পুজোর গন্ধ এসেছে
পুজোর গন্ধ এসেছে
-বৌদিমনি দেখে নাও, তোমার ঘর দোর কেমন ঝকঝকে করে দিয়েছি গো!
-ঝুলটুল গুলো সব ঝেড়েছিস তো?
-হ্যাঁ গো, কোত্থাও কোনও ঝুল দেখতে পাবে না।
-বেশ,রান্নাটা শেষ করে ফেল এবার যা।
- আচ্ছা, বউদিদি বলছি কি..
- হুম বলতে হবে না,এই নে টাকাটা নিয়ে যাস।
-ঠিক আছে বৌদিমনি, আসলে মেয়েটা ঘ্যানঘ্যান করছিল নুতন জামার জন্য..আর আমারও ওকে একটা লাল ফুলোফুলো জামা পরানোর খুব শখ জানো..
-জানি রে, তোর দিদিমণি ও ছেলেবেলায় এরকমই বায়না করত.. আর আমিও শখ করে কত সাজাতাম! এখন চাকরি বাকরি নিয়ে গিন্নীবান্নী হয়ে আর....
-দিদিমণি পুজায় আসবে না?
-বোধহয় আসতে পারবে না।জামাই নাকি ছুটি পায় নি..
- তোমার একা একা লাগবে না!?
- ওই কুহুটার কথা মনে হবে একটু, তবে তোরা আছিস না আমার? গতবারের মত এবারও তোকে আর তোর মেয়েকে নিয়ে কয়েকটা প্যান্ডালে ঠাকুর দেখে আসব'খন।
- তোমার কল্যাণেই তো গতবারে মেয়েটা মায়ের মুখ দেখতে পেয়েছিল গো বউদিমণি,নইলে পুটির বাপ টা তো জন্ম দিয়েই বাপের কর্তব্যে ইতি টানল.. সারাদিন চুল্লুর ঠেক নয়তো ওই মালতি মাগীর ঘরে সেঁধিয়ে থাকবে..কোথায় নিজের ফুলের মত মেয়েটাকে নিয়ে একটু আমোদ-আহ্লাদ করবে পুজার দিনে,তা না..মেয়েটা আমার খুব পোড়াকপালি জানো বউদিমণি..।
-মন খারাপ করিস না বিন্তি, দেখ তো এই লাল জামাটার কথাই সেদিন বলছিলি নাকি?
-ওমা! একী গো! তুমি এই জামা কোথায় পেলে?
- পুঁটির পছন্দ হবে তো!?
- পছন্দ কী বলছ? ও কী জন্মে এ জিনিস দেখেছে!?
- বেশ তো যেদিন ঠাকুর দেখতে বেরোবি আমার সাথে সেদিন মেয়েকে ওই জামা টা পরাস।
- ওত গুলো টাকা দিলে আবার জামা টা..
-বেশ তো,ওই টাকাটা দিয়ে নিজের জন্য একটা শাড়ি কিনে নিস নাহয়..
-নাগো,আমার একখান নূতন শাড়ি আছে ওই সেন বউদি দিয়েছিলেন তার ছেলের বিয়েতে খেটে দিয়েছিলাম বলে! তারচেয়ে পুঁটির বাপটার জন্য একটা পাঞ্জাবি -পাজামা নিয়ে যাব'খন।
- হ্যাঁরে বিন্তি মানুষ টা এত অত্যাচার করে তবু তুই এভাবে ভাবতে পারিস?
- পারি গো বউদিমণি, আর যাই হোক লোকটা আমার মেয়ের বাপ.. যতদিন কারখানায় তালা পরেনি সে আমায় অবহেলা করেনি..এখন কাজ কাম নাই,বদসঙ্গে পরে..আর পুজার দিনে তো সবার অন্তত একটা নূতন বস্ত গায়ে দিতে মন চায় বল! সে যত উচ্ছিষ্ট মানুষ হোক..বছর পরে মা আসছেন বলে কথা...।
- হুম বুঝেছি।চলিস কাল নিউমার্কেট থেকে পছন্দ করে আমি তোর বরের জন্য একটা পাঞ্জাবি-পাজামা কিনে দেব, তুই বলিস না আমার পছন্দ খুব ভালো?
- আজ্ঞে বউদিমণি।