UJJAL SAMANTA

Inspirational Others

4.4  

UJJAL SAMANTA

Inspirational Others

নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে

নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে

3 mins
825



নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে'উজ্জ্বল সামন্ত 

নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে'–সংস্কৃত শ্লোক । অর্থাৎ ভাগ্যকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। নিয়তি শব্দে অদৃষ্টে যদি কিছু ঘটার থাকে তাহলে কেউই খন্ডন করতে পারেন না। বছর পঁয়ষট্টি পৌঢ় চ্যাটার্জি বাবু ছেলে বৌমার সংসারে থাকেন। স্ত্রী গত হয়েছে বছর দশেক আগে। শিক্ষকতার চাকরির অবসরের পর পর স্থানীয় কিছু সমাজ সেবামূলক কাজে যুক্ত থাকেন। খুব সকালে উঠে হাঁটতে বের হন। সামান্য কিছু শরীরচর্চাও করেন। তারপর স্থানীয় বাজার ঘুরে এটা ওটা কিনে বাড়ি ফেরেন। সোফায় বসা মাত্রই একটা কাপ গ্রীন টি ও খবরের কাগজ বৌমা দিয়ে যায়। চোখে হাই পাওয়ারের চশমা, দু'বছর আগে ছানি অপারেশন হয়েছে। খুব ছোট লেখা পড়তে তার পক্ষে অসুবিধা । সকাল ৯টায় নাগাদ প্রাতরাশ সেড়ে আবার বেরিয়ে পড়েন। দুপুরে বাড়ি ফিরে স্নান ও খাওয়া দাওয়া সেরে একটু ঘুমিয়ে নেন। বিকেলের স্থানীয় সমাজসেবী সংস্থায় সন্ধা পর্যন্ত আলাপ আলোচনা করে বাড়ি ফেরেন। রাত নটা নাগাদ খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন । তাঁর প্রাত্যহিক জীবনের রুটিন। চ্যাটার্জি বাবুর বেশ সুখে শান্তিতেই সময় কাটছিল। মোবাইলে খুব একটা আসক্তি ছিল না আগে। ছোট ফোন ব্যবহার করতেন। মাস দুই হলো ছেলে একটি দামী অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে দিয়েছে। কলেজ পড়ুয়া নাতনির কাছে টুকটাক শিখে নিয়েছেন। নাতনি হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, মেসেঞ্জার ইনস্টাগ্রাম অ্যাপ গুলি লোড করে আইডিও খুলে দিয়েছে মোবাইলে। অবসর জীবনে মোবাইলটা এখন তার সঙ্গী হয়েছে।ফেসবুকে বেশ কয়েকশো চেনা অচেনা বন্ধুর তালিকা রয়েছে। মোবাইলে সারা দিনে নানাবিধ মেসেজ আসতে থাকে, কখনো কখনো সেলস কল, মিউচুয়াল ফান্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি। অবসর জীবনের গ্রাচুইটির ও প্রভিডেন্ট ফান্ড মিলিয়ে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা তার একাউন্টে জমা রয়েছে। এমআইএস করা আছে মাসে মাসে ইন্টারেস্ট ঢুকে যায়। মাসের এক তারিখে পেনশনের মোটা টাকা একাউন্টে ঢোকে। একদিন রাত্রে খেয়ে ঘুমাতে যাবেন, হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল অচেনা নাম্বার থেকে। কিছুটা বিরক্ত হয়েই কলটা রিসিভ করলেন। অপরপ্রান্তে এক তরুণী । তিনি প্রশ্ন করলে কিভাবে নাম্বার পেলেন, এই প্রশ্নের উত্তর সু চতুরভাবে এড়িয়ে তরুণী টি তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ও কথা বলতে ইচ্ছুক। ইচ্ছা না থাকলেও দু এক মিনিট কথা বলে রেখে দেন। অসম বন্ধুত্ব। এরপর ১ দিন অন্তর তার মোবাইলে তরুণীটি ভিডিও কল করে কথা বলে। কিছুক্ষণ কথা হয় ওদের মধ্যে। একদিন কথা বলতে বলতে যৌন উত্তেজিত করতে থাকেন চ্যাটার্জি বাবু কে। হঠাৎ তরুণী বন্ধু টি পড়নের জামাকাপড় খুলে নগ্ন অবস্থায় । চ্যাটার্জিবাবু হতবঙব হয়ে যান। ভিডিও কলটি কেটে দেন। ঠিক তারপর দিন দুপুরে তিনি বিশ্রামরত। অজানা নং থেকে ফোন আসে মোবাইলে। চ্যাটার্জি বাবু ঘুমের ঘোরে , রিসিভ করলে সেদিনের তরুণী সঙ্গে তার ভিডিও কলের রেকর্ডিংটি ওদের কাছে আছে জানান ফোনের অপর প্রান্তের লোকটি। ভিডিওর একটা স্ক্রিনশটও পাঠিয়ে দেন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন অপর প্রান্তের আচেনা লোকটি। চ্যাটার্জি বাবু বড় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তাঁর একটা সামাজিক সম্মান রয়েছে। ছেলে একটি কলেজের লেকচারার। এই ঘটনা যদি প্রকাশ্যে চলে আসে, নিজের সম্মান বাঁচাতে আত্মহত্যা করা ছাড়া, আর কোন উপায় থাকবে না তাঁর। এই ভাবছেন। লোকটি তখন ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। অনেক অনুনয় বিনয়ের পর অপর প্রান্তের লোকটির দেওয়া শর্ত অনুযায়ী কুড়ি লাখ টাকা ওর একাউন্টে ট্রান্সফার করে দেন। বিকালে আর কোথাও বের হন না তিনি। মন খারাপ করেই ইজি চেয়ারে ব্যালকনিতে বসে থাকেন। রাত্রে খাবার জন্য বৌমা ডাকলে, বলেন তার শরীর ভালো নেই। রাত্রে খাবেন না। পরদিন সকালে মর্নিং ওয়াকেও বের হন না। চ্যাটার্জিবাবু অনুপস্থিতি দেখে তার বন্ধু রায় বাবু তার বাড়ি চলে আসেন। বৌমা দরজা খুললো। চ্যাটার্জী কোথায়? বাবার শরীরটা ভালো নেই উপরের বারান্দায় রয়েছেন। বন্ধুকে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পায় চ্যাটার্জী। কি ভায়া ? কাল সন্ধ্যায় দেখলাম না ,আজ সকালেও মর্নিং ওয়াকেও তুমি নেই! আমি ভাবলাম শরীর খারাপ হয়েছে। তাই খোঁজ নিতে এলাম। তোমার মুখটা তো শুকিয়ে গেছে দেখছি ! কি হয়েছে শরীর খারাপ? চ্যাটার্জিবাবু কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে বসে থাকেন। রায় বুঝতে পারেন ওর এমন কিছু হয়েছে যেটা বলতে চাইছে না। অনেক জোড়াজুড়িতে শেষমেষ যখন চ্যাটার্জি সবিস্তারে বলেন সমস্ত ঘটনা, রায় দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, নিয়তি: কেন বাধ্যতে! যা ঘটার ঘটে গেছে। নিয়তির উপর তো কারো হাত নেই। এখন উপায় একটাই। চলো দুই বন্ধু থানায় গিয়ে একটা অভিযোগ জানিয়ে আসি। চ্যাটার্জি কিছুতেই রাজি নয় , ঘটনা লোক জানাজানি হলে ছেলে ,বৌমা, নাতনী, পাড়া পড়শী ,আত্মীয়-স্বজনের সামনে মুখ দেখাবেন কি করে! চ্যাটার্জি ও রায় দুজনেই নিঃশব্দে বসে ভাবতে থাকেন....  



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational