STORYMIRROR

Monapriya Roy

Drama Horror Inspirational

3  

Monapriya Roy

Drama Horror Inspirational

পড়ে থাকা চিঠি

পড়ে থাকা চিঠি

3 mins
15

রোজ রাতে ছাদে যাওয়া টা আমার এক অদ্ভুত তৃপ্তিকর অভ্যাস। প্রতিদিনের মতোই খাওয়া দাওয়া করে ছাদে গিয়ে বসলাম, হাতে একটা সিগারেট ছিল। আজকে মনটা ঠিক নেই । বিগত এক সপ্তাহ ধরে কথা কাটাকাটি চলছে ঈশান এর সাথে। কথা হচ্ছে না আর । দোষ টা অনেকাংশই আমার, আসলে মাথাটা বড্ডো গরম হয়ে যায়। নিজেকে সামলাতেই পারি না তখন। আগামীকাল অবশ্য ওর জন্মদিন ওর জন্য অনেক কিছু ভেবে রেখেছি সেগুলো পেলেই আর রাগ করে থাকতে পারবে না। সব ঠিক করে নেবো কাল।

 এসব ভাবতে ভাবতেই সিগারেট টা ধরাই, একটা টান দিয়ে গুনগুন করতে থাকি।ছাদের এক কোণায় দাড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি বড্ডো কল্পনা প্রবন, কল্পনায় আজগুবি গল্পঃ ভাবতে থাকি এমন সময় একটা শীতল বাতাস অনুভব করি, পাশে তাকিয়ে দেখি ঈশান এসেছে। আমি খানিকটা অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। এত্ত রাতে তো বাড়ির দরজা বন্ধ তবে এলো কিভাবে? জিজ্ঞেস করতেই উত্তর দিলো - " কেনো রে ভেবলি প্রথম যখন বাড়িতে পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে দেখা করতে এসেছিলাম ওরম ভাবেই এলাম " । ওহ ঈশান আমায় ভালোবেসে ভেবলি বলে। যাই হোক খুশি হলাম ওকে দেখে । তবে কোনো কথা বলিনি শুধু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ঘড়িতে তখন ১২ টা বাজতে পাক্কা আর ১ মিনিট বাকি । আস্তে করে ওর কাছে এগোচ্ছি। ১২ টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই জড়িয়ে ধরে জন্মদিনের প্রথম শুভেচ্ছা টা জানিয়ে দিলাম । তারপর একে ওপরের ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, একটু প্রেম নিবেদন করলাম দুজনে। এরপর ঈশান আমার কোলে মাথা রাখলো বললো - " একটু শেষ বারের মতন মাথায় হাত বুলিয়ে দে না রে ভেবলি " । উম! শেষ বার কেনো? মনে একটু খটকা লাগলো। তারপর থেকেই ও যেনো কেমন সব অদ্ভুত রকমের কথা বলা শুরু করে .. ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করতে যাবো এমন সময় ফোন টা বেজে ওঠে। উঠে গিয়ে ধরি । একি! ঈশানের মা কান্নায় ভেঙে পড়েছে, ফোন টা কেরে নিয়ে ঈশানের বন্ধু ধরলো। কাপানো কণ্ঠস্বরে বললো " ঈশান আর নেই " ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি যেই ঈশান আমার কোলে মাথা দিয়ে এক্ষুনি শুয়ে ছিল, যার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম জড়িয়ে ধরে আদর করলাম তাকে আর কোথাও দেখতে পাচ্ছি না । ভয় লাগছে, এক অদ্ভুত শিহরন কাজ করছে, অ্যাড্রিনালিন যেনো নিজের নিয়ন্ত্রণ টা হারিয়ে ফেলেছে । দৌড়ে সিড়ি দিয়ে নেমে ওর বাড়ি যাই । দেখি সব শেষ, সত্যিই জন্মদিন টাকে মৃত্যু দিন বানিয়ে চলে গেলো। ওর ঘরে ঢুকলাম । টেবিলে দেখি একটা ছোট্ট চিঠি আর একটা মেডিক্যাল রিপোর্ট রাখা । মেডিক্যাল রিপোর্ট টা হতে তুলে দেখি দীর্ঘ 2 বছর ধরে ঈশান ক্যান্সার এর সাথে লড়াই করে চলেছে ।সব টা যেনো কেমন অন্ধকার লাগছে । নিজেকে সামলাতে পারছিনা আর , হাতের চিঠিটা খুলি । লেখা ছিল - " ভেবলি, কার কখন কি হয় কেউ বলতে পারবে না। আমার আর তোর একসাথে থাকার সময় সীমা এখানেই সমাপ্তি ঘটলো কিন্তু, নিজেকে একা ভাবিস না আমি সবসময় তোর নিশ্বাস প্রশ্বাস অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তে জড়িয়ে থাকবো। আর এত বড়ো জিনিসটা লোকানোর জন্য ক্ষমা করিস কি করে বলতাম বল? আমার ভেবলি টা যে এসব শুনলে ভয় পায় । বলছি সময় আর নেই অনেকটা ভালোবাসি,আর হ্যা লেখালিখি টা ছাড়িস না কিন্তু। 

                ইতি 

             ঈশান "

চিঠি টা বুকের কাছে নিয়ে অঝোরে কাদতে লাগলাম । একটা অবলম্বন শেষ হয়ে গেলো আমার। আমি রোগ - ব্যাধি , খুন - জখম এসব শুনতে ভয় পাই বলে এরম ভাবে চলে গেলো । 

বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি ঈশান কে নিয়ে চলে যাচ্ছে । ওর মা কে জড়িয়ে ধরে সামলানোর চেষ্টা করি । ওর বন্ধুরা ছন্নছাড়া হয়ে আছে যেনো । 

যেনো এক ভয়ানক জন্মদিনের রাত দিয়ে গেলো ঈশান 


   - কিছু বছর পর 

 ঈশানের কথামত লেখালিখি টা আবারো শুরু করি । অনেক পরিশ্রমের পর আজ আমার প্রথম বই প্রকাশ হবে । নিজেকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে, গর্ব হচ্ছে ঈশান কে নিয়েও । ছেলেটা তখন না থাকলে হয়তো এসব কিছুই হতো না । ওই 5টা থেকে 7টা এর চাকরি তারপর বাড়িতে বাবা মায়ের সাথে অশান্তি মাথা গরম করে নেশায় মত্ত হয়ে ঈশান এর সাথে ঝামেলা করে ঘুম । এক ঘেঁয়ে জীবন থেকে তুলে আনলো ছেলেটা । আজও ওকে অনুভব করি মাঝে মধ্যে । এখনো জীবনে কাউকে আনিনি, ভাবিনি আনার কথা আর ভবিষ্যতের টা নাহয় ভবিষ্যতে দেখা যাবে । 

  এবাবা! বড্ডো দেরি হয়ে গেল বেরোতে হবে এবার। 

                ~মোনাপ্রিয়া।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama