protichobi world

Inspirational Others

3  

protichobi world

Inspirational Others

মেয়েছেলে (part - 1)

মেয়েছেলে (part - 1)

5 mins
253


আমি একজন খুব সাধারণ মেয়ে। আসলে মেয়ে নাকি মেয়েছেলে সে নাহয় পরেই বলবো। এখন থাক। আগে আমার সামান্য পরিচয় টা বরং দিয়েই দিই। গ্রাম এ জন্ম আমার । তবে একদম অজ পাড়াগাঁয়ে নয় । শহরের ছোঁয়াও ভালই আছে। আবার জন্মেছি বনেদি বাড়িতে । সাথে ছিল একান্নবর্তী পরিবার । আস্তে আস্তে বড়ো হয়ে ওঠা অনেক নিয়ম নীতির মধ্যে দিয়ে। পড়াশোনা তে খুব খারাপ নই । বর্তমান বয়স ওই হবে পঞ্চাশ/ একান্ন এরম কিছু একটা। হিসাব টা মনে নেই ঠিক । আসলে রাখার প্রয়োজন মনে করিনি আর । তবে চাকরি করি একটা । বেসরকারি চাকরি । মাস গেলে রোজগার হয় ২০,০০০ মতো । খুব কম নয় কি বলেন ! বয়স যখন পাঁচ তখন পাড়ার স্কুলে

বাবা ভর্তি করে দেয়। মাধ্যমিক অবধি ওখানে পড়াশোনা চলে । পরীক্ষায় ফল ভালই হয় ।


তারপর আমার ঠাকুমা বললেন 

অনেক পড়েছি ।এরপর আর পড়ে লাভ নেই। 

মেয়েমানুষের নাকি অত পড়া সাজেনা । বেশি পড়ে লাভই বা কি । সেই সংসার ,রান্না ,ছেলে মেয়ে মানুুষ এই তো করতে হবে।


আমি ছিলাম বাড়ির সেজমেয়ে। জন্ম নেওয়ার পরেই বাড়ি়তে কান্নার রোল উঠেছিল। ঠাকুমা

ডুকরে কেঁদে বলেছিল," আবার 

মেয়ে? হায় "। কিন্তু উপায় নেই । তাই মানতেই হল । নাম হল মৃণালিনী । 


শেষে মায়ের অনুরোধে উচ্চমাধ্যমিক স্কুল এ ভর্তি হলাম আবার । বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলাম । স্কুল বাদেও ছিল টিউশন । ফিরতে মাঝে মাঝে রাত হয়ে যেত। বাবা , ঠাকুমা এটা ঠিক পছন্দ করতোনা। যতই হোক মেয়ে তো । সামাজিক নিরাপত্তা কম তারপর আবার বাড়ির আব্রু রক্ষার ভার তো মেয়েদেরই। রাত করে বাড়ি এলে বাড়ির পাশের সবাই একটু বাঁকা চোখে দেখত । এই নিয়ে ঝামেলা হতে শুরু করলো । সব সহ্য করেও পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে লাগলাম ।  


স্কুল এ একজন ছেলে ছিল । নাম অর্ঘ্য । একটা কানাঘুষো চলছিল স্কুল এ সে নাকি আমায় পছন্দ করে । মিথ্যে বলবো না আমার ও তার প্রতি আলাদা একরকম টান তৈরি হয়েছিল । তার সাথে একজায়গায় টিউশন ও পড়তে যেতাম । একদিন সে আমায় একটা চিঠি লিখে 

তার সাথে আলাদা করে একটু দেখা করতে অনুরোধ করলো । নিজের সাথে সেদিন অনেক লড়াই করেছিলাম । এক বনেদি পরিবার এর মেয়ে তার সাথে উচ্চ ব্রাহ্মন বংশে জন্ম । যদিও ব্রাক্ষণ তকমা তো আমার নেই । আমি তো মেয়ে । শুনেছি মেয়েদের নাকি জাত নেই। সে উচ্চ জাতে বিয়ে করলে উচ্চ জাতি আর উল্টো টা হয়ে গেলে নিম্ন । তাই আমি উচ্চ জাত এ জন্মেছি কিন্তু এখনো সমাজ ঠিক ব্রাহ্মন বলে মানেনি । বাড়ির সম্মান রক্ষার দায়িত্ত্ব আমার । এই এতকিছু ভেবে ও অবশেষে নিজেকে সেদিন আটকাতে পারিনি । অবশেষে গেলাম । সাধারণ ভাবেই সে আমায় তার ভালোবাসার কথা জানালো । তবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার জন্য ভালোবাসাই দেখেছিলাম সেদিন । হুট করে খুব লজ্জা করলো । তাই ছুটে চলে এলাম । 


 কদিন পর কিভাবে জানি না সব জানাজানি হয়ে গেলো পাড়ার মধ্যে । এই নিয়ে চললো নানা মন্তব্য । বাড়িতেও জেনে গেলো। মারতে গিয়েও বাবা , কাকারা ঠাকুমার কথায় থেমে গেসলো । ঠাকুমা সব সমস্যার সমাধান হিসেবে বললো আমার বিয়ে দিয়ে দিতে । সব দেখে শুনে কিভাবে সহ্য করবো বুঝতে পারিনি । সেদিন খুব কষ্ট হয়েছিল । প্রথমত , পড়াশোনাটা আর হলোনা আর দ্বিতীয়ত , হয়তো অর্ঘ্যর জন্য । সেদিন থাকতে না পেরে সবার কাছে অনুরোধ করেছিলাম অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা টুকু দিতে দেওয়ার জন্য । কাকা গালে চর মেরে, আর পেটে লাথি দিয়ে ফেলে বলেছিল , মেয়েছেলের অত পড়াশোনা শেখা মানে বংশ উচ্ছন্নে যাওয়া ।

 আমার উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার স্বপ্ন সেখানেই থামলো । তার সাথে আর একজনের প্রতি অনুভূতিও সেখানেই থেমেছিল। 


 শুরু হয়েছিল পাত্র দেখা । আর আমি প্রতিবার তাদের মতো করে নিজেকে নতুন করে তৈরি করেছিলাম । তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন আর বিভিন্ন চাওয়া সবই বাড়ির চোখ রাঙানির জন্য সহ্য করে নিচ্ছিলাম । অবশেষে এক বনেদি পরিবার আমায় পছন্দ করলো । তাদের আমায় দেখে খুব একটা পছন্দ হয়েছিল কি জানিনা তবে বাড়ির সম্পত্তি বা প্রতিপত্তি তাদের পছন্দ অবশ্যই হয়েছিল । আমার হবু শাশুড়ি মা আমায় প্রশ্ন করেছিলেন নানা রকম । আমি রান্না করতে পারি কি না বা বাড়ির কাজ কেমন কি করতে পারি । সত্যি বলতে এগুলো খুব বেশি শিখিনি আমি কখনো । কিন্তু ঠাকুমা , মা , কাকিমা ই এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিয়ে দিয়েছিল আমার হয়ে। তারপর আমার চুল টা কতটা বড়ো আর আসল কিনা কিভাবে হাঁটাচলা করি আমি এইসব ও তিনি যাচাই করে নিয়েছিলেন ভালো মতোই । তার সাথে আশীর্বাদ টাও সেদিন ই সেরেছিলেন । কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আমি কাকে বিয়ে করছি বা সে কেমন তার বয়স কত বা কি নাম এসব আমার অজানা ই রয়ে গেলো । বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেলো । তারপর থেকে বাড়ির পরিবেশ আলাদা আনন্দে ভরে গেলো । সবাই খুশি মৃণালিনী র বিয়ে নিয়ে। কিন্তু মৃণালিনী খুশি কিনা সেটা সবার কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলনা । কেনোই বা থাকবে । বনেদি বাড়ির চরিত্রহীনা মেয়ের যে বিয়ে হচ্ছে এই তখন তাদের কাছে অনেক । মা কতটা খুশি ছিল সেদিন আমি আজও বুঝিনি সেদিন ও বুঝিনি । তবে একবার আমায় প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছিল আসল ঘটনা টা ঠিক কি , তবে বলার কারণ দেখিনি । যখন ভাগ্য নির্ধারণ হয়েই গেছে তখন এই উত্তর অবান্তর । ফিরিয়ে দিয়েছিলাম মা কে। আর সারারাত অঝোর বৃষ্টির সাথে আমার আকাশ এও বৃষ্টি নেমেছিল সপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় । 


সেদিন শুধু দেখা করাটাই আমার এত বড়ো দোষ হয়েছিল যার জন্য ভগবান এত বড় শাস্তি দিয়েছিল । আমার থেকে কেউ একবারও জানতে চায়নি আসল ঘটনা টা ঠিক কি । কিন্তু খবর ছড়িয়েছিল আমি না কি পড়তে যাওয়ার নাম করে তার সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটিয়েছিলাম। যাক সব ভুলে , না ভুলে ঠিক নয় , সব মেনে নিয়ে , সব সপ্ন সব চাওয়া পাওয়া ছেড়ে বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম মানসিক ভাবে । আর অর্ঘ্য তার কথা জানিনা তার খবর আর আসেনি তখন । আমি চেষ্টাও করিনি । 



Rate this content
Log in

More bengali story from protichobi world

Similar bengali story from Inspirational