STORYMIRROR

Banabithi Patra

Drama Tragedy

3  

Banabithi Patra

Drama Tragedy

লক্ষ্যভেদ

লক্ষ্যভেদ

2 mins
997


কেমন যেন একটা আওয়াজ আসছে বাইরে থেকে। ঘুম ভেঙে যায় মথুরাননের। সেই আলো ফোটার আগে সকাল শুরু হয় তাদের তাঁবুতে। আর শুতে শুতে মধ্যরাত। সকলেই ভীষণ ক্লান্ত থাকে। সারাটা দিন পরিশ্রম তো আর কম হয় না। শোয়া মাত্রই ঘুমের মধ্যে তলিয়ে যায়।


তবে তাঁবুর বাইরে আওয়াজটা কিসের আসছে! এখানে চোর-ডাক্তারের ভয় তো সেভাবে নেই। তবু বলা তো যায় না! পাশাপাশি অনেকগুলো তাঁবুতে দল বেঁধে থাকে সবাই। মথুরানন অবশ্য এই তাঁবুতে একাই থাকে। বাইরে বড়ো হ্যালোজেন লাইট দুখানা সারারাতই জ্বলে, তাই আলো সাথে নেওয়ার দরকার নেই। তাঁবু থেকে বেরতে গিয়েও ভিতরে ঢোকে মথুরানন। ছোট লোহার সুটকেশের তালাটা খুলে রিভালভারটা বের করে। তার হাতের নিশানা অব্যর্থ। আজও তার নিশানার খেলা দেখতেই "সোনালী সার্কাস" এ এখনও এতো ভিড় হয়। বারের খেলায় বন্দুকের নিশানার খেলা একমাত্র তাদের সার্কাসেই শুধু আছে। আর এই নিশানার জোরেই সেই ন'বছর বয়সে ঘোড়ার দেখভাল করতে ঢুকে আজ সার্কাসের ম্যানেজার হয়েছে যে। জীবনের সবকিছুতেই নিশানাটা ঠিক রাখা ভীষণ জরুরী। নিশানা ঠিক না থাকলে জীবনের কোন ক্ষেত্রেই লক্ষ্যভেদ করা সম্ভব নয়।

আপেলের নিশানার খেলাটা তো বন্ধই হতে বসেছে। চোখ বন্ধ করে একটা ম

েয়ের মাথায় বসানো আপেলকে তীরবিদ্ধ করা। ঝুঁকির খেলা বলেই বেশ জনপ্রিয় ছিল খেলাটা। রেশমী খেলাটা দেখাতো। বেচারী অসুখ হয়ে মারা যাওয়ার পর খেলাটাই বন্ধ হয়ে গেছে।


তাঁবুর বাইরে চারদিক শুনশান। কান খাঁড়া করে মথুরানন। হ্যাঁ আওয়াজটা তো আসছে। ভয়-ডর তেমন নেই মথুরাননের। পা টিপে টিপে খানিক এগোতে গিয়েই থমকে যায়। আরে ও কে! এই রাত দুপুরে কি করছে! আরও এগোতেই দেখে ওতো চিটকু। তীরধনুক নিয়ে সমানে তীর ছোড়া প্র্যাক্টিস করছে।

রেশমীর দশ বছরের ছেলে চিটকু। ওকে কয়েকমাসের কোলে নিয়ে রেশমী এ সার্কাসে এসেছিল। রেশমীর সাথে ওর ছেলেও থেকে গিয়েছিল সার্কাসেই। আজকাল সার্কাসের অবস্থা ভালো নয়। মালিক ক'দিন আগে জানিয়ে দিয়েছে, শুধু শুধু কাউকে সার্কাসে রাখবে না। তাই বোধহয় মায়ের খেলাটা দেখানোর জন্যই লক্ষ্যভেদের চেষ্টা করছে চিটকু।

একটা তীরও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। তবে এইটুকু ছেলের অদম্য মনের ইচ্ছা আর পরিশ্রম বৃথা যাবে না। মথুরানন বুঝতে পারে, এই ছেলে লক্ষ্যভেদ করবেই করবে।

চিটকুকে ডেকে আর তার মনোঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায় না মথুরানন। ভোর হতে আর খুব বেশি দেরি নেই, শুলেও আর ঘুম হবে না এখন। তবু নিজের তাঁবুর দিকেই পা বাড়ায় মথুরানন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama