপদার সঙ্গে কথা বলতে গেলাম।
প্রথমে জিজ্ঞাসা করলাম অভিরূপদাকে বৈশালী কে তো দেখতে পাচ্ছি না,...
কারণ আজকে তো বৈশালীরই তোমার পাশে থাকার কথা,
এই কথা শুনে অভিরূপদা মুখ নিচু করে ফেললেন।
বেশ কিছুক্ষণ বাদে বলল এক্সিডেন্ট এর জন্য বৈশালী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, আমি বুঝতে পারিনি যে বৈশালী আমার শরীরটাকে ভালোবাসো আমাকে নয়।
এসব কথা বলতে বলতে হঠাৎ অভিরূপদা আমার হাত ধরে বলল, সেদিন আমি তোমাকে আঘাত দিয়ে চলে গেছিলাম পারলে আমায় ক্ষমা করো।
সেই কথা শুনে আমি এই প্রথম অভিরূপদাকে বললাম আমি সেদিনও তোমাকে ভালবাসতাম আর আজও তোমায় ভালোবাসি, এই কথা শুনে অবাক হয়ে অভিরূপদা আমার মুখের দিকে তাকালেন, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন আমাকে দেখতে পাচ্ছ কি অবস্থা যদিও ডাক্তারা বলেছেন আমি সেড়ে যাব,কিন্তু সেটা কবে ডাক্তাররা বলেননি।
সেই কথা শুনে আমি বললাম আমি অভিরূপদাকে ভালোবাসি অভিরূপদার শরীরটাকে না,এটাই বুঝি তুমি আমায় চিনতে ভুল করেছিলে।এই কথা শুনে অভিরূপদা আমার দুই হাত ধরে অঝোরে কেঁদে ফেলল আর আমার মনে হল এই মহাঅষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলী দেওয়া আমার সার্থক হয়েছে।