STORYMIRROR

dibyendu dey

Drama Horror Fantasy

3  

dibyendu dey

Drama Horror Fantasy

মুক্তির গহবরে

মুক্তির গহবরে

15 mins
235

জাহাজে কেবিন ক্রুর  কাজ করার সুবাদে কৌশিক পৃথিবীর অনেকগুলো দেশই প্রায় দেখে ফেলেছে। গত পাঁচ বছরে ইউরোপ আর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরে  সে অনেকটা সময় কাটিয়েছে ।ডকে জাহাজ লাগলেই অফিসিয়াল ফরমালিটিজ গুলো মিটিয়ে বেরিয়ে পরে নতুন দেশ, নতুন লোক, নতুন সংস্কৃতির সুলুকসন্ধানে। আবার ফিরে আসে জাহাজ ডক ছেড়ে যাওয়ার আগটা দিয়ে। জীবনটাকে বরাবরই রহস্য রোমাঞ্চে ভরিয়ে তুলতে চায় কৌশিক ।  তবে এত সব ইউরোপীয় আর আফ্রিকান দেশের মধ্যে যে দেশ তাকে বারবার টানে তা হল মিশর, এক বিস্ময়ের দেশ, যা কিনা পদে পদে রহস্য রোমাঞ্চের মোড়কে আবৃত । এদেশের পিরামিড থেকে শুরু করে, মমি, মিশরের বুক চিরে বইতে থাকা নীলনদ, অদভুত  অদভুত সব দেবতা, পৌরাণিক মন্দির , বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজবংশ ও রাজা রানিদের ইতিহাস, দিগন্ত বিস্তৃত সাহারা মরুভূমি, বেদুইনদের গ্রাম এসবই তাকে বারবার মুগ্ধ করেছে । 


এবারও জাহাজ মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া ডকে লাগতে না লাগতেই কৌশিক যাবতীয় কাজ মিটিয়ে তল্পিতল্পা নিয়ে হাওয়া। গন্তব্য গীজা নিকটবর্তী একটি বেদুইনদের গ্রাম। আগেরবার সে যখন গীজায় ঘুরতে আসে তখন গীজার পিরামিডের কাছে এক মিশরীয় বেদুইনের সাথে তার আলাপ হয় । লোকটি মাঝবয়েসি , ৬ ফুটের ওপর লম্বা , বেশ দোহারা চেহারা , পেশায় লোকাল গাইড। সর্বদা মুখে যেন রহস্যময় হাসি অবশ্য ওর আচরণ এবং কথাবার্তা এতটাই বন্ধুসুলভ  ছিল , যে কৌশিকের ওকে বেশ পছন্দ হয়ে যায় । কৌশিক একজন ভারতীয় যুবক, এই কথা জেনে বেদুইন বলে, "আমাদের দেশের মত তোমাদের দেশেও তো যুগান্ত প্রাচীন এক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল এক সময়, যার নাম মহেঞ্জোদারো, "মৃতের স্তূপ" । তাছাড়া তোমাদের দেশের দিকপাল অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, খেলোয়াড় সচিন তেনডুলকর , গায়িকা লতা মঙ্গেশকর, তোমাদের পৃথিবী-খ্যাত তাজমহল সব খবরই আমি রাখি বন্ধু , ভারতীয় সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করি বলেই।বন্ধু  ভারতীয়দের  আমি ভালোবাসি । " কৌশিক মনে মনে ভাবে লোকটা লোকাল গাইড হলে কি হবে বেশ টুরিস্টদের সাথে গল্পগুজব করে অনেক কিছুই জেনেছে ।কৌশিক পাল্টা উত্তরে সেই বেদুইনকে বলে ,"আপনাদের দেশটাও তো ভারী সুন্দর, একদম মন ভালো করে দেওয়া একটা স্বপ্নের মতো, আমাকে বারবার এদেশ টানে।"

বেদুইন লোকটি এবার তার দিকে কিছুক্ষন উদাসীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে "হ্যাঁ ঠিকই বলেছ স্বপ্নের মতোই বটে কিন্তু সব স্বপ্ন তো আর সুন্দর হয়না। এদেশ যতটা সুন্দর তার চেয়েও অধিকগুন ভয়ঙ্কর" । এই কথাটা শুনে কৌশিকের সারা গায়ে যেন একটা আশ্চর্য শিহরণ খেলে যায় । বেশ কিছুক্ষণ বাক্যালাপের পর বেদুইনটি ফোন নাম্বার দিয়ে তার গ্রামে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় কৌশিককে এবং এও বলে , "এলে আশাহত হবেনা বন্ধু , চাঁদনী রাতে সাহারা মরুপ্রান্তরের ওপর অদভুত এক আলো আঁধারির খেলা চলে, সে এক অপূর্ব দৃশ্য। জেগে ওঠে মৃতেরা, জেগে ওঠে যুগ যুগ পুরনো ইতিহাস। সে সবই তোমাকে দেখাবো আমি "। বেদুইন লোকটার কথাবার্তা কিরকম যেন একটু দার্শনিক গোছের মনে হয় কৌশিকের , কিন্তু সেই অপরূপ সৌন্দর্য দেখার লোভ তার মনকে বারবার উত্তেজিত করে তোলে । বাধ সাধে তার কাজ , সময়ের অভাবে ভদ্রলোককে বিদায় জানিয়ে  বুঁকে পাথর নিয়েই অগত্যা ফিরে আসে আলেকজান্দ্রিয়াতে।


দু'বছর পর আবারো তার হাতে সুযোগ এসেছে, ঐ অপূর্ব চন্দ্রালোকিত নিশি মরুর দৃশ্য উপভোগ করার । আজ আর তাকে কেউ আটকাতে পারবে না । ডকে নেমেই কৌশিক ফোন করে বেদুইনকে এবং জানায় আজই সে তার গ্রামে যেতে চায়। ভদ্রলোক এই শুনে যারপরনাই উৎফুল্লতা প্রকাশ করে এবং কথা দেয়  কৌশিকের অপেক্ষায় তার গ্রামের মুখে দাঁড়িয়ে থাকবে সে । 


গাড়ি দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছে গীজার সেই বেদুইন গ্রামের উদ্দেশ্যে । প্রায় এক ঘন্টা হল গাড়ি চলছে। গ্রামে পৌঁছোতে এখনও প্রায় দু'ঘন্টা বাকি। পরন্ত বিকেলের রোদে গাড়িটা কখনো নীলনদের গা ঘেঁষে আবার কখনো বা তাকে টপকে, কখনো জনবসতি দিয়ে আবার কখনো বা একেবারে নির্জন মরুপ্রান্তর দিয়ে এগিয়ে চলেছে। সমানে শুষ্ক মরুবায়ু এবং একই সঙ্গে ধূলিকণা এসে ঝাপটা মারছে গাড়িটার ভেতর। চোখে পড়ছে উটের দল, কোনোটা পোষ্য আবার কোনোটা জংলী।পরন্ত বিকেলের আলোয় আপন মনে তারিয়ে তারিয়ে খেজুর পাতা চিবিয়ে যাচ্ছে। দূরে দূরে বালির টিলাগুলো কিরকম যেন  সর্পিল আকার নিয়েছে। এসব দেখতে দেখতে আর হেডফোনে গান শুনতে শুনতে চোখটা লেগে গেছিল কৌশিকের । তন্দ্রাটা ভাঙলো গাড়ির ব্রেক কষাতে।


‌চোখ খুলতেই কৌশিক গীজার পিরামিডটা দেখতে পেল, দিনের আলো আর নেই, পিরামিডের গায়ে কৃত্রিম আলোগুলো জ্বলছে, টুরিস্টদের ভিড় তখনও কিছুটা রয়েছে। পিরামিডের চূড়োর ওপর তাকাতেই দূর আকাশে রক্তিমবর্ণ থালাটাকে দেখতে পেল কৌশিক, আর সঙ্গে সঙ্গেই মনটা ভরে গেল তার। 


‌গাড়ির ড্রাইভার ভেবেছিল কৌশিক হয়ত প্রথমবার মিশর এসেছে, নেহাতই একজন টুরিস্ট। তাই গদো গদো সুরে বলল, "একবার নামবেন নাকি স্যার, আমিই ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবো, গাইডের দরকার পরবেনা।" প্রস্তাবটা কৌশিকের ভালো লাগল না, মনে মনে ভাবল বিদেশ বিভূঁইয়ে অচেনা লোক পেয়ে দু পয়সা বেশি কামানোর ধান্দা। তাই কথা না বাড়িয়ে ড্রাইভারকে গাড়ি এগিয়ে নিয়ে যেতে বলে সে । ড্রাইভারটার ভাবটা কিছুটা হতাশ হয়েছে , অগত্যা আবার গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয় । কৌশিক ফোনের জিপিএস অন করে দেখতে পায় গন্তব্য আর মাত্র আধ ঘন্টা। 


সাড়ে সাতটার কিছু পরে গাড়ি গিয়ে থামল এক জায়গায়। কৌশিক গাড়ি থেকে নেমে প্রথমটায় কিছুই দেখতে পেল না , যে দিকেই চোখ যায় ধূ ধূ মরু প্রান্তর, জনবসতির কোন চিহ্নই নেই। চাঁদের আলোয় চারপাশটা কিরকম বালির সমুদ্রের মতো দেখাচ্ছে। সে প্রথমে গাড়ি ভাড়া মেটালো না, এসব জায়গায় চেনাশোনা কারুর সঙ্গ না পেয়ে গাড়িটাকে এরকম ভাবে ছেড়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না সেটা সে ভালো মতোই জানে, তাই প্রথমে বেদুইন ভদ্রলোককেই ফোন করল। কিন্তু একি, লোকটার ফোন তো এই নিয়ে পর পর পাঁচবার সুইচড অফ বলছে। এদিকে ড্রাইভারটি গাড়ির ভাড়া মেটানোর জন্যে তাগাদা দিচ্ছে, একে তো আর দাঁড় করিয়ে রাখা যায়না, ভাড়ার গাড়ি বলে কথা। সে ড্রাইভারকে রিকোয়েস্ট করে দু পয়সা বেশি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আর পাঁচটা মিনিট দাঁড়াতে বলল, আর মনে মনে স্থির করল আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে যদি বেদুইন না আসে তাহলে এই গাড়িতেই আবার ফিরে যাবে আলেকজান্দ্রিয়াতে। একটা অজানা বিরক্তি আর আতঙ্ক ক্রমশ গ্রাস করে ফেলল কৌশিককে । 


‌চার মিনিটের মাথায় এসে কৌশিক যখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছে এবং ফিরে যাবে ঠিক করেই ফেলেছে তখনই একটা লোকের খিন কণ্ঠস্বর ভেসে এল । গাড়ির মুখ বরাবর উল্টোদিক থেকে সেই কণ্ঠস্বরটা আসছে, একবার দুবার তিনবার। কৌশিক এবার কণ্ঠস্বরের দিকে অনুমান করে তাকাতেই চাঁদনী আলোয় দেখতে পেল দুটি কালো ছায়ামূর্তি, একজন আলখাল্লাধারী বেদুইন আর তার পাশে পাশে যে ছায়ামূর্তিটা হাঁটছে সেটা কোন মানুষের ছায়ামূর্তি নয়, চারপেয়ে একটা পেশীবহুল জন্তু, তার চোখ দুটো ভাঁটার মতো জ্বলছে, কুকুর জাতীয়। বোঝাই যাচ্ছে এই জন্তুটা আলখাল্লাধারীর পোষ্য, কারণ জন্তুটার গলায় একটা মোটা চেন পড়ানো হয়েছে যার লাগামটা শক্ত করে আলখাল্লাধারীর হাতে ধরা। তার বুঝতে একটুও অসুবিধা হলো না আলখাল্লাধারী লোকটার ওই জন্তুটা কে টেনে আনতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ছায়ামূর্তি দুটো আরেকটু কাছে আসতেই কৌশিক ড্রাইভারকে গাড়ির হেড লাইট অন করতে বলল।

লাইট অন করতেই সামনের অনেকটা জায়গা আলোকিত হয়ে উঠল আর সেই আলোতেই কৌশিক দেখতে পেল বছর দুই আগেকার পরিচিত বেদুইন ভদ্রলোককে, হেঁটে হেঁটে আসছে দ্রুত পায়ে কিম্বা তাকে টেনে টেনে নিয়ে আসছে চারপেয়ে ছায়ামূর্তিটা। সেই  ৬ ফুটের ওপর লম্বা মিশরীয় বেদুইন , সাহারার নির্মম রৌদ্র তাপ যার গায়ের রঙকে এখনও কালো করে দিতে পারেনি, গালে কাঁচাপাকা দাড়ি, কাজল কালো চোখের তলায় গভীর একটা ক্ষত চিহ্ন সম্ভবত কোনো হিংস্র পশুর নখের আঁচড়ে সৃষ্ট , পরনে কালো আলখাল্লা, আর মুখে সেই চেনা হাসি। আর তার পোষ্য জন্তুটা আসলে একটা পেশীবহুল প্রকান্ড কালো নেকড়ে বাঘ ও শিয়ালের মিশ্রণ, চোখ মুখ দিয়ে ঝড়ে পড়ছে অদম্য ক্রোধ আর হিংস্রতা, মুখের দুপাশের দুটো শ্বাদন্ত যেন সাধারণের চেয়ে একটু বেশিই বড়, মুখ থেকে অনর্গল লালা ঝড়ে যাচ্ছে।


ভদ্রলোক গাড়ির একদম সামনে এসে নেকড়েটার মাথায় একটা আলতো টোকা মারতেই সে প্রভুভক্তর মতো চার'পা ভাঁজ করে বসে পড়ল, আর জিভ দিয়ে থাবা চাটতে লাগল। বেদুইন এবার কৌশিকের দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি হেসে বলল , "বন্ধু মৃতদের রাজ্যে তোমায় স্বাগত। গাড়ির ড্রাইভারের দিকেও তাকিয়ে একটা রহস্যজনক হাসি ছুড়ে দিল ।" ড্রাইভারকে অস্থির হতে দেখলো কৌশিক আর মুখে বিড়বিড় করে বারবার দুটো নাম উচ্চারণ করতেও শুনলো , নামগুলো খুব সম্ভবত মিশরীয় এবং কৌশিকের খুব চেনা কিন্তু এই মুহূর্তে খেয়াল হচ্ছেনা ঠিক। লোকে হঠাৎ করে ভয় পেলে যেমনটা করে এই ড্রাইভারটাকেও ঠিক তেমনটাই করতে দেখল কৌশিক। এর মধ্যে নেকড়েটাও কখন যেন উঠে দাঁড়িয়েছে। কৌশিক ড্রাইভারকে গাড়িভাড়া মিটিয়ে দিতেই ড্রাইভার পরি কি মরি করে গাড়ি ছুটিয়ে দিল একদম উল্টো দিকে। চাঁদের আলোয় গাড়িটাকে আসতে আসতে মিলিয়ে যেতে দেখল সে এই দিগন্ত বিস্তৃত সাহারার বুকে । এবার শুধু কৌশিক , বেদুইন ভদ্রলোক আর হিংস্র জন্তুটা ছাড়া এই বিশাল মরুচরে আর কোনো প্রাণের চিহ্ন থাকলো না । 


কৌশিক বেদুইন লোকটার দিকে তাকিয়ে একটু সংশয়ে প্রশ্ন করল, "আপনি আপনার গ্রামে নিয়ে যাবেন বলেছিলেন, এতো দেখছি ধূ ধূ মরু প্রান্তর ছাড়া আর কিছুই না।"

বেদুইন ভদ্রলোক আবারো সেই রহস্যজনক ভাবে হেসে বলল , "আছে আছে গ্রাম, বাড়ি, লোকজন, জীবজন্তু আর বিশেষ করে এরা, সব আছে সব ছিল সব থাকবে। তুমি চিন্তা করোনা বন্ধু, আমার সাথে এসো, খুব কাছেই আমাদের গ্রাম, এক্ষুনি পৌঁছে যাবো।"

এখানে বলে রাখা ভালো বেদুইন ভদ্রলোকের এই "এরা" কথাটার মানে হচ্ছে নেকড়ের দল।

তারপর ঐ দুই ছায়ামূর্তি আর কৌশিক রক্তিম চন্দ্রালোকের আলোয় মসৃণ বালুকা রাশির ওপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করল এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

চাঁদটা যেন আজকে একটু বেশিই লাল লাগছে , এ দেশ সে দেশ কতো দেশই তো ঘুরে বেরিয়েছে সে, এমনকি পূর্ণিমা রাতেও মিশরে রাত কাটিয়েছে এর আগে কিন্তু এরকম রক্তিম চাঁদ তো আগে কোনোদিন দ্যাখেনি, মনে হচ্ছে কেউ যেন ছিটে ছিটে রক্ত ছিটিয়ে দিয়েছে চাঁদটার গায়ে। কৌশিকের বুকের ভেতরটা টিপ টিপ করছে এক অজানা আতঙ্কে, পথ যেন আর শেষ হয়না, কখন তারা পৌঁছাবে কে জানে।

ভয় কাটাতে কৌশিক নিজের ব্যাগ থেকে টর্চটা বার করে আলো জ্বালাতে যাচ্ছিল, বেদুইনটা সেটা মনে হয় আঁচ করতে পেরে কৌশিকের উদ্দেশ্যে বলল , "টর্চ লাগবে না বন্ধু, অন্ধকারেই আমরা ভালো দেখতে পাই।" এটা বলতে বলতে বেদুইন ভদ্রলোক যখন কৌশিকের দিকে তাকিয়ে ছিল তখন কৌশিকের কেমন যেন মনে হল বেদুইন লোকটার চোখের মণি দুটো ক্ষণিকের জন্যে দপ করে জ্বলে উঠেই নিভে গেল , পরমুহূর্তেই লোকটা চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তার নেকড়ে আর শিয়াল মিশ্রিত পোষ্য জন্তুটার দিকে। সেই দৃশ্য দেখে কৌশিকের বুকের রক্ত জল হয়ে গেছিল কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারেনি সে , কাকেই বা বলবে আর কিই বা বলবে, যদি ভদ্রলোক তাকে পাগল টাগল ভেবে বসে তাই নিজের মনের ভুল ভেবে কাটিয়ে দিল ব্যাপারটা।

এবার তারা হেঁটে এসে যে যায়গায় দাঁড়াল সেটা একটা বালির টিলা ধার, টিলাটা ঢালু হয়ে মিশে গেছে কিছু দূরে একটা সমতল ভূমিতে আর সেখানে কয়েকটা বেদুইনদের ঝুপ্রি আর একটা প্রায় নিভে যাওয়া আগুনের ধুনি ধিকি ধিকি করে জ্বলে যাচ্ছে। আর সেই আগুনের চারপাশ দিয়ে বৃত্তাকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু ছায়ামূর্তি। কৌশিক সে দৃশ্য দেখা মাত্রই বুঝতে পারল ওগুলো কি জন্তু আর সঙ্গে সঙ্গে সে তাদের এতক্ষণের সহযাত্রী নেকড়ে শিয়ালটার দিকে ঘুরে তাকালো, নেকড়ে শিয়ালটাও কৌশিকের দিকে একবার তাকিয়ে পরক্ষনেই চাঁদের দিকে মুখ ফিরিয়ে ভয়ঙ্কর ভাবে এক ডাক পাড়ল যেন অশরীরী আর্তনাদ , সাথে সাথেই নীচের সমতল ভূমি থেকেও ভেসে এল আরো কিছু নেকড়ে শিয়ালের আর্ত চিৎকার, চিৎকারটা মরুভূমির রাতের নিস্তব্ধতাকে সম্পূর্ণরূপে খান খান করে দিল। কৌশিকের মনে হল এ চিৎকার তো জাগতিক কোনো জন্তুর চিৎকার হতে পারেনা, এ যেন নরকের গহবর থেকে উঠে আসা সাক্ষাৎ শয়তানের  বিকৃত কান্না।


"আমরা চলে এসেছি বন্ধু, আর কোনো চিন্তা নেই, কোনো ভয় নেই, আর কোনো দুঃখ কষ্টও নেই, এটা আমাদের রাজ্য এখানে আনন্দ আছে শুধু , মুক্তির আনন্দ !"টিলা দিয়ে নামতে নামতে বেদুইন ভদ্রলোক কৌশিককে বলল। 

কৌশিক ভীত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, "এ গ্রামে কি লোক থাকেনা, আপনার পরিবার, আত্মীয় স্বজন, মা ভাই বোন এরাইবা সব কোথায়, কই তাদেরকে তো দেখতে পাচ্ছি না??"

বেদুইন উত্তরে বলে, "তিষ্ঠো বন্ধু তিষ্ঠো, রাত এখনও অনেক বাকি, সবার সাথে তোমায় আলাপ করিয়ে দেবো, ওই দেখো আমার প্রাসাদ, বাকি রাতটা ওখানেই কেটে যাবে তোমার দিব্যি আরামে।" কৌশিক মনে মনে ভাবে ভদ্রলোক বলেটা কি, খেজুর পাতা দিয়ে ঘেরা এই ছোট্ট একটা ঘরে দিব্যি আরামে রাত কাটবে, তার ওপরে বাইরে এতোগুলো ক্ষুধার্ত হিংস্র নেকড়ে ঘোরাফেরা করছে । কথা বলতে বলতে কখন যে তারা তিনজন আগুনের ধুনিটার সামনে চলে এসেছে কৌশিক খেয়াল করতে পারেনি। আরো একটা জিনিস খেয়াল করেনি সেটা হল নেকড়ে শিয়ালগুলো দুটো দলে বিভক্ত হয়ে দুদিক থেকে লাইন করে বসেছে, তাদের ভাবটা এমন, ঠিক যেন তারা কোনো রাজপথ তৈরি করেছে রাজার প্রাসাদে আগমনের জন্যে আর ঠিক মাঝখানটায় এসে বসেছে ওদের এতক্ষণের সঙ্গী সেই কালো নেকড়ে শিয়াল মিশ্রিত জন্তুটা। খেজুর পাতার ঘরটার দরজার সামনে এসে ঘুরে তাকাতেই কৌশিক দেখতে পেল এক অলৌকিক দৃশ্য, কালো নেকড়েটা তাকিয়ে আছে তার দিকে একদৃষ্টে, গভীর তার চোখের চাহনি, হঠাৎ করে সে চাহনি দেখলে কেউ কিছু বুঝবে না কিন্তু অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলে বুঝতে পারবে চাহনিতে কটাক্ষ আর উপহাসের একটা ক্রুর ইঙ্গিত আছে।


বেদুইন ভদ্রলোক আগে নিজে সেই খেজুর পাতার ছোট ঝুপ্রীটার ভেতর প্রবেশ করল তারপর কৌশিকের দিকে তাকিয়ে বলল, "আমার প্রাসাদে তোমাকে স্বাগত জানাই, হে বন্ধু চলে এসো আমার দুনিয়াতে কাটিয়ে যাও কিছুটা সময়, নিয়ে যাও মুক্তির স্বাদ।"কৌশিক ঘরের ভেতর ঢুকতেই ঘরের বাইরে দিয়ে একটা খেজুর পাতার পর্দা পড়ে গেল। প্রথমটায় কৌশিক কিছু দেখতে পেল না তারপর ধীরে ধীরে ঘরটা উজ্জ্বল হতেই তার চোখ ধাঁধিয়ে গেলো। কোথায় খেজুর পাতার ঘর, এতো এক বিলাসবহুল রাজদরবারে দাঁড়িয়ে আছে সে, চারদিকটা পুরো সোনায় মোড়া, দেওয়ালের গায়ে বড় বড় পাথরের মূর্তি, মিশরীয় চিত্রলিপিতে ভর্তি চতুর্দিক, প্রাসাদের মাঝখানে বড় একটা ফোয়ারা, জলে খেলা করছে রঙ বেরঙের মাছ, দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে কৌশিক, যেন এক অদভুত ঘোরে আছে সে । আর সেই বেদুইন ভদ্রলোক, গেল কোথায়, তাকে তো দেখা যাচ্ছে না । হঠাৎ হাত তালির আওয়াজে দরবারের দরজার দিকে চোখ গেল তার আর সাথে সাথেই সে দেখতে পেল বেদুইনকে , কিন্তু একি তার পোশাক, কোথায় তার কালো আলখাল্লা, এই লোকটা তো মিশরীয় রাজবেশে দাঁড়িয়ে আছে । কৌশিকের জীবনে আজকের দিনটায় একটার পর একটা এমন এমন সব চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।


এবার সেই বেদুইন ভদ্রলোক তাকে আরো একটু চমকে দিয়ে বলল, "ওসাইরিসের দরবারে তোমাকে স্বাগত জানাই বন্ধু, স্বাগত তোমায় চির মুক্তির, অফুরন্ত আনন্দের দুনিয়ায়।"

এবার গাড়ির ড্রাইভারের মুখে বিড়বিড় করা দুটো নাম মনে পড়ে গেলো কৌশিকের, ওসাইরিস আর আনুবিস, প্রভু এবং ভৃত্য, প্রাচীন মিশরীয়দের মরণোত্তর দশার ভগবান, নরকের দুই রাজা। সে এই দুই ভাইয়ের ছবি অসংখ্য বার দেখেছে, এদের নিয়ে অসংখ্য জার্নালও পড়েছে, সিনেমাও দেখেছে বেশ কয়েকটা , এমনকি তার কলকাতার বাড়িতে এই সব মিশরীয় দেবদেবীর ছোট ছোট মূর্তিও আছে। কৌশিকের চোখ বিস্ফারিত, তার সামনে এখন যে দাঁড়িয়ে আছে সে ওসাইরিস, সাক্ষাৎ মৃত্যুর দূত অথচ কি বন্ধুত্বপূর্ণ তার আচরণ কি সাবলীল তার ব্যাবহার।কৌশিককে আরেকটু বেশি অবাক করে দিয়ে ঘরে ঢুকলো একজন তৃতীয় ব্যাক্তি, অবশ্য একে ব্যাক্তি না বলে অর্ধেক মানুষ অর্ধেক শিয়াল অথবা নেকড়ে জাতীয় কিছু বললেই ঠিক বলা হবে, গায়ের রঙ রাতের অন্ধকারের চেয়েও কালো, পেশীবহুল শরীরটা সোনার বর্মে মোড়া। সেই অর্ধেক মানুষ অর্ধেক জন্তুটা কৌশিককে এক দৃষ্টিতে জরিপ করতে করতে রাজকীয় ভঙ্গিতে তার পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দাঁড়াল ঠিক ওসাইরিসের পাশে।এবার ওসাইরিস কৌশিকের উদ্দেশ্যে বলল, "একে চিনতে পারছো বন্ধু? এ আমার অনুগত ভৃত্য, এতক্ষন আমাদের সাথেই পথ হেঁটে এসেছে, আর বাইরে যারা ছিল তারা আমার পরম আত্মীয়। "কৌশিকের মনে পড়ে গেল কালো নেকড়ে ও শিয়াল মিশ্রিত সহযাত্রীটার কথা, যে একটু আগে তাদের সাথেই পথ হেঁটে এসেছে আর বাইরের নেকড়ে শিয়ালগুলোর মুখগুলোও চোখের সামনে ভেসে উঠল তার। 


কৌশিকের চোখে আসতে আসতে আঁধার ঘনীভূত হয়ে আসছে, বিস্ময়ে কেঁপে উঠছে তার পায়ের তলার মাটি, যেন নিজের চোখকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না , নিজের মনে মনেই বিড়বিড় করে উঠল, "আনুবিস, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় নরকের দ্বার রক্ষক এবং মৃত আত্মাদের বিচারক, হাতে তার সর্বদা একটা দাঁড়িপাল্লা ঝোলে। পাখির পালক দিয়ে মৃত ব্যাক্তির হৃদপিন্ড ওজন করে, যে হৃদপিন্ড পাখির পালকের থেকে হালকা হয় সে আত্মা চিরমুক্তি পায়, আর যে হৃদপিন্ড পাখির পালকের চেয়ে ওজনে বেশি সে আত্মাকে আনুবিস টেনে নিয়ে যায় নরকের অন্ধকার গহবরে, তার আর কোনরূপ মুক্তি নেই।"


কৌশিকের ঘোরটা কাটিয়ে দিল ওসাইরিস নিজেই। ওসাইরিস কখন কৌশিকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সে টেরও পায়নি। কৌশিক দেখল ওসাইরিসের দুহাতে দুটো লাল তরলের পাত্র, কৌশিকের দিকে একটা পাত্র বাড়িয়ে দিয়ে বলল, " এসো বন্ধু তোমায় নিয়ে যাবো চির মুক্তি, চির আনন্দের দুনিয়ায়।" এই বলে ওসাইরিস এক চুমুকে তার হাতের পাত্রটা শেষ করলো । দূর থেকে আনুবিস এখনও কৌশিককে জরিপ করে যাচ্ছে আর হাসছে, তাচ্ছিল্যমিশ্রিত নিষঠুর হাসি । 


ওসাইরিস নিজের লাল তরলের পাত্রটা শেষ করলেও অপর পাত্রটা অন্য হাতে ধরে আছে এখনও, চোখের মধ্যে যেন এক নির্মম আদেশ । এক ভয় মিশ্রিত শ্রদ্ধা কৌশিককে ঐ তরল টা খেতে বাধ্য করলো । এক অদভুত নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল সে, চোখের সামনে সব কিছু কেমন রঙিন লাগতে লাগল, এক রহস্যময় আনন্দে মেতে উঠল তার মন। কোথায় কলকাতা, কোথায় বাড়ি, কোথায় তার পরিবার, কোথায় জাহাজ, কোথায় দেশ বিদেশ, এসব কথা যেন ভুলেই গেল, যেন এক অপরিসীম মুক্তির স্বাদ পেয়েছে সে । এরমভাবে কতক্ষন কাটলো টের পায়নি, হঠাৎ করে আবার ওসাইরিসের মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠল, সে যেন কৌশিককে বলছে, "কেমন কাটলো তোমার সময় আমার দুনিয়ায়, হে বন্ধু তুমি মুক্ত, তোমাকে চিরবিদায়।" এ কথা বলতে বলতে ওসাইরিস কৌশিকের চোখের সামনে থেকে দূর হতে আরো দূরে বিলীন হয়ে গেল আর তার বদলে তার চোখের সামনে ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠল একটা অর্ধেক মানুষ অর্ধেক শিয়াল বা নেকড়ের মূর্তি।কৌশিকের সম্বিত তখনও পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি তাই সে বুঝতে পারলো তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে  প্রাচীন মিশরীয়দের  নরকের পালনকর্তা সাক্ষাৎ আনুবিস। কৌশিকের এবার একটু ভয় লাগল, প্রাণ সংশয়ের ভয়, সাথে সাথে মনে পড়ে গেল তার বাড়ি, পরিবার, কাজের কথা, নিজের মা বাবার মুখটাও মনে পড়ে গেল তার। তৎক্ষণাৎ কৌশিক শুনতে পেল আনুবিসের কণ্ঠ, আনুবিস তাকে বলছে, "চলো হে বন্ধু, তোমায় মুক্তি দিয়ে দিই , তুমি পৃথিবীর মায়াই এখনও ত্যাগ করতে পারোনি, তুমি এই পৃথিবীর নরকেই পচে মরবে, চলো হে বন্ধু হাতে আর সময় নেই আমার।"


‌কৌশিকের চোখে পুরোপুরি আঁধার নেমে আসার আগে সে বুঝতে পারলো বলিষ্ঠ চেহারার কেউ কৌশিককে তার কাঁধে তুলে নিলো, এরপর যেন হারিয়ে গেলো এক অন্ধকারের রাজ্যে। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর দেখলো সে এক খেজুর পাতার ঘরে শুয়ে আছে , মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা । মাথাটা ধরে কোনোমতে উঠে দাঁড়াল কৌশিক , বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলো সূর্য প্রায় মাথার ওপর উঠে গেছে, তার মানে বেলা অনেকটাই গড়িয়ে গেছে। সামনের দিকে যেখানে কাল রাত্রে আগুনের ধুনিটা জ্বলছিল সে দিকে তাকিয়েই আঁতকে উঠলো কৌশিক। আগুনের ধুনিটার কিছু দূরেই বসে আছে সেই বেদুইন ভদ্রলোকটা আর তার চারপাশে বৃত্তাকারে পাক খাচ্ছে কালো একটি কুকুর। লোকটি কৌশিককে দেখতে পেয়েই একগাল হাসতে হাসতে খেজুর পাতার ঘরটার দিকে এগিয়ে এল, সামনে এসে দাঁড়াল কৌশিকের, কুকুরটা কিন্তু এখন তার সাথে আর এলোনা, দূর থেকেই এক অতি পরিচিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো । 

 "রাত কেমন কাটলো বন্ধু আমার গরীবখানায়, ভালো তো??" বলল লোকটি । 

"‌আশা করি ভালই কেটেছে, আশা করি তুমি মুক্তির স্বাদ পেয়েছ ! চলো এবার আমাদের ফিরে যাওয়ার পালা।"

‌কৌশিক স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে থাকলো বেদুইন লোকটার দিকে। কি বলবে ভেবে পেল না। আমতা আমতা করে ঘরের ভেতর ঢুকে নিজের ব্যাগটা তুলতেই আরো একবার চমকে উঠলো। দেখলো তার ব্যাগের আড়ালেই গড়াগড়ি খাচ্ছে একটা খালি হয়ে যাওয়া সুরার পাত্র, গ্লাসের গায়ে তখনও ফিকে হয়ে যাওয়া লালচে ভাব। কৌশিক আর দেরি না করে ঘরের বাইরে এল কিন্তু এবার আর কাউকে দেখতে পেল না । কিছুক্ষন খেজুর পাতার ঘরটার সামনে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থেকে এবং কারুর দেখা না পেয়ে একরকম কিংকরতব্যবিমূঢ় হয়েই পথ চলতে শুরু করলো , মনে মনে ভাবলো যা অদৃষ্টে লেখা আছে তাই হবে । এরম ভাবে কৌশিক তপ্ত মরুভূমির ওপর দিয়ে পথ হাঁটতে থাকে, মাথার ওপরে অগ্নিগর্ভ সূর্যের তাপ আর বুকের একরাশ জল পিপাসা নিয়ে, কতক্ষন যে পথ হেঁটেছিল কে জানে l যখন ক্লান্তি আর পিপাসা তার গোটা শরীর আর মনকে গ্রাস করছে, আর মাথায় বিকৃত ভাব দেখা দিচ্ছে ঠিক তখনই সে যেন এক পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। কেউ তাকে ফিস ফিস করে বলছে, "চলো হে বন্ধু, তোমায় মুক্তি দিয়ে দিই , তুমি পৃথিবীর মায়াই এখনও ত্যাগ করতে পারোনি, তুমি এই পৃথিবীর নরকেই পচে মরবে, চলো হে বন্ধু হাতে আর সময় নেই আমার।" কৌশিক জ্ঞান হারাতে হারাতে বুঝতে পারল তপ্ত মরুভূমির ওপর লুটিয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে ।  


কৌশিকের জ্ঞান ফিরলো গীজার এক সরকারী হাসপাতালের বেডে। রুটিন চেকআপ করতে আসা ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করায় জানতে পারে , সে নাকি সাহারা মরুভূমিতে দিকভ্রান্ত হয়ে রৌদ্রের তাপে আর জলের পিপাসায় জ্ঞান হারিয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে বেদুইনদের একটি দল তখন সেইখান দিয়েই যাচ্ছিল, কৌশিককে তারা দেখতে পায় বালির ওপর লুটিয়ে পড়ে থাকতে, কাছে গিয়ে কৌশিকের স্নায়ু পরীক্ষা করে দেহে প্রাণের স্পন্দন পায় তারা আর এখানে নিয়ে আসে তাকে , তারপর থেকে পাঁচ দিন কেটে গেছে।


কৌশিক এবার শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে সেই ভয়ঙ্কর রাতের কথা। ইচ্ছে করলেই আনুবিস তাকে টেনে নিয়ে যেতে পারতো নরকের অন্ধকার গহবরে কিন্তু না আনুবিস তা করেনি, আনুবিস তাকে রেখে দিয়ে গেছে এই জাগতিক নরকের অন্তঃপুরে পচে মরার জন্যে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে কৌশিক , কেউ যেন ফিস ফিস করে তার কানে বলে দিয়ে যায় , "কি বন্ধু বলেছিলাম না, সব আছে, সব ছিল, সব থাকবে।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama