Longdistance ভ্যালেন্টাইন
Longdistance ভ্যালেন্টাইন


জানিস তোকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। কাল ভ্যালেন্টাইনস ডে তে সবাই কি সুন্দর প্রেম করবে। আর তুই বড়জোর আমাকে একটা ভিডিও কল করে সোনা মনা বাবু এসব করবি। ধুত্তর তোর সাথে প্রেম করা টাই ভুল হয়েছে আমার।
মুখে কপট রাগ দেখালেও সত্যি সত্যি একটু কষ্ট হচ্ছিল তৃণার। সেই যে ছেলেটা চাকরি করতে মুম্বাই চলে গেলো , তার পর আট মাস কেটে গেলো কোনো দেখা সাক্ষাৎ নেই। তবে নিয়ম করে ভিডিও কল করতে ভোলে না অভি। তা হলেও সামনে থেকে দেখা আর ছয় ইঞ্চি স্ক্রীনে দেখার মধ্যে একটা পার্থক্য তো আছে নাকি।
রাত বারোটায় অভির শিফট শেষ হয়। অফিস ক্যাব এ বাড়ি ফেরার সময় অভির সাথে কথা হয় তৃণার রোজ ই। অভি একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আরো তিন বন্ধুর সাথে থাকে । তবে ওরা চার জন একসাথে থাকবে বলে চার জনের অফিসের মাঝামাঝি জায়গায় ফ্ল্যাট টা নেওয়া। মুম্বাই এর জ্যাম ঠেলে বাড়ি আসতে অভির প্রায় এক ঘন্টা লেগে যায়। ওই সময় টা অভি আর তৃণার প্রেম করার সময়।
--রাগ করছিস কেনো বাবু। জানিস তো অত দূর থেকে আসা টা একটু প্রবলেম। তাছাড়া সামনের মাসেই তো আমার মাসীর ছেলের বিয়ে। তখন তো আসবো। তখনই আমরা ভ্যালেন্টাইনস ডে মানিয়ে নেবো।
--তুই চুপ কর এক নম্বরের আনরোমান্টিক ছেলে। তোর সাথে প্রেম করেই আমি ভুল করেছি। সুমন যখন প্রপোজ করেছিল ওকে হ্যাঁ বলে দিলেই ভালো হতো।
--ইস্ ছি শেষ অব্দি ওই ছেলে টা কে তোর ভালো লাগলো? ওই কেবলা টাকে?
--তাও তোর থেকে ভালো। এই তো সেদিন দেখলাম নতুন একটা গার্লফ্রেন্ড বানিয়েছে।
--হ্যাঁ তাকে হয়ত গোলাপের বদলে গাঁদা ফুল দিয়েছে।
--আরে তাও তো কিছু দিয়েছে রে। তোর মত গোলাপের ইমোজি পাঠিয়ে কাজ সারেনি।
--বাবা রে তুই তো দেখি বড্ড রেগে আছিস!! আচ্ছা ঠিক আছে কাল তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ থাকবে।
--তুই থাম। চাই না তোর সারপ্রাইজ। খুব বেশি হলে কি করবি? কোনো একটা রেস্টুরেন্টে দুটো সিট বুক করে রাখবি। আর আমি যাবো কার সাথে? না পারমিতার সাথে। এই দিনে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড রা ঘুরতে যায়। আরে লোকে আমাদের লেসবিয়ান ভাববে রে। তুই এত আনরোমান্টিক কেনো রে? কাকু কাকিমা অত বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেছে। আর তাদের ছেলে হয়ে তুই এই রকম কি করে তৈরি হলি বলতো?
-- শোন না অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পড় এবার। কাল সকালে তোকে ডেকে দেবো।
সকাল বেলা তৃণা কে ঘুম থেকে তুলতে অভির খুব ভালো লাগে। ঘুম জড়ানো গলায় তৃণা যখন হ্যালো বলে , কি আদুরে আর মিষ্টি লাগে শুনতে। "উঠে পড় সোনা । বেলা হয়েছে" । এর উত্তর আসে "আর একটু শুতে দে না প্লিজ" । কথা টা শুনেই অভির মনে হয় তৃণা যেনো তার পাশেই শুয়ে আছে। ওর কপালে হালকা করে একটা চুমু খেয়ে উঠে পড়ে অভি। এটা ওর রোজ সকালের নেশা।
ঘুমের ঘোরেই তৃণা চেনা রিং টোন টা শুনতে পাচ্ছিলো। ঘুমের ঘোরে টা তখনো কাটেনি। ঘুম চোখেই ফোন টা তুলে টাইম টা দেখলো সবে ভোর পাঁচটা। এত সকালে অভি ফোন করছে কেনো। রোজকার মত হ্যালো বললো। ওপার থেকে শুনতে পেলো অভি বলছে উঠে পড় সোনা। জানলা দিয়ে বাইরে দেখ।
-- আর একটু ঘুমাতে দে না প্লিজ। ভোর পাঁচটার সময় ডাকছিস কেনো? সাতটায় উঠবো। এখন ফোন রাখ।
-- আচ্ছা আমি কি বাইরেই দাড়িয়ে থাকবো আর তুই ভোস ভোস করে ঘুমাবি? দরজা খুলবে কে?
-- কি পাগলামো করছিস বলতো সকাল সকাল। তোর রুমমেট দের বল খুলে দেবে।
-- ওরে আমি তোর বাড়ির সামনে।
-- কাকভোরে ফাজলামো হচ্ছে? তুই মুম্বাই থেকে কলকাতায় আমার বাড়ির সামনে? কাল রাতেও তোর অফিসের গাড়ির বিখ্যাত হর্ণ টা আমার কান ঝালাপালা করে দিয়েছে। ওই তোর পাশ থেকে অত কুকুর ডাকার আওয়াজ আসছে কেনো রে? ওয়েট এ মিনিট এতো আমাদের বাড়ির সামনে বাঘা ডাকছে। আমি তোর ফোন থেকেও একই ডাক শুনতে পাচ্ছি কেনো?
মুহূর্তে ঘুম ছুটে গেলো তৃণার। দৌড়ে দোতলার ঘরের লাগোয়া বারান্দা টায় এলো। ও কি চোখে ভুল দেখছে? বাড়ির নীচে রাস্তার মাঝখানে শাহরুখ খানের মত দু হাত ছড়িয়ে দাঁত বার করে অভি দাড়িয়ে আছে। পিঠে একটা ব্যাগ আর হাতে একটা গোলাপ ফুল।
দিগ্বিদিক জ্ঞ্যান শূন্য হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো।
-- তুতুতুই এখানে কি করে এলি?
-- তোকে বলেছিলাম না এক টা সারপ্রাইজ আছে। কাল রাত ২:৩০ এর ফ্লাইটে আমি মুম্বাই থেকে সোজা দমদম । তার পর ট্যাক্সি করে সোজা তোর বাড়ির সামনে। আর একটু হলেই কুকুরে কামড়ে দিত আমাকে।
কথা গুলো কানে যাচ্ছিল না তৃণার। মনে হচ্ছিল দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে অভির বুকে। যে ছেলে টা কে এত আনরোমান্টিক মনে হতো সে শুধু তার জন্য অত দূর থেকে ছুটে এসেছে আজকের দিনটার জন্য।
শীত কালের সূর্য টা তখনো ভালো করে ওঠেনি। তৃণার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে গোলাপ টার ওপর পড়লো। মনে হলো গোলাপ টাও যেন এক ফোঁটা শিশির বিন্দু পেয়ে আরো সতেজ হয়ে উঠলো।